যে বানর শিশুকে অহনা তার নিজের বলে মনে করেছিল

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

মাহমুদ হাসান পারভেজ
  • ১৯
  • ১২
ম্যানেজার এর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে অহনা এবং জীবনে প্রথমবারের মত চা বাগানে ঢোকার দিনই ফ্যাকটরির ফটকে অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থেকে শুরু করে দাপ্তরিক অথবা অন্য কোন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের একটা অংশের যে সমীহ সে পেয়েছিল তাতে করে তার মনে হয়েছিল এ যেন অন্য কোন দেশ। যে দেশে সে ই একমাত্র রাণী।এবং যে রাণী প্রথমেই তার ইচ্ছা পোষণ করেছিল তার রাজ্যের সেই সব প্রজাদের দেখতে যারা চা বাগানে সরাসরি কুঁড়ি পাতা তোলে- যদিও সেটা ম্যানেজার সাহেব এর প্রায় কানে কানে ফিসফিস করে উচ্চারণ করেছিল অনেকগুলো উৎসুক চোখের দিকে না তাকিয়েই।সাহেব অবশ্য তার স্বভাবমত হাসিমুখে খোলা গলায় বলেছিল যে পরের বুধবার তাদের পেমেন্টবার ‘এইখানেই সেদিন তুমি তাদের দেখতে পাবে’ এবং ততক্ষণে মেমসাহেবের ফিসফিস প্রশ্নটা ফাঁস হয়ে গেলে উপস্থিত সকলের চোখে একটা সরল হাসি এবং অহনার লাজুক হাসি মেশানো সবার মঙ্গলকামনাময় কথা ও বিদায়ভাষণ এবং ‘আবার দেখা হবে’ কথোপকথন শেষে সে মানেজারের সাথে বিলাসবহুল পাঁজেরোতে তার নির্ধারিত সীটে গিয়ে বসেছিল।
গাড়ি সেখান থেকে কিছুদুরে বেশ খানিকটা উঁচু আর খাড়া মাটি ও ইঁট মেশানো নীচু রাস্তা পার হয়ে অবশেষে ‘ম্যানেজার’স বাঙলো’ নির্দেশক রাস্তাটাতে গিয়ে পড়ল। যেটা আরো অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছে-সেখান থেকে দেখা গেল - না দেখা অংশের ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছের সবথেকে উঁচু ডালের চিকন পাতাগুলো আর ক্রমাগত বাঁ দিকে ঘুরতে থাকা রাস্তাটার চারপাশে গিরিখাদ আর তারও ওপরে বিশাল আকাশ। সেখান থেকে বাগানের চারপাশটা দেখা যাচ্ছিল।দুরে এরকমই বা তার চেয়ে বেশী উচ্চতায় ছোপ ছোপ সবুজে ঘেরা ছোট বড় অনেকগুলো টিলাপাহাড় আর একেবারে নীচের জলাভূমি ঘেঁষে কয়েকটা ছোট ছোট টিলার ওপর বিকেলের রোদ এড়িয়ে যাওয়া গাঢ় সবুজ চা বাগানগুলো। আরেকদিকে যেখানটায় জলাভুমির শেষ হয়েছে তার ধার-কিনারে একটা ছোট্ট গ্রাম বা পাড়া সেখানে মলিন পান্ডুর চেহারার দেখতে ছোট ও চিকন চাকন গড়নের নারী ও পুরুষ অল্প কিছু মানুষের অলস চলাফেরা সে গভীর মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করার চেষ্টা করেছিল। যা সে পরেও সেখান থেকে অনেকবার দেখার চেষ্টা করেছে তারা দৈনন্দিন কী কী কাজ করে তাদের বাড়ির আশপাশগুলোতে কিন্তু একইরকমভাবে অলসভঙ্গীতে তাদের নড়াচড়া দেখে বোঝার উপায় নাই।তবে সন্ধ্যা বেলায় দুর থেকে ভেসে আসা শাঁখের অদ্ভুত স্বর আর জনপদ থেকে উপরে ওঠা ধোঁয়া দেখে অনুমান করেছে যে মেয়েরা সান্ধ্যকালীন গৃহকর্ম আর দেবতার আশীর্বাদ চেয়ে মিনতি করে তাদের নিত্যদিনগুলো পার করে।যদিও সে সাহেবের কাছে আগেই শুনেছিল যে সন্ধ্যা হলেই শ্রমিকদের বেশীরভাই ‘হাঁড়িয়া’ জাতীয় মদ্যপান করে। এবং এটা বাগানের ‘সিস্টেম’ এর মধ্যে একটা বৈধ ব্যাপার। আরো জানতে পেরেছিল ঐসব জনপদে ম্যানেজারদের কারোরই যাওয়া কোনভাবেই উচিৎকর্ম হবেনা।
