দুই রমণী

রমণী (ফেব্রুয়ারী ২০১৮)

সাদিক ইসলাম
  • ১১
ডাকাতদল মাঝরাতে আমার বাসায় এসে দরজা ভেঙ্গে ফেলে নিঃশব্দে ; কিন্তু আমি টের পেয়ে যাই ; সে রাতে ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা। বাতাসে মনে হচ্ছিল লক্ষ লক্ষ শীতল ছুরি ভেসে বেড়াচ্ছিল। তাই এই ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে আমার পক্ষে ; লেপের গরম ছেড়ে- ডাকাতগুলো কে শায়েস্তা করার কোনো ইচ্ছাই ছিলনা। আর আমার সাহসের কথা নাই বা বললাম। পাশে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল আমার বউ। তার নাক ডাকার প্রকট শব্দে মনে হচ্ছিল ঘরের প্রতিটা ফার্নিচার দুলছিল। আর আমি লেপের তলে অনলাইনে আমার বান্ধবী রিনার সাথে প্রেম করায় মশগুল ছিলাম ; যেটা ছিল সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ডাকাতগুলো হালকা আলোর টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আমার ঘরে ঢুকলো। ওদের টার্গেট ছিল দামি কিছু হাতড়িয়ে নেয়া। ওরা যখন আমার বৌয়ের আলমিরাটার লক খুলছিলো আমি টের পেলাম ; আমি লেপের ছোট্ট একটা ফাঁক দিয়ে পরিষ্কার দেখলাম সব। ডাকাতরা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলো আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর আমার বউয়ের নাক ডাকার গর্জন ডাকাতদের আরো নির্ভার অবস্থায় ডাকাতি করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো । লেপ দিয়ে মুখ ঢাকা স্বামী আর বিকট নাক ডাকা বউয়ের ঘরে দরজা ভাঙ্গা বা ডাকাতি করতে খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়না।
কাঠের দরজা আরামছে ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তাই নির্ভার ডাকাতরা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার না করেই তাদের চুরি মানে ডাকাতিতে নেমে পড়লো। চোরদের চেহারা দেখলে বোঝা যায় কেমন একটা ছিঁচকে ছিঁচকে ভাব থাকে আর ডাকাতদের মধ্যে একটা ভাবগম্ভীর ব্যাপার থাকে তাই লোকগুলোর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর রাশভারী আচরণ দেখেই বুঝলাম এরা ডাকাত; আমি দরজা কাটার শব্দও পেয়েছিলাম কিন্তু রিনার সাথে নেটে গল্প করতে গিয়ে এতো যত্নবান প্রেমিক ছিলাম যে মনকে বুঝালাম ইঁদুর হয়ত কিছু কাটছে কিন্তু ফিসফিস আওয়াজ আর এক এক করে দা, বল্লম হাতে নিয়ে তিনটা হোমরাচোমরা লোক ঘরে ঢুকে পড়লো; পরিষ্কার বুঝলাম আজ আমার বাড়িতে ডাকাতি হতে যাচ্ছে। নাক ডাকা গৃহিণী আর জন্ডিসের রোগীর মতো বিছানায় আমাকে দেখে অভিজ্ঞ ডাকাতদল তাদের বেশিরভাগ অস্ত্রসস্ত্র পাশের ঘরে রেখে আমাদের ঘরে তাদের আসল কাজের জন্য মনোযোগ দিলো। আমার বৌ; আপনারা জানেন সেই সন্ধ্যাতে তার সাথে আমার এক পশলা ভালো হাতাহাতি হয়ে গেছে; যা প্রায় প্রতিদিন হতো। তাই ডাকাতদের এই ডাকাতি আমার কাছে প্রতিশোধ টাইপ মনে হচ্ছিল ; আমার বউকে শায়েস্তা করার একমাত্র উপায় আলমারিতে রাখা তার অতি আদরের সোনাগুলো লোপাট হওয়া। তাই আমি ইচ্ছে করেই চুপ থাকলাম এমন ভাব করলাম আমি লেপের তলায় পাথর হয়ে শুয়ে আছি আর একচুল পরিমাণ নো নড়াচড়া । আর আমার বাসায় আমার নিজের জিনিসপত্র ডাকাতির জন্য উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ছিলনা। তাই চাইছিলাম আমি সারাজীবন যার কাছে নিপীড়িত তার আজ চরম একটা শিক্ষা হয়ে যাক । কিন্তু শেষমেশ যে পরিণতি এতো ভয়াবহ হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। সেটা আপনারাও জানতে পারবেন।
যাহোক, আমি মনে প্রাণে চাইছিলাম ডাকাতরা আমার পক্ষ হয়ে ওকে শায়েস্তা করুক। কিন্তু আমার বৌ ছিল এক সুচতুর মহিলা। ও ঘুমের ঘোরেও ঠিক টের পেত বিড়াল টেবিলে উঠে মাছভাজা খাচ্ছে কিনা। আর মোবাইলে রাত জেগে আমি যে কী করি না করি তাও সে ভালোমতো জানতো আর এটাও জানতো আমার দৌড় কতদূর। যেটা বলছিলাম আমার বউ যেমন এক সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমিয়ে যায় তেমনি বিপদ সামনে আসলে এক সেকেন্ডেই ও জেগে ওঠে। তাই যখন ওর আলমারি ভাঙ্গবার ঠংঠং শব্দ হলো, যদিও ডাকাতরা চোরের মতোই খুব সাবধানে আলমারির দরজা ভাঙ্গছিল, ও দুম