অবগুণ্ঠন

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

সাদিক ইসলাম
  • ৬৮
রিনা তোমাকে না বলা কথাগুলো মনের ভিতর সবসময় এক অজানা অপ্রাপ্তিতে বেদনা জাগায়। তিল তিল সেই কথাগুলো আমার মনে জমে হতাশার সাগর সৃষ্টি করেছে; বেদনার মরুভূমিতে আমি দগ্ধ। তাই আজ আর মনে তা চেপে না রেখে লিখে ফেললাম। শুধুই তোমার জন্য। রিনার জন্য রাকিবের বলা এ শেষ কথা; জানিনা তোমার পাথর কানে তা কোনো অনুরণন তুলবে কিনা। তবু লিখে যেতে চাই যা শেষ হবার ছিলনা তা তুমি শেষ করে দিলে আর আমি তার পূর্ণ সমাপ্তি টেনে দিচ্ছি।

আমি নিজের সবটুকু নিয়ে তোমাকে এই নিজেকে দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এলে আবার চলে গেলে। তুলে রেখে গেলে এক দেয়াল। যে চায়না তাকে দিতে যাওয়ায় অযাচিত অধিকার নিয়ে বিরক্তি জন্মানোর ভয় থাকে। জানি শুধু এতটুকু আমার বলা অনেক কথা আছে মনে জমে আছে, কিন্তু তোমার দিক থেকে তা শোনার অনাগ্রহ আমার ব্যগ্র কথার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত। তবুও কথা দিয়ে আমরা না পাওয়া বেদনাগুলো বলতে চাই। কতোই তো কথা শুনো ; সেরকমি অযথা বলা কিছু উপেক্ষা ভরেই নয় শুনলে। নদীর বুক যখন পানিতে ভরে উঠে সে আর তা ধরে রাখতে পারেনা ; তা উপচিয়ে দুকূল প্লাবিত করে দেয় তেমনি আমার না বলা কথাগুলো জমতে জমতে মনের কূল উপচিয়ে যেই প্রান্তে গিয়ে আছড়ে পড়ছে আর তা শুধু তুমি। সেই তোমাকেই লেখা হৃদয়ে জমে ওঠা কথাগুলো বলতেই হলো আজ। নদী যখন তার বুক খালি করে জলরাশি ঢেলে দেয় তাতে শুধু দেয়া আছে নেবার শক্তি তার ছলছল বুকে শূন্য।

মানুষের যখন শেষ সম্বল বলে কিছু থাকেনা ; সব দুয়ার যখন তার জন্য বন্ধ তখন সে নিস্ব নয় কারণ তখন পুরো পৃথিবী তার জন্য অবারিত । এই পুরো সবুজ বনানী, ঐ সুনীল আকাশ, শত নদী, সাত সমুদ্র পুরোটা তার। শূন্য থেকে যে পূর্ণতা পায়, অদৃশ্য বাতাসে যে সুর ধ্বনি শুনে তখন সে হিসেবি দুনিয়ায় বেহিসাবি হয়ে যায়। জানি এই আমার মূল্য এখন তোমার কাছে কতটুকু। আমার এতো আছে তোমার কাছে তা সঙ্গত কারণেই মূল্যহীন। তাই আমার সবকিছুই যখন তোমার জন্য পুরো মূল্যহীন সেখানে এই লেখাও মাটিতে পা মাড়িয়ে যাওয়া মূল্যহীন শুকনো পাতা ভেবে নিও। উপেক্ষিত, অবাঞ্ছিত কিছু ভেবেই আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটি সময় হলে পড়ে নিও। যেমন ফুল বনে গেলে অবাঞ্ছিত কাঁটা হাত দিয়ে যেতে হয় ; তোমার ফুল বনে তুমি সুখ নিয়ে থাক এই কাঁটাগুলো অবহেলায় সরিয়ে রেখে। এ শুধু হাত দিয়ে লেখা নয় মনের গভীরতম কেন্দ্র থেকে আরেক আমি তোমাকে লিখতে বাধ্য করলো। এই হৃদয়ের সাথে বিশ্ব হৃদয়ের যে যোগ সেই শক্তি কেন জানি বারবার সঙ্গোপনে একটা তাড়া দিচ্ছে আরো কিছু বাকি আছে দেবার আরো কিছু বলার। কিন্তু তুমি বাস্তব চাওয়ার মোহে অন্তরের সেই নিরব ডাক শুনলেনা। কেন জানিনা কিংবা জানি বারবার ঘুরেফিরে আসো তুমি যতো দূরে ঠেলে দিতে বলে না পাওয়া মন, জানিনা কোত্থেকে এসে জুড়ে বসো তুমি এই তৃষিত মনে। যেমন আষাঢ়ের আকাশ জানেনা কেন হুট করে মেঘ এসে জমা হয় তার বুক জুড়ে।