উঁচু টিলাটার ঠিক মাঝখানে বাড়ীটা। ভেতরবাড়ী থেকে বের হয়ে সেই গিরিখাদের কিনার ঘেঁষে তিনদিক থেকে একদিকে বৃত্তাকার ঘুরে ঢালু হয়ে নেমে যাওয়া রাস্তাটা পশ্চিমে সোজা গিয়ে ঠেকেছে ম্যানেজারস বাঙলোর মূল ফটক অবধি। ঠিক কত বছর আগে বাঙলো বাড়ীটা নির্মাণ করা হয়েছিল তা কোথাও লেখা না থাকলেও বা হয়তো সময়ে সময়ে সংস্কারকাজে তার সন তারিখ লেখা ফলকটি হয়তো মুছে গিয়েছিল তবু সে সময়কালটা সহজেই অনুমান করা যায় বৈঠকখানার দেয়ালে দেয়ালে দামী কাঠের-ফ্রেমে বন্দী হাতে আঁকা তৈলচিত্রের পোট্রেটার দিকে তাকালে এবং সেই সাথে পোট্রেট এর নীচে খোদাই হরফে ইংরেজী বর্ণনা সমেত পরম্পরা ক্যাপশনগুলোতে। গুরুগম্ভীর চেহারার ইউরোপীয় পোশাকে ও সংস্করণে বাঙালী বৃটিশ খান বাহাদুর যিনি এই টি এসটেট এর ক্রয়সূত্রে দ্বিতীয় মালিক এবং বৃটিশদের কাছ থেকে সরাসরি রাজ্যটি কিনে নিয়েছিলেন তিনি গত হয়েছেন ভারতবর্ষ বিভক্তরূপে স্বাধীন হবার আগে এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবারও আগে সেই ১৯৪৪ সালে।বাঙালী খান বাহাদুর মালিকটির উত্তারিধাকারী পুত্র-কণ্যগণ আর তার পরবর্তীতে হ্যাট ব্যাট হাতে বা স্যুট পরা বিভিন্ন বয়েসী তার বংশশুদ্ধ নাতির ঘরের পুতিরাও বাদ পড়েনি সর্বশেষ আপডেট ক্যামেরায় তোলা দলীয় ফটোর ফ্রেমে। যাদের কেউই আর এদেশে বসবাস করেন না তবে মালিকানা স্বত্তে এদেশীয় গ্রুপ অব কোম্পানীর ব্যাংক হিসাবে লাভের লাভের অংশ নিয়ে তারা চিন্তিত থাকেন। তাদের কেউ কেউ হুটহাট করে চলে আসেন কোন কোন বছর বর্ষার শেষে অথবা শীতের শুরু হওয়ার আগে যখন চা বাগানের সবুজ জোয়ারে দুই পাতার এক কুড়ির ছন্দে গুনগুন করে সুর তোলে অল্পবয়সী মেয়ে শ্রমিকরা।তাদের সাথে সুর মেলাতে না পারা বয়স্কারা বুকের ভেতরে ভেতরে গায় আর মাথা দোলা্য় যারা একপেচে রাণীমেল শাড়ি পরে একইভাবে বছরের পর বছর শ্রম বিক্রি করে দৈনিক আটচল্লিশ টাকায় আর সাপ্তাহিক চার কেজি রেশনের চালের বিনিময়ে।
অহনা বাঙলোতে ওঠার পর থেকেই দেখেছে এবং অবাক হয়েছে যে কত পরিপাটি করে সাজানো আর গোছানো ঘরগুলো কী নির্মম একাকীত্বে ঠাসা! যদিও থাকার ঘরের দেয়ালে তার মৃত ‘সতীন’ এর বড় একটা হাস্যোজ্বল রহস্যময় ভঙ্গীর ছবি টানানো রয়েছে অনেক যত্ন করে। এবং তার জীবদ্দশায় তিনি যেভাবে ঘরগুলো গুছিয়ে রাখতেন এখনো বোধ হয় সেভাবেই সেগুলো যত্ন করে রাখা।আর পাশেই যে ঘরটায় তাদের বড় এবং একমাত্র মেয়ে নতাশা থাকতো তার শৈশব থেকে যৌবনে যতদিনে সে ডাক্তারি পাশ করে বেরিয়েছে এবং নববধু বেশে ও একটা বিদেশী প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা- তার বর সহ যে পোট্রেটগুলো দেয়ালে টানানো ছিল যেগুলো খুব দক্ষ কোন ফটোগ্রাফারকে দিয়ে তোলা হয়েছে বলেই মনে হয় যদিও তার সবগুলোই সাহেবের তোলা ফটো বলে সে জেনেছিলো; এবং সে ঘরে নাতাশার ব্যবহার করা ছোট-খাটো সেইসব তৈজস বা বই খাতা এমন কি তার শৈশবের জুতো আর ক্যাপগুলোও তার সবটাই যেন এখুনি কেউ সযতনে গুছিয়ে রেখে দিয়েছে।