করে ওঠে পড়লো। ঘুমের ঘোরেই কর্কশ গলায় চিৎকার দিল কে কে ওখানে? বুঝতেই পারছেন আমার প্রিয়তম গার্লফ্রেন্ডের সাথে গল্পের মাঝে তা কতো বড় বাধা। আমি লেপের নিচে সেপ্টে গিয়ে মোবাইলটা এমনভাবে নিলাম যাতে আমার স্ত্রী ঘুণাক্ষরেও টের না পায় আমি মোবাইলে তখন অন্তরঙ্গ মুহূর্তে রিনার সাথে গল্প করছি । আমি এতো আস্তে আস্তে নিশ্বাস নিলাম যেন একটু শব্দও না হয়; আর মাঝে মাঝে এমনভাবে নাক ডাকলাম যেন আমি গভীর ঘুমে। ডাকাত দল তখন আলমারি ভেঙ্গে ফেলার শেষ মুহূর্তে। আমার ধড়িবাজ স্ত্রী তখন পুরোপুরি বুঝে উঠলো তার জীবনের চেয়ে প্রিয় সোনাদানা আর অলঙ্কারগুলো ভীষণ সংকটে। সে চিৎকার দিয়ে উঠলো; সাধারণত একটা মানুষের সামনে তার প্রিয়তম কাউকে মেরে ফেললে মানুষ যেমন আহাজারি করে সেই টাইপের চিৎকার । আর বিলাপের সাথেসাথে আমার স্ত্রী আমাকে সজোরে ধাক্কা দিতে লাগলো তার কনুই দিয়ে। মরা কান্না দিয়ে চিৎকারের গতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে বললো এই লোক তাড়াতাড়ি ওঠো! ডাকাত ঢুকেছে ঘরে! আলমারি ভেঙ্গে আমার সবকিছু নিয়ে নিলো ; হায় হায় আমি কী নিয়ে বাঁচবো! আমার স্ত্রীর ক্রন্দন ধ্বনি ধীরে ধীরে প্রবলতর হতে শুরু করলো; বলে রাখি ডাকাতের ভয় পাওয়ার মানুষ সে নয়। তার আহাজারি তার প্রিয় ধনরত্নের জন্য, তাই যখন বহিরাগতরা তার অমূল্য সম্পদ হস্তগত করার পায়তারা করছে এটা তার মতো জুলুমবাজ মহিলার পক্ষে মেনে নেয়া জীবন গত হবার চেয়েও বেদনার। আমি জীবনে ডাকাত দেখিনি কিন্তু ডাকাতের চেয়ে ভয়ংকর একজনের সাথে বেশ কিছুদিন সংসার করে ডাকাত কেন ঠাকুরমার ঝুলির দুষ্ট দানব দেখলেও আমি খুব স্বাভাবিক থাকবো। আর আমার স্বাভাবিক থাকার আরো দুটি কারণ আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন - এক অনলাইনে রিনা আর দুই আমার অত্যাচারী বউয়ের শাস্তি হবার বাসনা । ডাকাতদল তাদের কাজ যতো কৃতকার্যের সাথে করছিলো আমার বউয়ের চিৎকার ততোগুণ বেড়ে যাচ্ছিল আর আমিও ততো বেশি গভীর ঘুমের ভাণ করছিলাম। আর রিনার সাথে আমার ভার্চুয়াল অভিসার তখন একদম তুঙ্গে। রিনার মধুর কথায় আমি ঠাণ্ডা রাত ছেড়ে কখন ব্যাবিলনের স্বর্গ উদ্দানে চলে গেছি নিজেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু প্রতিটা মেয়ের মাঝেই একটা এক্সট্রা সেন্স থাকে - ওরা শুধু নাক দিয়ে গন্ধ পায়না, চোখ দিয়ে, কান দিয়ে, হাত,পা দিয়ে এমনকি দেয়ালের ওপাশ থেকেও ইট সুরকির ভিতর দিয়ে পুরুষ মানুষের মন পড়তে পারে; তাই একদিকে ডাকাতের অত্যাচার ( যদিও আমি পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিজ ঘরে ডাকাতি নিঃশব্দে উপভোগ করছিলাম) অন্যদিকে আমার বাজখাঁই বউয়ের বিলাপ আমার প্রেমালাপে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল আর আশ্চর্যের বিষয় রিনা এতদূর থেকেও কীভাবে যেন আমার সাম্প্রতিক গোলযোগ টের পেয়ে গেল; ঐ যে বললাম নারীরা পুরুষের সুক্ষ্মতম দুর্বলতাকে ধরবার এক অনন্যসাধারণ গুণ নিয়ে জন্মায়। আমার কিছুটা এলোমেলো বাক্যলাপে রিনা তাই সন্দেহের বশে প্রশ্ন করলো 'তোমার ওখানে কি কোনো সমস্যা?' আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে তাকে যতো বুঝাই সে নাছোড়বান্দার মতো বলে 'কী হয়েছে; তুমি কিছু লুকাচ্ছ?' আমি চটপট ভাবি কী অজুহাত দিবো। ভাবতে ভাবতে বলে ফেললাম - মানে বানিয়ে বললাম আমার লেপের তলে একটা কুনো ব্যাঙ ঢুকে পড়েছে। শুনে রিনা আঁৎকো উঠলো - ও বাবা তুমি কী ভীষণ কথা বললে এই গভীর রাতে; আমিতো একা ঘরে ভয়ে থাকতে পারবোনা। আমি বুঝতে পারলামনা আমার লেপের তলায় ব্যাঙ থাকলে অতদূরের একজনের কী সমস্যা? তবুও প্রেমিকের দায়িত্ব মাফিক আমি রিনাকে বললাম 'ভয় নেই মনে করো আমি পাশে আছি।' রিনার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগে ও আমার যে কোন কথা খুব তাড়াতাড়ি মেনে নেয়; তাই আমি অভয় দেবার সাথে সাথে বললো আচ্ছা ঠিক আছে।