মানুষ শুধু ধার করেই ঋণী হয়না ; কিছু ঋণ এতো ভারী যে তা পুরো হাতে ধরেনা তা শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায় মন জানে তা কতো দামি। তুমি একদিন যে মোহ দিয়ে আমাকে শিহরিত করেছিলে, যে গভীর ভালোবাসা সমান সাগরে সিক্ত করেছ তা আমি হাজার জনের মমতা, ভালবাসাতেও পাইনি; তাই নিজেকে এখনো তোমার কাছে ঋণী ভাবি। তুমি কিছুদিন আমার ছিলে তারপর চলে গেলে। হ্যা যেমন নিজের ইচ্ছাতেই এসেছিলে তেমনি নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছ। কিন্তু সেই প্রথম দিনের মতোই তোমার জন্য আমার চাওয়া এখনো সতেজ, নতুন, প্রাণবন্ত । তুমি না আসলে তোমাকে আমার ক্ষণিকের পাওয়া হতোনা। এ পাওয়া ছিলো দিকহীন পাখির কাছে বিশাল আকাশ পাওয়ার মতো। আঁধার রাতের পথিকের আলোকের সন্ধান পাবার মতো। যেমন এসেছিলে শূন্য আমাকে পূর্ণ করে তেমনি চলে গেছ সেও তোমার একান্ত নিজের ইচ্ছায়, পূর্ণ আমাকে চির অপূর্ণতা দিয়ে। কিন্তু ফাগুন চলে গেলে যেমন কোকিলের ডাক শোনা যায়না তবে কোকিল সেই মধুর গান বুকে চেপে রাখে অনাগত বসন্তের আশায়। আমিও তেমনি আশা বুকে চেপে রেখে কী অনির্বচনীয় চাওয়ায় তোমাকে ভেবেছি এ জীবনের ফিরে আসা বসন্ত আবার আসবে ফিরে আসবে তুমি মন চায়, খুব বেশি আকাঙ্ক্ষায়। তুমি যে আমার এপারওপার দুপারের জন্যই মনে গেঁথে গেছ তা আমি বুঝলেও বুঝলে না তুমি। জেলখানায় হাজার লোক বন্দী থাকে শুধু তাদের দেহটা বন্দী থাকে মন ঘুরে বেড়ায় দেয়ালের ওপারে। তাই আমার মনের কয়েদি আমি তোমাকে করতে চাইনি। যে থেকেও থাকবেনা যখনি তা বুঝে গেলাম তোমাকে বিন্দুমাত্র বাধা দেইনি তাই। তোমাকে পেয়ে তোমার মন না পাওয়া যে হতো আরো বেশি অপ্রাপ্তির আর বেদনার তাই তুমি চলে গেলে ছেড়ে দিয়েছি, আপন ভাবা গাছ যেমন মুক্তি দেয় পরাযয়ী পাখিকে তেমনি। সময় আর মন দুটোর একটিকেও বেঁধে রাখা যায়না। যাক সে কথা। কিন্তু তুমি চলে গিয়ে বারবার কেন এতো কাছে আসো? না থেকেও কেন এতো উপস্থিত? দূরে গিয়েও কেন এতো নিকটবর্তী ? জানিনা কে দেবে এর উত্তর এই ক্ষুদ্র মনের বিরাট চাওয়ার? আমি ভুলে গিয়েও কেন শতবার দেখি কী এক অজানা কারণে তুমি মনে এসে সেই রিনা হয়ে কড়া নাড়ো। অদৃশ্য বাতাস যেমন হঠাৎ সুগন্ধ নিয়ে এসে প্লাবিত করে দক্ষিণ থেকে উত্তর কূল তুমিও তেমনি এই পুরো আমাকে অদৃশ্য মায়ায় ঘিরে ফেল অজানা সুদূর থেকে এসে নিমিষে বারবার।