বাঙলো বাড়ীতে প্রথম রাতেই সাহেব খোলামেলা কথাগুলো বলেছিল যদিও সে বিয়ের আগেই নাতাশার কাছ থেকে তার মায়ের অনেক গল্প শুনে নিয়েছিল এবং সাহেবের সাথে তার বিয়েটাও অনেকটা নাতাশারই অবদান বা মাধ্যমে।সাহেবের সাথে দেখা হওয়ার আগে তার প্রথম পরিচয় হয় নাতাশার সাথেই যখন ঢাকায় অহনা তার কাছাকাছি এক আত্মীয়ের বাসায় এসে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে।যদিও ততদিনে তার প্রথম বিয়ের স্মৃতিস্বরূপ বিয়ের দিনের একটা পুরোনো এ্যালবামই শুধু সঙ্গী হয়েছিল এবং তার প্রায় বছর দশেক আগে বিয়ের পর মাত্র পাঁচদিনের মাথায় তার কানাডা প্রবাসী হাজবেন্ড ঢাকার কাছে আমিনবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সেই দুর্ঘটনার দায় হিসেবে যদিও তাকেই দোষ দেয়া হয়েছিল তার শ্বশুরবাড়ীর মহল থেকে যদিও সাবের-তার নিহত স্বামী তাকে না জানিয়েই কোন একটা কাজে নিজে ড্রাইভ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় ফিরে আসছিলো।
সেই আত্মীয়ের বাসায় থাকার সময় ঐ বাড়ীর বড় মেয়ে মিল্কি’র ব্যাচমেট ও ঘনিষ্টতম ইন্টার্ণ চিকিৎসক হিসেবে নাতাশাকে সে প্রথম দেখে এবং জানতে পারে তাদের সুখী পরিবারের আবেগভরা গল্প।সেই সাথে মায়ের অকাল মৃত্যু আর মাকে হারানোর কষ্ট।বছর পাঁচেক ধরে চা বাগানের ম্যানেজার ‘বাবা’র একলা থাকার কষ্টানুভুতি এবং একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য যে আর কোন মহিলাকে বিয়ে করার কথা পর্যন্ত ভাবেননি যদিও আগ্রহভরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্বন্ধগুলোকে সেই ‘বাবা’ নিজেই ‘না’ বলে দিয়েছেন। এরপর থেকে নাতাশার ‘কষ্ট’টা মফস্বলের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া একটা সরকারী কলেজের আবাসিক শিক্ষক অহনাকে বেশ নাড়া দিতে পেরেছিলো এবং তাদের দুজনের যোগাযোগটা বেশ দ্রুততার সাথেই এগিয়ে চলছিল যদিও নিয়তিতে ‘অপয়া’ অহনা যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আর কোনদিনই সে বিয়ে করবেনা ঠিক ততটাই ‘মা’ হারানো মেয়ে নাতাশা যেমন আবিষ্কার করতে পেরেছিল তার হারোনো মায়ের ‘স্থলাভিষিক্ত’ হতে পারে এমন একটা মুথ কেবল যেটা পৃথিবীর একমাত্র অহনা’র কাছেই আছে যা তার ‘বাবা’কে আবারো সেইসব ভালোবাসাময় দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
দুজনের কাছেই ‘প্রস্তাবনা’ ব্যাপারটা যখন উঠেছিলো তখনও বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে দুইজনই অটল মনোবল পোষণ করতো কিন্তু ততক্ষনে নাতাশা গোঁ ধরে বসেছিল যে সে নিজেও আর কোনদিন বিয়ে করবেনা যদিও ততদিনে নাতাশা তার বাবার পছন্দ করা পাত্রের ‘বাগদত্তা’ হয়ে গিয়েছিল এবং সেটাকে সে প্রবলভাবে ‘না’ করে দিচ্ছিল এই ‘শর্ত’ মেনে নিয়েই কেবল তারা নাতাশার বিয়ের পরের মাসেই অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই পরিবেরর কয়েকজন বয়োজেষ্ঠ্য’র উপস্থিতিতে তাদের উভয়ের জন্য পুরোনো অথচ নতুন এক সম্পর্ক স্থাপন করতে সমর্থ্য হয়েছিলো।