কিন্তু আমার এদিকের সমস্যা আরো ঘনীভূত হচ্ছিলো। আমি বউয়ের উল্টোপাশে ফিরে ছিলাম; সত্যি বলছি একটা কেন কোন ব্যাঙ চাষ করা পুকুরেও যদি আমাকে এক হাজার ব্যাঙের সাথে ঘুমাতে হতো এই আমার বিয়ে করে যেই মেয়ে মানুষটার সাথে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে এরচেয়ে কম অস্বস্তি লাগতো। তার ওপর তার অত্যাচার তার প্রতি আমাকে যারপরনাই ত্যক্তবিরক্ত করে দিয়েছিলো। আমি স্বামী ছিলাম শুধু নামেই; বাড়িটার পুরো কর্তৃক যেমন তার ছিল আমার ওপরও পুরো কর্তৃক সে নিয়ে নিয়েছিলো। আমি নিজ গৃহে পরবাসী ছিলাম আর তার ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য ছিলাম। সে নারী হয়েও পুরুষ মানুষের মতো একটা আধিপত্য বজায় রাখতো। আমাদের কোনো সন্তান ছিলনা সে জন্য গঞ্জনা আমাকে শুনতে হতো যদিও সমস্যাটা ছিল তার। সংসার করতে গেলে বা দু' জন একসাথে থাকলে অনেক সময় ছোট বিষয়গুলোও খুব বড় হয়ে দেখা দেয় যদিনা পারস্পরিক সমঝোতা থাকে। তা আমাদের মাঝে ছিলনা কারণ ঐ এক ওর কর্তৃত্ববাদী শাসন। যেমন আমি কম লিকারের চা পছন্দ করতাম কিন্তু সে বাধ্য করতো আমাকে কড়া লিকারের চা খেতে আর সে যে চাটা বানাতো তা খেতে সত্যি বলছি চিরতার গরম রস মনে হতো। আমার কোনো বন্ধুবান্ধব বাসায় আসতে পারতোনা সে ভীষণ নাখোশ ছিলো আমার পরিচিত জন এমনকি আমার পরিবারের লোকদের ওপরও সে বিরক্ত ছিলো কিন্তু তার পছন্দের লোকজনদের আমি যদি ঠিকমতো সমাদর না করতাম একটা তুমুল কাণ্ড ঘটে যেত বাসায়। আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করলে আমার সব জিনিসের ওপর তার রাগের প্রতিশোধ গিয়ে পড়তো ; দেখা গেল কোনো সন্ধ্যায় আমি বললাম আজ পেটটা ভালোনা চিড়া আর দই খাবো রাতে; সেদিন সে গোঁ ধরে বসতো দোকান থেকে তার জন্য বিরিয়ানি আনতে হবে আর আমি যদি শরীর ভালোনা এই যুক্তিতে বিরিয়ানির ব্যবস্থা না করতাম তাহলে তার সব রাগ গিয়ে আমার শখের জিনিস থেকে পছন্দের পোশাকআশাকের ওপর পড়তো। একটুতেই উত্তেজনার পারদ মাত্রা অতিক্রম করে এমন অবস্থায় যেত যে আমার দামি শার্ট প্যান্টগুলো তার ক্ষোভের শিকার হতো। সে ছিলো লম্বায় প্রায় আমার সমান কিন্তু শক্তিতে আমার দ্বিগুণ তাই বুদ্ধিমানের মতো আমি কোনো বিতণ্ডায় তার সাথে জড়াতামনা কারণ জানতাম তার রাগের স্ফুলিঙ্গ যখন আগুন হয়ে আমার পোশাকআশাকগুলো ম্যাচ ঠুকে আগুন দিয়ে জ্বালাবে আমি কোনো শক্তিতে তা হোক গলার বা হাতের তার এই ধ্বংসলীলাকে আটকাতে পারবোনা। এই ঘটনা এতো নিয়মিত ঘটতো যে মাঝেমাঝে আমাকে ছেঁড়া শার্ট পরেও অফিস করতে হতো। এক কথায় সে ছিলো এক চরম বদরাগী মহিলা। স্বৈরচারের কথা আমি বইতে পড়েছি তারা প্রায় সবাই পুরুষ কিন্তু প্রতিটা ঘরে একটা করে স্বৈরশাসক থাকে যার দ্বারা পুরুষদের নিপীড়িত হতে হয় আমজনতার মতো মুখ বুজে বা কখনোসখনো তপ্ত বাক্য বিনিয়োগ করে আমার অবস্থা যা বর্ণনা করা হয়েছে তার চেয়েও অবর্ণনীয় ছিলো। পুরুষদের সমস্যা হচ্ছে, স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একদিন না একদিন অভ্যুত্থান হয়, কিন্তু নারী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে কোনো পুরুষমমানুষ অভ্যুত্থান করেছিলো কিনা ইতিহাসে লেখা নেই। তাই আমি নিরব বিপ্লবের পক্ষে ছিলাম। এটা কোনো বিপ্লব নয় অত্যাচার ভুলতে কল্পনার জগতে ঠাঁই নেয়া। রিনা ছিলো আমার সেই বাস্তব-কল্পনা সে আমার ব্যাপারটা জানতো ; যদিও নারীদের ব্যাপারে আমার মাঝে তীব্র একটা ভয় মিশ্রিত অবিশ্বাস ঢুকে গিয়েছিলো তবুও সাদাসিধা রিনা অনেক নরম প্রকৃতির ছিলো তাই ওর সান্নিধ্য আমার অত্যাচারী বউয়ের বিপরীতে ছিলো রোগীর কাছে ওষুধের মতো । কিন্তু নারী মাত্রই স্বামীকে যেমন আপন করে নেয় আবার স্বামীকে ছোটবেলার পুতুলের মতো খেলনা মনে করে নাচাতে ভালবাসে। নারীদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সে জানে সেই সবচেয়ে ভালো স্বামী যে তার মতো ভাবে, চলেফেরে, খায়, ঘুড়ে, তার পছন্দে কাপড় পরে, তার প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে; এক কথায় একজন ভালো স্বামী বদরাগী স্ত্রীর কাছে স্ত্রী অনুগত স্বামী।
