ছায়া বালক

শ্রম (মে ২০১৫)

মুহাম্মাদ হেমায়েত হাসান
  • ১০
  • ২৫

হাঁটি হাঁটি পা পা করা শিশুর হাত ধরে বাবা ভুলে যান সারাদিনের শ্রম ক্লান্তি। প্রতিদিন কাজে ছুটেন নতুন উেদ্যাম। মায়াভরা শিশুর মুখটি ফুটে উঠতেই তার ভিতরের কাজ পাগল পশুটি হয়ে উঠে আরও অদম্য। আনিস সাহেবের জীবনের সব চেয়ে বড় সাধনা এখন তাঁর সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তাতে তিনি কোন শ্রমই বাদ দেননা। ছেলে এখন হাই স্কুলে তাই আলাদা কেয়ার নিতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি চরিত্র গঠন সবই লক্ষ্য রাখতে হয়। তিনি তাঁর ছেলেকে মানুষ করার বিষয়ে সব সময় তাই খুবই সচেতনতার সাথে দৃষ্টিও রাখেন। কলেজ চত্বর পেরিয়ে ছেলের ভার্সিটি সবই তাঁর নজরের মধ্যে রেখেছেন।

তবুও অনার্স পাশ করেই ছেলে পালিয়ে বিয়ে করে। বাবা হিসেবে তিনি কিছুই বলতে পারেন নাই। শুনেছেন আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল দুÕজনের। কিন্তু মেয়েটাকে নাকি অন্যত্র বিয়ে দিতে চাইছিল তাই এভাবে বিয়ে করতে হয়েছে। আনিস সাহেব কিছুটা বাধ্য হয়েই মেনে নিলেন। ছেলেটা ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলনা। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট এ জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তারপরও মাস্টার্সটা করলনা। এখন তাঁর মাথাতে সংসার ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই ব্যবসা করবে টাকা চাই। ছেলের জন্যই তো তিনি সব কিছু করেছেন। স্ত্রী পরবাসের পর সে এমনিতেই সঙ্গীহারা। সব কিছু আজ বড় অস্বাদ লাগে। তবে সঙ্গী এখন একজন অবশ্য আছে ছ’ মাসের নাতিটা। আনিস সাহেবর বেশির ভাগ সময় কাটে ঐ নাতিটার সাথে। তাই বেশি না ভেবে তিনি তাঁর সারা জীবনের শ্রম সাধনা সব তুলে দিলেন ছেলের হাতে।


মাস তিনেক পরের কথা। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাসার দরজাতে একটি ট্যাক্সি দাড় করানো। ছেলে এসে বলে বাবা তাড়াতাড়ি রেডি হও। আনিস সাহেব কিছু প্রশ্ন না করে দ্রুত তৈরি হয়ে আসেন। দেখে এর মধ্যে গাড়ীতে দুটি বড় লাগেজ তোলা হয়ে গেছে। ছেলে বলে তাড়াতাড়ি চল আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তিনি আমতা আমতা করে বলেন ওরা যাবেনা। ছেলে বিরক্তি নিয়ে বলে না। আনিস সাহেব আর কথা না বাড়িয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসেন। ছেলেটি তাঁর সাথে বসেনি। বসেছে সামনের সিটে যাতে তিনি আর প্রশ্ন করতে না পারেন। সকালের আবহাওয়াটা আজ খুব ভাল। বেড়ানোর মতই একটা দিন। আনিস সাহেব জীবনে খুব একটা বেড়ানোর সুযোগ পাননি। কঠোর পরিশ্রম করেছেন সারাজীবন। তাতে তাঁর তেমন দুঃখ নেই। দুঃখ শুধু বউটাকে তিনি সারাজীবন কষ্টই দিয়েছেন। তবে বউটা কখনও অভিযোগ করেনি। তিনি অবশ্য মাঝে মাঝে বলতেন শুনরে বউ দেখবি তোর ছেলে তোকে সারাদেশ ঘুরাবে। বউ শুধু বলতো, আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি। দেশ দেখা আর তাঁর হলনা। সুস্থ মানুষটা বলা নাই কওয়া নাই হঠাৎ একদিন চলে গেল। পানি চলে আসে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। তবু তাঁর চোখ জ্বালা করে। হঠাৎ রাস্তায় দুটি বাচ্চাকে বকুল ফুল কুড়াতে দেখে মন ভাল হয়ে যায়। প্রতিদিন ভোরবেলা তিনি ছেলেকে সাথে নিয়ে হাটতে বের হতেন। তাদের বাসার সামনের মোড় পেরলেই একটি বিশাল বকুল গাছ ছিল। ছেলে গাছের নিচে গেলেই ফুল কুড়ানর বায়না ধরত। তিনি না করতেন না। ছেলের সাথে সাথে তিনি ফুল কুড়াতেন আর চুপটি করে কিছু ফুল লুকিয়ে পকেটে ভরে নিতেন। বাড়িতে ফিরে বউ এর হাতে দিতেই সে লজ্জায় লাল হয়ে যেত। যত্ন করে মালা গেথে খোপাতে লাগিয়ে রাখতো। আনিস সাহেবের চোখে আবারো জ্বালা করে, পানি আসে। ছেলে, বউ আর তিনি মিলে ছোট্ট সংসারে তাঁরা কত সুখেইনা ছিলেন। এখনও ভালই আছেন। তবে ছেলে-বউ এর সংসারে মাঝে মাঝে বোঝা মনে হয়।


