প্রণমী তোমায়

শ্রম (মে ২০১৫)

Fahmida Bari Bipu
  • ১১
  • ১০
ডাইনিং রুম আর ড্রয়িং রুমের মাঝামাঝিতে রেখে দেওয়া সুদৃশ্য দেয়ালঘড়িটায় চোখ পড়ল সায়মার। তিতা হয়ে গেল মেজাজটা। সময়ের সাথে কি তার যুদ্ধ শুরু হলো? কিছুতেই নিজের চেয়ে সময় তাকে এগিয়ে থাকতে দেবে না।
সাড়ে পাঁচটা বাজার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় দিন। ফজরের নামাজটা পড়ে নিয়েই সোজা কিচেনে। প্রথমেই টুকুনের টিফিন বানানোয় যাবতীয় সৃষ্টিশীলতা ঢেলে দিতে হয়। রকমারি টিফিন না হলেই টুকুন সোনার মন খারাপ। পরপর দু'দিন এক টিফিন দিলেই অভিযোগ।
"মা, তুমি সব সময় একই টিফিন দাও। আমার বন্ধুরা রোজ কত মজার মজার টিফিন নিয়ে আসে।"
"তাই?! আমি বুঝি তোকে মজার মজার টিফিন দিই না? দু'দিন আগে না চিকেন ফ্রাই করে দিলাম। পরশুদিন স্যাণ্ডউইচ, গতকাল কিমা পরোটা।"
"হুঃ আর আজকেও তাই, কিমা পরোটা। রোজ রোজ এক টিফিন।"
সায়মা কিছু বলতে গিয়েও হেসে ফেলে। গতকালের কিমাটা আজ কিছুটা বেঁচে গিয়েছিল। তাই আজকেও কিমা পরোটা করে দিয়েছিল। স্কুলে যাওয়ার আগে রোজ নিজের টিফিন বক্সটা চেক করে নেয় টুকুন। আজ চেক করতে গিয়েই এত্ত অভিযোগ।
টুকুনকে স্কুলে পাঠিয়ে বাসার অন্যদের নাস্তা তৈরিতে হাত দিতে হয়। তার মেয়ের নাস্তাতে অবশ্য কোন ঝক্কি নেই। কর্ণফ্লেক্স আর লো-ফ্যাট মিল্ক। প্রতিদিন এক নাস্তা কী করে যে খায় মেয়েটা! এ যুগের মেয়ে। তুমুল স্বাস্থ্য সচেতন। বান্ধবীরা মজা করেও যদি কখনো মোটা হয়েছে বলে তবেই হয়ে গেল! পাক্কা সাতদিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেবে। কী যে এক হুজ্জোত শুরু হয় তখন!
রেহান অবশ্য এতটা নয়, কিন্তু সেও নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সজাগ। তেল ছাড়া পরোটা, ছোট করে বানালে দুটা নয়তো টেনেটুনে সোয়া দুইটা। আর এক বাটি কম তেলের সবজি। আগে ডিম খেত না। ইদানিং খাচ্ছে। নতুন গবেষণায় নাকি জানা গেছে, সপ্তাহে চারটা করে ডিম হৃদরোগকে দূরে রাখে।প্রত্যেককে তাদের চাহিদামত নাস্তা দিয়ে যার যার কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিদায় করে সায়মার সময় হয় নিজের দিকে তাকানোর। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ও কোনদিনই চুজি ছিল না। আর এখনতো মনে হয় একটা কিছু খেয়ে নিলেই হল। জেনেটিক্যালি ও হালকা পাতলা গড়নের। তাই খাবার দাবার নিয়ে খুঁতখুঁতানি কিংবা বাছবিচার কখনোই করেনি।
নাস্তা করে এককাপ চা আর তারপর কিছুক্ষণের জন্য খবরের কাগজটা টেনে নেওয়া। সকালবেলার এই সময়টুকুই ওর একান্ত নিজের।
আজকেও কাগজটা নিয়ে বসেছিল। মূল পাতার সঙ্গে আজকের আয়োজনে আছে সাহিত্য বিষয়ক পাতা। সাহিত্য সায়মার বরাবরের প্রিয় বিষয়। নিজেও একসময় একটু আধটু লেখালেখি করতো। এখন ওসব সুদূর অতীত। কিন্তু ওর মধ্যকার পাঠক মনটা হারিয়ে যায়নি আজো। সাহিত্যের পাতাটা পড়তে পড়তেই ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ পড়ে সায়মার। সাড়ে দশটা বেজে গেছে। সাহিত্যপাঠ মাথায় উঠলো। তাড়াতাড়ি ডিপ ফ্রিজ খুলে দুটো মাংসের প্যাকেট বের করে পানিতে ভেজালো। সবজির র‍্যাকটা বের করে দেখলো কয়েকটা মোটে পটল শুটকি মেরে আছে। অতএব কাঁচাবাজার যেতে হবে। কাঁচাবাজার বাড়ির কাছেই। হেঁটেই যাতায়াত করে সায়মা। রেহান শুক্রবার দিন বাজার করে দেয়। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে টুকটাক বাজার ওকেই সেরে নিতে হয়।
কাঁচাবাজারে ঢুকে আরেক বিপত্তি। ভার্সিটি লাইফের বান্ধবী পলার সাথে দেখা হয়ে গেল। একথা ওকথা বলতে বলতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। ‘আজ খবর আছে’, মনে মনে ভাবল সায়মা। রান্নাবান্না শেষ করে ছেলে টুকুন কে স্কুল থেকে আনতে হবে। মাঝখানে কিছুদিন রান্নার লোক রেখেছিল সায়মা। কিন্তু রেহান খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে। এটাতে এত তেল কেন, ওটা এত বেশী সেদ্ধ হল কেন, ভাত কেন ঝরঝরে হল না—হাজার খুঁত না ধরলে ওর হয় না। শেষমেষ লোক ছেড়ে দিয়ে নিজেই আবার রান্নার হাল ধরে সায়মা। এই নিয়ে রেহানের সাথে কিছু বলা বৃথা। সায়মা চেষ্টা করে দেখেছে। লাভ হয়নি।
‘রান্না সবসময় একরকম নাও হতে পারে। একটু আধটু এদিক ওদিক হলেই এত আপত্তি জানানোর কি আছে?’
‘শোন সায়মা, রান্না হচ্ছে একটা আর্ট, বুঝেছো? তুমি রং তুলিতে ছবি আঁকার সময়ে কি কোন একটা জায়গায় বেশী রঙ মেরে দেবে? পুরো ছবিটাই তো তাহলে গুবলেট হয়ে গেল।‘
সায়মা হেরে যায় তর্কে। সুতরাং আর তর্ক বাড়িয়ে কাজ নেই। রান্নার লোক দিয়ে রান্না করালে মাঝেমাঝে তেল, নুন, ঝাল বেশী হবেই। হেঁসেলের ভার আবার কাঁধে তুলে নিতে হয়। বাঁধা একটা কাজের মেয়ে যদিও আছে, কিন্তু ওকে দিয়ে কুটা বাছা করানো ছাড়া আর কিছু করায় না সে।
রান্না শেষে টুকুনকে নিয়ে আসা, বিকেলে আর্ট ক্লাসে নিয়ে যাওয়া, রাতে পড়াতে বসানো সব একা হাতে সামলায় সায়মা। ড্রাইভারের কাছে একা ছেড়ে দিতে সাহস হয়না সায়মার। সময়টা ভালো না, আশেপাশের মানুষদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। টুকুন ক্লাস ফাইভে পড়ে। এই বয়সেই আর্ট, কবিতা কত কিছুই না শিখতে হচ্ছে।
মেয়ে রিমা এবার কলেজে উঠল। মেয়ে বড় হচ্ছে। প্রাইভেসি ভালবাসতে শিখেছে। অতএব ওর অন্দর মহলে সায়মা এখন অনেকটাই অবাঞ্ছিত। আসলে যুগটাই অনেক বদলে গেছে। নিত্য নূতন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীতে ওরা এতটাই অভ্যস্ত এখন যে, পারিবারিক সামাজিক বন্ধনগুলো ঠুনকো হয়ে গেছে ওদের কাছে। সায়মা মনে করার চেষ্টা করে ও নিজেও এরকম ছিল কিনা। মাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে। কথাটা ভাবতেই মনে পড়ে গেল অনেকদিন মার বাসায় যাওয়া হয়নি। আসলে সময়ের সাথে নিত্যদিনের এই পাল্লায় মার কথাটুকু ভাবারও অবকাশ পায় না সে।
দু’বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সায়মা সবার বড়। ছোট বোন বিয়ের পর স্বামীসহ দেশের বাইরে, আর ভাইটা সবে ভার্সিটি থেকে বেরুলো। বাবা গত হয়েছেন প্রায় দশ বছর।
বাবার ভারী আদরের মেয়ে ছিল সায়মা। সায়মাকে ঘিরে বাবার স্বপ্নও ছিল অফুরান। আজকের পুরোদস্তুর গৃহিণী, পরিবারের পিছনে কঠোর শ্রম দেওয়া সায়মার মাঝে ভার্সিটিতে পড়ুয়া সদা চঞ্চল, সদালাপী, তুখোড় বক্তা, সুলেখিকা ও মেধাবী ছাত্রী সায়মাকে খুঁজে পাওয়া দায়। ওর জীবনটা যে এভাবে সংসার নামক জটিল পাঁকে খাবি খাবে তা কখনোই ভাবতে পারেনি সে। সম্ভবত রেহানের সাথে পরিচয়টাই ওর জীবনের টার্ণিং পয়েন্ট।
প্রায় উনিশ-কুড়ি বছর আগের কথা। সায়মা তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পড়াশুনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ এও সায়মা সমান আগ্রহী। বিতর্ক অংগনের পরিচিত মুখ, পাশাপাশি লেখালেখিও করে। দেশের নামকরা এক জাতীয় দৈনিকের বিশেষ পাতায় একবার ওর একটা প্রবন্ধ ছাপা হয়। প্রবন্ধটি পড়তে গিয়ে সায়মা একটু হোঁচট খায়। শেষের অংশটুকু এডিট করা। প্রবন্ধটিতে ওর মূলবক্তব্যটাই শেষের অংশটুকুতে বর্ণণা করা হয়েছে, আর সেটুকুই কিনা এডিট করা। সায়মা ব্যাপারটা নিতে পারে না। সোজা গিয়ে হাজির হয় পত্রিকা অফিসে। বিশেষ পাতার দায়িত্বে ছিলেন রেহান মাহমুদ। সায়মা গিয়ে দেখা করে তার সঙ্গে। সায়মার মনক্ষুন্নতা যথেষ্ট বুঝতে পারে রেহান।
'আমি কি জানতে পারি, ঠিক কি কারণে আমার পুরো প্রবন্ধটা ছাপা হল না? অংশবিশেষ ছাপানোর তো কোন প্রয়োজন দেখছি না।'
'ম্যাডাম, আপনি বসুন। চা দিতে বলি?'
‘জী না, আমার প্রশ্নটার ঠিক ঠিক জবাবটুকু দিলেই চলবে।'
সায়মা যতটা উত্তপ্ত, রেহান ঠিক ততটাই শীতল। যাকে বলে 'কুল'।
'দেখুন ম্যাডাম, আপনার সাবজেক্টটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আপনার পরিবেশনা চমৎকার, সেজন্য আমরা লেখাটি নিয়েছি। কিন্তু আপনার পুরো বক্তব্যটি প্রকাশ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।'
বেশী রেগে গেলে সায়মার যুক্তি বুদ্ধি লোপ পায়। আরো কিছুক্ষণ নিস্ফল আস্ফালন শেষে চলে আসে সে।গজগজ করতে করতে বেরোয়, 'আর কখনোই আপনাদের পত্রিকায় লেখা পাঠাবো না। নিকুচি করেছি...।'
ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু হল না। অপরপক্ষ তখন একেবারে কুপোকাৎ। রেহান জোঁক এর মত লেগে গেল সায়মার পেছনে। আস্তে আস্তে সম্পর্ক গড়ায় পরিণতিতে।
বিয়ের পর সায়মা তার বাইরের জগৎ এর কাজকর্ম চালিয়ে যাবে এই ব্যাপারে কারোরই বিশেষ কোন আপত্তি ছিল না। সায়মা কিছুদিন একটা অ্যাডফার্মে কাজও করে। পাশাপাশি লেখালেখিটা ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু বিয়ের দু'বছরের মাথায় রীমার জন্ম হয়। সায়মাকে বাধ্য হয়ে গুটিয়ে যেতে হয়। তবু ভেবেছিল আবার ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ওর নিজেরই হয়তো কোন সীমাবদ্ধতা ছিল। রেহান কখনোই প্রত্যক্ষভাবে সায়মার কেরিয়ারের ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নি। কিন্তু প্রচণ্ড কেতাদুরস্ত, কিছুটা খুঁতখুঁতে স্বভাবের রেহানের পারিপার্শিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সায়মাকে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়। একই সাথে আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়া দায়িত্বের বাঁধনে সায়মারও সময় হয়ে ওঠেনি কেরিয়ারের কথা ভাবার। রেহানও আগ বাড়িয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। রীমা আর টুকুনের যাবতীয় দায়িত্ব সানন্দে পালন করেছে সায়মা। এখন ওদের মাঝেই ওর সুপ্ত স্বপ্নগুলো অঙ্কুরিত হয়, বেড়ে ওঠে।
রেহান ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।নিজ পেশায় যথেষ্ট সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে সে। ও নিজেই এখন একটা জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক। সাংবাদিকতায় রেহান মাহমুদ এখন একটি পরিচিত নাম।
মেয়ে রীমার মধ্যে সায়মা কখনো কখনো নিজের তরুণ বয়সের সেই সৃষ্টিশীল মনটাকে দেখতে পায়। রীমারও টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস আছে। মাঝে মাঝে আগ্রহ নিয়ে সায়মাকে দেখায়। উৎসাহ দেয় সায়মা।
টুকুন এখনো পড়াশুনার ব্যাপারে পুরোপুরি মা'র উপর নির্ভরশীল। ওকে কোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে দেয়নি সায়মা। টুকুন এবার পি এস সি পরীক্ষা দেবে। সায়মার প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটে টুকুনের পড়াশুনা নিয়ে। রেহান ব্যস্ত তার নিজের জগৎ নিয়ে। ছেলে মেয়ের বেড়ে ওঠা, ওদের শখ, এম্বিশন সব কিছুই গড়ে ওঠে রেহানের অগোচরে।
এর মাঝে একটা ঘটনা ঘটে। রীমাদের কলেজে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ওপর একটা ইন্টারকলেজ কম্পিটিশন হয়। অর্গানাইজার একটা নামকরা পাবলিকেশন্স। কয়েকটি ধাপে প্রতিযোগিতাটি আয়োজিত হবে। বিভিন্ন পর্বে থাকবে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ওপর ছোট ছোট নানা স্তরের আয়োজন। ফিকশন এবং নন-ফিকশন দুটো বিভাগেই কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ প্রতিটি শাখাতেই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।প্রায় মাসব্যাপী আয়োজন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপারটা হচ্ছে সেরা তিনজন প্রতিযোগীর লেখাগুলো নিয়ে পরবর্তী বইমেলায় একটি বই প্রকাশিত হবে। রীমা ভীষণ উৎসাহের সাথে তোড়েজোড়ে লেগে পড়ে। আদাজল খেয়ে লাগা যাকে বলে। সায়মা নিজে থেকে এগিয়ে যায় রীমাকে সাহায্য করতে। ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ওপর ওর নিজের জ্ঞানটুকু উজাড় করে দেয় মেয়েকে।
রীমা তার মার এই দিকটি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। ভীষন আলোড়িত হয় সে। মা-মেয়ের মাঝখানের দূরত্বটুকু হাওয়ার মত মিলিয়ে যায়। সায়মাও খুঁজে পায় নিজের স্বকীয়তা। রীমার মাঝে সে বুনে দিতে থাকে তার অভিজ্ঞতার বীজ। সৃষ্টিশীলতা এমন এক গুণ যা কাউকে শেখানো যায় না। রীমার মাঝে সেই সৃষ্টিশীলতা প্রথম থেকেই ছিল, সায়মা শুধু তাতে জলসিঞ্চন করতে থাকে।
প্রতিটি পর্বে পাঁচদিন সময় থাকে লেখা জমা দেওয়ার জন্য। লেখাগুলোর প্লট রীমা নিজেই চিন্তা করে। সায়মা তাকে সাহায্য করে প্লটটাকে গুছিয়ে শব্দের সঠিক বুনটে লেখাটাকে তৈরী করে তুলতে। লেখা শেষে রিভিউ এর সময় সায়মা যত্ন করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়। কবিতার ক্ষেত্রে বিরামচিহ্ন এর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়।
অবশেষে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হলে দেখা যায় প্রায় আড়াইশোর মত প্রতিযোগীকে টপকে রীমা ছোট গল্প ও প্রবন্ধ শাখায় প্রথম স্থান দখল করেছে। ফলাফল প্রকাশের দিন রীমা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে মা কে বলে,
'থ্যাংক ইউ সো মাচ মা। তোমার জন্যই এটা সম্ভব হল।'
সায়মা ভেসে যায় বাঁধভাঙ্গা আবেগে। অনেক দিন পর মনে পড়ে যায় ওকে নিয়ে বলা বাবার একটা কথা,' তুই জিতলে আমিও যে জিতে যাই।'
রীমার এই অনন্য অর্জনে রেহান ভীষন গর্ব বোধ করে। মেয়ের সাফল্যে কলিগ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় পরিজন নিয়ে বাসায় একটা ছোটখাট পার্টির আয়োজন করে। সবাই আন্তরিকতার সাথে রীমাকে অভিনন্দন জানায়। সেই সাথে অভিবাদন জানায় রেহানকে,
'রেহান, দেখতে হবে তো কার মেয়ে। তোমার মত চৌকষ সাংবাদিকের মেয়ে লিখতে পারবে না তাই কী হয়?'
রেহান উৎফুল্ল মনে আড্ডায় মাতে। গর্বিত মুখে চকচক করে ওঠে আত্মতৃপ্তির ছায়া।
রীমা ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকায় মার দিকে।
সায়মার তখন এসব কথায় মন দেবার সময়ই নাই। সে তখন ভীষণ ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে। কী আর করার আছে তার।
এই ডিপার্টমেন্টটাও যে তাকেই সামলাতে হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এমএআর শায়েল এবার একটি দেরী হয়ে গেল। তাই বুঝি আমার লেখাতে আপনার গঠনমূলক মন্তব্য পাইনি। গত সংখ্যায় দুই বিভাগেই বিজয়ী হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন দিদি।
ধন্যবাদ। দেরী হোক ক্ষতি নেই। শেষ পর্যন্ত পড়লেন তো!
মনজুরুল ইসলাম Straight statement of conceal privation.Having all sorts of qualities still our women are depriving. Wishing Women like sayma will get their recognition properly very soon.Stay blessed.
Ya, it's the crude reality. In every level of the society, women are facing this sort of set-up mentality. Most of the cases, no complain...painful though. Thanks.
ফারুক নুর লেখায় বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ, ভালো লাগলো ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
নাসরিন চৌধুরী আপনার লেখা দিয়েই শুরু করলাম আপু। অনেক ভাল লিখেছেন -আমাদের সমাজের ৮০ ভাগ নারী'র ভেতরের কথাটুকু তুলে ধরেছেন মানে ২৪ ঘন্টা তাদের ঘড়ির চাকা চলতেই থাকে কিন্তু বিরাম নেই ।আর প্রাপ্তি'র বেলায়ও ওই একই অবস্থা-সন্তানের ভাল অর্জনটুকু বাবাদের ঘাড়ে আর খারাপ হলে সেটা চাপে মায়েদের ঘাড়ে। আর একটা প্রশ্ন আপনার লেখায় ভোটিং অপশন বন্ধ কেন?