যাহোক আসল ঘটনায় ফিরে আসি। ঘরে ডাকাত পড়া আমার জন্য ভালো মন্দ দুটোই বয়ে নিয়ে আসলো। ভালো দিক হলো আমার বউয়ের আজ ওরা আমার পক্ষে প্রতিশোধ নিবে; কারণ তার চির আরাধনার সোনার খোঁজ পেয়ে গেছে ধুরন্ধর ডাকাত দল ; সত্যি বলছি এই সোনা কিনতে আমি বন্ধু ফরিদের কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা এখনো ঋণী। মন্দ দিক হচ্ছে আমি ভীত ছিলাম এই ভেবে যে আমার স্ত্রী যখন ডাকাতদের সাথে সোনার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে ডাকাতরা না সোনা না পেয়ে আমার ওপর তাদের ক্ষোভ ঝাড়ে। যাহোক, আমার জাগ্রত স্ত্রীর আহাজারি বেড়েই চললো। সে ঘুমন্ত আমাকে জাগানোর জন্য তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছিল ; সে বোকার মতো ভাবছিল আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার ঘরের শত্রুর উপকার করতে যাবো আর ঐ পাশে রিনা তো আছেই তার দিকে খেয়াল রাখা আমার জন্য বেশি জরুরী মনে হচ্ছিল ; সবসময় মনে হয়। আমার বউয়ের চিৎকারের প্রচণ্ডতা যখন ডাকাতদের জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছিল এক ডাকাত তার পাশে এসে চাপা কিন্তু কঠোর গলায় হুমকি দিলো- আর একটা কথা বললে তোর শকুনের মতো চিৎকার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে! হয়ত সেই দুষ্কৃতিকারীর হাতে ভয়ংকর কিছু ছিল তাই আমার নিরুপায় বউ হালকা শব্দে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো ' আপনাদের দুইপা ধরে বলি ঐ সোনাগুলো নিবেননা, এইযে আরেকটা আলমারির চাবি দিচ্ছি আমার স্বামীর কাছে চুপচুপ করে গত দশ বছরে দুই লাখ টাকা জমাইছি ঐগুলা নিয়া যান- পায়ে ধরি, আমি আপনাদের বোনের মতো, সোনাগুলা নিবেননা।'আমার বউয়ের কথা শুনে শীতেও আমার দু'কান গরম হয়ে গেল। আমি এক ধারগ্রস্থ লোক যে রিনার জন্য শখ করে একটা গিফট কিনতে পারিনা তার টাকা চুরি করে জমিয়ে ডাকাতদের হাতে তুলে দিতে চায়! হায়! হায়! এ আমি কার সাথে সংসার করছি। কিন্তু বদমাশ মানুষদের ভিতরও মানবতা থাকে তাই ডাকাতদের একজন যখন বললো ' ছি ছি এই বিশ বছরে অনেক ডাকাতি করছি কিন্তু এমন হারামি বউ একটাও দেখিনাই! তুই তো একটা মহিলা ডাকাত! হ্যা তুই সত্যিকারেই আমার বোন। আরেকপাশ থেকে আরেক ডাকাত কেমন সরসভাবে বললো ' তা বোনের জিনিস ভাই নিয়া যাবে তাতে এত কান্নাকাটি কেন, বড় আপা?' আমার বউ চাপা কান্না দিয়ে বললো 'ভাই আমি আমার ঐ সোনাদানাগুলাকে নিজের সন্তানের মতো ভালবাসি ; আপনার বোনের দোহাই ঐগুলা নিয়া যাবেন না।' আরেক ডাকাত উত্তর দিলো ঠিক আছে বইন বাসায়তো কোনো বাচ্চা দেখিনা আর সোনাগুলাতো আপনার সন্তান কাইল আমার পোলাটারে দিয়া যাবো ; তারে নিজের সন্তান ভাইবা সোনার বদলে রাইখা দিয়েন, আইজ রাতে কাম করতে আসছি ঘুম বাদ দিয়া, কাম করতে দেন।' আমি অবাক হলাম ডাকাতরাও কী পরিমাপ মানবিক; আসলে আমার বউ সব মানুষ সম্বন্ধে একটা নেগেটিভ ধারণা আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। আমি জানি আমার বউ কী পরিমাণ দুঃসাহসী তাই যখন সোনাদানাগুলো বস্তায় ভরা হচ্ছিল জানতাম কিছু একটা বিরাট ব্যাপার ঘটবে। প্রথম ধাক্কাটা গেল আমার ওপর দিয়ে। আমি যখন ভয়, আনন্দ, প্রেম আর ডাকাতির অপূর্ব অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম আমার বউ আমার অসম্ভব নিরব ভূমিকা দেখে ওর পুরুষালী মোটা হাত দিয়ে একটা ভীষণ ঘুসি দিয়ে আর্তনাদ করে বললো এই বুড়াভামের ঘুম পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও ভাঙ্গবেনা! আমার মনে হলো হাত নয় শক্ত একটা ইট দিয়ে কেউ আমার পিঠে আঘাত করলো ব্যথায় কক করে উঠতে পারতাম কিন্তু মরার মতো অচেতন হয়েই পড়ে থাকলাম টু শব্দটিও করলামনা। ঘুসির ওজন এতো বেশি ছিল যে আমি লেপ, মোবাইল সহ পাশের দেয়ালে আছড়ে পড়লাম।কিন্তু তবুও অসাড়ের মতো পড়ে থাকলাম। আমার অস্বাভাবিক নিরবতা দেখে আমার বউ আর কিছু ভাবার সময় পেলনা; আসলে মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়েরা সোনাদানা তার নিজের বাপ, মা, স্বামীর চাইতে বেশি ভালবাসে তাই আমার বউয়ের চির আরাধনার বস্তু যখন তার বাড়ি থেকে, তার সামনেই কেউ নিয়ে যাবে তা যে সে হতে দিবেনা ; আমি খুব ভালো করেই জানতাম ; তা সে যেই নিতে আসুক। মেয়েদের সোনাদানার প্রতি এমন নেশা, লোভ, আকর্ষণ থাকে যে তারা সেগুলো বাঘ সিংহ, দৈত্য- দানবের সাথে লড়াই করে হলেও রক্ষা করবে আর ডাকাত তো হাত পা অলা মানুষ তাই ডাকাত দলের যখন বস্তা ভরাটের কাজ শেষ আর একজন আমার বউকে দড়ি দিয়ে বাঁধতে গিয়ে গলদঘর্ম সেই সময় আমার বউ চিতা বাঘের ক্ষিপ্রতায় দড়ি খুলে সেই বস্তা অলা ডাকাতের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