গতরাতে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম। সেই অতল অনুভূতি আমার বাস্তবের সবকিছু অর্থহীন করে দিচ্ছে। স্বপ্নে তখন তুমি শুধুই আমার বিশ্ব চরচরে আমি আর তুমি নেশা ভরা সেই ক্ষণ আমাকে এখনও বিভোর করে রেখেছে। তখন মধুর সাগরে ডুবে নিখাদ তোমার দুচোখে দেখেছি তৃপ্তিময় ভালোবাসা আর ভালোবাসা। সেই তুমি চলে গেলে স্বপ্নে এসে কিন্তু মন থেকে একদম পারছিনা তোমাকে দূরে ঠেলে দিতে।

তুমি সব যোগাযোগ ছিন্ন করেছ তবুও সব বিচ্ছিন্নতা, বিচ্ছিন্নতা নয়। দূর আকাশের তারা কি জানে কতো বুভুক্ষু মন তার আলোক বিভায় মুগ্ধ তাদের রাত কাটায় নিঃশব্দ উজ্জ্বল তারার দিকে তাকিয়ে? তেমনি তুমি দূরে গিয়ে হয়েছ আরো উজ্জ্বল আরো আকর্ষণীয় আবেদনে আরও বেশি আলোকময় । নিঃশব্দ চাওয়া তাই আমার ব্যথিত কামনার নিত্য সঙ্গী এখন। যার চাওয়া মিটেনা তার জন্য অস্থিরতা খুব বেশি প্রবল। বাহিরে তাই চুপচাপ আমি ভিতরে তোমার ঝড়ে তোলপাড় হয়ে যাই দিন রাত। কিন্তু তুমি এসব বুঝবে না তা জানি কারণ তোমার মন এখন এই মনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবে কোনো মূল্য দেখেনা। কেন জানি মনে হয় শুধু বিতৃষ্ণা নয় আমার জন্য তোমার মনে অনেক ঘৃণা। যে মন ভালোবাসে তার বোঝার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই অনেক বেশি ভালোবাসা অনেক বেশি প্রকাশ করে আমার কাছে তোমার চাদরে ঢাকা মন। কেন আমার জন্য ঘৃণা? কারণ আমার চাওয়ার আধিক্য, বাড়াবাড়ি? আমার বেশি চাওয়ার ব্যাকুলতায় তুমি হয়ত হারিয়ে ফেলছিলে নিজেকে। তাই আড়াল করে নিলে নিজেকে অথবা আমার বেশি চাওয়া তোমার ব্যক্তি তুমিকে বিরাগী করে দিলো আমাকে। এতো কবিতা, এতো গান, এতো গল্প সবতো সেই না বোঝা মনকে নিয়েই। বৈশাখী বাতাস যেমন তীব্র শক্তি নিয়ে বসন্ত বাতাসকে গৃহহীন করে ; তোমার মনের কঠোর সেই ধাক্কা আমার মনের বসন্ত বাতাসকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। তাই তোমার মনে আমার অযাচিত চাওয়া খুব বেশি প্রত্যাখ্যাত হয়। আমি কিন্তু লুকিয়ে রাখি আমার রক্তিম বেদনাগুলো; গাছ যেমন রক্তিম ফুলগুলো লুকিয়ে রাখে ঘন পাতার আড়াল করে তেমনি। তবু মাঝে মাঝে পারিনা এই যেমন আজ সব দ্বিধা, সব জড়তা, সব সংশয়, সব ভয় ফেলে যেই কথা আমার ছোট্ট বুকে পাহাড়ের মতো ভার নিয়ে তার নিদ্রিত লাভায় দগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত আমার চিন্তার চিতাকে তা না বলে পারলাম না। আমার কাছে জীবনমরণ এই সংকট হয়ত তোমার কাছে সময় অপচয় তবু আমাকে লিখতেই হলো। কিছু পাবার আশা নয় এ, এই মন যে তোমাকে হৃদয় কাননের সব ফুল হাত ভরে দিতে চায় আজও তাই জানাতে উন্মুখ এই মন। মেঘপুঞ্জ নিয়ে আকাশ অপারগ হয়ে যেমন তার বৃষ্টিকে ছেড়ে দেয় হৃদয় ছিন্ন করে আমার এই কথাগুলোও হৃদয় ছিন্ন করে বলা তোমার জন্য যা বইবার ক্ষমতা আমার জল ভরা হৃদয় হারিয়ে ফেলেছে।

