চশমার সাথে মাস্কের বিরোধ বলতে গেলে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের। প্রতি নিঃশ্বাসের সাথে চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ পরিস্থিতিতে ব্যাপারটা হয়তো বিপদজনক, তবে এখন বিষয়টা ভিন্ন। করোনা আতংকে ভরদুপুরেই রাস্তাঘাট ফাকা থাকে, আর এখন তো রাত দুইটা। আমি ঘোলাটে কাঁচের আড়ালেই হঠাৎ খেয়াল করলাম- মস্ত চাঁদ উঠেছে। ব্যাপারটা কি? দুইদিন আগে সুপার মুন না কি একটা রিপোর্ট যেন করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের সারোয়ার জাহান।
আজকে যেটা আকাশে আছে, সেটাকে সুপার বলার উপায় নেই, পেটের কাছটায় কিছুটা ক্ষয় হয়ে গেছে। তারপরও যা আছে তা দেখেই আমার রাস্তাঘাট ঘুলিয়ে যাবার দশা, অ্যাবসোলুট বিউটির কাছাকাছি কিছু একটা। আমি পুলিশ প্লাজার সামনের ব্রিজটার উপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সারোয়ার খুব ভালো ছবি আঁকে (কিংবা ছবি আকার পাশাপাশি...)। পেছন থেকে দৃশ্যটা দেখলে, ও হয়তো দারুণ একটা আইডিয়া পেয়ে যেত, ছবির টাইটেল- ‘চন্দ্রমুগ্ধ অফিস ফেরত সাংবাদিক’!
কিংবা আমাকে ছেড়ে ও হয়তো চাঁদটাকে নিয়েই মাতামাতি শুরু করে দিত। অ্যাবসোলুট বিউটি-গোল্ডেন রেশিও নিয়েও সারোয়ারের খুব আগ্রহ। চাঁদ দেখে যে আমরা সবাই মুগ্ধ হই, এর পেছনে নাকি গোল্ডেন রেশিওর কেরামতি। আমি সেই রহস্য নিয়ে ভাবতে গিয়ে আরেকটু হলেই ধরা খাচ্ছিলাম। আর্মির গাড়ি আসছে। আইডেন্টিটি কার্ডটা কোমরের বেল্টে বাঁধা, তারপরও ঝটপট ব্রিজ থেকে নেমে আসি।
তেজগাঁ থেকে গুলশান ১, পুরো রাস্তা আমার একার। মোটামুটি সবাই কোয়ারেন্টাইনে, শুধু এটিএম মেশিনের সিকিউরিটি গার্ডগুলো ছাড়া। নিঃস্পৃহভাবে ওরা আমার দিকে চেয়ে থাকে। গোল্ডেন রেশিও-সুপার মুন নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছেনা। না থাকুক, রাজপথের মত তাহলে পুরা চাঁদটাও আমার। গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে আমার, সাইকেলটা টাল খাইয়ে দিয়ে একটু খানি গেয়েও ফেললাম- পিচ ঢালা এই পথটাকে...
করোনা যেন সবকিছু ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এই যে ফাকা রাস্তায় এভাবে সাইকেল চালানো, গান গাওয়া, চাঁদের সাথে কথা বলা-এসব কি নরমাল সিচুয়েশনে সম্ভব হত! গুলশান থেকে লিঙ্ক রোডে ঢোকার পথে আমি আবার মুগ্ধভাবে চাঁদের দিকে চেয়ে দেখি। ব্যাপারটা হয়তো বিপদজনক, কিন্তু আমার যে আর কিছু করার নেই। আজ রাতে আমি চন্দ্রাসক্ত, মুগ্ধ, বাহ্যজ্ঞানশূন্য!