ডাকাতগুলো তাদের ডাকাতি জীবনে হয়ত এমন নারী আক্রমণের শিকার হয়নি তাই তারা প্রথমটায় খুব হকচকিয়ে গেল। যে ডাকাতের হাতে বস্তা ছিলো আমার বউ জীবনের দয়ামায়া ছেড়ে তাকে সজোরে জাপটে ধরলো। বেশিরভাগ নারীই মমতাময়ী কিন্তু যে নারী হিংস্র সে ক্রুদ্ধ বাঘিনীর চেয়েও ভয়ংকর। আর বাঘিনীর মুখ থেকে তার শিকার কেড়ে নেয়া যেমন অসম্ভব তারচেয়ে অসম্ভব নারীর প্রিয় জিনিস কেড়ে নেয়া। আমার স্ত্রী তিনজন ডাকাতের দুইজনকে একাই সামলে নিয়েছে ; একজনকে সুপারি কাটার শর্তা মাথায় মেরে ভূপাতিত করে আরেকজনকে তার গাছের ডালের মতো দুইহাত দিয়ে সাপটে ধরে। যার হাতে বস্তা তার অবস্থা খুবি শোচনীয় ; আর ডাকাত হোক, সাধারণ মানুষ হোক সবাই নারীকে নারী হবার কারণে পুরুষের মতো একি পাল্লায় মাপতে পারেনা কিন্তু জীবনের মায়া জল্লাদেরও আছে তাই যখন সাক্ষাত একটা ডাকাত আমার বউয়ের সর্বহারা আক্রমণের শিকার হলো সে সেই প্রচণ্ড টানাহেঁচড়ায় গোঙ্গাতে লাগলো। আমার বউ তখন সোনা উদ্ধারে এক জ্বলন্ত উন্মাদিনী। হেড ডাকাতের গোঙ্গানির ভিতর দিয়ে; যাকে আমার বউ সাপটে ধরেছিলো, একটা সরু সুতার মতো কথা করুণভাবে বের হলো 'জলিল আমাকে বাঁচা।' জলিল যে আমার পাহারায় ছিলো, আমাকে ঘণ্টা খানেক ধরে মরার মতো নির্বিষ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভাবলো আমি ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি তাই আমার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ডাকাত সর্দারকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলো। তখন গ্যাংলিডারের অবস্থা আমার “বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী' বউয়ের তোপে ত্রাহি ত্রাহি কিন্তু জলিল দু' পা এগোতেই আমার রাক্ষসী বউ অগ্নিগর্ভা হয়ে এক হাতে সর্দারকে ধরে আরেক হাতে লোহার শর্তা তাক করে জলিলের দিকে হুংকার দিয়ে উঠলো ' আর একপা আসলে তোর মাথা দুইফাঁক হয়ে যাবে! আমি লেপের কয়েক মিলিমিটার ফাঁক দিয়ে সব দেখছিলাম। নিজের শরীরে একটা চিমটি কাটলাম স্বপ্ন না তো? কিন্তু তা ছিল দুঃস্বপ্নের চেয়ে ঘোরতর এক অবস্থা। আমার বউ শেষ বারের মতো আমাকে ডাকলো। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চাটিও আগুন দেখে বুঝে এতে হাত দিলে কী অবস্থা হবে। আমি লেপের ছোট্ট একটা ফাঁক দিয়ে ডিমলাইটের আলোয় সব দেখলাম। ডাকাত দেখার সামনাসামনি শখ আমার অনেকদিনের কিন্তু আজ যখন ডাকাতের সাথে সবচেয়ে কাছাকাছি আসার সুযোগ তা কেন আমি কাজে লাগাচ্ছিনা তা বুঝতে ম্যাথ, ফিজিক্স পড়া লাগেনা ; ম্যাথে ফেল করা ছেলেও বুঝবে।
যাহোক, ওদিকে মিনিট পনেরর মতো চললো এমন কোস্তাকুস্তি কিন্তু আমার দজ্জাল বউ যেন প্রতি মিনিটে সুমো কুস্তিগিরদের মতো আরো তরতাজা হয়ে উঠছে। ডাকাত সর্দারের অবস্থা তখন যায়যায়। পিঁপড়া কথা বললে গলার আওয়াজ যেমন হতো তেমন দুর্বল গলায় একটা আওয়াজ বের হলো- জলিল মালটা বের কর। এই সময় জলিল কোমর থেকে কিছু একটা ভয়ংকর চকচকে জিনিস বের করলো। আঁধার আলোয় দেখলাম। জিনিসটা দেখে ডাকাত সর্দার আহত গলায় হুংকার ছাড়লো সাথে নোংরা একটা গালি আমার রণেস্থির বউয়ের প্রতি - আমাকে না ছাড়লে তোর হাতির সমান পেট এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে যাবে। কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে আমার অসীম সাহসী বউ ডাকাতের মাথা পেঁচিয়ে একটা চোকস্লাম মারলো।