হয়তো এটা গল্প নয়

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

মোস্তফা সোহেল
  • ১০
  • ২৪
গভীর রাতে ঘরের ভেতরে কিছু একটার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।কান খাড়া করে শব্দের উৎস খুজতে লাগলাম।কিন্তু এই মূহুর্তে আর কোন শব্দ কানে আসছে না।ইদুর-টিদুর হবে হয়তো।
গভীর রাতে যখন চারিদিকে নিঃশব্দ হয়ে যায় তখন কান পাতলে এক রকম শব্দ কানে আছে।আসলে নিঃশব্দেরও একটা আলাদা শব্দ আছে।যেটা সবাই বোঝেনা।
ভয়-ডর আমার খুব একটা ছিল না।কিন্তু এই মাস খানেক আগে থেকে আমার ভয় খুব বেড়ে গেছে।সন্ধ্যার পরে একা কোথাও যেতে পারি না ভয়ে।একা থাকতেও ভয়ে গা ছম ছম করে।সুমন যেদিন রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল তার পর থেকেই আমার যত ভয়ের শুরু। সুমন আমার বন্ধু।ওর আর আমার বন্ধুত্বটা কেমন ছিল সেটা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারব না।দুই বন্ধু একে অপরকে প্রানের চেয়ে বেশি ভাল বাসতাম।সুমন বড় লোক পরিবারের ছেলে আর আমি সামান্য মধ্যেবিত্ত পরিবারের।সুমনের মাঝে মাঝে উল্টা পাল্টা চলাফেরা আমাকে খুব কষ্ট দিত।সুমন যখন আমার কোন কথা না শুনত তখন আমি মনে-মনে খুব কষ্ট পেতাম।সেইমূহুর্তে আমার মনে হত সুমন বন্ধু হিসেবে আমাকে একটুও ভালবাসে না।
একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম সুমন সিগরেট খাওয়া শুরু করছে।বন্ধুত্বের দোহায় দিয়ে ওকে নিষেধ করলাম।কথা দিল আর খাবে না।তারপরও বুঝতাম লুকিয়ে লুকিয়ে সুমন সিগরেট খায়।সেদিন শুনলাম নিজ গ্রামে একটা মেয়েকে ভালবাসে সুমন কিন্তু আমাকে বলেনি।আমি এই নিয়ে সুমনের সাথে ঝগড়া করলাম।কারন ও একটা মেয়েকে ভালবাসে সেটা আমার সাথে কেন শেয়ার করল না।সুমন বলল,তুই মেনে নিবিনা বলে বলিনি।আমি বললাম তুই তো ভাল করই জানিস মেয়েটার আগে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক ছিল তারপরও তাকে ভালবাসার কথা ভাবলি কি করে। আসলে বন্ধু হিসেবে তুই আমাকে এখনও পর্যন্ত ভালই বাসতে পারিসনি।তাহলে আমার সাথে শেয়ার না করে তুই এত কিছু করতে পারতিস না। সুমন খারাপ কিছু করলে আমি মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না।ভিষন কষ্ট পেতাম।এসব কথা কখনই কাউকে বলতে পারতাম না।কষ্ট গুলো নিজের মাঝেই রাখতাম। সেদিন বিকালে সুমনের ফোন বলে, রাস্তায় দাড়া আমি চার মিনিটে আসছি।
বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড়াতেই পেছনে একরাশ ধুলা উড়িয়ে একটা মটর সাইকেল চালিয়ে হাজির হল সুমন।
আজই বাবা কিনে দিল, তোকে সারপ্রাইজ দিব বলে আগে থেকে বলিনি।এখন ঝটপট পেছনে ওঠ বেড়াবো অনেক জায়গায়। সুমন এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে গেল।আমি দাড়িয়েই রইলাম। সুমন বলল,কি হল না উঠে দাড়িয়ে রইলি কেন?তুই যা আমি যাব না।আমার কথা শুনে সুমন রেগে গেল।বেশ কিছু কথাও শুনিয়ে দিল।শেষে এক শর্তে ওর সাথে যেতে রাজি হলাম।শর্তটা হল সুমন কখনই খুব জোরে মটর সাইকেল চালাতে পারবে না।আর সব সময় হেলমেট ব্যবহার করবে।সুমন বলল,ওকে ঠিক আছে এখন ওঠতো।
এর ঠিক বাইশ দিন পরে একটা রোড এক্সিডেন্টে সুমন স্পট ডেড!সুমন আমার শর্ত রাখেনি।আমাকে একা রেখে বড় অসময়ে চলে গেল সুমন।
