ভোঁদাই

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

রেনেসাঁ সাহা
  • ১৪
  • ৫৯
শীতের দিন। সক্কালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজটা বিগড়ে গেল নেহার। ভাই বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নেহার একমাত্র ভাই। যেদিন প্রথম ভাইকে নিয়ে মা নার্সিংহোম থেকে বাড়িতে এসেছিলেন, সে দিনটার কথা আজও ভোলেনি নেহা। তখন নেহা ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। চুপ চুপ করে ভাইয়ের ঘরে, ছোট্ট মশারিটা তুলে দু'চোখ ভরে দেখত সে। ছোট্ট ভাই; নেহা ভেবেছিল তার খেলার সাথী হবে ভাই। একসাথে অনেক মজা হবে। ভাই একটু বড় হতে হতে বোঝা গেল যা, ভাই একা একা অ-আ-ই করে কথা বলে, অকারণে অর্থহীন উচ্চারণে উ-----উ----উ করে চেল্লায়। অকারণে শব্দ করে হাসে একা একা। বিকট ভাবে হাত, পা ঘোরায়। বছর ঘোরে। ভাই ইস্কুলে ভর্তি হলে বোঝে সে, ভাই একটু অন্যরকম। মানসিক রোগের শিকার ভাইয়ের পরিচয় দিতে লজ্জাই লাগে একটু নেহার এখন।

নেহা ভাইকে না ছুয়েই বিছানা থেকে ওঠে। ভাই প্রথমে একটু উউ---উ করে একটা বিকট চিৎকার করে। তারপর জানায় মা নেহাকে তাড়াতাড়ি উঠতে বলেছে। ভাইয়ের বিকট অঙভঙ্গিতে নেহার কান্না পায় না এখন আর। নিজেকে শক্ত করে ফেলেছে সে, আগে যখন ভাইয়ের কীর্তি দেখে সবাই নেহাকে উপহাস করত, বা দয়া দেখাত তখন নেহার মনে হত মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন সে বোঝে লাভ নেই কিছু, প্রকৃতির কী বিচিত্র পরিহাস। এখন নেহা কলেজে পড়ে। বিকেলে যখন সে নিজের ঘরে ফেরে , দেখে বিছানায় ভাই বসে। নেহা বলে-"তুই যা, আমি পড়তে বসব। " ভাই আবার চিল্লিয়ে ওঠে; সেই অর্থহীন চিৎকার এ নেহার গা গুলোয়, ভারী হয়ে আসে ভেতর টা। আবার হাত-পা ঘুরিয়ে ভাই সুর করে বলে--"গল্প, গল্প, গল্প"। এর অর্থ নেহাকে এখন গল্প শোনাতে হবে ভাইকে। মাথার রক্ত পায়ে ওঠে নেহার। "গেলি তুই!" জোরে চিল্লিয়ে ওঠে নেহা।দু'একটা চড়-থাপ্পড় মারল। ভাই হাত-পা নড়িয়ে আটকানোর চেষ্টা করল, পারল না। সে পালাল না, আর নালিশও করার চেষ্টা করে নি মায়ের কাছে। একটু করুণা জাগে নেহার মনে। বলল -"এখন যা, রাত্রে গল্প শোনাব।" ভাই আস্তে আস্তে অন্য ঘরে যেতে থাকে। কোনমত অল্প একটু পড়াশোনা করে নেহা ভাই কে ডেকে রাজকুমার আর রাজকুমারীর গল্প শোনায়। গল্প শেষ হওয়ায় ভাই মাথা নাড়িয়ে চিৎকার সহযোগে জানতে চাইলো- "রাজপুত্র কেমন? আমার মতন?" খুব হাসি পেল নেহার। সে শব্দ করে হাসল। ভাই জানতে চাইল আবার -"তালে কোটালপুত্র? ও আমার মতন?" নেহা বলে না রে, ওদের অনেক গুণ, তোর মতন না। তুই তো ভোঁদাই । হাঁদা। ভাই একটু দমে গেল বুঝি।

নেহার সাথে ভাইয়ের যেটুকু কথা হত দিনে, তাও বন্ধ হল এরপর। ভাই সহজে আর এদিক মাড়ায় না, নিজের ঘরেই থাকে, আপদ বিদেয় হল, বাঁচা গেল। অর্জুন নেহার ক্লাসমেট। খুব পছন্দ ছেলেটাকে নেহার। তার কাছে সে ভাইকে নিয়ে দুঃখ করেছিল । অর্জুন তার লেখা একটা কবিতায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য। নেহার পায়ের তলা থেকে মাটি যেন সরে যায়। সবাই নেহাকে দয়া করা শুরু করছে। চুপচাপ ঘরে বসে সে কাঁদছিল। মা-বাবা বাড়িতে নেই। ভাই জানালা দিয়ে মুখ দেখায়, ভয়ে আসে না নেহার ঘরে। হাতের পেনটা ছুঁড়ে দেয় নেহা ভাই এর দিকে। একটু ব্যথা পাক। তাতেই শান্তি। য়র সাথে যা যা ঘটছে সব ভাইয়ের জন্য। ভাই আসবার আগে তো এমনটি ছিল না।