জানি সবার প্রতি সবার অনুভূতি একরকম হবেনা তা ঠিক। আর দিন মানে আলো, রাত মানে আঁধার আর বসন্ত মানে ফুল এ যুগান্তরের খেলা তারপরও এর মাঝেই মানুষ কতো পরিবর্তনশীল, তাই না? তুমিও মানব নিয়মের বাইরে নও। তোমার প্রতি আগেই বলেছি আমার কোনো অনুযোগ নেই। যা আছে তা শুধুই প্রাপ্তির লাভ স্বীকার করা। তোমার অনিন্দ্য সুন্দর লাবণ্য ভরা মুখ আর পাখির মতো মধুর সুরেলা কণ্ঠই তো আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসতে, সবকিছুতে পরম সুন্দরের ছোঁয়া দেখতে। তাই যার কাছে এতো পেলাম তাকে আবারও বলি তোমার উচ্ছল, ঝরনার মতো প্রবাহিত জীবনে আমি কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনা; এ আমার নিজের মনকেই তুষ্ট করা তোমাকে তোমার সঞ্চিত আমার কাছে অমূল্য অনুভব আবার ফিরিয়ে দেয়া। না ফিরিয়ে দেয়া নয় প্রাপ্তি স্বীকার ; আমার তেমন কিছু নেই তোমাকে দিবো। তা বললে হবে বাড়াবাড়ি। তুমি কেন এই পুরো পৃথিবীতে এতো দূরে, কেন বিন্দু পরিমাণও সাড়া দাওনা তাও বুঝি, বিরক্তি, অপছন্দ, ঘৃণা কিংবা অযথা উৎপাত। সত্যি কথা বলি আমি তোমাকে খুব বেশি সুখি দেখতে চাই। কেন জানিনা অন্য সবার চেয়ে তুমি বেশি প্রিয় কিছু না পেয়েও পরিত্যক্ত হয়েও তোমার জন্য অফুরান শুভ কামনা আর অজানা ভাল লাগার তীব্রতা । কল্পনায় এখনো তোমার ঠোঁটের কোণের অব্যাখ্যায় হাসির মধু ভরে দেয় মন মিষ্টতায়। সেই মধুমাখা মুখ তেমনি থাক কাছে বা দূরে যেখানেই থাকো।

ভালবাসা দুই ধরনের ; এক ভালবাসা পেয়েই খুশি আরেক ভালবাসার পরিপুষ্টি হয় প্রেমিক জন যখন সবটুকু দিতে পারে। এই জীবন কিছুনা শুধু এক ঘুম ; মৃত্যুতে আবার জেগে উঠবো অনন্তকালের না ফুরানো সময়ে। তখন আমরা আলাদা মানুষ। তখন শরীর হবে স্বচ্ছ আর হৃদয় শরীরের মতো দৃশ্যমান যা দেখা যাবে ; যদি দেখ তখন দেখে নিও সেই হৃদয়ে শুধুই তুমি কতো বেশি ভাবনা, মুগ্ধতা নিয়ে জুড়ে আছো; সাগর যেমন বুকে মুক্তা ভরাট করে অপেক্ষায় থাকে তার প্রিয়তমাকে দেবার জন্য কিন্তু প্রিয়তমা শুধু নোনা জল দেখে সাগরের এতো অধিক ভালবাসা অবহেলা করে যায়। তুমি হয়ত চোখ দিয়েই শুধু বাহিরের আমিকে দেখেছ । ভালবাসার নেশায় মত্ত একজনের কূলহীন সাগরের মতো অতল সেই ভালোবাসা দেখলেনা। আমি মুখে যতোনা বলতাম হৃদয় দিয়ে অনুভব করতাম বেশি। কিন্তু আমার দেবার তো শুধুই হৃদয় ভরা ভালোবাসা জানিনা এর মূল্য এখন কতো। তাই হয়ত রূপ সাগরের মায়ায় না ভুলে কায়ার পৃথিবীকে নিলে তুমি বেছে। আমি অনেক দেখেছি রাজার গৃহেও অশান্তি আবার মজুরের ঘরে ঝরে পড়ে স্বর্গ। তাও তুমি বুঝ ; তবুও কেন চলে গেলে কেন এই দেয়াল দিয়ে দিলে আমি পারিনি কখনোই বুঝতে। সাগর যেমন সীমাহীন সুনীল আশ্রয় তেমনি সাগরের কূল ছেড়ে যখন কেউ চলে যায় সেও অনেক দূরেই সরে যায়।

