ভার্সিটি যাচ্ছি। আবহাওয়া বেশ ভাল, ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস আছে। গত দুইদিন গরমে অস্থির হয়ে ছিলাম। আজকে বেশ ফুরফুরা লাগছে। হাঁটার জন্য উপযোগী আবহাওয়া। কিন্তু আমার হাঁটতে মন চাচ্ছে না। আবার রিক্সা নেবার মত অবস্থাও পকেটের নেই। তাই টেম্পুই ভরসা। টেম্পুতে বসা লোকদের দেখেই মেজাজ খারাপ হল। একেকটা যেন হাতি। দুইজনের সীট এরা একাই দখল করে। আমার মত রোগা মানুষের এদের কাছে বেশ চাহিদা আছে। টেম্পু বা বাসে উঠলেই আদর করে পাশে বসাতে চায়। এখন ইয়া মোটা একজন তার পাশে বসতে বলল। আমি অপেক্ষাকৃত রোগাদের পাশে বসলাম। আর মনে মনে ঠিক করতে লাগলাম দেশে একটা আইন থাকা প্রয়োজন যে ষাট কেজি ওজনের বেশি কেউ গণপরিবহনে উঠতে পারবে না। তাহলেই সবাই স্লীম হবে আর রোগ বালাইও কমবে। মুখোমুখী বসা লোকটার চেহেরা দেখে মনে হল সরকারি চাকরি করে। আপন মনে সেই রাজা, কারো ধার সে ধারে না। তার পাশের লোকটা বেশ উত্তেজিত মনে হল। বলছে, দেশে আর ভাল মানুষ নাই। সব পশু হয়ে গেছে। বড়লোকরা আর গরীবদের দাম দেয় না। দেশে এত মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে অথচ কেউ ফিরেও তাকায় না। বাজারে সব কিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে। আমাদের কী? আমরা সরকারি অফিসার আমাদের তো সরকারি বেতন সরকার বাড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু ওদের কী হবে? কি বলেন হুদা ভাই? পাশের লোকটা শুধু একবার হুঁ বলল। তার ঠিক পাশেই মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রমহিলা। দেখেই মনে হল শিক্ষিকা হবেন হয়তো। আশেপাশে বহু স্কুল কলেজ আছে, কোন একটায় হয়তো সে পড়ায়। ছাত্রছাত্রীদের সে মানবতার শিক্ষা দেয়। দরীদ্র মানুষদের ঘৃণা করা যাবে না কিংবা কাউকে দেখে উপহাস করা যাবে না। উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা যেমন মুসলমানদের স্পর্শ লাগলে গোসল করে পাক হত এইসব পড়াতে গিয়ে আবেগময় কন্ঠে হয়তো বলে মানুষ সবাই সমান; সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। বিরক্ত হয়ে বসে আছি। আরো দুই সীট ফাঁকা। এমন সময় এক পঙ্গু মহিলা আসল। গায়ের কাপড় ছেঁড়া, ময়লা, হয়তবা কয়েকদিন গোসল করে না। হয়তবা ভিক্ষা করে সে। ক্রাচে ভর দিয়ে চলাচল করে। আমিও কী একটু নাক কুচকালাম? মহিলা টেম্পুতে উঠতে যাবে এমন সময় ওই লোকটি বলে উঠল, না না আপনি যেতে পারবেন না, জায়গা নাই। পরেরটায় আসেন। শিক্ষিকা ভদ্রমহিলাও নাক কুচকে ফেলল। সাথে সাথে নাকে কাপড় দিল। বলল আপনি পরেরটায় আসেন, এটাতে ঢুকতে পারবেন না। সবার তীব্র প্রতিক্রিয়া যেন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে তুমি এখানে ঢুকতে পারবে না। এখানে তোমার কোন স্থান নাই। একটু আগের বলা সেই মানবতার কথা, কিংবা সারাজীবন শিখে আসা মানবপ্রেম এক মুহূর্তে বালির বাঁধের মত ভেসে যায়। পঙ্গু মহিলা সেই দুজনের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে শুধু একবার বলল, সীট থাকতেও আমারে উঠতে দিবেন না ক্যান? আমারে দেইখ্যা কি ঘিন করে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।