আমার বউয়ের আবার টিভিতে কুস্তি দেখা খুব প্রিয় ছিলো। নিভবার আগে যেমন সলতে আরেকবার জ্বলে ওঠে আমার বউয়ের সাপ প্যাঁচ থেকে বাঁচতে শরীরের সব শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো লিডার ডাকাত । কিন্তু তার সে চেষ্টা পুরাই বৃথা গেল। আমি বিছানায় শুয়ে মনে হচ্ছিল টিভিতে আমেরিকান মাতলামি কুস্তি দেখছি ; দুজন কুস্তি খেলছে আর জলিল রেফারির মতো এদিকওদিক চক্কোর খাচ্ছে। আমার বউয়ের গায়ে এতো শক্তি ছিলো আগে কোনোদিন জানতাম না। আর জানবো কীভাবে আমাকে ঘায়েল করার জন্য ওর পাঁচটা আঙুলি যথেষ্ট ছিলো; আমি ছিলাম হার্টের রোগী। ডাকাত সর্দার একহাতে সেই বস্তা তখনও ধরে। আমার বউ আল্টিমেটাম দিলো এক থেকে দশ গুনবো বস্তা যদি না ছাড়িস তোর জান কবজ হয়ে যাবে! এ রীতিমতো ধিক্কার জানানোর মতো উক্তি। আমি দেখেছি কোনো খেলায় আমি যেই দলের সাপোর্ট নেই সেই দলই হারে আজ আমি খুব বেশি আশা করে ডাকাত দলের সাপোর্ট নিয়ে ছিলাম হায় ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস ডাকাতের পক্ষ নিয়েও আমি পরাজিত হবার পথে। এরপর সেই ঘটনাই ঘটলো আমার মন যা বলছিলো। আমার বউ ডাকাত সর্দারকে; আমার ময়লা প্যান্ট ধোয়ার সময় যেমন করে রাগ করে আছাড় মেরে ধোয় তেমনি উপরে তুলে একটা আছাড় মারলো ঠিক মেঝেতে ; কার্পেট বিছানো না থাকলে সে আছাড়ের আওয়াজে সব পাড়াপড়শির ঘুম ভেঙ্গে যেত। ডাকাত সর্দারের কী হতে পারে আপনারা অনুমান করতেই পারেন। সেই যে পড়লো বিষম আছাড় খেয়ে তার মুখ দিয়ে একটা গোঙানিও বের হলোনা - এমন ভয়ংকর ছিলো সেই আছাড়। ডাকাত সর্দার আছাড় খাবার পরে জলিলের আসল রূপ বের হয়ে আসলো; বন্য গরিলার মতো সে একপাশে তিড়িং করে লাফিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রীর দিকে তার মরচে পড়া রিভলভারটা তাক করলো- কারণ এবার সে জানে সে লাস্ট ম্যান যে আমার সন্ত্রাসী বউয়ের টার্গেট হবে। এদিকে বলে রাখি রিনা আমার স্লো রিপ্লাইয়ের কারণে কোন সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলো টেরই পাইনি । মেয়েদের কাছে ছেলে বন্ধুর চেয়ে ঘুম আর ফুচকার কদর অনেক বেশি আর রাতও প্রায় শেষের দিকে বেচারি ঘুমিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে।
আমি আমার জীবনের সবচেয়ে লোমহর্ষক ঘটনার অংশগ্রহণকারী না হলেও সবচেয়ে পূঙখানুপূঙখ সাক্ষী। ওদিকে জলিল ডাকাতের হাতে অস্ত্র দেখে সেই দিন প্রথম আমি আমার মেরুদণ্ড আছে টের পেলাম ; চিনচিন করে একটা ভয়াল অনুভূতি আমার সেই মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল। সে এক ভীতিকর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা অভিজ্ঞতা। আমার বউ তখন খেলার মাঠে মাতোয়ারা এক খেলোয়াড় ; যে কোন মুহূর্তে নেকড়ের মতো জলিলের উপর লাফিয়ে পড়বে। প্রথমত সোনা উদ্ধারের নেশা দ্বিতীয়ত লড়াই করার নেশা তাকে তখন উন্মাদিনী করে দিয়েছিলো। তখন দুইজন; আমার বউ আর জলিল বৃত্তের মতো খাট, আলমারি আর টিভিটার মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় ঘুরছে যেভাবে ষাঁড়ের মতো রেসলাররা রেসলিং রিঙে ঘোরে । আমার বউয়ের গলার আওয়াজ কোনো মানুষ নয় আরব্যোপন্যাসের দজ্জাল নারী চরিত্র মালেকা তাহুতির চেয়েও বিকট মনে হচ্ছিল। জলিল বেচারা যেন জীবনের শেষ দেখে ফেলেছে। দুইজন পুরুষ তখন মেঝেতে জ্ঞানহীন আর একজন ঢোড়া সাপের মতো লেপের তলায় আর একজন আমার বাঘিনী বউয়ের শিকার হবার পথে। আমার বউ বেলুনের মতো হাত উঁচিয়ে বীভৎসভাবে বললো কাছে আয়। জলিল পাল্টা হুশিয়ারি দিলো। কাজ হলোনা। আমার বউ যে একটা নারী বুকে দশটা সিংহের কলিজা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে সে তার আসল চেহারা দেখিয়ে দিচ্ছিলো। ছোটকালে একবার প্রবল বৈশাখী ঝড় আমাদের বাড়ি উড়িয়ে নিতে যাচ্ছিলো পারেনি আর আজ আমার কাছে আমার নিজের বউকে তারচেয়ে ঘোরতর কিছু মনে হচ্ছে। হাতে অস্ত্র থাকলে মানুষ যে তা ব্যবহার করার চেয়ে ভয় দেখাতেই বেশি কাজে লাগায় তা জলিলকে দেখে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার বউ সোনা উদ্ধারে নেমে ভয় বলে যে জিনিসটা আছে তা কখন ভুলে গেছে তা কেউ জানেনা। এখন আসলে জলিলও ডাকাতির আশা ছেড়ে এই মানুষ রূপী জমের হাত থেকে বাঁচতেই বেশি উদগ্রীব ; তা হবার নয় কারণ আমার বউয়ের ঘরে এসে তাকে পরাজিত করে কেউ ফিরে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবা ভুল। এরপরেই সেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটলো- আমার বউ যেই মুহূর্তে জলিলের উপর লাফিয়ে পড়তে যাবে তখনি কাঁপা কাঁপা জলিলের হাতটা আরো জোরে কেঁপে উঠলো সাথে একটা পটকা ফুটানোর মতো আওয়াজ আর তারপরেই আমার বউ মনে হলো বাতাসে একটা ধাক্কা খেয়ে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়লো। আবার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই টলতে টলতে উঠে এসে জলিলের গলাটা ধরে ফেললো; আহত সিংহীর মতো হয়ে বললো তুই আমাকে গুলি করছিস তোকে আমি ছাড়বো! দেখলাম সত্যিই আমার বউয়ের শাড়িতে রক্ত মাখামাখি আমি আর কিছু জানিনা আমি জ্ঞান হারালাম।