পাশ ফিরে শুতেই আবার একটা শব্দ কানে এল,মনে হচ্ছে আমার ঘরের চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে।আমি কোন রকমে কাপা গলায় বললাম, কে ওখানে? আরমান আমি সুমন।
সুমনের কন্ঠ শুনে আমার মন থেকে সব ভয় কেমন করে যেন উধাও হয়ে গেল।কিন্তু এটা কি করে সম্ভব তুইতো মারা গেছিস।
মরে গেছি তো কি হয়েছে আমার আত্বা এখন সবসময় তোর সাথেই থাকবে।সে রাতে সুমনের আত্বার সাথে অনেক কথা হল।আজ রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন সুমন আবার হাজির।কিরে এখন ঘুমিয়ে পড়বি? ঘুমাব না তো কি করব তোর সাথে বক বক করব সারা রাত।সুমনের আত্বা আমায় বলল,আচ্ছা ঘুমা পরে কথা হবে। আমি বললাম,একটা সত্যি কথা বলবি সুমন? কি বল, মিথ্যা বলার কি আছে।তুই মরে গিয়ে আবার আমার কাছে কি জন্য এলি? আমি মরে যাওয়ার পরে বুঝেছি পৃথিবীতে একটা মানুষই আমাকে নিস্বার্থ ভাবে ভালবাসত আর সেটা তুই।মরার আগে তো তোকে সময় দেইনি তাই এখন মরার পরে তোর কাছে চলে এলাম।
তাও ভাল সুমন বুঝেছে আমি ওকে খুব ভালবাসতাম,তবে এই বুঝটা মরার আগে না বুঝে মরার পরেই বুঝল! একটা দীর্ঘস্বাশ বেরিয়ে এল বুকের ভেতর থেকে।অন্ধকারে সুমনেরও একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম।আত্বারা কি দীর্ঘস্বাশ ফেলে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী গল্পের শেষটা বেশ ভাল হয়েছে। কিছু বানান হয়ত অসাবধান বশত ছুটে গেছে। ভোট রইল
শামীম খান গল্পের শেষ দিকে চেয়ার টেনে বসা সুমনের জন্য একটা আবেগ এসে ছুঁয়ে দিল । মন খারাপ হোল ছেলেটির জন্য । আপনার লেখনী বেশ শক্তিশালী । লিখতে থাকুন পাশে পাবেন । এ লেখাটার জন্য শুভ কামনা আর ভোট রেখে গেলাম । ভালো থাকুন সারাক্ষণ ।
সোহানুজ্জামান মেহরান অনেক ভাল হয়েছে গল্পটি, ভোট রইল।
এস আহমেদ লিটন অনেক অনেক সুন্দর। মৃত্যুর পরে আত্মা এসে গল্প করে এটা কি যেন একটা রোগের লক্ষণ। রোগটার নাম হলে বোধ হয় আরো ভাল হত। শুভকামনা। ভোট থাকল।
মাইদুল আলম সিদ্দিকী শিরোনামটা যাই হোক এইটা গল্পই ছিল...
ফরহাদ সিকদার সুজন ভালো লাগলো ভাই চালিয়ে যান........ ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো ভাই।
এমএআর শায়েল আপনার অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়......শুভ কামনা। সুন্দর ভাবনা, পরিচ্ছন্ন চিন্তার একটি লিখা পড়লাম..... শুভ কামনা রইল। (হ্যাপীর কথা ভাবতে গেলে আমার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভালোই হয়েছে। ভুল মানুষের প্রেমে না পড়ে, যদি আমি ঠিকঠাক মানুষের প্রেমে পড়তাম তবে কি যে হত আমার, আল্লাই মালুম--- পড়ুন আমার লেখা- সে কেন এমন করল গল্পটি। আপনার মন্তব্য আশা করছি।)
ফারুক নুর "তাও ভাল সুমন বুঝেছে আমি ওকে খুব ভালবাসতাম,তবে এই বুঝটা মরার আগে না বুঝে মরার পরেই বুঝল! " চমৎকার অনুভূতি , ভালো লাগলো
আখতারুজ্জামান সোহাগ প্রিয় বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুটা বোঝা গেল কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় নি। সে কারণেই সে আসে এখনও প্রিয় বন্ধুর কাছে, আত্মারূপে। আপনার গল্পটা যেন একটা বন্ধুত্বের জয়গান। ভালো থাকবেন, শুভকামনা।

২৪ নভেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