এক.
দুপুর প্রায় ১০টা বেজে ১৫ মিনিট কোন এক রমণীর কর্কশ চিৎকারে ঘুম ভাঙল ।
উফফ সাত সকালে আমার এত আরামের ঘুমটার ১৩টা বাজায় দিল।
কে ? কেএএ....!!
কোন শব্দ পেলাম না ।
মনে মনে ঐ রমণীকে ১০১ টা অভিশাপ দিলাম।
ঠাণ্ডার দিনে গোসল করাটা সত্যি খুব বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।গত শীতে তো টানা ৫ দিন গোসল না করে ছিলাম ।ওরে বাবা কি যে অবস্থা! আসলে আমার দ্বারা সবই সম্ভব।
যাক আজ সূর্য মামার দেখা পেলাম। সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত,
আমিও বিশাল ব্যাস্ত গোসল করলাম, কাপড় ধুলাম ।কিন্তু পেটে তো বিশাল খিদে।
পকেটে কিছু টাকা ছিল বের হলাম গন্তব্য 'গুল মদিনা বিরিয়ানী হাউজ'
গুল চাচা অসাধারণ রান্না করেন । তার রান্নার হাতের জুড়ি নেই ।
এক প্লেট বিরিয়ানী সঙ্গে এক চামচ ছানাবুট ভুনা,একটা পিয়াজু,এক চামচ ডাল,একটা মুরগীর মাংশের পিছ আর ঝোল সব মিলিয়ে দাম ৩০ টাকা !!
অবাক হবার মত কিছুই নেই এই সবই সম্ভভ গুল চাচার দোকানে।
বের হলাম-
এমন সময় পেছন থেকে মিষ্টি কণ্ঠের এক তরুণী ডেকে উঠলো
-Excuse Me
বেশ অবাক হলাম,হাতে একটা Iphone 5 আমার দিকে টুং টুং করে হেটে আসছে মুখে মিষ্টি মিষ্টি হাসি।
সেজে গুজে তো পুরাই পাওডার সুন্দুরি হইয়া গেছে, এই মেয়েটাকে তো আগে কোনদিন দেখিনি
কে সে?
-এই যে আপনাকে বলছি..
-ও আচ্ছা জি বলুন
-কেমন আছেন?
-আমি কেমন আছি আপনাকে কেন বলবো
আপনি কে?
-আমি কে মানে আপনি কিছু জানেন না ।
-জানার মত কিছু হইসে নাকি ?
-আপনি কি সত্যি কিছুই জানেন না!
-দেখেন Pain দিয়েন না খুব খিদা লাগছে আমায় যেতে দিন
-এই বাড়িতে কিছু একটা হচ্ছে সেটাতো জানেন ?
-কি হচ্ছে এই বাড়িতে??
-বর-বঁধু, কোন অনুষ্ঠান?
-দুররর মেজাজ কিন্তু 69 হইয়া যাইতাছে কি বলতে ছান সরাসরি বলুন?
-শুনুন এই বাড়িতে আজ বিয়ে হচ্ছে আর আমি বাড়িয়ালার আত্নিয়।
-ও আচ্ছা আপু এবার আমায় মুক্তি দেন
আসসালা-মু-আলাইকুম এই কথা বলে পিছন দিকে না তাকিয়ে সোজা হাটা শুরু করলাম।
মনেহয় মেয়েটা কিঞ্চিৎ অপমানিত হয়েছে, হলে হোক এতো কিছু-চিন্তা ভাবনা করার সময় নাই ।
এখনকার সময়ের বিয়ে সাদি গুলুর কোন ঠিক-ঠিকানা নেই আর নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা।
আরে এই বাড়ির সদস্য হিসেবে তো অন্তত জানানো দরকার ।যুগে যুগে আরো কত কিছু যে দেখতে হবে আল্লায় জানে।
দুই.
গুল চাচা মানুষ হিসেবে অসাধারণ সব সময় মুখে পান আর হাসি লেগেই থাকে।
আমি একদিন চাচাকে প্রশ্ন করেছিলাম
-চাচা আপনি এত হাসেন ক্যান ?