যখন আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম দুই দিন কেটে গেছে আমি দেখলাম রিনা আমার পাশেই সিক বেডে বসে। নার্স, ডাক্তার দেখে বুঝলাম আমি হাসপাতালে। রিনা আমার চোখ খোলা দেখতেই হাসি কান্নার বন্যা বইয়ে দিয়ে বললো এখন কেমন লাগছে? আমি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলাম তারপর সবকিছু আমার মনে পড়লো। আমি রিনাকে বললাম আমি এখানে কেন? তুমি জানো আমার বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছিলো? রিনা ভয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। হায় এক নারী সারারাত ডাকাতের সাথে যুদ্ধ করলো আরেক নারী ডাকাতের নাম শুনেই আতংকে কেঁদে ফেলছে। আসলেই নারীদের মন বোঝা...আমি আবার পিছনে ফিরে গেলাম রিনাকে প্রশ্ন করলাম আমার সেই বউ কই? রিনা সেরকম ফোঁপাতে ফোঁপাতেই একটা পেপার আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। হেড লাইনে বড় করে লেখা 'একজন বীরাঙ্গনা নিজের জীবন দিয়ে তিনজন কুখ্যাত ডাকাতকে খতম করলো।' আমি আবার অজ্ঞান হয়ে যেতাম যদিনা রিনার নরম, স্নেহের হাত আমার মাথায় আদর করে দিতো। হায় ভাবলাম, মনে মনে নরম হাত যেমন পুরুষদের বাঁচায় আবার এই হাতই পুরুষের ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে পারে। রিনা আর্দ্র গলায় বললো 'তোমর স্ত্রী সত্যি নিজের জীবন দিয়ে কতো অপমৃত্যু, অপরাধ ঠেকালো। উনি খুব ব্যতিক্রম ছিলেন।' আমার বউ যে ব্যতিক্রম ছিলো রিনাই তার প্রমাণ আর আমিও কম প্রমাণ নই। আজ যাদের হাসপাতালের বেডে থাকার কথা তারা কেউ নেই আর যে গায়ে ধুলাটি লাগতে না দিয়ে ডাকাতের ভয়ে চোরের মতো লুকিয়ে ছিলো সেই কিনা হাসপাতালের নরম বেড পেয়েছে আর সাথে মিষ্টি , কোমল এক নারীর ভালবাসার যত্ন। জীবনে প্রায় সময়ই অনেক বাস্তব ঘটনাকে অবাস্তবের মতো মনে হয়; সত্য ঘটনাগুলো বললে অনেকেই ভাববে বানিয়ে বলা মিথ্যা। জীবনটা আসলেই খুব আশ্চর্যের এক ধাঁধাঁ । আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা এখনো অনেকে শুনলে মনে করে বানোয়াট গালগল্প কিন্তু আমি এখন স্নিগ্ধ কোমল রিনার সাথে সুখে শান্তিতে ঘর করছি আর আমার বিগত বউয়ের স্মরণে কাঠের দরজা পালটিয়ে একটা শক্ত লোহার দরজা লাগিয়েছি; কারণ প্রতিবার ডাকাতের সাথে লড়াই করে আমার বউয়েরা আমার জীবন বাঁচাবে এই গ্যারান্টি কে দেবে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Shahadat Hossen অনেক মজার এক গল্প
অনেক কৃতজ্ঞ। এবারের গল্পটি পড়লেও খুশি হবো। শুভ কামনা নিরন্তর।
অনেক কৃতজ্ঞ। এবারের গল্পটি পড়লেও খুশি হবো। শুভ কামনা নিরন্তর।
Sanchita Saha গল্পটি পড়ে মজা পেলাম। গল্প এতো মজার হয় জানতাম না। তবে নারী এইভাবে যুদ্ধ করে? তবে খুব মজা পেলাম তাই লেখক কে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা বোন।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমতকার এবং দারুণ একটি গল্প। গত মাসে জসীম উদ্দিন মুহাম্মদ দাদা ভাইয়ের এবং এ মাসে আপনার এই গল্পটি পেয়েছি। আমার কাছে দু'টো গল্প এতটা ভালো লেগেছে, লেখার ভাষায় বুঝানো যাবে না। গল্পের কাহিনী গুলো পড়তে পড়তে এতটা-ই হাসলাম যে, মনে হয় কিছুক্ষণের জন্য পাগল হয়ে গেছি। একটা নারী তার সম্পদ বাঁচানোর জন্য এতটা প্রাণ-পণে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন, আর স্বামী ঘুমের ভাঁন করে তা চুপিসারে দেখেছেন খুব একটা আশ্চর্যবোধ মনে হয়। স্ত্রী যতটাই খারাপ হোক, কিন্তু সংসারের সম্পদের বেলায় তো দু'জনেরই সমান হওয়া উচিৎ। কিংবা স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর কদর আরও বেশি হওয়া উচিৎ। সেদিকে যাচ্ছি না, তবে গল্পটা পড়তে পড়তে শেষের দিকে এসে আমাকে একটা ধাক্কা খেতে হয়েছে। এত প্রাণ পণে যুদ্ধ করেও চুরের কাছ থেকে বাঁচতে পারলো না, চুরির আগাতে তাকে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছে...... শেষে বলবো অসাধারণ একটি গল্প, শুভকামনা রইল আপনার জন্য। ভালো থাকুন নিরন্তর....