সবার কি আছে সেই ক্ষমতা, দুপুরের রূপালি রোদে সেই সত্তার আশীর্বাদ কি সবাই দেখে? না। তবে হ্যা কেন জানি মনে হয় আমি দেখি। গাছের মনোহর পাতার সৌন্দর্যে এক অদৃশ্য মায়া বাসা বাঁধে ; সে মায়া সবাই উপলব্ধি করেনা আমি করি। পানির জলের শব্দে যে অস্ফুট ধ্বনি সে কী বলে সবার ইন্দ্রিয়তে তা সাড়া ফেলেনা - আমার ফেলে। সেখানে আমি যা শুনি তা দশ সাগর নিরাশার তীরে দাঁড়িয়ে আমাকে সেই মায়াবী সমুদ্রের ঢেউয়ের বাণী শুনায়; যে সমুদ্র একদিন ওপার থেকে এপারে এনেছে আমাদের ঢেউয়ের দোলায় ঠেলে । আবার সেই সমুদ্র সমান দূরত্ব নিয়ে তুমিও চলে গেছ ধরাছোঁয়ার বাইরে। একবারও কি বলে যাওয়া যেতনা যাবার কারণ কী? একবারও কি বলা যেতনা এখন এই তুমি সেই তুমি আর নেই। কিংবা সেই আমি আগের মতো আর আকর্ষণ করিনা। একবারও কি আমারও যে একটা মন আছে যেমনটা তোমার মন নিজের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিল তেমন এক মন। তোমার মনে যদি মন্দ লাগা থাকে তবে আমার মনের ভালোলাগা তার দোষ কি খুব বেশি? যে জিনিস পছন্দের নয় তা বুকে জড়িয়ে রাখলেও হৃদয় বুঝে সে এই বুকে স্থান চায়না। তাহলে ছুঁড়েই যদি দিবে তবে হাতে তুলে ছুঁড়ে দিলেই কি ভালো হতোনা? তুমি আমার নও তা জানালে আমিও কি মুক্তি পেতাম না দিকহীন প্রেমে, আশাহীন জীবনে শত আশা নিয়ে অযথা দিন গোনা থেকে? আগাছা জন্মে যেমন সুন্দর ফুলকে গিলে খায় আমার মনের মূল্যহীন চিন্তাগুলো তবে সত্যকে এভাবে গ্রাস করতো না।

আলোতে, বাতাসে, জলে সবুজে এক অলক্ষ্য সুন্দর বলে দেখ এই সুন্দর একদিন তোমারও ছিলো। যে বাতাস আজ কান্নার শব্দে বয়ে যায় সে গান হয়ে বয়ে যেত এক সময়। এক সময় গাছের কাঁটাকেও মনে হতো মধুর বেদনা; ফুলের সাথেই তো তার বাস। কিন্তু আজকাল ফুলগুলোও যেন বেশি রক্তাক্ত মনে হয় যুগযুগ বেদনার লাল অসহ্যভাবে সে প্রকট প্রকাশ নিয়ে এই বেদনার পৃথিবীর বুককে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। সুদূরের যে মায়া তোমার সসীম কায়াতে দেখেছি তা অন্য কেউ দেখতে পারবেনা। আমার দুচোখেই শুধু ধরা পড়ে তোমার সুন্দরের সেই গৌরব আবার দেখি সেই নিখুঁত চোখে আমার প্রতি ইস্পাতের কঠোরতা।

যে আকাশের নিচে নিয়ে তোমাকে ঘুরেছি, সে নদীর জলে তোমার সাথে নৌকা বয়েছি, যে সবুজ বনানীতে তোমার সাথে কেটেছে সময় আনন্দকে হার মানিয়ে, সেখানে, সবখানে এখনো তুমি মিশে আছো। এই মায়াময় বিশ্ব প্রকৃতি এখনো আমাকে ভয়ংকর চিহ্ন নিয়ে বলে ; একদিন তুমি ছিলে আর আজ তুমি নেই। সব স্মৃতিতেই তাই মিশে আছো তুমি। তাতে অনেক কিছু লেখা যে মন পড়তে পারে সে তা দেখে ; সেখানেও অনেক বোঝার রেশ থেকে যায়, যে মন প্রিয়া কাতর সেই শুধু তা বুকের ক্ষতে তা বুঝতে পায় । ক্ষুদ্র একটা ফুলও আমাকে বলে একদিন দুই উষ্ণ নিশ্বাস তাকে আরো প্রাণময় করেছিলো । আজ সব ফুলকেই নিষ্প্রাণ মনে হয়। তাই নিরাশার সাগর তীরে আমি আশার সমুদ্রে ডুবে যাই। আমার আছে কল্পনা, ভাবনা, স্বপ্ন, অনিঃশেষ চেতনা। সেই চেতনালোকে আছো আছো আছো।

