নদীর ওপাড়ে

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

রনীল
  • ৭১
  • ১৭

জলিল ভাই বলেছিলেন দুই একদিনের মধ্যেই যোগাযোগ করবেন- আজ প্রায় এক সপ্তাহের মত হতে চলল, ওনার কোন খবর নেই। এদিকে এলাকার অবস্থাও খুব একটা ভালো না। গতকালই গলির মোড়ের ছ’তালা বিল্ডিংটাতে একটা ডাকাতি হয়েছে, সে থেকে সবকিছু কেমন যেন থমথমে।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে নদীর পাড়ের দিকে এগিয়ে যাই। নদীর ওপাড়ে কিসের যেন মেলা বসেছে, সারারাত ধরে চলবে। সস্তার মাইকে উদ্যাক্তারা দর্শনার্থীদের ক্রমাগত নিমন্ত্রন জানিয়ে যাচ্ছে, কোথাও কোথাও বাজছে চটুল হিন্দী গানের সুর... জলের সন্তরণে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে উচ্ছসিত নারী-পুরুষের সমবেত কণ্ঠস্বর।
সে তুলনায় নদীর এপাড়টা অনেকটা ফাঁকাই। মাঝে মাঝে দুএকজন পথচারী হেঁটে যাচ্ছে... আমার দিকে তারা সন্ত্রস্তভাবে তাকায়। আমি কিছুক্ষণ আমার নোংরা- হলুদ হয়ে যাওয়া নখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। জলিল ভাই বলেছিলেন বিনা দরকারে ঘর থেকে বের না হতে। কিন্তু নোংরা-অন্ধকার ঘরটিতে ফিরে যেতে আমার এতোটুকু ও ইচ্ছে করেনা। কোন কিছু না ভেবেই আমি হঠাৎ একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আগের সিমকার্ডটা অনেক আগেই পুড়িয়ে ফেলেছি। জীর্ণ-রংচটা মোবাইল ফোনটিতে নতুন একটা সিমকার্ড ঢুকিয়ে আমি জলিল ভাইয়ের নাম্বার চাপি-
- হ্যালো... স্লামালাইকুম।

- জলিল ভাই... আমি রতন!


- আরে হারামজাদা... খানকিরপোলা... করছস কি? তরে না কইসি ফোন টোন না করতে!

- আপনে তো ভাই বলসিলেন- দুই একদিনের মধ্যে যোগাযোগ করবেন... আজকে তো প্রায় এক সপ্তা হয়া গেল!


- ওরে শূয়রেরবাচ্চা! তোর কোন ধারনা আসে তুই কি ঘটনা ঘটাইছস! ডিবি, র্যা ব সক্কলেই তরে খোজতাছে... পাইলে এক্কেরে খাড়ার উপর ক্রসফায়ার! তার উপর আছে শিকদারের পোলারা! পাইলে তরে ডাইরেক্ট মারবোনা... আগে তর চামড়া ছুলবো, তারপর...!

- সেইটাতো বুঝলাম... কিন্তু আমি কতদিন এইভাবে পলায়া থাকমু!


- তরে আর পলান লাগবনা... র্যা বে যদি তোর এই ফোনকল ট্র্যাক করতে পারে, তয় তর ওইখানে পৌছাইতে তাগো বেশি সময় লাগবনা! তুই বরং এককাজ কর... তুই ওইখান থিইকা পলা... যেদিকে পারস, পলা!

কিছুক্ষণের জন্য আমি বোধশুন্য হয়ে গেলাম। মূল রাস্তা ধরে হেডলাইট নিভিয়ে একটা গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে... অনেক দূর থেকেও আমি পুলিশের গাড়িটি ঠিকই চিনে ফেলি। আমি পড়িমরি করে আমার ঘরটির দিকে ছুটে গেলাম।


আম্মুর কড়া নিয়ম- সূর্য ডোবার আগেই ঘরে ফিরতে হবে। দুই একদিনের মধ্যে জাবেরের মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেবে। টেনশনে ওর কিছু ভালো লাগেনা। সূর্য ডুবে গেছে অনেকক্ষণ হয়েছে- জাবের ঘরে ফিরে না গিয়ে স্কুলের মাঠটিতে বসে কিছুক্ষণ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিল... কিছুক্ষণ এলোমেলো এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করলো। বাসায় গেলে আজ আম্মু কি করবেন- আল্লাহই জানেন!
রাত ন’টার দিকে সে ঘরে ফিরছিল, এমন সময় গলির মুখে বাপ্পী ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। বাপ্পীরা চার-পাঁচ জন মিলে নদীর ওপাড়ে যাচ্ছে মেলা দেখতে... জাবেরের ঘরে ফিরতে একদম ইচ্ছে করছেনা। বাপ্পী আমন্ত্রন জানাতেই জাবের উৎফুল্লভাবে ওদের পাঁচজনের দলটিতে ভিড়ে গেল।