সাহেব তার প্রথম স্ত্রী রুশনা সম্পর্কে সেই সব আবেগঘন ভালোবাসাময় দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছিলো সেই প্রথম রাতেই যেগুলোর বেশীরভাগই সে নাতাশার কাছ থেকে শুনেছিল অথবা তার সাথে কিছু কল্পনা যোগ করে একটা সুখী সমৃদ্ধ পরিবারকে সে চোখের সামনে অনুভব করতে পেরেছিলো। এত বছর ধরে তার নিজের সত্তা জুড়ে থাকা অপয়া বিধবা বা দুইদিনের বর সাবেরের ঘনিষ্ঠ স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ওর জন্য যেটুকু মায়া সে অভ্যন্তরে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলো তার প্রায় পুরোটাই দখল করে নিল তার এই নতুন ঘর সাথে প্রথম রাতের ঘামে ভেজা প্রেমময় উত্তেজনা আর দম বন্ধ করা নির্লজ্জ সোহাগমাখা আদরগুলো। একদিন মৃত সতীন এই ঘরটাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছিল এমনভাবে যিনি বিয়ের পর থেকে একটা রাতও তার স্বামীকে ছাড়া কাটায়নি এমনকি তার একমাত্র বেঁচে থাকা মায়ের বাড়ীতে বেড়াতে গেলেও সে রাতে আবার ফিরে এসেছিলো এই মোহময় ঘরটায় যেখানে তার সংসার তিল তিল যত্নের সাথে গড়ে উঠেছিলো।
অহনা তার শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে ইস্তফা দিয়েছিল বিয়ের সিদ্ধান্তের সাথে সাথেই এবং তার জমানো বইগুলো ছাড়া আর কিছুই সে এখানে নিয়ে আসেনি।শোবার ঘরের পাশে স্টাডি রুমে বইয়ের তাকটাতে সে রাতের আগেই বইগুলো সাজিয়ে রেখে দিয়েছে যেগুলোর প্রায় সবগুলোই তার পড়া শেষ হয়ে গিয়েছে।বইগুলো সাজানোর সময় সেখানে আগে থেকেই থাকা একটা ব্যক্তিগত ডায়েরি সে পেয়ে যায় যেটার বাইরে কোন নাম লেখা না থাকলেও সেটা সে খুলে পড়তে চায়নি এই বোধ থেকে যে ওটা কারো না কারো ব্যক্তিগত। তবে সেটা কার ডায়েরি এটা জানার কৌতুহল তাকে দমিয়ে রাখতে পারলনা যখন সে দিনের বেশীরভাগ সময়টা একা একা কাটাতে শুরু করেছিল।একা টেলিভশনের চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন চা চাষ পদ্ধতি নিয়ে একটা বই পড়ার সিদ্ধান্ত নিল যেটা সে আগেই পড়বে বলে ঠিক করে রেখেছিলো।আর এভাবেই সে অবচেতনে সেই ব্যক্তিগত ডায়েরীটা হাতে তুলে নিল এবং প্রথম পাতা উল্টাতেই তার চোখে পড়লো কালো হরফের আনাড়ী হাতের লেখায় ‘রুশনা সাহেব চৌধুরী’- ডায়েরীটা হাতে নিয়েই সে শোবার ঘরে এলো এবং বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে উবু হয়ে পাতাগুলো আনমনে উল্টাতে থাকলো। এমন একটা সময়ে সে অনুভব করলো যে তার ঘরের পেছন দিকে কেউ একজন জানালার পাশটা মাড়িয়ে গেল।সে মনে করেছিলো হয়তো বেয়ারাদের কেউ ওদিকটার আগাছাগুলো পরিষ্কার করছিলো। বিছানা থেকে উঠে খোলা জানালাটার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে যখন সে কাউকেই দেখতে পেলনা এবং শুধু লোহার শিকলে বাধা পুরনো দোলনাটা তখনও দুলছিলো।সে আবার ফিরে আসতে গিয়েই আবার মনে হলো কে যেন তাকে অনুসরণ করছিলো তখনও এবং সেটা ঐ জানালার ওপাশেই।কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে অজান্তেই আবার গ্রীলহীন জানালাটায় আগের মতই উঁকি দিল। এবার সে দেখতে পেল দোলনা পেরিয়ে যাওয়া একটা জলজ্যান্ত বানর শিশুকে। তখন প্রায় মধ্য দুপুর। সাহেব আসার সময় হয়ে গিয়েছিল এবং ডায়েরীটা আবার পাশের ঘরের বুক শেলফে আগের জায়গাতেই সযতনে রেখে দিল।
কলিং বেল বেজে উঠতেই বাইরের দিকে নিশঃব্দ বেয়ারগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এবং বোঝা যায় যে ওরা চোখ মাটির দিকে নামিয়ে কোন না কোন ফরমায়েশের জন্য হাজির হয়েছে।ওদেরকে মাড়িয়ে কটের হাফ প্যান্ট পরা আধাবয়স্ক কিন্তু সুঠাম দেহ-বল্লরী নিয়ে লম্বা পায়ে মাথার ঘর্মাক্ত ক্যাপটা হাতে নিয়ে সাহেব ভেতরবাড়ীতে ঢুকে পড়ে।
