কম্বল

শ্রম (মে ২০১৫)

জুবাইউর রহমান রাজু
ফুটপাতের এক কোণে ঘুমিয়ে থাকে বশির । ভাল জায়গাগুলো বড়রা দখল করে ঘুমায় । ও তো ছোট, আর গায়ে জোরও নেয় যে ওদের সাথে ভিড়বে । এখানেও দখল হয়, ‘জোর যার জায়গা তার’ । তাই বশির রাত হলে ঠিক ঐ কোণটাই গুঁটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে ।
আগে বশির একটা ছোট খাবার হোটেলে টেবিল মোছার কাজ করতো । ভালই চলছিল দিনকাল । দু’বেলা খেতে পারতো পেটপুরে । তার উপর কেউ খুশি হয়ে দু’এক টাকাও দিত । একদিন হল কী , তার হাত থেকে একটা প্লেট পড়ে ভেঙে গেলো । সে কী আর ইচ্ছা করে ভেঙেছে ? কে শোনে তার কথা, মালিক মেরে তাড়িয়ে দিল । তারপর সে আর কোন হোটেলেও যায়নি কাজের জন্য । এখন সে স্বাধীন ভাবে কাগজ,বোতল,পলিথিন এসব টুকিয়ে বেড়াই । এর উপর কারো খবরদারি নেয় । যা আয় হয় তা দিয়ে দু’বেলা খেতে পারে সে ।
শুয়ে শুয়ে কত কিছু ভাবে বশির । এই ভাবনার ভিতর গাড়ির শব্দ প্রবেশ করতে পারে না । কত কিছু ভাবে সে । সবচেয়ে বেশি ভাবে, সে বড় হয়ে ঐ ছেলেগুলোর সাথে মোকাবেলা করে ফুটপাতের ঐ ভালো জায়গা দখল করে ওখানে ঘুমাবে । আর একটা স্বপ্ন দেখে সে । বড় হয়ে অনেক টাকা গুছিয়ে সে একটা খাবার হোটেল খুলবে । যেখানে সে তারমত কোন ছেলেকে মারবে না, না হয় ভাঙুক কয়টা প্লেট ! এই সব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে সে ।
শীতে বশিরের খুব কষ্ট হয় । এই কোণে খুব হাওয়া লাগে । গায়েও তেমন কিছু নেয় । সেদিন সে একটা বস্তা কুড়িয়ে পেয়েছে , এখন সেটা জড়িয়ে সে ঘুমায় । তাতেও ঠিক শীত ভাঙে না ! তাই কখনো পলিথিন উপরে জড়িয়ে দেয়, যাতে বাতাস কম লাগে ।
আজ বেশ আরাম করে ঘুমিয়েছে বশির । সকালেই তার ঘুম ভেঙে যায় । উঠে আড়মোড়া ভেঙে দেখে যে, তার গায়ের উপর একটা নতুন লাল রঙের কম্বল । দেখে আশ্চর্যই হয় বশির ! এটা কোথা হতে আসলো ? ভাবে সে । ভাবতে ভাবতে তার কারওয়ান বাজারে যে বন্ধু থাকে তার কথা মনে পড়ে যায় । সে একদিন বলেছিল যে, ‘অনেক সময় রাতে কলেজ, ইউনিভার্সিটি’র ছেলেরা কম্বল বিতরণ করে বেড়াই’ । হয়তো তারা কেউ সে যখন ঘুমিয়ে ছিল তার গায়ের উপর দিয়ে গেছে !
আজ খুব খুশি সে, লাল রঙের কম্বল পেয়ে । ঘুম থেকে উঠে সে কম্বলটি খুব সুন্দর করে ভাজ করে রেখে দেয় তার বস্তার ভিতর । এমন সময় মানিক, (যে প্রায়ই বশিরকে বকে,মারে ; যে ওপাশের ভালো জায়গায় ঘুমায় সে) বলে ওঠে , ‘এই ওটা কি দেহি ! আরে এইটা তো কম্বল ! তুই কই পাইলি ? তখন বশির বলে , ‘কাল রাইতে আমারে এইটা বিতরণ করছে’ । তখন মানিক বলে ওঠে, ‘কই আমগোর তো দেই নাই !’ ‘হের আমি কি জানি ? আমারে দিছে তোমগোর দেই নাই’ । বশির প্রতি উত্তরে বলে । ‘দে ঐটা ! আমারে দে !’ , মানিক ধমকের সুরে বলে ওঠে । ‘না, দিমু না । আমারে দিছে, তুমারে দিমু ক্যান ?’ এই বলে বশির তার বস্তা নিয়ে চলে যায় ।
