করিম সাহেব একটা সরকারী চাকরী করতেন । তিন মেয়ে আর স্ত্রী, এই তার সংসার। প্রথম মেয়েটা অনার্স ৩য় বর্ষে আর মেঝোটা ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দিবে, আর ছোট মেয়েটা জেএসসি দেবে এবার।
করিম সাহেব চাকরীর সুবাদে অনেক অবৈধ অর্থ আয় করেছিলেন ।এমনকি তার মাসিক বেতনের কয়েক গুন বেশি আয় করতেন । এছাড়া বিশেষ কাজে বিশেষ আয় থাকতোই । করিম সাহেব কোন কিছুর অভাব সহ্য করতে পারতো না । মেয়েদের কোন অভাব পুরনে একটুও দেরি করতো না। এ কারনে মেয়েরাও হয়েছে আধুনিক, অল্লাদে।
করিম সাহেবের একটা নেশা ছিলো, আর তা হলো জমি কেনা। মেয়েদের নামে, স্ত্রীর নামে অনেক জমি কিনেছে সে। ব্যাংকে বেশ টাকাও জমিয়েছে। তার নামে অনেক অফিসিয়াল মামলা হয়। কিন্তু তার টাকার জোরে সব সমাধান হয়ে যায়।
একদিন সকালে অফিসে যাবার সময় মাথা ঘুরে পরে যায় করিম সাহেব। হাসপাতালে নেবার পর ডাক্তার জানায় করিম সাহেবের ব্রেনে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, স্টোক করেছে সে । তার দু হাত আর এক পা অবস হয়ে গেছে। ঠোটের অর্ধেক অবস হবার কারনে ঠিক মত কথাও বলতে পারে না। চিকিৎসার কোন ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। টাকাও খরচ কার হচ্ছে কোন চিন্তা না করে। তিন মাস পর তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। ব্যাংকের টাকা শেষ। কিছু জমি বিক্রয় করার প্রস্তুতি চলছে। এবং করাও হলো।
সকাল টেবিলে মাথা ঠুকে দু চোখ বন্ধ করে আছে। তার সামনে একজন ভদ্র মহিলা আর একজন সুন্দরী যুবতী মেয়ে টেবিলে হাত রেখে বসে আছে।
মহিলা : বাবা, তুমি আমার ছেলের মত, আমার এখন অনেক বিপদ, তুমি চাইলে আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারো। তিন তিনটা মেয়েকে নিয়ে যে আমি কি ভাবে দিন কাটাচ্ছি তা প্রকাশ করতে পারব না।
সকাল টেবিল থেকে মাথা তুলে বলল, দেখুন, আপনি আমাকে যা ভাবছেন আসলে আমি ততটা না। আমার ক্ষমতা অনেক কম। আর আমি বলেছি, আমার যতটুকু করার তা আমি করব।
মহিলা : বাবা তোমাকে বুঝাতে পারব না, উনি চলে যাবার সময় কিছুই রেখে যাননি। মেয়েদের পড়া লেখা বন্ধ প্রায়, কয়েকদিন পর খাবার...
সকাল : আপনি বাসায় যান, আর আপনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যান, কোন খবর হলে আপনাকে জানাবো।
মহিলা : বাবা আপনার স্যারকে একটু বুঝিয়ে বলবেন, আমাদের অবস্থা।
সকাল : স্যার তো ফাইলটা দেখেই আতকে উঠছে, এতো আপত্তি ? এসব নিষ্পত্তি করতে হলে আমার চাকরি থাকবে বলে মনে হয় না। এমন কথা শুনার পর আমি তার সামনে যেতে ভয় পাচ্ছি। তার পরও তাকে বলব কোন পথ আছে কিনা ?
এক মাস পর অপরিচিত এক নাম্বার থেকে একটা কল আসে সকালের নাম্বারে,
ভাইয়া আমি উর্মি বলছি, করিম উদ্দিনের মেয়ে, ঐ যে মার সাথে আপনার অফিসে কয়েক দিন গিয়েছিলাম। যা হোক ভাইয়া আপনাকে কিছু কথা বলব প্লিজ একটু শুনবেন..