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
সিদ্দিকী ভাই ঠিক বকেছেন। শেষটা নিয়ে। কিন্তু গল্প তাই গল্পোর মতোই রাখলাম। দুই রমণীর দুই গুণ দেখাতে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
বলেছেন হবে
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
কৃতজ্ঞতা
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মোঃ মোখলেছুর রহমান দুই রমণী-তে রম্য রম্য মৃদু হাওয় ভাল লাগল।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ মোখলেছুর রহমান ভাই। ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
সালসাবিলা নকি কী লিখেছেন এটা! প্রতিটা লাইন পড়ি আর হাসি। তবে শেষটা মনঃপুত হয়নি। হয়তো স্বভাবগতভাবে নারীর মন নরম বলে। যদি এই ডাকাতের ঘটনায় তাদের দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা জন্ম নিত তবেই পুরোপুরি তৃপ্তি পেতাম। তবে আপনার লেখা নিঃসন্দেহে খুব ভালো
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
চমৎকার কমেন্ট। ঠিক বলেছেন শেষটা আমিও অন্যভাবে পছন্দ করতাম। কিন্তু পারলাম না। আমিও মিলনাত্মক উপসংহার পছন্দ করি। অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
Muhin Roy মুহিন রায় "ডাকাতের সাথে লড়াই করে আমার বউয়েরা আমার জীবন বাঁচাবে এই গ্যারান্টি কে দেবে?"- দুই রমণীর দুই ধরণের চরিত্র ভাল লেগেছে। লেখকের প্রতি শুভ কামনা ও ভোট
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ মুহিন রায়।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ মুহিন রায়।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মোঃ নিজাম উদ্দিন অসাধারন লেখনী। শুভেচ্চাসহ ভোট রেখে গেলাম। শুভকামনা শতত।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ গাজী ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ গাজী ভাই। ভালো থাকবেন সবসময়।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
সুমন আফ্রী গল্পটা পড়ছিলাম আর হাসছিলাম। শেষ মুহুর্তে মৃত্যুর ঘটনা গল্পটাকে আরো ইন্টারেস্টিং করে তুলেছে। খুবই ভালো লাগলো। তবে প্যারা করে লিখলে পড়তে সুবিধে হতো। শুভকামনা লেখকের প্রতি। সময় পেলে আমার পাতায় আসবেন। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই আপনার পাতায় যাবো।
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া ভালো লাগল বন্ধু গল্পটি। তবে মাঝে মাঝে প্যারা করে দিলে গল্পের গঠনশৈলীটি আরো নান্দনিক হতো। তবে ওভার অল গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগল। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। এবার কিন্তু আমার গল্পের পাতায় আসেননি বন্ধু। সময় পেলে আসবেন নিশ্চয়। ভালো থাকবেন যেনো আর ডাকাতি না হয়।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
হাহা অনেক ধন্যবাদ। সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অবশ্যই আপনার গল্পে যাবো। ভোট দিয়ে অনুপ্রাণিত করায় অনেক ধন্যবাদ বন্ধু।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মনজুরুল ইসলাম পুরুস সাসিত সমাজ বলা হলেও বরতমানে পুরুস্রাই জে বাস্তবতার শিকার তা উথে এসেছে. বাস্তব বিসয় তুলে ধরার প্রয়াস খুজে পাওয়া গেল. কিছু খেত্রে গতির অভাব থাক্লেও অনেক সুন্দর.শুভ কামনা সেই সাথে vote roilo.
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক ধন্যবাদ মনজুরুল ইসলাম
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

০৮ ফেব্রুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