সারোয়ার বলে- কোন স্থাপনায় আপনি যখন গোল্ডেন রেশিও ঠিক রাখতে পারবেন, তখনই সেখানে অ্যাবসোলুট বিউটি দেখতে পাবেন। আর অ্যাবসোলুট বিউটি বিষয়টা এমন- যে সামনে দাঁড়ালে মাথানষ্ট ধরণের অবস্থা হয়ে যাবে, অনেকটা মাতালরা যেমন অনুভব করে আরকি! গাছের পাতা, শামুকের খোল, সোলার সিস্টেম, মিশরের পিরামিড! এসব জিনিষ দেখলে মানুষ এতো মুগ্ধ হয়ে ক্যান? গোল্ডেন রেশিওর কারণেই।
আমি মনের চোখে পিরামিডের গঠনটা দেখে নেবার চেষ্টা করছিলাম। ঠিক তখনই হঠাৎ বিভ্রম। হঠাৎ দেখি সামনে পিরামিড আকৃতির তিনটি কিউব। কাল্পনিক কিছুনা। আসলেই তিনটা ট্রাফিক কিউব, রাস্তার মাঝখানে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সম্ভবত কিছুক্ষণ আগের ঝড় উড়িয়ে এনেছে।
ঘোলাটে চশমার কাঁচ আর চাঁদের প্রতি মুগ্ধতায় কিউবগুলো খেয়াল করলাম একদম শেষ মুহূর্তে, তখন আর ফেরা বা ব্রেক কষার সুযোগ নেই। আমি আর সে চেষ্টাও করলামনা। চোখ বন্ধ করে চেষ্টা করলাম ভেতর দিয়ে বের হয়ে যেতে, লাভ হলনা। ঝনাৎ শব্দ হয়, সাইকেলটা কোথায় জানিনা, তবে ট্রায়াঙ্গলের ভেতর দিয়ে আমি যেন এসে পড়লাম ভিন্ন এক জগতে।
দূরে কারা যেন হৈ হৈ করে উঠলো। আমার জিভের ডগায় তখনও গানের শেষ দুটো চরণ শুল শুল করছে। খাবার এবং গান- দুটোই অর্ধসমাপ্ত রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়। লেকের ধারে খাদটার নির্জন আঁধারে শুয়ে থেকে আমি কিছুটা অপ্রাসঙ্গিকভাবে আবৃত্তি করি- ধবলদুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ – পূর্ণিমার।!
লেকের পানিতে ততোক্ষণে চাঁদটা টালমাটাল। পায়ের শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে। রাতের পাখিরা কিছুটা ক্ষুব্ধ। বিস্ময়ে আবিস্কার করি, চারপাশে ফুটে আছে অজস্র ফুল। নাম জানা নেই, শহুরে ফুলের এতো আদব কায়দা নেই এদের। গন্ধ-রোয়াবে বুনো-তেজি ভাব। অবিশ্বাস্য চাঁদের সাথে কোন তুলনাই চলেনা, তারপরও বুনো ফুলগুলো গর্বিতভঙ্গীতে ভাসতে থাকে মৃদু বাতাসে।
গুলশানের এ জায়গাটিতে ফুল কেন, একটা ঘাসেরও সাধ্য নেই জন্ম নেয়ার, চৌকি পার্টি-হকারদের এমন দাপট। আজ করোনার সামনে সব মাস্তান-গডফাদার, ট্রাম্প-পুতিন, সবাই নাস্তানাবুদ। লকডাউনের কারণে অনেক দিন হল লেক পাড়ে ময়লা ফেলতে পারছেনা কেউ। পানিতে কি মাছেরা সাতার কাটছে নাকি! আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবো কিনা ভাবছি, তখনই শুনলাম গর্জন-
- এই তুই কেরে? এখানে শুয়া আসোস কেন?
- হাবিলদার সাহেব, আমি সাংবাদিক।
- হ সামবাদিক! ধরা খাইলে সবাই পোত্থম এটাই কয়। মাল খাইসোস নাকি?
- ভাই, মানুষ যদি বুঝত, মাতাল হইতে পয়সা খরচ করে মাল কেনা লাগেনা, কত কি দারুণ জিনিষ আছে দুনিয়াতে!
- আরে, এতো দেখি আসলেই মাল খাইছে, ওই মজনু, চায়া দেখোস কি, তুল হালারে গাড়িতে
০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