হালকা একটা শিরশিরানি অনুভূতি ছড়িয়ে যাচ্ছে শরীর জুড়ে। একটু বেশীই মনে হয় শীত পড়েছে আজকে। ট্রেনের টিকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে স্টেশনের বুকস্টলের পাশের বেঞ্চের দিকে হাঁটতে লাগলো পার্থিব। বেশ আনমনা হয়ে আছে সে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরালো। জোরে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে ফেলে দিল। সর্বশক্তি দিয়ে পিষছে ! একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূরে। রেললাইনের দিকে। হঠাৎ চোখে পড়লো, একটা বিভ্রম, তাই কি ? নাহ, অবয়বটা আবছা কিন্তু খুব একান্ত, খুব চেনা একটা অনুভূতি কাজ করছে দেখার পর থেকেই ! চোখটা সরিয়ে নিয়ে বন্ধ করে ফেললো পার্থিব। স্মৃতির পাতাগুলো উল্টে যাচ্ছে অসম্ভব দ্রুত গতিতে। বারো বছর আগের এক দুঃসহ রাত স্পষ্ট হয়ে উঠলো এক মুহূর্তেই...
খবরটা শোনার পর সে বিশ্বাস করেনি প্রথমে। হ্যাঁ, এটা ঠিক নিধির মাথাব্যাথাটা মাঝে মাঝে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু সেটা যে তাকে না ফেরার দেশে নিয়ে যাবে এতোটা ভাবতে পারেনি পার্থিব। ডক্টর যখন নিষ্ঠুর সত্যটা অকম্পিত কণ্ঠে তার কাছে একটু একটু করে ভাঙছিল সে শুধু শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিল। কিছু ঢুকছিলো কি কানে? মনে হয় না ! ডক্টরের একেকটা শব্দ গভীর করে চিরে দিচ্ছিল ভেতরটা, - " ওনার ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে এবং সেটা ক্যান্সারের দিকে টার্নও করেছে বেশ আগেই। আনফরচুনেটলি ব্যাপারটা এখন লাস্ট ষ্টেজে এসে পৌঁছেছে। আমাদের এখন কিছুই করার নেই ! " অসহ্য কষ্টে পাথর হয়ে গিয়েছিলো পার্থিব। কোন অনুভূতিই কাজ করছিলো না তার। অসম্ভব সুন্দর টুকটুকে এক প্রতিমা প্রচণ্ড কষ্টে, বেদনায় নীল হয়ে যেতে শুরু করলো তার চোখের সামনে। কি যে ভয়াবহ সেই দৃশ্য !
অজান্তেই ভিজে উঠেছে চোখটা। আলতো করে মুছে নিলো সে। এখনো মনে পড়ে, শেষের দিনগুলোতে মাঝে মাঝে খুব মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো তার দিকে। সমস্ত প্রাণশক্তি যেন জমা হয়েছিলো চোখ দু'টোয়। অব্যক্ত কত কথা যে বোঝা হয়ে গিয়েছিলো !
কেঁপে ওঠা দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করলো পার্থিব। যে মানুষটা তার জীবনে এসেছিলো সবজান্তার সাক্ষাৎ আশীর্বাদ হয়ে সে তার বুকের ওপর থেকে চলে গেলো একটু একটু করে। অথচ তার কিছুই করার ছিল না। কিছুই সে করতে পারেনি।
ভেজা চোখেই সে আবার তাকালো দূরের রেললাইনের দিকে। অবয়বটা এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। অবিকল সেই নিধি ! ! তাকিয়েই আছে পার্থিব। ট্রেনের তীব্র হুইসেল কোন ভাবান্তর ঘটাচ্ছে না তার মাঝে। বারো বছর ধরে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে বুকের মাঝে সযত্নে পুষে রাখা কাছে পেয়েও হারানোর অসম্ভব কষ্টটা যেন নিমেষেই উধাও। নিধিকে আজ হারিয়ে যেতে দিবে না সে। কিছুতেই না ! !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।