ওহ, হ্যা চিনতে পারছি, ঠিক আছে বলেন।
আসলে আমার মা কযেক দিন ধরে খুব অসুস্থ, আর একারনে মা আপনার সাথে দেখা করতে পারছে না। আমাকে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমি ভাবলাম আপনার সাথে কথা বললে বুঝতে পারব, তারপর না হয় যাওয়া যাবে। ভাইয়া, আমাদের সংসারের অবস্থা সত্যই খুব খারাপ, আমাদের আত্মিয় স্বজনদের আমাদের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নাই, আর যারা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তারা আমাদের তিন বনের দিকে কু দৃষ্টিতে তাকায়। মা তাদের সহ্য করতে পারে না। বাবার পেনশনের টাকাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। ঐ টাকা গুলোর উপর ভিত্তি করে অনেক ঋনও করা হয়েছে। তারা মাঝে মাঝে খুব কথা শুনিয়ে যায়। একে তো অভাবের সংসার, তার উপর মার অসুস্থতা, ছোট বোনদের মায়া ভরা দৃষ্টি তার উপর পাওনাদারের কড়া কথা। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থা যে কতটা করুন তা বঝাতে পারব না। আপনি যদি একটু চেষ্টা করেন ..? আর মা বলেছে টাকা পেলে আপনাদের মিষ্টি খাওয়াবে, খরচা পাতি যা হয় তা দিবে।
সকাল একটু ধমকের স্বরে বলল আপনি থামেন, আপনার কথা আমি বুঝতে পেরেছি, আমি আপনাদের ভালোই মনে করতাম কিন্তু আপনি অপওমান করেলেন, আপনি আমাকে মিষ্টির অফার করে কি বুঝাতে চাচ্ছেন..? আমি যদি এমন হতম তাহলে অনেক আগেই আপনাদের বলতাম। তার আগে বলেন আপনারা স্যার কে কি এমন কথা বলেছেন নাকি?
উর্মি : না ভাইয়া, আপনি রাগ করছেন কেন ? আমি আপনাকে অন্য কিছু বুঝাইনি, আমি আসলে বলতে চাচ্ছি যে, .., প্লিজ ভাইয়া, আপনি রাগ করেন না,, প্লিজ,, আপনিই আমাদের শেষ ভরসা, আমার কথায় কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দিবেন, আসলে আমাদের অবস্থা এতো খারাপ যে, কি বলতে কি বলছি বঝতে পারছি না, প্লিজ ক্ষমা করবেন।
সকাল: ঠিক আছে, এমন কোন কথা আমার সামনে বলতে পারবেন না, আর আমি কাল স্যারের সাথে কথা বলব।
স্যার এক আজব চিজ, টাকা ছাড়া কোন ফাইল কোন দিন ছেড়েছে বলে মনে হয় না, তারপর আবার করিম উদ্দিনের ফাইল, আপত্তিতে ভরা। সকাল ভয়ে ভয়ে স্যারকে বিষয়টা মনে করে দেয়। স্যার সকালকে বলে, করিম সাহেব ছিলো দুর্নিতীগ্রস্থ একজন ব্যক্তি, কত টাকা যে উনি সরিয়েছেন তার হিসাব করা মসকিল, এমনও প্রজেক্টে আছে, যেখানে কোন কাজ না করে কাগজে কাজ দেখিয়ে বিল তুলেলেছে। আর আজ তার জন্য আপনি সুপারিশ করছেন.. ঠিক আছে আমি স্বাক্ষর করব, তার আগে তো আপনাকেউ কেরতে হবে , এতো আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আপনি স্বাক্ষর করবেন? আচ্ছা উনাকে আমার সাথে দেখা করতে বলেন। আমি উনার সাথে একটু কথা বলে তারপর দেখি কি করা যায়। সকাল বিষয়টা মিসেস করিম কে জানায়।
চার দিন পর সকালের টেবিলে ফাইলটা চলে আসে.... সব সমস্যা সমাধান করার নির্দেশ দেয়া তাতে....কি করবে সকাল ..? যে যুদ্ধে সকাল কখনও পরাজিত হয়নি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বিজয়ের দেখা সে পেল না...