- না মা... আমি পারব না। এভাবে একটা লোককে আমি ঠকাতে পারব না। - আশ্চর্য! এতে ঠকানোর কি আছে? - আছে। আমি বলতে পারব না। - কেন বলতে পারবি না? - পারব না। তুমি জান না? - জানি বলেই তো বলছি এতে ঠকানোর কিছু নেই। তাছাড়া তোর তো কোন দোষ ছিল না। আর আজকালকার ছেলেমেয়েদের জীবনে এসব ঘটতেই পারে। শোন মা, ছেলে হিসেবে জাভেদ বেশ ভাল। আমি কথা বলে দেখেছি। আমার ভাল লেগেছে। আমার বিশ্বাস তোরও ভাল লাগবে। - না মা, কোন ছেলেকেই এখন আর আমার ভাল লাগে না। ওরা মেয়েদের মেয়ে মনে করে না। ভোগের বস্তু মনে করে। - শোন নিশাত, বেশি বড় বড় কথা বলবি না। তোর এসব কথা পত্রিকার পাতা বা বইয়ে পড়তে ভাল লাগে। এখন কাজের সময়ে এসব ভাল লাগে না। তাছাড়া তুই কয়টা ছেলেকে দেখেছিস? আচ্ছা হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান? সবাইকে তুই একই সারির ভাবছিস কেন? এত বেশি বুঝিস কেন তুই? অনেক হয়েছে। আর না। আমার শেষ কথা হচ্ছে, ঠকানো-জেতানো ওসব বুঝি-টুঝি না। তোকে জাভেদকেই বিয়ে করতে হবে। আমি এ সপ্তাহেই তোকে বিয়ে দেব। - কিন্তু মা! - আবার কিন্তু? - ওনাকে কি কিছু জানাবে না? - পাগল নাকি? এসব কথা প্রপোজাল ম্যারেজে জানাতে হয় না। - কিন্তু বিয়ের পর যদি কোনভাবে জেনে যায়....তাহলে? - কিভাবে জানবে? আর যদি তেমন কিছু ঘটে তো পরে দেখা যাবে। শোন তুই আবার আগ বাড়িয়ে কিছু বলিস না। পৃথিবীতে এমন কিছু সত্য আছে যা কেবল নিজের জন্য, সবচেয়ে আপনজনকেও জানাতে হয় না।
// দুই //
এটা বোধহয় পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম যে, বাসররাতে বর-কনে দুজনেই নার্ভাস থাকে। একদিকে সবচেয়ে কাঙ্খিত, অন্যদিকে সবচেয়ে অস্থির রাত। সারাক্ষণ অজানা এক ধরনের টেনশন কাজ করে। কি করব আজ? আমাকে ওর ভাল লাগবে তো? কি বলে কথা শুরু করব? আমার কথা শুনে হাসবে নাতো? ইস্ যদি হাসে! কি লজ্জা! তবে নিশাতের মনে লজ্জার পাশাপাশি শঙ্কাও কাজ করছিল- সব কিছু ওকে খুলে বলব, নাকি বলব না? জাভেদ নিশাতের অন্ধকার মুখ দেখে বলল, কি মন খারাপ লাগছে? নিশাত কিছু বলছে না দেখে সে আবার বলল, স্বাভাবিক। ফ্যামিলি ছেড়ে তুমি এখানে এসেছ। তোমার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অবশ্য আমি তোমার পুরো ফিলিংসটা বুঝতে পারছি না কারন আমার কাউকে ছেড়ে আসতে হয়নি। তবুও আমি তোমাকে বোঝার চেষ্টা করছি। যদিও আমি মনে হয় এখন একটু নার্ভাস। প্লিজ মন খারাপ কর না। ধীরে ধীরে সব সহ্য হয়ে যাবে। স্বামীর মুখে এমন বন্ধুসুলভ কথা প্রত্যেকটি মেয়েই প্রত্যাশা করে। নিশাত ভাবল, জাভেদ তো বেশ ফ্রেন্ডলি! ও মনে হয় আমাকে বুঝবে। সবকিছু ওকে বলা উচিত। আমি কাউকে ঠকাতে চায় না। নিশাত বলা শুরু করল, আমি আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছি। - বল। কিন্তু ’আপনি’ করে কেন? এ যুগে হাজবেন্ড-ওয়াইফ কি আপনি-আপনি বলে? - না, তা বলে না। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা তো আমাদের অতীত জানি না। এটা বোধহয় আমাদের জানা উচিত। - অতীত জেনে কি হবে? পাস্ট ইজ পাস্ট। আমাদের অতীত আর এমন কি? আমি ছিলাম রুয়েটের স্টুডেন্ট আর তুমি ছিলে রাবির। তুমি আমাকে চিনতে না। আমিও তোমাকে চিনতাম না। এই তো। - হ্যাঁ সবই ঠিক আছে। তবে..মানে...কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না। - বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি। তুমি কি অ্যাফেয়ার নিয়ে কিছু জানতে চাচ্ছ? আমার কোন অ্যাফেয়ার ছিল না। তবে প্রেম করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি। ফাটা কপাল তো! তা তোমার কেউ ছিল নাকি? থাকতেই পারে। এ যুগে আমার মত গবেটের সংখ্যা খুবই কম যারা একটা প্রেমও করতে পারে নি। তা ছিল নাকি কেউ? ইচ্ছা হলে বলতে পার। আমি অতীত নিয়ে মাথা ঘামাই না। জানো আমি ঠিক করেছিলাম তোমার কোন অতীত আমি জানতে চাইব না। তুমি কথা তুললে তাই বললাম। কথাগুলো খুব প্রাঞ্জল ভাষাতেই বলল জাভেদ। একদম জড়তাহীন! যেন নিশাতের কাছ থেকে যেকোন কথা শোনার জন্যই সে প্রস্তুত। অতীত সম্পর্কের কথা শুনেও যেন সে কিছুই মনে করবে না। কিন্তু নিশাত একটু অবাকই হল যখন সে দেখল, তার উত্তর শুনে জাভেদের চোখ কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে গেল, ভার্সিটি লাইফে আমার একটা অ্যাফেয়ার ছিল। আমরা এক সাথেই পড়তাম। ছেলেটার নাম ছিল...। - থাক! বাদ দাও। আমি আর শুনতে চাই না। আগে ছিল। এখন তো নেই। অতীত অতীতই। ওটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। বর্তমানই আসল।
// তিন //
তিন মাস পর। স্বামী হিসেবে জাভেদ অসাধারণ। ওর মনটা আসলেই অনেক বড়। মা ঠিকই বলেছিলেন-জাভেদ খুব ভাল ছেলে। আসলেই ও খুব ভাল। আমি ওকে ভীষণ ভালবাসি। আচ্ছা ও কি আমাকে ভালবাসে? অবশ্যই বাসে। তা না হলে আমাকে এত আদর করবে কেন? ভাবছে নিশাত। কিছুক্ষণ আগে জাভেদ অফিসে গেছে। নিশাত ঠিক করেছে আজ সে ওর বুকসেলফ গোছাবে। জাভেদের বইয়ের কালেকশন বিশাল। বঙ্কিম, শরৎ, রবি, নজরুল থেকে শুরু করে হালের হুমায়ূন পর্যন্ত কি নেই সেখানে! বোঝাই যাচ্ছে জাভেদ ছিল বইয়ের পোকা। একেকটা বই মুছতে মুছতে নিশাত ঠিক করে এগুলো একটা একটা করে পড়তে হবে। হঠাৎ সেলফে বইয়ের ফাঁকে সে একটা ডায়েরি দেখতে পায়। দেখে মনে হয় কেউ ওটা লুকিযে রেখেছে। কার ডায়েরি? এ দেখি জাভেদের নাম লেখা। কি লিখেছে ও? দেখব নাকি দেখব না? দ্বন্দে পড়ে যায় নিশাত। অনুমতি ছাড়া তো কারোর ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া ঠিক না। আরে দুর! প্রয়োজন আইন মানে না। দেখি না কি লিখছে! “.....আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে নিশাতের একটা অ্যাফেয়ার ছিল। ও আমাকে এভাবে ঠকাল! ছি! আজকাল অ্যাফেয়ারের নামে কি সব করা হয় তা আমার ভালই জানা আছে। ওকে আমার ঘৃনা হয়। অসহ্য লাগে। আমি ভাবতে পারি না- যে ঠোঁট দিয়ে ও আমাকে আদর করে সেখানে হয়ত অন্য কারোর ছাপ রয়েছে..........। “ নিশাত আর পড়তে পারে না। তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সে চিৎকার করতে পারে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।