পুলিশের গাড়িটি মূল রাস্তা ধরে সোজা চলে গেল... থামলোনা- গতিও কমালোনা। আমি মুখ দিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, পানির খোঁজে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি- এমন সময় হঠাৎ মৃদু ফিসফাসের শব্দ পেলাম। দরজার ফোঁকর দিয়ে তাকিয়ে দেখি পাঁচ ছ’জনের একটি দল নিঃশব্দে আমার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। নিজের অজান্তেই আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে। আততায়ীর দলটি একেবারে আমার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু না ভেবেই, স্রেফ বাঁচার তাগিদে আমি চিৎকার করলাম-
- ডাকাত... বাঁচাও... ডাকাত!
খুব একটা মৃদু ভূমিকম্প হল যেন... একমুহূর্তের জন্য সবকিছু চুপচাপ! তারপর হুড়মুড় করে একটা শব্দ হল, পিলপিল করে শতশত লোক ছুটে এল... আততায়ী দলটির দুই তিনজনকে জনগণ মুহূর্তেই ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে। চশমা পরা কমবয়সী একটা ছোকরা ফাঁক বুঝে পালাচ্ছিল- আমি দৌড়ে গিয়ে মুহূর্তেই ওকে ধরে ফেলি।
- ভাই... আ...আমি স্টুডেন্ট... কালকে আমার রেজাল্ট...
- হোৎ তর রেজাল্টের মায়রে আমি *** ...
ক্রুদ্ধ- সচেতন নাগরিকের দলটি মুহূর্তেই কমবয়সী ছোকরাটিকে গ্রাস করে ফেলে, আমি পায়ে পায়ে সেখান থেকে সরে আসি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Didarul Islam ইন্টােরিস্টং
বিন আরফান. রনিল গল্পে তথা লেখায় আরো মনোযোগ দাও , এত দিনে আরো ভালো কিছু আশা করি. বলতে পারো চমক দেখতে চাই, চমক. গল্পটি বেশ ভালো লাগলো. চাওয়াটা বেশি এই জন্য ভালোবাসাটাও যে তোমার মত অনেকের প্রতি একটু বেশি. শুভ কামনায় বিন আরফান
রনীল ইফতেখার থেকে শুরু করে প্রজাপতি মন পর্যন্ত- যারা গল্পটি পরেছেন, সবাইকে জানাচ্ছি আমার কৃতজ্ঞতা।
প্রজাপতি মন গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শেষের চমকটুকু।
মোঃ শামছুল আরেফিন গত শবে-বরাত এর পরের দিন সকল মিডিয়ায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল সাভারের আমিন বাজারে ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহে গণপিটুনিতে ছয় ছাত্র নিহত। খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন। প্রায় আরো ২-৩মাস আগে আবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল সাভারের গনপিটুনিতে নিহত ছয় ছাত্র নির্দোষী ছিল। সেদিন আরো অনেক বেশি খারাপ লেগেছিল। এখন আপনার গল্পে সেই বিষয়টি আবার ফুটে উঠল। প্রকৃত অপরাধীরা এখানে সাধু হতে সময় লাগেনা আর জাবেরের মত নিরাপরাদ ছেলেরা সামান্য সময়ের ব্যবধানে ডাকাত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। খুব হৃদয়বিদারক গল্প। খুব ছোট করে ছোটগল্প লিখা সহজ কাজ নয়। আপনি পেরেছেন। অনেক অনেক ভাল লেগেছে। তবে ভোটিং অপশন বন্ধ রেখেছেন দেখে কষ্ট পেটে হল।
মোহাম্মদ শামসুল আলম দারুন লিখে যাবো
সালেহ মাহমুদ টানটান উত্তেজনায় ঠাসা গদ্য ভাষা। গল্পটি অসম্পূর্ণ, তবে গল্পকারের একে সম্পূর্ণ করার সামর্থ্য আছে। ধন্যবাদ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি রনিলের লেখার ধাঁচ ধরনে ঠিকি আছে তবে আর একটু বোধ হয় টেনে নেয়া যেত।গল্পের সমাপ্তিটা ভীষন ভাবে আন্দোলিত করেছে। রবি ঠাকুরের ছোট গল্পের সংগার পরিপুর্নতা পেয়েছে।আবারো ধন্যবাদ রনিল আপনাকে................
শেখ একেএম জাকারিয়া বাহ! দারুন একটা গল্প পড়লাম। চালিয়ে যান.........
rakib uddin ahmed রনীল,অসাধারন' লিখেছ।খুব মজা লেগেছে,কিন্তু... voting বন্ধ !

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