মৃত্যু

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

তুহিন
বড় রাস্তায় উঠেই মনে হয় নদীতে নামলাম। অনেক দুরে কিছু বাতি দেখা যায়। রাস্তা দেখা যায় জ্যোৎস্নার আলোয়। বেশ বড় একটা চাঁদ আকাশে। আকাশ থেকে জ্যোৎস্নার স্রোত বয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির গাঁ বেয়ে। দু’পাশে গাছ আর গাছ। ঢালের শেষে একটা খাল চলে গেছে এঁকে-বেঁকে। অনেক পর পর গাড়ির শব্দ নির্জনতা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। আবার নির্জনতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে নিজে থেকেই। এ এক অদ্ভুত খেলা। বাতির দিকে হাঁটতে থাকি ফুরফুরে মেজাজে। আজ একটা কবিতা লিখতে হবে। সকাল থেকেই দিনটা ভালো যাচ্ছে। গরম নেই, এমন বাতাস ঘাম জমে উঠতে পারছে না। ব্যস্ততার ভিড়টাও কম ছিল। পকেটের চেকটা ক্যাশ করিয়ে পাওনা দিয়ে দিলেই এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা লাভ। সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার চেক। হাঁটতে থাকি আর খেলতে থাকি নির্জনতা ভাঙা গড়ার খেলা । দুরে দুটো আলোর বিন্দু দেখা যায়। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, সাথে সাথে শব্দও বড় হতে থাকে প্রচন্ডগতিতে। গাড়িটার চালক মাতাল অথবা দক্ষ। গাড়িটা কাছে চলে আসে। হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। শুধু একটা মাত্র শব্দ শুনি, ধুস!
এমনভাবে পড়েছি যেন একটা বড় গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে কোনো লোক। কতটা গড়িয়ে উল্টেপাল্টে এখানে এসে বসলাম বলতে পারিনা। ডানহাত উল্টে আছে পিঠের নীচে। চোয়ালের একপাশ ভেঙে ঝুলে আছে। গরম রক্তের স্রোত সারা শরীরে। প্রচন্ডশক্তিতে বলতে চাই ‘বাঁচাও’, কিন্তু শব্দ সরবরাহ হয়না। মস্তিষ্কের সমস্ত নির্দেশ উপেক্ষা করছে স্নায়ুতন্ত্র। নড়তে সাহায্য করেনা একটুও। নিঃস্পৃহ নীরব নিথর পাথরের মতো পড়ে থাকি অসহ্য যন্ত্রণা কোলে নিয়ে। মাথার ভেতর একটানা ঝিমধরা শব্দ। রক্তস্রোত গড়িয়ে যায় ঢালবেয়ে। একপালকে তাকিয়ে থাকি সামনে। আমি বোধহয় মারা যাচ্ছি। আমি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। এতবড় রাস্তা থাকতে গাড়িটা আমার উপরেই তুলে দিল। গাড়িটা, কি গাড়ি ছিল? গাড়িটা কি থেমেছে? থামবেনা জানি। আমাকে কেউ যদি একটু হাসপাতালে নিয়ে যেত? বাঁচার তীব্রতায় চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে বারবার। দুটো লোক আসতে দেখা যায়। মোবাইলের আলোয় খুঁজতে থাকে আমাকে। অবয়ব বুঝতে পারিনা, এটুকু বুঝতে পারি মানুষ আসছে আমার বাঁচার আশা নিয়ে।
-এইতো এখানে। একেবারে থেঁতলে গেছে। দেখে চালাবিনা।
-বেঁচে আছে?
-না মনে হয়।
মোবাইলের আলোয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখে, দেখে সিদ্ধাš— নেয় আমি মরে গেছি।
-কি করবি?
-মরে গেছে, চল চলে যাই। ঝামেলায় যাবার দরকার কি?
-কেউ দ্যাখেনিতো?
-না। চল পালাই।
পালাই মানে? আরে, নাড়িটা একবার পরীক্ষা করে দেখবিনা? এমনি দেখেই বুঝে ফেললি মরে গেছি। গাধা কোথাকার। কোনটা ড্রাইভার? বেয়াদব, গাড়ি চালাতে জানেনা। ছায়া সরে যায় দ্রুত। মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে গাড়িটাও চলে যায়। যন্ত্রণা ছাপিয়ে কষ্ট উঠে আসে বুকে। চলে গেল? আমি বেঁচে গেলে হাসপাতালে নেয়ার জন্যই তো তোদের ক্ষমা দিতাম। পালিয়ে গেলি কাপুরুষের মতো।
যন্ত্রণাবোধ আস্তে আস্তে ক্ষীণ হতে থাকে। আয়ু আর কতক্ষণ? কত মিনিট? কত সেকেন্ড? উথলে ওঠে কণ্ঠ। জল গড়িয়ে যায়। আমার বাবুইসোনা এতিম হয়ে যাবে? ওর সাফারিটা আমার পকেটে। চেকটা আছে তো? বাবুইসোনার মায়ের কি হবে? আমার মায়ের কি হবে? কণ্ঠ আর কণ্ঠ! চোখের জল রক্তে মেশে গড়িয়ে গড়িয়ে। আজ একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম।
‘ইতিহাস আজও জানেনা বিলুপ্তের লুপ্ত হবার দুর্ঘটনা
কে কবে কেঁদেছে?
কার কান্নার জল শুকিয়েছে আমার বুকে?
তার দাগ লেগে আছে বুকের ভিতর।’
হুঁস হুঁস করে বেরিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। কেউ থামেনা। প্রাণের আবছায়া নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গাড়িগুলো। একটা গাড়ি থামে। মানুষ নামে। আশা নামে। আশার ঢাল বেয়ে প্রকৃতির ডাকে প্রকৃতির আড়ালে নেমে আসে। দুটি নরনারী। ছোট আলো জ্বেলে নিরাপদ জায়গা খোঁজে। বিধাতার ইশারায় আলো ফেলে আমার উপর। চমকে ওঠে অপ্রস্তুত দুটি মানুষ। আমাকেই প্রশ্ন করে নারী -কখন? কিভাবে? বামহাতের নাড়ি দ্যাখে নর বলে-
-বেঁচে আছে। হাসপাতালে নিতে হবে।
ভয়ের বিভীষিকা শব্দ তুলে টেনে নিয়ে যায় আশা। কথা হয়, কথা কাটাকাটি হয়। সত্তায় সত্তায় ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে দেবদূত। দুরদুরতে অনুভব করি মৃত্যুর আলিঙ্গন। চোখে অন্ধকার নামে। তলিয়ে যাই অন্ধকারের তলদেশে। শুধু শুনতে পাই একটাই শব্দ, ধুপ ধুপ ধুপ... ... ...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু বেদনাদায়ক গল্প। ভালো লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
হাসনা হেনা ভৌতিক হলনা. শব্দ চয়নে কিছুটা ত্রটি আছে .শুভ কামনা.
মাহমুদ হাসান পারভেজ গল্পের ঢং এ গদ্যকাব্যের স্বাদ পেয়েছি। ভালো লেগেছে অাপনার লেখা। শুভকামনা সবসময়।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
শাহ্ আলম শেখ শান্ত ভাল লেগেছে গল্পটি , আমার লেখায় আমন্ত্রণ । আশা করি আমার লেখায় মন্তব্য ও ভোট প্রদান করবেন ।
আফরান মোল্লা ভালো লাগলো।ভোট এবং শুভকামনা রইল॥

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