অহনা বলে ‘এসময় বোধ হয় খুব বেশী চাপ, তাই না’? চা উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরনে সচেষ্ট ম্যানেজার সরল হাসিতে তার সম্মতি জানায় এবং আরো জানায় যে এবছর খুব চেষ্টা করেও তারা তাদের লক্ষ্যের খুব কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারবেনা কেননা ‘রেড স্পাইপাডারদের’ আক্রমণে সবুজ পাতাগুলো কেবল হলুদ হতে শুরু করেছে।সেই সাথে কুকড়ানো পাতায় শত কীটনাশক দিয়েও নিস্তার নেই। সাহেব তার নতুন জীবনে তার নতুন ডাকে ‘প্রিয় বউ’ সম্বোধনটা বার বার জুড়ে দিয়ে তাকে একটা নতুন ‘অস্তিত্ব’র কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল যেখানে সে রুশনাকে ডাকতো ‘লক্ষী কণা’ বলে।
নিয়মিত পর্ব সেরে চা বাগানের নিজস্ব সিস্টেমের ‘রক্ষক’ সঠিক সময় মেনে আবারো বেরিয়ে পড়ে তার নিজস্ব স্টাইলে এবং অহনা তখনো থেকে যায় সেই নিঃসঙ্গ বাঙলোয় ‘একাকীত্বের স্বর্গ’ বললেই কেবল সেটাকে সঠিক স্থানের মর্যাদা দেয়া যায়।ততক্ষণে অহনা বেয়ারাকে চা দিতে বলে প্রতিদিনের মত বাংলোটার খোলা অংশগুলোতে হাঁটতে যায়। ফুলে ভরা বিভিন্ন জাতের গাছে হাত বুলিয়ে দিয়ে সে পেছনের জানালার ওপাশের সেই দোলনাটায় গিয়ে বসে পড়ে। তখনই মনে হলো যে আজ দুপুরেই সে এখানে একটা বানর শিশুকে পেরিয়ে যেতে দেখেছিলো।কিন্তু সাহেবের কাছে বানর বিষয়ে তার প্রশ্নটা তখন বলতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যখন লাল মাকড়সাগুলোর আক্রমণে ম্যানেজারসাহেব তার কয়েকরকম চেষ্টার প্রসঙ্গটা তুলে ধরেছিলো। আর তারপর বিছানায় গত কয়েকবছরের ক্ষুধার্ত শরীরের অবসরপ্রাপ্ত কোষগুলোকে নতুন করে জীবন দেবার কাজটা ঘটে গিয়েছিলো।চা পান শেষ করেই এক মুহুর্ত আর বাইরে দাড়ালো না অহনা। কয়েকদিনে অভ্যস্ত এই অতি-শৃঙখলাপূর্ণ লাইফস্টাইলে হঠাৎ একটা গুমোট আবহ তাকে চেপে বসলো এবং মুহুর্ত দেরী না করে সে আবার সেই না পড়া ডায়েরীটা হাতে স্টাডি রুমের টেবিলেই বসে পড়লো।
সে সন্ধ্যায় এক দমেই সে ডায়েরীর শেষ পাতাটি পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলো। সে এটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো যে ডায়েরীটা নাতাশার দেওয়া উপহার এবং যখন সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মাকে বাড়ীতে একলা ফেলে সে চলে যায় তখনকার কোন সময়েই এটা কেবল লেখা শুরু করেছিলো তার মা।ডায়েরীর প্রথম দিকটায় তার বিবাহিত জীবনের কিছু ছবি তিনি অস্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন এবং নাতাশার জন্মের পর তার কিছু শৈশবের ঘটনা আর আবেগপূর্ণ মমতাময় কিছু শব্দে নাতাশার বেড়ে ওঠার কাহিনি ছিলো ওটাতে। আরো ছিলো কিছু ব্যাখ্যা – যেমনটি রুশনার নিজের দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলাফল। যেখানে অন্যদের কিংবা বেশীরভাগ বাগানের ম্যানেজারদের পরিবারের কথা- যারা তাদের সন্তানদের মঙ্গল আর নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য রাজধানীর বা দেশের বাইরের স্কুল কলেজগুলোতে তাদের পড়াশোনা করাতো আর তাদের মা তাদের সাথে রাজধানীতে বা বিদেশের সেই শহরগুলোতে বাস করতো। যেখানে সেই সব ম্যানেজারগণ তাদের বাঙলোগুলোতে একা বাস করতো বা মাঝে মাঝে তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটাতো। যারা বিদ্যালয় ছুটির সময় চা বাগানে এসে বেড়িয়ে যেত।