তুমি দাঁড়িয়ে থেকো সামনে পাহাড় রেখে আমি তবুও আশাহত নই। আমার বিশ্বাসী মন জানে পাহাড় যতো আড়াল করবে তুমি তত বেশি চাক্ষুষ হবে মনের চোখে। তুমি পর্দার আড়ালে যতো অস্পষ্ট ; মনের ভিতরে তারচেয়ে শত গুণ স্পষ্ট। তুমি হাজার রাতের আঁধারের পর্দা দিয়ে রেখ আমি জানি আরেক সূর্য উঠে যার ডুবে যাওয়া নেই; সেই অনন্ত কালের সূর্যের আলোকে তুমি চির আলোকিত এই মনে। তুমি শীতলতা হয়ে বরফ জমিয়ে রেখ আমার পুরো জীবন জুড়ে আমি সেই তীক্ষ্ণ শীতেও শুষ্ক হবনা রুক্ষতার ভয়ে। তুমি মনকে পাথর করে রেখ; যুগযুগান্তর ভালোবেসে আমি তা গলাবো। যে হৃদয় কঠোরতায় কোমলতা বুঝে বেশি; যে হৃদয় এক শীতে শত বসন্তের বারতা পায় অসীম তীর থেকে, তার কি ভয় আছে এক শীত যন্ত্রণায়? আমি তাই শীত বেশি চাই, বেদনা চাই, পাথরের মতো আঘাত চাই। যেখানে কঠোরতা নেই সেখানে কোমলতার আবিষ্কার নেই। যেখানে শীত নেই বসন্ত সেখানে তৃপ্তিহীন । যেখানে ব্যথা নেই সুখও সেখানে পুরো আনন্দময় হয়ে উঠেনা । ক্ষুধার্ত পেটে স্বাদহীন খাবারও অনেক সুমিষ্ট । যে বুকে তীর বিঁধে সেই বুঝে তীর উপড়ে ফেলার পর কী শান্তি! তাই তোমার এই তুচ্ছ করাকে অভিবাদন, এই ঘৃণাকে ভালবাসা, এই উপেক্ষাকে আলিঙ্গন, এই দূরে ঠেলে দেয়াকে চির স্বাগতম, এই আঘাত বুকে পেতে নিয়ে চির সুখি তোমাকে দেখা; সে এক সীমাহীন তৃপ্তি ।