কিছুদিন পড়ে ভাই জেলা ম্যারাথন দৌড়ে নাম লিখিয়েছে বলে জানায় বাবা নেহাকে। নেহা হাসে। ভাই হঠাত খাওয়ার টেবিলে কাঁদে, বলে- "ভোদাই--ভোদাই-- ভোঁদাই"। নেহা খাওয়ার টেবিল থেকে খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়ে।

দৌড় প্রতিযোগিতার মাঝপথে ভাইয়ের খিচনি ওঠে। শব্দ করে মাঠে শুয়ে পড়ে ভাই । আর ওঠে না। শিলিগুড়ির বড় হসপিটাল থেকে ভাইকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। বাড়িতে তখন কান্না তুমুল। নেহা ভাইয়ের প্রাণহীন মাথাটা ছুয়ে দেখে। বুক ভেঙ্গে আসছে তার। কানের কাছে যেন কেউ চেল্লাচ্ছে -"ভোঁদাই , ভোঁদাই।" অনেকে অনেক কথা বলল, কেউ বা কিছু বলল না। নেহা বোঝে এসব না বলা, না দেখানো দয়া। এখন এটাও বোঝে এর জন্য ভাই দায়ী ছিল না। হাত দুটো ঝুলে থাকে নেহার। কাউকে থাপ্পড় মারতে পারে না সে, শুধু ঘেন্না হতে থাকে নিজের হাত দুটোর ওপর। বিদ্রুপাত্মক হাসিগূলোর ওপর।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াছিম ট্রাজেডি.......... কষ্ট স্পর্ষ করেছে হৃদয়।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫
শেখ শরফুদ্দীন মীম অনেক অনেক ভালো হয়েছে। শুভেচ্ছা রইল। আমার ছোট্ট লিখাটুকু সময় করে পড়বেন।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ গল্পেও যে কবির হাত কবিতা সমান দক্ষ ; তাই জানা ছিল না আমার ! চমৎকার সাবলীল লিখেছেন ।। শুভ কামনা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মোস্তফা সোহেল খুব সুন্দর হয়েছে গল্পটা আপু।আসলে আমাদের সমাজে অকিস্টিক দের সবাই ঘৃনাই করে
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ... এর জন্য ভাই দায়ী ছিল না...। চমতকার একটা বিষয় তুলে এনেছেন- আমরা অনেকেই সময় মত অনেক কিছু বুঝিনা...হয়তো বুঝতে চাইনা নিজেদের 'দম্ভের' কারণে। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ জানবেন।
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৫
susanta mondal নিচে রেনেসাঁ সাহা
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৫
Sumon Dey ভালো লাগলো । শুভেচ্ছা জানবেন ।
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ জানবেন অনেক
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মিলন বনিক গল্পের মানবিক আবেদন আর অনুভুতিগুলো মন ছুয়ে গেল..খুভ কষ্ট হলো...গল্পটা খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন বিদায় আপনার স্বভাব লেখনি থেকে কিছুটা দুরে সরে এসেছেন...আমার একজন আপনজন আছে ঠিক ভোঁদাই-র মত...গল্পটা আপনার মত করে আবার লেখার অনুরোধ থাকলো...শুভ কামনা....
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ জানবেন অনেক
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব সুন্দর হল গল্প। ভাল লাগা রেখে গেলাম।।।।
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ জানবেন অনেক
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মনজুরুল ইসলাম অাপনার প্রথম গল্প পড়লাম।শুরুটা খুব ভােলা েলেগিছল এবং িবেশষ কের প্রিতবিন্ধ চিরত্র েদেেখ েভেসিছলাম গল্পটা অেনক গাড় হেব। িকন্তু গঠাৎ কেরই েদৌড় প্রিতেযািগতায় অংশগ্রহণ এবং মৃতু্যবরণ। েকমন জািন এেেলােমল। তবুো গেল্প অদৃশ্য অেনক বাতর্া প্রিতফিলত হেয়ঢেছ। অেনক অেনব শুেভচ্ছা। অামার প্রথম গল্প ব্যথা পড়ার অামন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৫
গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন। অবশ্যই পড়ে নেবো।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৫

২১ নভেম্বর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