এরকম অনেক শুভাকাঙ্খীবৃন্দের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে এমনকি নাতাশার বাবার অনুরোধ উপেক্ষা করেও তিনি মেয়েকে স্থানীয় উপজেলা ভিত্তিক অখ্যাত সেইসব বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক পাশের পর সেখানকার একটা কলেজে তাকে পড়াশোনা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং অবশ্যই তিনি তার লক্ষ্যে পৌছাঁনোর ব্যাপারে আগাগোড়াই সচেষ্ট ছিলেন এবং তার বাস্তবায়নও করেছিলেন মেয়েকে দেশের খ্যাতনামা মেডিকেল কলেজটাতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে। তবে তার আশা ও স্বপ্ন ছিলো এই যে ভবিষ্যতে নাতাশা যেন আবারো এই চা বাগানেই ফেরত আসে এবং অবশ্যই চা বাগানের ‘তুচ্ছ’ মানুষগুলোকে ‘সিস্টেম’ এর ভেতর দিয়েই সু-চিকিৎসা সেবা দিতে পারে যেটা তাদের অনেকদিনের প্রয়োজন ছিলো।
তবে ডায়েরীর যে অংশটা নিয়ে অহনা খুবই অস্পষ্ট এবং সম্ভবত তার কোন একটা রোগের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টার অংশ বিশেষ- সেটা নিয়ে অহনা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল কেননা ডায়েরীর শেষের দিকটায় মানুষের মতই দেখতে কোন একটা অদ্ভুতুড়ে প্রাণীর কথা বলা হয়েছিল যেখানে বর্ণণাটা ছিল..‘আর ও আসলেই কেবল আমার ভীষণ ক্ষুধা পেত কিন্তু টেবিলের সব খাবার থাকার পরও আমি সেগুলোর দিকে তাকালেই কেবল বমি আসতো’.. ‘আগের তুলনায় ও র আসা কমে গেছে কিন্তু আমি আর কিছুই খেতে পারছিনা’। এর পর ডাক্তারি পরীক্ষায় তার পাকস্থলীর ক্যানসার ধরা পড়েছিলো এবং তিনি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। একবারে শেষ দিকটায় তিনি আরো একবার ‘ও’ শব্দটা ব্যবহার করেছিল সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি ‘ও’কে তার নিজের সন্তান বলেছেন ..‘বাবা, তুই আমার হারানো মানিক ছেলে; তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাসনা’ এবং কবে সে জন্মেছিল বা সেটা কি বাস্তব না অবাস্তব সে বিষয়ে সেখানে কোন নোট ছিলনা।এমন কি অহনার স্মৃতিতে নাতাশার বা তার বাবার কোন কথাতেও তার আর কোন সন্তানের বিষয়ে সে জানতো না। তবে একই সাথে সে দুপুরের দেখা বানর শিশুটার সাথে এবং রুশনার লেখা বর্ণণাগুলোকে মনের গহীন থেকে মেলাতে চেষ্টা করছিলো।
ব্যাপারটা ভেতরে ভেতরে অহনাকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দিল এবং না চাইলেও সেই বানর শিশুটাকে সে বারংবার তার অনুভব দিয়ে টের পাচ্ছিল।সে রান্নার কথা ভুলে গেল, টের পেল যখন কুক এসে তাকে কী রান্না হবে তার নির্দেশনা নিতে হাজির হলো।সে শুধু কুককে এটুকুই বলতে পারলো যে ‘আজ তোমার পছন্দের রান্নাটাই তুমি করে দেখাও’।
কুক রান্নাঘরের দিকে যেতে থাকলে সে তাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার আগের ‘ম্যাডাম’ মানে নাতাশার মা কোন বিশেষ রান্নাটা পছন্দ করতেন?’