যেখানে অবগুণ্ঠন নেই মুক্ত প্রান্তর, সেখানে দেখবারও বাসনা ম্রিয়মাণ। কিন্তু যেখানে দেয়াল আছে তার ওপারে না দেখা অপরূপ গোপন বাসিনীকে থাকে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। শরত বৈশাখের মতো চিৎকার করে আসেনা তাই সে আরো মধুর, নিরব সৌন্দর্য নিয়ে হৃদয় জুরিয়ে দেয়। তাই যে দেয়ালের ওপারে তুমি তা টপকেই আমার তৃতীয় নয়ন ধাবমান সেই তুমির জন্য। অস্থির, কূলভাঙ্গা ঢেউ, অশান্ত বাতাস খুব সহজেই তার উপস্থিতি জানান দেয় কিন্তু যে দৃষ্টিসীমার বাইরে, শান্ত, সৌম্য সে আরো মাধুরী নিয়ে টানে তার স্নিগ্ধতা নিয়ে। যারা আসে যায় তারা তো হাতের মুঠোয় তুমি নেই তাই শূন্য হাত পরিপূর্ণ হবে বলে অপেক্ষায়; তুমি নেই তাই কল্পনা কতো কাতর তোমার বাসনায়, বিরহী মন কতো বড় হয়ে যায় নিরাশাকে আশা বানিয়ে। তাই না পাওয়া তোমার জন্য আমার মনের বাগানের শুদ্ধতম, সুগন্ধ কলি অঞ্জনি বেঁধে রাখি। তোমার এই নিঃস্পৃহতা আমার প্রেমহীন হৃদয়কে একদিন, প্রতিদিন, চিরদিন করে তুলে স্পন্দিত, প্রেমময় আর অধীর। তুমি নেই কে বলে আমি সঙ্গীহীন। যে আমার শূন্যতাকে ছাপিয়ে দেয়। আমার অপ্রাপ্তিকে করে পূর্ণ, আমার পানসে ভাবনা রঞ্জিত করে সে যতো কঠোরই হোক সেই স্নিগ্ধতা, ভালোলাগা, চাওয়া অফুরান হয় প্রতিক্ষণ । তাই না থেকেও তুমি সবসময় বর্তমান। তুমি থাকলে হয়ত চাওয়ার শেষ দেখে ফেলতাম ; তুমি নেই তাই চাওয়া সুগন্ধ, উষ্ণতা, তৃষ্ণা নিয়ে না পাওয়াকে কতো বর্ণীল, সুগন্ধময় করে দেয়। তোমার অবহেলা, কঠোরতা, প্রত্যাখ্যানের দেয়াল বারবার তোমার মধুর স্পর্শ দিয়ে যায়। আমার স্বপ্নহীন দিনগুলো তুমি স্বপ্নে ভরে দাও। তোমার না বলা কথা অদৃশ্য বাতাসে এসে সুর হয়ে বাঁজে কানে বলে সে আছে; দূরের সেই জন। তাই হাতের কাছে যাদের ধরে রাখি তারা আপন হতে পারেনা দূরের তুমি মনের আরো কাছে। আমার নিষ্প্রাণ কথাগুলো তাই কবিতা হয়ে যায়। আর কিছু লেখার শক্তি নেই ভাবনায় পোঁড়া ক্লান্ত মনে। জানি চিঠিটা পড়ে তুমি বিরক্তভরে ফেলে দিবে ; কিন্তু এই আমি, রাকিবের মনে তোমার জন্য যে অনুভূতি আর ভাবনা তা চিরস্থায়ী থেকে যাবে পাহাড়ের বুকে ঝরনাধারা যেমন অবিরাম কান্না হয়ে ঝরে আমার বুকের অনুভূতিগুলো ঝরবে অনাদিকাল। তোমার নতুন জীবনের নতুন চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিয়ে ভালো থেকো; থেকো পৃথিবীর সুখিতম ব্যক্তি হয়ে। শুভ কামনা নিরন্তর।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী যদিও বলা হলো ’ক্ষুদ্র লেখাটি সময় হলে পড়ে নিও।’ ততোটা ক্ষুদ্র অবশ্য ছিল না। অনেক উপমা ছিল। অবশ্যই চমৎকার। কিন্তু বেশি থাকায় কিছুক্ষণ আগে কি ছিল সেটা মনে পড়ে না। হয়তো রিনাকে বেশ ক’বার পড়তে হয়েছিল এই চিঠি। যে অনুভূতির মর্যাদাই রাখেনি তার কাছে সহজে কি এত অনুভূতি প্রকাশ করা যায়? কত দ্বিধা যে জড়িয়ে যায়। সে যে বড়ো দূরের মানুষ। তাই হয়তো শেষ চিঠি দীর্ঘ হয় না অথচ গভীর হয়। কষ্ট চিড়ে চিড়ে পড়ে থাকে কিছু অক্ষরের ফোঁটা। যেখানে অনেক কিছু বলার বাকি থাকে। ব্যর্থ প্রেম তো এরকমই। কে জানে ভুল বকলাম কি না। সে যাক আপনার গল্প শেষ পর্যন্ত ভালো লেগে যায়। সুন্দর সব ভাবনা থাকে। শুভকামনা।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী ১মে যে কয়টি গল্প পড়েছিলাম, কিন্তু মন্তব্য করিনি তারর মধ্যে আপনারটিও একটি। গল্পের বর্ণনা কাব্যিকতার মত বলে অনেক ভালো লাগলো। চিঠি আকারে ধারাবাহিকতাও দারুণ হয়েছে। অনবদ্য শুভকামনা কবি.....