-বাবারে না হাসলে যে আমি মইরা যামু গা,আমার পিয়ারী বিবি যখন মারা যায় তখনো খুব হাসছিলাম ।
হাসতে হাসতে একটা সময় চোখ দিয়া গরম পানি পরছিল ।আমার বিবিরে আমি কোন দিন কষ্ট দেই নাই
তারপরও হে আমারে একলা রাইখা চইলা গেল, এরপর থ্যাইক্কা খালি হাসি।
চাচার কথাগুলো এখনো মনেপরে ।
এই জগৎ সংসারটা সত্যি খুব আজব আর মানুষগুলো খুব বেশি বিচিত্র ।আর এই বিচিত্র মানুষগুলো গল্প এক এক রকম, কারো গল্প সুখের কারোবা দুখের।
তবে একটা বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা হল-
এই পৃথিবীতে সুখ এবং দুঃখের হার সমানুপাতিক এবং অপরিবর্তনিয় ।সুধু একটা নিদিষ্ট সময় পর পর এক জনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে রদ বদল হয়।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম এই পৃথিবীতে যদি নিদিষ্ট সংখ্যক মানুষ অসুখী থাকে ঠিক তার বিপরীত সংখ্যক মানুষ সুখে থাকবে । তবে সুখ আর দুঃখের অনুপাত সব সময় সমান ।
যদিও এটি আনুমানিক গড় হিসাব তারপরও স্থান কাল পাত্র ভেদে এই সূত্রের ব্যাত্রিক্রমও হতে পারে।
চলে আসলাম বাসায় রাতে বাবার সাথে ফোনে কথা হল বাড়ির সবার খোঁজ খবর নিলাম,
মা মারা যাবার পর আমি গুল চাচার মত হাসিনি আমি শুধু ঘরের এক কোনায় বসে বসে কেঁদেছিলাম
খুব কেঁদেছিলাম খুব ।আমি যখন ক্লাস ফাইভ থেকে বিত্তি পেয়ে সিক্সে উঠলাম তার কিছুদিন পর মা মারা যায় ।মাকে আমি অনেক ভালবাসি মা এভাবে চলে যাবে এত কখনোই ভাবিনি ।
তার ঠিক ৮ মাস ১৩ দিন পর বাবা ২য় বিয়ে করলেন, বাবা মারা গেলে হয়তো মা এই কাজটা কখনোই করতেন না।
তারপর কেটে গেল ৯টি বছর । এখন বাবার বয়স হয়েছে চুল দাড়ি পেকেছে
বাবা শুধুই বাড়িতে যাবার কথা বলেন কিন্তু আমার যে বাড়িতে যেতে ভালো লাগে না ।এই দূরে থাকার মাঝে আমার এক অজানা আনন্দ লুকিয়ে থাকে ।
তিন.
রাত প্রায় ২.১৭ জানালার এক কোনে বসে আছি আমার ঘুম আসছে না । জ্যোৎস্নাজ্জল আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছি অনেকটা দিকভ্রান্তের মত,যদিও এটা আমার জন্য রাতের শুরু মাত্র।চারিদিক সুনসান ভয়ঙ্কর রকমের নীরব, সবাই হয়তো ঘুমের রাজ্যে মেঘেদের সঙ্গে খেলা করছে ।ঘড়ির কাটার টিক টিক শব্দ বার বার জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব ।আশ্চর্য কর্মব্যাস্ত সারাটা দিন আমি এই টিক টিক শব্দটা ওভাবে শুনতে পাই নি। এই রাতে খুব নিখুঁত ভাবে ঘড়িটা তার নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দিচ্ছে
হয়তো বলছে দেখ আমি এখনো চলছি ক্লেদহিন নির বিচ্ছিন্ন ভাবে চলছি ।নির্ঘুমভাবে রাত কাটানো ইদানিং আমার একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ।
পরদিন বিকেলে ছাদে উঠলাম এই বাসার ছাদের উঠলে পুরোটা শহর খুব ভাল ভাবে দেখা যায়,
মানুষের ছোট ছোট সুখ-দুঃখ গুলোকে দেখি কখনো হাসি কখনো বিষণ্ণ হই ।
হঠাৎ লক্ষ করলাম সেদিনের সেই মেয়েটি । না যতটা পেত্নী ভাবছিলাম তা না কিছুটা রূপ,সুন্দর্য্যও আছে
সমস্যা একটায় বেশি ক্যাচ ক্যাচ করে ।
-আপনি ? আপনি এখানে কি করছেন?
-কি করবো বলুন আমি মানুষের সুখ-দুঃখ দেখি ।
-আমি আসলে সেদিনকার ব্যাপারটার জন্য দুঃখিত,ওটা আসলে একটা এক্সসিডেন্ট ছিল ।
-ও আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি কে দয়াকরে বলবেন?
-আমি তানজিনা তৃষা, এ বছর বিবিএ তে ভর্তি হয়েছি আপনাদের পাশের ফ্লাটেই উঠেছি ।
আর আপনি ?
-আমি তউসিফ হাসান তন্ময়, আর্কিটেকচারে ৪র্থ বর্ষে পরছি আর পড়াশোনার পাশাপাশি একটা জাতীয় দৈনিকে মাঝে মাঝে লেখালিখি করি। আর ভবঘুরের মত ঘুরে বেরাই এই ।
-আপনি খুব আজব একটা মানুষ
-তাই, চা খাবে?
-হুম অবশ্যই ।
-বোস,সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে চা খাওয়ার মজাই আলাদা ।
চুপ-চাপ বসে থাক আর একমনে চা খাও
চারিদিকের সকল ব্যাস্ততা,কোলাহক সবগুলো ব্যাপার অনুভব কর,
দেখবে ভাল লাগবে ।
-কিন্তু আমি তো চুপচাপ থাকতে পারিনা।
-উম্ম শশ শ.. চুপ...।
চার.
গত কিছুদিন যাবৎ লক্ষ করছি এই তৃষা নামের মেয়েটা আমার দিকে ক্যামন ভাবে যেন তাকিয়ে থাকে
তার চোখের চাহনিতে কি যেন একটা লুকিয়ে আছে ।
এইতো সেদিন ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যথারীতি চা খেতে খেতে পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলাম
হঠাৎ লক্ষ করলাম মেয়েটা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
মেয়েটা কি আমায় পছন্দ-টছন্দ করতে শুরু করলো নাকি?!
বাবা তন্ময় আর যাই হোক জগতের এই বিশাল ঝামেলা থেকে নিজেকে যথা সম্ভব বিরত রাখিস।
এখন আপাদত মাথা থেকে সব ঝেরে ফেল পড়াশোনা আর কাজে মন দে ।
তারপর কেটে গেল কয়েক সাপ্তাহ
আমাদের মাঝে টুক টাক কথা হয় আমারো সেমিস্টার শুরু হয়ে গেল পুরোপরি ব্যাস্ত হয়ে পরলাম।
ক্যান যে আর্কটেকচারে পরতে চাইছিলাম দূররর..
ক্লাস,আসাইন্মেট,ড্রওিং,প্রেজেন্টেশন,মডেল সব মিলিয়ে মহান ব্যাস্ততার মধ্যে দিন কাটছিল।
সবকিছুর কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম এমনকি তৃষাকেও।
হঠাৎ সেদিন বিকেলে ক্লাস শেষ করে বাসায় ডুকবো এমন সময় তৃষার সাথে দেখা
আজ ও শাড়ি পরেছে তাও আবার নীল শাড়ি ।কি বলবো সত্যি অসাধারণ লাগছিলো তাকে,একেবারে স্বর্গের অস্পরার মত ।একটা মহনীয় সুভাষ ভেসে আসছিল তার শরীর থেকে চুল গুলো ভেজা হয়তো মুছতে ভুলে গেছে । স্বর্গের অস্পরাদের পোশাক কি রকম এমন কোন বর্ণনা কথাও পাইনি তবে শাড়ি হলে ভাল হত ।
আর নীল শাড়ি হলে আরো বেশি ভাল হতো,নাহ এই পেত্নীটার তো দিন দিন রূপ সুন্দর্য্য খালি বাড়তেছে ।
আমার ঘোর ভাঙল তৃষার কণ্ঠে
ভাইয়া কেমন আছেন?আপনাকেতো আজকাল খুঁজেই পাওয়া যায়না ।
কি ব্যাপার বলুন তো ?
-না আসলে তেমন কিছু না একটু ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম ।
তারপর কি খবর তমার ?
তৃষা তোমাকে একটা সত্যি কথা বলি শাড়িতে তোমাকে অসাধারণ রূপবতী লাগছে ।
-ধন্যবাদ ভাইয়া এখন যাই বান্ধবীর বাসায় আজ মিনি পিকনিক ।
আমিও চলে আসলাম রাতে খাওয়া দাওয়ার পর হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো
ওপাশ থেকে যে কণ্ঠটি ভেসে আসলো সেটি আর কেউনা তৃষার ।কিভাবে নাম্বার পেল সেটা জানার ইচ্ছা করাটা বোকামি ।কারন এই ইলেকট্রনিক যুগে একটা ছেলের ফোন নাম্বার যোগার করাটা নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার, তবে অবাক হলাম ও আমাকে ফোন করলো ব্যাপারটা কেমন উল্টো হয়ে গেল না ।
অনেক কথা হলো তর্ক হলো ওর সাথে কথা বলে বেশ ভালই লাগলো ।তারপর থেকে নিয়মিত কথা হতো তৃষা বেশ চটপটি স্বভাবের মেয়ে অনেক কিছুই বোঝে আবার মাঝে মাঝে কিছুই বোঝে না ।
এভাবেই কাটছিল আমারদের দিনগুলো ।
পাঁচ.
দেখতে দেখতে একটা বছর যে কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। আমার ভবঘুরেরর জীবনে আরেক ভবঘুরের আগমন ঘটলো কে আবার তৃষার কথা বলছি,
আমার সাথে ঘুরতে নাকি ওর ভালো লাগে।কি আর করা আচ্ছা ওকে ভাল লাগে তো ভালকথা ঘুরবে।
সেদিন গুল চাচার দোকানে গেলাম গুল চাচাতো আমাদের দেখে অবাক ।একেবারে আনন্দের উপর আরো বেশি আনন্দ ।চাচা কি করবে বুঝতেই পারছিলো না।
তৃষা গুল মদিনার বিরিয়ানি খেয়ে তো গুল চাচার পুরা দিওয়ানা হয়ে গেল।
চলে আসার সময় আমার জীবনের সবচে অনাকাংখিত গঠনাটি ঘটলো আমার হাতটি ধরে সে বলল এই হাতদুটোকে ও সারা জীবন ধরে রাখতে চায়।
আমি তৎক্ষণাৎ কিছুই বলতে পারিনি,শুধু একমনে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।বড্ড বেশি মায়া খুব বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনি।
এটা কি হচ্ছে,কেন হচ্ছে,আচ্ছা মেয়েটা কি বোকা নাকি?সেতো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারিনি তৃষা অনেকবার ফোন করেছিল কিন্তু রিসিভ করিনি।
কাউকে কিছু না বলে পরদিন থাকার জায়গাটাকে চেইঞ্জ করি,তৃষার সাথেও আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি ।তৃষাকে হয়তো আমিও খুব ভালবাসি কিন্তু জগতের সব ভালবাসার মধ্যে পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব কষতে বসলে ভুল হবে আর জীবনতো গণিতের খাতা নয়।
অনেকদিন পর বাড়ি গেলাম
বাবা আমায় দেখে আনন্দে হাসছে আনেকটা গুল চাচার মত পার্থক্য একটাই বাবার চোখে জল।
আমি নির্বাক শুধু বললাম বাবা খুব খিদে লেগেছে ভাত খাব।বাবা সাথে সাথে বলল কৈগো ওর খিদা লাগছে ওরে খেতে দাও।
আজ রাতেও খুব সুন্দর জ্যোৎস্না পরেছে ।খুব সুন্দর বললে ভুল হবে অসম্ভব সুন্দর জ্যোৎস্না ।
আমার ছোট জানালাটা দিয়েও জ্যোৎস্নায় উজ্জ্বল রাতের ঐ আকাশটাকে দেখা যায়
বিশাল সুবিশাল..।
----------
০৮ নভেম্বর - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