সারাদিন টুকানোর পরে আবার বশির তার সেই কোণের জায়গায় এসে বসে । দেখে তখনও কেউ আসেনি । তখন সে কম্বলটা বস্তা থেকে বের করে নেড়েচেড়ে দেখে, তার গন্ধ শোকে । সকালে সে দেখতে পারিনি ভালো করে মানিকের জন্য । এখন দেখে সে প্রাণ ভরে, টকটকে লাল তার কম্বলটি । ঠিক তখনি দেখে মানিক আসছে, সে তাড়াতাড়ি কম্বলটি বস্তার ভিতর লুকিয়ে ফেলে । সবাই যখন শুয়ে পড়ে, তখন বশির তার লাল কম্বলটা বের করে গায়ে দেয় । এর গন্ধ তার খুব ভালো লাগে । সে ঘন ঘন গন্ধ শুকতে থাকে । তার যেন আজ রাত্রে ঘুমই আসে না ! সে কম্বলটি খুব শক্ত করে জড়িয়ে শুয়ে থাকে । হঠাৎ বশিরের মনে হয় কে যেন তার কম্বল ধরে টানছে । কম্বলের ভিতর থেকে মাথা বের করে ল্যাম্পপোস্টের আলোই সে দেখতে পাই, মানিক তার কম্বল ধরে টানছে । সে তখন বলে ওঠে, ‘আমার কম্বল ধরে টানো ক্যান ? ছাইড়া দাও !’ মানিক বলে, ‘না ছাড়ুম না, তুই এইটা আমারে দে !’ ‘না দিমু না, এটা আমার কম্বল তো’ । বশির কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠে । তখন বশির আরো জোরে টান দিতে থাকে । আর বশির খুব শক্ত করে ধরে থাকার চেষ্টা করে । মানিক আবার বলে ওঠে, ‘দিবি না আমারে ? দে কইছি !’ বশির এবার প্রতিবাদের সুরে বলে, ‘না দিমু না, এটা আমার’ । তখন মানিক তার পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে । বশির দেখতে পাই ল্যাম্পপোস্টের আলো লেগে সেটা চকচক করছে । ‘এবার ক’দেহি ! দিবি কিনা ?’ মানিক চোখ লাল করে বলে ওঠে । বশির সেই একই ভাবে প্রতিবাদের সুরে বলে ওঠে, ‘যতই আমারে ভয় দেহাও, আমি তুমারে আমার কম্বল দিমু না’ । মানিক কম্বল ধরে টানে আর জোরে জোরে বলে, ‘দে কইছি, দে !’ এভাবে টানাটানি চলার সময় পাশের আরো ছেলেরা জেগে যায় । তারা এসে চারিপাশে ভিড় করে মজা করে দেখতে থাকে । যেন মজার কিছু দেখছে । এমন সময় মানিক রেগে খুব জোরে বলে ওঠে ‘শেষ বার কইতেছি, কম্বলটা আমারে দে’ । বশির একই ভাবে প্রতিবাদ করে যায় । হঠাৎ মানিক, ‘দিবি না ? তবে রে’ বলে ছুরিটা বশিরের পেটে বসিয়ে দেয় । অকস্মাৎ ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সবাই চমকে ওঠে । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে বশিরের শরীর থেকে । বশির যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে, তার মুখ লাল হয়ে যায়, সে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না । এতক্ষণ যে ছেলে গুলো দেখছিল, তারা এবার ছুটে আসে । তাদের ভিতর থেকে কেউ একজন বশিরকে ধরে, ধরে বলে, ‘এই মানিক, এইটা কি করলি ? ওকে মেরে দিলি ! তরে এবার পুলিশে ধোরবো’ । এ কথা শুনে মানিক দ্রুত পালিয়ে যায় ওখান থেকে ।
সবাই দেখতে থাকে, বশিরের শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে কম্বল ভিজে যায় । রক্ত লেগে তার লাল কম্বলটি কেমন আরো লাল হয়ে ওঠে ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মির্জা মুকুল খুব ভাল লাগল ! ভোট দিয়ে গেলাম ।
নাসরিন চৌধুরী ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ দুর্বল হলে শোষিত-বঞ্চিত আর নিপিড়িত হতে হয়, প্রতিবাদী হলে জীবন উৎসর্গ করতে হয় ! আর মাঝামাঝি থেকে তৈল মর্দনের ভূমিকা গ্রহণ করলে জীবন রঙিন আর বৈচিত্রের স্বাদ পায় ! যদিও আখেরে সবাইকেই জীবনের মায়া ত্যাগ করতেই হয় । তাহলে আমরা কী করব আর কী করা উচিৎ ? বেশ ভাল লাগল ।
সোহানুজ্জামান মেহরান অনেক সুন্দর হয়েছে,শুভকামনা ও ভোট রইলো।

০৫ মার্চ - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী