দরজার ওপাশে
১
টলমলে পায়ে হোণ্ডা থেকে নামে সে। টান দিতে গিয়ে টের পায় নিভে গেছে সিগারেটের আগুন। ‘ধুস শা..,’ খিস্তি দিয়ে ওঠে। মেসের গেটে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় দারোয়ানের কাছ থেকে।
‘এত রাতে ঢোকা নিষেধ। স্যারের মানা আছে।’
গালিটা চলে এসেছিল মুখের খুব কাছে। কিন্তু জাত মাতালেরাও তালে ঠিক থাকে। বেশি মেজাজ দেখালে পরে ঝামেলা হতে পারে। কি দরকার শুধু শুধু থাকার জায়গাটা হারানোর?
‘জলিল ভাই, কি করবো বলেন, হঠাৎ পুরান বন্ধুদের দেখা পাইয়া গেলাম। ছাড়তে চাইলো না...’,বলতে বলতে দারোয়ানের বুকপকেটে কড়কড়ে দুইটা নোট ঢুকায়ে দেয়।
দারোয়ান আর কথা বাড়ায়ে সময় নষ্ট করার মানে দেখে না। ‘ঢুইকা পড়েন, পরেরবার আর দেখবার পারুম না কইলাম।’
মনে মনে কষে বাপ-মা তুলে একটা গালি দেয় সে। মুখে তোয়াজের তুবড়ি ছোটায়ে ভেতরে ঢোকে।
ভেজানো দরজা গলে রূমে ঢুকেই সটান বিছানায়। চার বিছানার কামরা। মধ্যবিত্ত পরিবারের ভয়ে ভয়ে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখা তিন তরুণের কেউই এত রাতে আর ওর তামাশা দেখার জন্য জেগে নেই।
২
পরদিন সোয়া এগারোটার আগে নিদ্রাদেবী আলিংগন মুক্ত করে না। এত দেরীতে আর মেসে সকালের খাবার জুটবে না। আর ওসব ছাইপাশ মুখেও রোচে না তার। রাতে ঘরে ঢুকে কাপড় চোপড় পাল্টানো হয়নি। আশেপাশে কেউ থাকলে এখনো মুখ থেকে কাল রাতের বিটকেলে কটু গন্ধটা পেত নিশ্চয়ই। তেমন কেউ নেই আশেপাশে। রুমমেটদের সাথে তার তেমন দেখা সাক্ষাত ঘটে না। বাথরুম থেকে ঘুরে এসে বাসি কাপড় পালটে গায়ে দামী সেন্ট স্প্রে করে ফিটবাবুটি সেজে ঘর থেকে বেরোয় শাম্স। হ্যাঁ, ওইটাই মহামান্য পিতৃপ্রদত্ত নাম তার। পিতার দেওয়া সবকিছুকেই ঝেড়ে ফেলা গ্যাছে, নামটা আর ঝুলিয়ে রেখে কী হবে? ভেবেছে অনেক। তবু ঝাড়তে পারেনি শেষমেষ। বন্ধু-বান্ধবের কাছে এখনো নামটা জিন্দা আছে। অবশ্য সমস্যা বিশেষ নেই তাতে। রিয়েল প্রফেশনে ও বহুনামধারী।
হেলতে দুলতে সামনের গলির রফিক চাচার রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে শাম্স। চাচার রেস্টুরেণ্টে টাইমের কোন হিসাব নাই। যখন তখন যেটা খুশী সেটা পাওয়া যায়। দেদার ব্যবসা। পেটের মধ্যে গোটা তিনেক খাস্তা পরোটা আর খাশীর নিহারী চালান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। পকেট থেকে লেটেস্ট মডেলের দামী স্মার্টফোনটা বের করে দেখে, উনত্রিশটা মিসড্কল। কুছ পরোয়া নেহি। পরিস্থিতি সামাল দিতে তার জুড়ি মেলা ভার। ফোন লাগায় নির্দিষ্ট নাম্বারে। একবার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ হয়।
‘হ্যালো। কি ব্যাপার, কই থাকো তুমি? ফোনটা পর্যন্ত ধরতে পারো না? জানো কয়বার কল দিছি আমি? কি করতাছিলা, এ্যাঁ?’
‘ ওহ্ ডার্লিং, মাই সুইটি। তুমি তো জানোই, রাত জেগে পড়াশুনা করতে হয়। সামনে এক্সাম। ভাল না করতে পারলে তোমার বাবা-মার কাছে আমার কথা বলতে পারবা? ফোনটা সাইলেণ্ট মোডে ছিল।’
‘তাই বলে তুমি আমার কলও দেখবা না?’ ওপর পক্ষের গলা ইতিমধ্যেই নরম হয়ে এসেছে।
মনে মনে হাসে শাম্স। মেয়েমাইনসের জাত। ন্যাকামি দেখাইবার বেলা ষোলআনা। একটা মিথ্যা কথারও গন্ধ বুঝবার পারে না।
দুনিয়ার সব মেয়েমানুষই বোকার হদ্দ, আর হাড়ে হাড়ে বজ্জাত। খালি বোঝে উপরের ফিটফাট, চাকুমচুকুম কথা। ভদ্রভাবে কথা বলতে গেলে এমন ভাব দেখাবে যেন সতি-সাবত্রী, যার তার সাথে কথা বলে না। একটু রংবাজি দেখাও, ব্যস। গলে একবারে পান্তাভাত। তখন আর কোন লাজ-লজ্জা কিছুই নাই। এমনি এমনি মেয়েদের সম্পর্কে এমন ধারণা হয়নি, দশ-বারো বছরের অভিজ্ঞতা এই লাইনে।
বাপের সাথে কানেকশন কাট করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ঢাকা শহরে। বাবা খোঁজ জোগাড় করে পেছনে ফেউ লাগিয়ে দেয়। কত আর বয়স তখন? মাত্র তের-চৌদ্দ বছর। ছোট চাচারে অনেক ভালোবাসতো সে। ছোট চাচা এসে যখন তার মেসে ওকে নিয়ে গেল, ওর খুশী তখন দেখে কে? রসাতলে যাক দুনিয়া। এখন থেকে ছোট চাচাই তার বাপ-মা। ওর দেখাশোনার জন্য ছোট চাচাকে বাবাই দায়িত্বটা দিয়েছিল, বুঝতে পারেনি সে। ছোটচাচা তখন চাকরি বাকরির ধান্ধা করছে। শাম্স থেকে যায় তার সাথে। খরচপাতি কে চালাচ্ছে এটা চিন্তা করার মত মগজ হয়নি তখনো। পড়াশুনা করানোর অনেক চেষ্টা করে ছোটচাচা, কিন্তু শাম্সের পড়াশুনায় মন বসে না। ঐটুকুন বয়সেই দুনিয়ার সকল সুকুমার বস্তুর উপর থেকেই মন উঠে গেছে তার। আশপাশ থেকে বন্ধু-বান্ধবও জুটে যায় নিজের লেভেলের। সারাদিন তাদের সাথে মৌজ-মাস্তি, নিষিদ্ধ নেশা...অনেক কিছুই শিখে যায় সে। ঘর না, ওকে ব্যাকুলের মত টানতো বাইরের দুনিয়া। ছোটচাচা শাম্সের বেহাল এই দশা দেখে অনেক চেষ্টা তদবির করে ওকে ফেরানোর। কিন্তু শাম্সের দুনিয়াটাই তখন বদলে গেছে। ও এখন আর কারোরই পরোয়া করে না। শেষমেষ চাচাও ওর দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
শাম্স ততদিনে দুনিয়া চিনে গেছে। কিন্তু হাতে টাকা না থাকলে আর কিসের দুনিয়া? এক বন্ধু চিনিয়ে দেয় জব্বর এক রাস্তা। বড়লোকের মালদার মেয়ে পটানোর কাজ। মেয়ে পটাও আর তারপরে মাথায় কাঁঠাল ভাংগো। ব্যাপক মনে ধরে এই কাজ তার।
আর এই লাইনে কঠিন পারদর্শীতার পরিচয় দেয় সে। মিনিমাম ইনভেস্টমেণ্টে কিভাবে ম্যাক্সিমাম ফায়দা হাসিল করা যায় অল্প দিনেই শিখে ফেলে। এই কাজে তার প্রয়োজন হয় মাত্র দুটি জিনিস। এক, একটি মোবাইল ফোন আর দুই, গোটা দশ-বারোটার মত সিমকার্ড। তারপর মোটামুটি মালদার পার্টি খুঁজে খুঁজে বের করে ফোন দেওয়া। ফোন নাম্বার বের করা তো বাঁ হাতের কাজ। পার্টি পটানোই হচ্ছে আসল কাজ। কিন্তু এই ব্যাপারে শাম্সের আছে শতকরা একশ ভাগ নিশ্চয়তা। এমন কোন মেয়ে সে পায়নি যাকে সে পটাতে পারেনি। একেক পার্টির জন্য একেক রকম দাওয়াই। পার্টিকে দু’একদিন ফলো করলেই এব্যাপারে বুঝতে আর কোন অসুবিধা হয় না যে, কোন দাওয়াই দিতে হবে। ব্যস, তারপরে মনের আনন্দে যত পারো খসিয়ে নাও। মেয়েগুলোন যে এত রামছাগল! বিন্দুমাত্র সন্দেহ করে না। এই খেলার শেষ অংশে সে একটা বড় দাও মারে। ইমোশনাল কোন একটা ব্ল্যাকমেইল করে মেয়েগুলোর কাছ থেকে বেশ বড় অংকের টাকা নিয়ে নেয়। তারপর, সিমকার্ড বদল...পাখি উড়াল। তবে এখন পর্যন্ত কোন মেয়েরই সে বড় কোন ক্ষতি করেনি। যেটা সে চাইলেই অনায়াসে করতে পারতো। বিবেকের কোন একটা জায়গায় এখনো হয়তো কিছু একটা বোধ ফোধ কাজ করে।
আপন মনেই হাসে শাম্স। বোধ!! হাহ্! দুনিয়ার সব মেয়ে জাতের সে শেষ দেখে ছাড়বে। যতদিন পর্যন্ত না ঐ একটা মুখ ভুলতে পারে। ওর জন্মদাত্রীর মুখ!
৩
পেছন ফিরে তাকাতে রুচি হয়না শাম্সের, ইচ্ছাও। মাত্র সাত বছরের শিশুপুত্রকে ফেলে কোন মা পরপুরুষের সাথে চলে যেতে পারে! বাবা ছোটখাট ব্যবসা করলেও অভাব ছিল না ওদের। প্রাচুর্য্যও হয়তো ছিল না তেমন। কিন্তু অভাব ছিল ওর মার মনে। মা কোনদিনই সুখী হতে পারেনি ওর বাবাকে নিয়ে। তার ছিল বিলাসের মোহ, অর্থের আকাশচুম্বী লিপ্সা। তরুণী মা নিজের মান-সম্মান বিসর্জন দিয়ে এক পয়সাওয়ালা বড় ব্যবসায়ীর হাত ধরে চলে যায়। একটিবারের জন্যও পেছন ফিরে দেখার প্রয়োজন মনে করে না।
শাম্সের ভালোমানুষ সাধাসিধে বাবা অনেক কষ্টে এই প্রচণ্ড ধাক্কা সামলে ওঠে। অবুঝ শিশুপুত্রকে পরম স্নেহে আগলে ধরে তার বাবা। সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনে কেটে যায় বাপ-ছেলের দিনগুলো। কিন্তু আবার ঝড় ওঠে। এবার অবশ্য হঠাৎ করে না, বেশ বলে কয়েই ওঠে ঝড়।
ওর বয়স যখন তের কি চৌদ্দ, বাবা ওকে নানাভাবে বোঝাতে থাকে যে ওদের জীবনে একটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এমন কাউকে প্রয়োজন, যে ওদের বাড়িটা দেখেশুনে রাখবে, ওদের খেয়াল রাখবে। ঐ বয়সেই শাম্স বুঝতে পারে যে, বাবা কাউকে খুঁজে পেয়েই বিষয়টা কেবল ওর কাছে হালাল করে নিচ্ছে। ওর মতামতটা একটা বাহানা ছাড়া আর কিছু না। প্রচণ্ড অভিমান হয় ওর। মা চলে যাওয়ার পর ও যতবারই ‘মা’ বলে কেঁদেছে ততবারই একটা শক্ত হাত ওকে জড়িয়ে ধরেছে প্রবল স্নেহে। সেই শক্ত হাতটার প্রয়োজন তো ওর এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
শাম্সের বাবা অনেক চেষ্টা করেও ওকে বোঝাতে পারেনা। কিচ্ছু বুঝতে চায়না সে। নিজের মা ই ওকে ফেলে চলে গেছে, নকল মা কোন্ কাজে আসবে? কিন্তু বাবা কেন এরকম করবে এই ভেবে একদিন ছেলেমানুষি ভীষণ এক তাড়নায় বাড়ি ছাড়ে শাম্স।
ছোটচাচার মেসে অনেকবারই বাবা এসেছেন, শাম্সকে ফিরে যাবার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করেছেন। কিন্তু কিশোর এক ছেলের মনে কিসের যে তীব্র জেদ শিকড় গেড়ে বসে থাকে, কেউ তা বুঝতে পারে না। ছোটচাচার অনেক অনুরোধে প্রায় বছর দেড়েক বাদে একবার গিয়েছিল চাচার সাথে ওদের বাসায়। একটা বাচ্চা মেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরময়, দেখে এসেছে। নকল মা খুব খাতিরদারি দেখানোর চেষ্টা করেছে। বার বার শাম্সকে থাকতে বলেছে। অভিনয়...সব অভিনয়, জানে শাম্স। একবার থাকলেই ওর ঘাড়টা একদিন ঠিক মটকে দেবে ঐ ডাইনী। আর যায়নি কোনদিন তারপরে। দিন চলে গেছে আপন গতিতে, শাম্সের জীবনধারার প্রচণ্ড গতির সাথে পাল্লা দিয়েই।
৪
মেসে ফিরেই আবার বিছানামুখো হয় শাম্স। আজ ভাল্লাগ্ছেনা শরীরটা। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে। এমন সময় আবার বেজে ওঠে ফোনটা। ছোট চাচা ফোন করেছেন! কি ব্যাপার? বাবা কিংবা চাচা কারো সাথেই কোনরকম যোগাযোগ করে না সে। তারাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন একরকম।
‘তুই কোথায় আছিস?’
‘কোথায় আবার! মেসেই আছি। কেন কি হয়েছে?’
‘আমি আধাঘণ্টার ভেতর আসছি। কোথাও যাবি না।’
শাম্স অবাক হয়। আধাঘণ্টার আগেই ছোটচাচা চলে আসে। কেমন যেন উদভ্রান্তের মত চেহারা।
‘কাল রাতে ফোন ধরিসনি কেন? ...দাদা চলে গেছে রে।’ হু হু করে কেঁদে ওঠে ছোটচাচা।
শাম্স দাঁড়িয়ে থাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অনেক কথা হুটোপুটি খায় মনের মধ্যে। বাবা ওকে অনেকদিন ফোন করে বাসায় আসতে বলেছেন। অনেক কথা বলতে চেয়েছেন। নিজের কৃতকর্মের কৈফিয়ত দিতে চেয়েছেন অসংখ্যবার। শাম্স কোন কথাই শুনতে চায়নি। যেন পৃথিবীর কারো কাছেই ওর কিছুই চাইবার নাই।
‘কাল সারারাত তোর ফোন বন্ধ ছিল। দুপুরের দিকে হঠাৎ হার্টএটাক। ভাবির ফোন পেয়ে হাসপাতালে যাই। বিকেলের মধ্যে সব শেষ।’
শাম্স হঠাৎ আবার নিরুৎসাহী হয়ে পড়ে। আছেই তো সবাই। ওর বাবাকে শেষবিদায় জানাতে ওর যাওয়ার কি এমন প্রয়োজন?
‘চল্, আমার সাথে,’ ছোটচাচা ওকে রাজি করাতে আসেনি, ওকে নিয়ে যেতে এসেছে। চাচার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল, শাম্স কথা বাড়ায় না। নিঃশব্দে যেতে থাকে চাচার পিছু পিছু।
৫
ওরা যাবার পর বাবার দাফন হয়। বাবার লাশের পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে শাম্স। কাঁদতে পারে না।
দাফন শেষে মেসে ফিরতে গিয়ে বাধা পায় শাম্স। ওর সৎমা ওকে আজ রাতটা থেকে যেতে বলে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকায় মহিলার দিকে। মুখটা ভীষণ শুকনো, চোখগুলো কাঁদতে কাঁদতে ফুলে আছে। চোখে কেমন যেন মমতার ছায়া। শাম্স নিজেকে অবাক করে দিয়ে সেই রাতটা থেকে যেতে রাজি হয়ে যায়।
মা-মেয়ে শোকের মাঝেও শাম্সের জন্য এটা ওটা করতে থাকে। বড় বড় চোখের কিশোরী মেয়েটার মুখে রাজ্যের কৌতুহল আর আগ্রহের মাখামাখি। শাম্সের পাত্তা না পেয়েও ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ করতে থাকে। খুব যত্ন করে ওকে খাওয়ায় মা আর মেয়ে। আয়োজন অতি সামান্য। মরা বাড়ি, কে রান্নাবাড়ি করে! প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে কিছু তরকারি দিয়ে গেছে, সেটা দিয়েই আজকের আয়োজন। খাওয়া শেষে ওর সৎবোন ওকে থাকার ঘরটা দেখায়। শাম্স দেখে ও যেই ঘরে থাকতো, সেই ঘরটাই। এরমধ্যেই মেয়েটা সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলেছে ঘরটা । বিছানায় নতুন চাদর বিছানো। পরিপাটি যত্ন আর মমতার ছাপ সারাটা ঘর জুড়ে।
পরদিন সকালে উঠেই শাম্স যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে যায়। ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়ায় সামনে।
‘তুমি চলে যাবা বাবা? থাকো না আমাদের সাথে! আমাদের আর কে আছে? মেয়েটা বাবাকে হারিয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিল। তোমাকে পেয়ে একদিনেই কেমন সব ভুলে গেল! তোমার বাবার যা আছে সবই তো তোমার। মেয়েটাতো বিয়ের পরই চলে যাবে। আর আমি...আমার একার বেঁচে থাকার জন্য কতটুকুই বা লাগে!’
শাম্সের মনে পড়ে যায় ওর মার কাছে বাবার এই সম্পদটুকু বড়ই সামান্য মনে হয়েছিল। আর সেজন্য ওকে ফেলে যেতেও দ্বিধা করেনি ওর নিজের মা!
শাম্স কোন কথা না বলে ঘরের দরজা খুলে সামনে এগিয়ে যায়। টের পায় ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে মা-বোন। অনিশ্চিত পায়ে এসে দাঁড়ায় বাড়ির সামনের লোহার গেটটার কাছে।
ভীষণ অভিমানী এক মানুষ সে। সেই শৈশব থেকেই এক প্রচণ্ড অভিমান বয়ে নিয়ে চলেছে হতভাগ্যের মত। এতদিন জেনে এসেছে তার নাম ঘৃণা। ঘৃণার অপরপাশে কোন ভালোবাসার দাবী বা আকুলতা যে ওত পেতে আছে মনে হয়নি কখনো। হঠাৎ ঝাপ্সা হয়ে যেতে থাকে ওর সামনের সবকিছু। গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কিছু একটা। সামনে তাকিয়ে কিচ্ছু দেখতে পায় না সে।
আর কি আশ্চর্য! লোহার গেটটা এত শক্ত হয়ে গেল কিভাবে? শত চেষ্টা করেও গেটটা খুলতে পারেনা শাম্স।
ভ্যাবাচ্যাকার মত দাঁড়িয়ে থাকে গেটটার এপাশেই।
০১ ডিসেম্বর - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৬৭ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৩৪
বিচারক স্কোরঃ ৩.৩৪ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