ট্যাক্সি এসে থামে একটি সাদা দোতলা বাড়ির গেটে। গেটের পাশে বাঁধাই করে লেখা ÔÔশ্রম শেষ আশ্রমÓ। আনিস সাহেব কিছুই বুঝতে পারেননা। দরজা খুলে ট্যাক্সি থেকে নামেন। কেমন যেন একটা পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে। তিনি চারিদিক লক্ষ্য করেন। কেমন যেন অস্বাভাবিক এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করছে। তিনি কিছু একটা জিজ্ঞাসা করার আগেই ছেলে লাগেজ দুটি নামিয়ে রেখে বলে বাবা তুমি এখন থেকে এখানেই থাকবে। বলে সে আর কালক্ষেপণ করেনা ট্যাক্সি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যায়।

হঠাৎ আনিস সাহেবের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে উঠে। তারতো এখন আর শ্রম দেবার ক্ষমতা নেই। তাই এই ÔÔশ্রম শেষ আশ্রমÓ তাঁর ঠিকানা হয়েছে। তাঁর দুটি চোখ জলে ভরে উঠে। নিজেকে বড় একা মনে হয় এই জনসমুদ্রের পৃথিবীতে। তাঁর সমস্ত শরীল অবশ হয়ে আসে। তিনি লাগেজ দুটি ধরে বসে পড়েন। হঠাৎ তাঁর পাঁশে একটি ছোট ছেলের ছায়া এসে দাড়ায়। তাঁর কাঁধে হাত রাখে। আনিস সাহেব ছায়া বালক টির স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকায়। সে চিনতে পারে ছায়া বালক টিকে। ছেলেটি তাঁর হাত ধরে। সে অশ্রু ভরা চোখে বালকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসে। ছায়া বালকটি যেন তাকে বলে, আমি তো আছি তোমার পাঁশে, যার জন্য তুমি তোমার জীবনের সকল শ্রম-সাধনা করেছ। সবই তো আমার কাছে স্বপ্নে দিয়েছ। যার জন্য তুমি সব করেছ সেই আমি তো আছি তোমার পাঁশে। ছেলেটির হাত ধরে আনিস সাহেব আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। ছেলেটি তাকে নিয়ে যেতে থাকে আশ্রমের ভিতরে। তাঁর দুই চোখ বেয়ে তর তর করে জল ঝরছে আর মুখে এক শান্তির হাঁসি নিয়ে সুবদ বালকের মত সে হেঁটে চলে ছায়া বালকটির সাথে সাথে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী স্পর্শ করে গেল। থিমটা সমসাময়িক এবং অসাধারন শুভেচ্ছা জানবেন।
মনজুরুল ইসলাম গল্পের ভাবনা অনেক পরিনত.বাস্তব চিত্র ফুটে উটেছে.শুভো কামনা রইলো.
এমএআর শায়েল ইউনিকোডে লেখার সময় সাধবাণতা অবলম্বন করা উচিত। বানানগুলো ভেঙ্গে যায়। অর্থ বদলে যায়। আশা করি, মাথায় রাখবেন। আমার লেখা ‘আর কতদূর-পড়ে, সৃজনশীল মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ
এস আহমেদ লিটন অসাধারণ থিম নিয়ে লেখা। ভাল লাগা রেখে গেলাম। শুভকামনা শতত।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ জেলা শহরের কোথাও কোথাও দেখেছি সরকারী বালক বা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সন্তান কে ভর্তি করার জন্য অভিভাবকদের রিতিমত যুদ্ধে নেমে যেতে হতো আর সন্তানেরা পাশ করে বেড়িয়ে এসে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে দিতো তার উশৃঙ্খলতাকে মেনে নেবার তরে । আর ইদানীং দেখছি অভিভাবকদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দেবার জন্যে সন্তানরা জিপিএ ৫ নিয়ে পাশ করে তাও আবার গোল্ডেন সহ ! জানিনা ভবিষ্যতে আর কী দেখতে হবে ! ভাল লিখেছেন । শুভ কামনা রইল ।
সোহানুজ্জামান মেহরান ভালোই লিখেছেন, শুভকামনা রইলো।
Papul aktar কারো জীবন যাতে এমুন না হয়

১৯ জানুয়ারী - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