‘আচ্ছা, আজ সেটাই করি তাহলে- পুঁই পাতার সাথে যে কোন দেশী মাছের ঝোল’ - অহনা তাতে সম্মতি দিলে কুক আগের মতই অনুগত ভঙ্গিতে চলে গেল।
সে সাহেবের অপেক্ষায় থাকলো। স্টাডি টেবিলটাতে বসে ল্যাম্প জ্বালিয়ে বিশেষ বিশেষ অংশগুলো সে আবারো পড়লো এবং তার ভেতরে ভেতরে উঁকি দেওয়া সব অস্পষ্টতাগুলো দুর করার আপ্রাণ চেষ্টা করে নিষ্ফল হয়ে আগের মতই বসে রইল। সাহেবের কাছে তার অনেক প্রশ্ন।নানা আশঙ্কা তার মনে ভীড় করছিলো। কিন্তু সে মরিয়া হয়েও জানতে বা বুঝতে পারছিলো না কী কী সে সব আশঙ্কা।

সাহেব তার কাজ শেষ করে যখন বাঙলোয় ফিরে এলো তখন রাতের প্রায় দশটা বেজে গেছে। তাকে চা বাগানের বাইরের কোন একটা শহরে যেতে হয়েছিল বলে ফিরতে একটু দেরী বলে সে সেটা ব্যাখ্যা করলো এবং তার ‘প্রিয় বউ’ এর তখনও কোন আশানুরূপ প্রতিউত্তর না পাওয়াতে সে ও মনে হয় কিছুটা দ্বিধার সাথেই প্রশ্নটা করলো,‘কী হয়েছে? কোন সমস্যা?’
নির্মোহ কিন্তু উৎসুক ভঙ্গিতে যখন সাহেব দ্বিতীয়বারও ঠিক একই প্রশ্ন করলো ঠিক তখনই অহনা সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো।এবং সে রুশনার সেই ডায়েরীর ঘটনার চুম্বক অংশগুলোই শুধু তাকে বলল এবং প্রায় এক নিঃশ্বাসে বিগত দুপুরের দেখা সেই প্রাণীর কথাও বর্ণনাসমেত তার সামনে তুলে ধরল।
কিছুই হয়নি এমন একটা নিছক ঘটনার মতই সাহেব হাসিমাখা সোহাগ-বাহুতে তাকে চেপে ধরে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিতে যাচ্ছিল এমন সময় বাইরের অংশের দরজার বাইরে অনেকগুলো পাখির একটা ঝাঁকে অনেকজোড়া পাখার ফড় ফড় শব্দে তাদের কান খাড়া হয়ে গেল। সাহেব সেখানেই থেমে গেল এবং তাকে একটা মজার দৃশ্য দেখাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলো এবং যেটা এক্ষুনি ঘটে যাচ্ছে।
অহনা ভেতরে অনেক ভয় পেলেও সাহেবকে পাশে পেয়ে সে তার সবটুকু সাহস ফেরত পেল এবং নিত্যকার মতোই মিষ্টি আদুরে গলায় বললো ‘অত দেখার কাজ নেই মিস্টার, এখন খাওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে।’ সাহেব ওসব শুনলো না। জোর করে পাঁজাকোলে তাকে দরজার বাইরে নিয়ে এলো এবং তারা দেখতে পেল বাইরের লনটায় যেখানে অদুরেই লাইটপোস্টগুলোতে হ্যালোজেন তার রহস্যময় বিকরণ ছড়াচ্ছে সেখানের ঘাসের উপর বা তার উপরে শুন্যে লাফিয়ে এদিক থেকে ওদিকে একদল পোকা-শিকারী রাতের পাখি সেগুলো ধরে ধরে তাদের বছরের সেরা ডিনারটা সম্পন্ন করছে।সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!
