১ আমজাদদের বাসার ছাদটা এমনিতেই খুব একটা বড় নয়। তার উপর বাড়ীওয়ালা একপাশে চিলেকোঠার মত ঘর তোলায় ছাদটা আরো ছোট হয়ে গেছে। আমজাদ ছাদে উঠেই পাখি তিনটিকে দেখতে পেল। ইংরেজি ‘টি’ শেপের টিভি এন্টেনার উপর পাখি তিনটি বসে ছিল। আমজাদ রাজিবকে সেদিকে ইশারা করতেই রাজীবের হাটার গতি লঘু হয়ে গেল। আমজাদ ব্যস্ত চোখে এদিক ওদিক জুৎসই পজিশন খুজতে লাগলো। ছাদের এপাশ থেকে এন্টেনার শেপটা অনেকটা উলটে রাখা লাঙলের মত দেখাচ্ছে, পাখি তিনটাকে ও ঠিক মত বোঝা যাচ্ছেনা। সবচেয়ে ভালো হত যদি চিলেকোঠার উপরে ওঠা যেত, কিন্তু বাড়ীওয়ালা সেখানে ওঠার কোন ব্যবস্থাই রাখেননি। ছাদের ওপাশ থেকে হয়তো আরেকটু ভালো ভিউ পাওয়া যাবে, কিন্তু ওদিকে যেতে যেতে পাখি তিনটির উড়ে যাবার একটা সম্ভাবনা আছে। আমজাদ ইশারা করতেই দুজনে খুব সন্তর্পণে ছাদের ওপাশটায় চলে এল। ছাদের এপাশটায় বেশ রোদ। আমজাদ সেই রোদের মধ্যেই ক্যামেরা হাতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। রাজীব দাড়ালো রোদ থেকে একটু সরে চিলেকোঠার ছায়ায়। - তুলে ফেল, তুলে ফেল... উড়ে যাবেতো!
আমজাদের চোখদুটো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বড়ই, রাজীবের কথায় সে মোটেও ব্যস্ত হলনা, বরং চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। রাজীব বেশ উত্তেজিত বোধ করছিল এই ভেবে যে আমজাদ কেন ঝটপট ছবিটা তুলে ফেলছেনা! পাখিগুলো যে কোন সময় উড়ে যেতে পারে, আর একবার উড়ে গেলেই ছবি তোলার এতো সুন্দর সুযোগটা আর ফিরে পাবার উপায় নেই। সুযোগের জন্য খাটতে বা অপেক্ষা করতে করতে রাজীবের আপত্তি নেই। কিন্তু সুযোগ একবার এসে গেলে সে আর কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে রাজী নয়। সুযোগ কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করেনা... - আরে গাধা... ছবিটা তুলে ফেল, উড়ে যাবেতো! চেহারায় কোন অভিব্যক্তি না থাকায় আমজাদকে কিছুটা নির্বোধের মত দেখায়। উদাসভাবে সে পাখিগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঠিক এই মুহূর্তে তাকে দেখে মনে হয়না ছবি তোলা সংক্রান্ত কোন আগ্রহ বা পরিকল্পনা তার মাথায় আছে। তুলনামুলকভাবে রাজীব অনেক চঞ্চল প্রকৃতির। এক জায়গায় সে বেশীক্ষণ সে বসে থাকতে পারেনা। সামান্য ছবি তোলা নিয়ে সে যে এতো ধৈর্য দেখাবে, এটা আমজাদ ও ভাবতে পারেনি। সময় বয়ে যায়। আমজাদের ছবি তোলার নাম গন্ধ নেই। ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে সে ধ্যানী পুরুষের মত বসে থাকে। পাখিগুলো ও যেন প্রাণহীন মূর্তির মত নিশ্চল। রাজীব আমজাদকে আর তাড়া না দিয়ে ফস করে একটা সিগারেট ধরালো। গাঁজার গন্ধ পেয়ে আমজাদ আড়চোখে দরজার দিকে তাকায়, বাড়িওয়ালী খালাম্মা মাঝে মাঝে হুটহাট করে ছাদে চলে আসেন। আমজাদ রাজীবকে কিছু বললোনা। জানে বলে কোন লাভ নেই। - বুঝলি, নইম ভাই ইদানিং টিনার দিকে একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন মনে হল। একটু টেনশনে আছি দোস্ত... নইম ভাই তো অনেক ভালো ছবি তুলে... আর ভালো ছবি দেখলে টিনার তো আর কারো কথা মনে থাকেনা...