Amir Islam ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি গল্প উপহার দেবার জন্য। দেখলাম আদম ব্যাপারী কবি কয়েকটা মন্তব্য করেছিল। এখন দেখি নাই। যাক খোলা মাঠে গোল দেবার ব্যবস্থা করে উনি বলেন ঝড় তুলবে। আপনারা একটু সাবধান থাকবেন। উনার আরো কয়েকটা এজেন্ট আছে এখানে। এজেন্টদের মহিলা বন্ধুর লিস্ট দেখলেই চিনতে পারবেন। যাদের আগমনের ব্যাপারে আগেই জানিয়েছিলাম সবাইকে। যা হোক উপরে সবাই আপনার লেখা পছন্দ করেছে (শুধু উনি ছাড়া-মুছে দিয়ে ভাল করছেন)। উনি আবার নতুন কারো ভাল চায় না। যা হোক ভাল লাগল। ৫ দিলাম। একটা কথা বলব ভাই-ভাল লেখা হলে কাউকে বার্তা পাঠিয়ে আনতে হয় না (উনি যেটা করেন)। আমরা ভাল লেখা পেলে পাঠক এমনিই পড়বে। ভোট দিবে, সুনাম করবে, আনন্দ করবে। উনার মতো ঝড় বা জ্বর তুলবে না। ভাই আরো লিখবেন।
হ্যা আমির ভাই এখানে সবাই আনন্দ ভাগ করি। মজা করি নতুন কিছু শিখি। সবার মাঝে বড় আন্তরিকতা। আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো। আমার ভালবাসায় সিক্ত থাকবেন সবসময়।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বুঝাই যাচ্ছে লেখালেখি আপনার অনেক দিনের অভ্যাস। আমি যতটুকু জানি আপনি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় লিখে থাকেন। আমারও কিছু লেখা সেখানে মাঝে মধ্যে থাকে ভিন্ন নামে। গল্পটি বুঝতে গেলে চোখ বুঝে চিন্তা করতে হয়। অন্তর্নিহিত ভাবটি অন্তর দিয়েই অনুধাবন করতে হয়। ভিন্ন এক কঠোরতা দেখলাম গল্পটিতে বন্ধু। ভালো লাগল। মন ভরেই ভোট দিলাম। আর পছন্দ না করলে কি হয়? দোয়া করবেন।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় লেখক। আপনার মন্তব্য অনেক অনুপ্রাণিত করলো। কী চমৎকার করে গপ্পটির ভাব আবিষ্কার করেছেন। আপনার মতো সবাই উৎসাহ দিলে দেশে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হুমায়ুন সৃষ্টি হবে। আপনার লেখার যাদু মিস করছি। আশা রাখি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো একদিন বই আকারে পড়তে পারবো। অফুরন্ত শুভ কামনা।
মৌরি হক দোলা বুঝতে পারলাম না, প্রথম দিন আপনার গল্প খুঁজলাম পেলাম না। যাক, এখন তো পেয়েছি! চিঠি আকারে গল্প! খুব ভালো লাগল.......শুভকামনা........
হুম আমি পাঠিয়েছিলাম ঠিক একটু ভুল ছিলো পরবর্তীতে গল্প কবিতা তা ঠিক করার সুযোগ দিলো। গল্প কবিতাকে ধন্যবাদ আর তোমাকেও গল্পটি পড়ার জন্য।
মৌমিতা পুষ্প মাঝে মাঝে মানুষের মন কেন জানি কাঠখোট্টা হয়ে যায়। যার কোন ব্যখ্যা নেই। ব্যখ্যা নেই কেন কোমলমতি মনের এ হঠাৎ পরিবর্তন। ভাল লাগল গল্পটি। ভোট দিলাম। আমার কবিতাটি পড়ার অনুরোধ রইল।
আপু অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য ও ভোট করার জন্য। অবশ্যই যাবো আপনার গল্পে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

রিনা আর রাকিব গল্পের দুই চরিত্র। রিনা রাকিবের এক সময় গভীর সম্পর্ক ছিলো। রাকিব রিনাকে প্রচণ্ড রকমের ভালবাসে, কিন্তু হঠাৎ রিনা যে নিজেও রাকিবকে ভালবাসতো কিছু না জানিয়ে চলে যায়, তাদের সম্পর্ক আর রাখেনা। তাদের মাঝে এক দেয়াল তৈরি হয় কোমল রিনা যা তৈরি করে কোনো অজানা কারণে। এই অবগুণ্ঠন রাকিবের জীবনে নিয়ে আসে সীমাহীন হতাশা, না পাওয়া। রাকিবের মনের কথাগুলো সেই দেয়াল তুলে দেয়া কঠিন, কঠোর, কাঠখোট্টা রিনাকে বলা শেষ কথা। রিনার এই মানসিক কঠিন ও কাঠখোট্টা মনকে নিয়েই লেখা গল্পটি।

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