শুরুতে আমাকে মনে করায় সার্থকতা বোধ করছি। নারীদের এই ২৪ ঘণ্টার অক্লান্ত শ্রম আমার মতে আর সব শ্রমকে হার মানায়। ন্যূনতম পারিশ্রমিক বা বাহবাটূকূর ও দাবী রাখে না এই শ্রম, যার ভেতর দিয়ে কম-বেশী সব মেয়েকেই যেতে হয়। গল্প-কবিতা'র নিয়ম অনুসারে একটা সংখ্যায় বিজয়ী হলে পরবর্তী দু'সংখ্যায় ভোট বন্ধ থাকে। ফাল্গুন সংখ্যায় বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও আমার পরপর তিন সংখ্যা বিচারক প্যানেলে চলে গেছে। অতএব...।
সৃজন শারফিনুল মা তো মা তার উপর কি কোন তুলনা চলে... খুব ভাল লাগলো, অনেক শুভ কামনা ।
অনেক ধন্যবাদ। মা র তো তুলনা চলেই না, নারীর ও তুলনা নারী নিজেই। পর্দারা অন্তরালে থাকা সেই সকল নারীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী।
আল আমিন সবকিছুর ভেতর দিয়ে মূল চরিত্র ঠিকই আড়ালে পড়ে গেল। আর এটাই আমাদের সমাজে মায়ের ভূমিকা । অসাধারণ লেখনিতে চিরসত্য একটা ব্যাপার ফুটে উঠলো!
এটাই আমাদের সমাজে নারীর ভূমিকা...ধন্যবাদ,
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ সত্যি ! মেয়েরা হ’লো মাযের জাত ! তার মধ্যে যেমন দেখেছি আমার মাকে, তেমনি দেখলাম সায়মাকে । যারা রাঁধতে জানে, তারা বাঁধতেও জানে ! আপনিও কম যান না ! প্রফেশনের পাশাপাশি ঘর গেরস্থালী নিয়ে যে সুন্দর করে গোছানো গল্পটিকে উপহার দিলেন ! সত্যিই ! খুব ভাল লাগল । ভোট দেবার সুযোগ থাকলে অবশ্যই দিতাম । ভাল থাকবেন ।
অনেক ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধা আপনার জন্য। আপনার অনুপ্রেরণাদায়ী মন্তব্য আমাকে উজ্জীবিত করল আবারো। ভালো থাকবেন সদা।
এশরার লতিফ 'রেহান কখনোই প্রত্যক্ষভাবে সায়মার কেরিয়ারের ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নি। কিন্তু প্রচণ্ড কেতাদুরস্ত, কিছুটা খুঁতখুঁতে স্বভাবের রেহানের পারিপার্শিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সায়মাকে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়' - আমি দেখেছি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত স্বামীদের এ এক টেকনিক . মেধা ও প্রতিভা থাকা সত্তেও বাংলাদেশের মেয়েরা কেন পিছিয়ে যেত তার পুন্খানুপুন্খ বর্ণনা এই গল্পে পেলাম.
ধন্যবাদ এশরার ভাই। যুগ যত আধুনিক এবং সভ্যতা যত পুরনো হয়, নারীর চতুর্দিকে বেঁধে দেওয়া পুরুষের বেড়াজাল ও তত আধুনিক ও সুরম্য হয়ে ওঠে। ব্যাতিক্রম ও আছে নিয়মের মতই।( এশরার ভাই, আপনি কি লেখালেখি বাদ দিয়ে দিয়েছেন?)
ধন্যবাদ। আগামী সংখ্যায় লেখা দিয়েছি।

০১ ডিসেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৬৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