- টিনার সাথে তোর পরিচয় আছে? তোর সাথে একদিন পরিচয় করায় দিব।
আমজাদ নিশব্দে মাথা নাড়ে... টিনার কথা শুনে ওর নিঃশ্বাস খানিকটা গাঢ় হয়ে যায়, বুকের ভেতর রক্তরা ছোটাছুটি শুরু করে, কিন্তু ওর ভাবলেশহীন চেহারা দেখে আমজাদ কিছু টের পায়না। সত্যি কথা বলতে, রাজীব একবার টিনার সাথে আমজাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, ওর মনে নেই। টিনা অবশ্য সেবার আমজাদের দিকে খুব একটা মনোযোগ দেয়নি... কেউ কখনো দেয়ওনা... রাজীব বড় বড় কয়টা টান দিয়ে সিগারেটটা আমজাদের দিকে বাড়িয়ে দেয়... আমজাদ দ্বিধায় পড়ে যায়... তারপর আবার কি ভেবে হাত বাড়ায়... ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটল... দুটি পাখি হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই উড়াল দিল। আমজাদের এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে ক্যামেরা... এর মধ্যেই সে বেপরোয়াভাবে শাটার টিপে দিল। পাখি দুটি উড়ে চলে যায়... ওরা দুজন সেদিকে অবিশ্বাসভরে তাকিয়ে থাকে।
২
পাখিদুটি উড়ে যাচ্ছে, তৃতীয় পাখিটি করুনমুখে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ছবিটা হঠাৎ দেখলে বুকের ভেতরটা শূন্য হয়ে যায়, কোন এক অজানা কারনে মন খারাপ হয়ে যায়। রাজীব খুশি মনে ক্যামেরা নিয়ে চলে যায়। যাবার আগে পরম আবেগে আমজাদকে জড়িয়ে ধরে। আমজাদের ঘামে ভেজা শরীর দেখেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনা। রোদের তেজ ধীরে ধীরে কমতে থাকে... মৌন নির্জন দুপুরে আমজাদ অলসভাবে চিলেকোঠা ঘরের পাশটাতে বসে থাকে। ঝির ঝির বাতাস বইতে থাকে, হঠাৎ মৃদু শীষের শব্দ শুনে সে ফিরে তাকায়... দেখে তৃতীয় পাখিটি তখনো “টি” শেপ এন্টেনাটার উপর বসে আছে... তারই মতো করে... একলা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রবি করিম
নিঃসন্দেহে সুন্দর উপস্থাপন। ছবি তোলার মূহুর্তটার বর্ণনাটা একদম বাস্তব চিত্র । মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। গল্পের শেষটায় বুকটা হুহু করে উঠে - একাকীত্বের যন্ত্রনা নিজের মধ্যে অনুভব করি তাই মনে হয় গল্পটা আমাকে এতো নাড়া দিয়েছে। বন্ধু তোকে সালাম ... সুন্দর গল্পের জন্য !
রনীল
লুতফুল বারি পান্না ভাই- আমার চরিত্রের একটা খারাপ জিনিষ হচ্ছে, আমি খুব দ্রুতই বোর হয়ে যাই... গতানুগতিক কোন কিছু আমার বেশিদিন ভালো লাগেনা... "বড়মামার মামাগিরি"র পর চেষ্টা করেছিলাম একটু অন্যভাবে লেখার জন্য... আপনি ই প্রথম ব্যক্তি যিনি ব্যপারটি লক্ষ্য করেছেন... আমার লেখা এতো গুরুত্বের সাথে পড়েছেন দেখে আমি রীতিমত অভিভূত বোধ করছি... আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।