নিজেদের ডিনার শুরু করতে গিয়ে সাহেব অহনাকে রুশনার জীবনের শেষদিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছিলো আর সেটা যে কতটা কষ্টের দিন ছিল রুশনার জন্যে বা তার নিজের জন্যে সাথে ডাক্তারীতে অধ্যায়নরতা নাতাশার জন্যেও - সেটা বলিষ্ঠদেহী সাহেবের বড় বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসটা পড়তে পেরেছিলে বলেই অহনা তাকে থামিয়ে দিয়ে খবরটা জানালো যে আজ সে নিজে রান্না করেনি এবং কুক ডিশে রুশনার পছন্দের একটা রেসিপি রেখেছে।‘পুঁই পাতার ঝোলে ছোট দেশী মাছ’।
ডিনারের সময় তাদের আলাপ আর নিজেদের অন্তর্গত চোখাচোখিতে ভালাবাসা আর বিশ্বাসের ফুলগুলো দিয়ে যেন একটা অদৃশ্য সুতায় মালাগাঁথা চলছিলো। সেদিন সাহেব চা বাগানের সেই সব প্রচলিত গল্পগুলো যেগুলোকে বাগানের স্থানীয়রা ‘বাদ’ এর গল্প বলে থাকে যেমনটি শ্রমিকেরা বিশ্বাস ও করে যে ‘জুজু আসবেই এবং একদিন তার ছোট্ট শিশুর মাথা-ঘাড় সহ কামড়াতে কামড়াতে টেনে নিয়ে যাবে- তার সামনেই’ অথবা ‘বাগানের রাস্তায় সন্ধ্যার পরেই সেই সব কুকুরের দল বা কোন নেড়ি তাদের রাস্তা আটকে দাঁড়াবে’ এবং সাহেব সেটাও বলতে ছাড়লোনা যেটা বলতে গেলে তার নিজেরও ভয় হয় এবং কখনো কখনো সে নিজেই সেটা বিশ্বাস করে কিন্তু লোকেদের কথাকে পাশ কাটিয়ে বলে যে ওটা ‘ জাস্ট হ্যালুসেশন’ এবং সত্যি সেটা ঘটেছিল কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ নিয়ে বর্ণনা করলো ‘ সেই এক পেচে শাড়ী পড়া একটা কম বয়স্কা নারী শ্রমিক যে মাঝ রাতে চা-পাতা তোলে এবং এর কিছুক্ষণ পরেই সে মুখে বসন্তের দাগওলা একটা থুথ্থুড়ে বুড়িতে পরিণত হয় এবং যারা তাকে দেখেছিল- সেটা লাইনের চৌকিদার পর্যন্ত- পনের দিনের বেশী আর বাঁচেনি’।
সে রাতে অহনা পুরো রাত জেগে ছিলো সাহেবকে জড়িয়ে ধরে। যখন অনেক ভোরে উঠে সাহেব বাগানে বেরিয়ে পড়লো তার মোটরসাইকেলটা নিয়ে চিরাচরিত ম্যানেজার এর ইউনিফরমে কেবল তখনই সে ঘুমে ঢলে পড়তে শুরু করলো এবং বেলা গড়িয়ে যখন দুপুর হতে চললো এবং তখনই তার ঘুমটা ভেঙে গেল গতকাল দুপুরের সেই পরিচিত অনুভবে যেটা ঠিক পেছনের জানালার ঠিক ও পাশেই। দ্রুত সে জানালাটার কাছে গিয়ে দাড়ালো এবং দেখতে পেল সেই লিকলিকে বানর শিশুটাকে ঠিক তার চোখের দিকে যেটা তাকিয়ে আছে। অস্ফুট স্বরে সেটা তাকে স্পষ্ট বাংলায় বললো, ‘ মা, আমি ফিরে এসেছি। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে’।নিথর দাড়িয়ে থেকে হঠাৎ কেবল সে সাহেবকে ডাকলো এক গগনবিদারী চিৎকারে আর তখনই সেটা চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত নেমে গেল গিরি খাদের অদৃশ্য অংশে।
সাহেব বেরিয়ে পড়ার পর থেকে আবার ফিরে আসার মুহুর্তগুলো পর্যন্ত অহনাকে সেই অশুভ সময়গুলো পার করতে হয়েছিল একা একা এই সীমহীন রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কাঠ-কুটিরের অভিজাত দ্বিতলবিশিষ্ট বাঙলোবাড়ীটায়।বাসস্থানটা কত উঁচুতে সাহেব তাকে যদিওবা বলেছিল মিটারের পরিমাপকে কিন্তু অদৃশ্য রোগাক্রান্ত অহনা সেটা ঠিকই পরিমাপ করেছিল মানবীয় দৃষ্টির পরিমাপকে যেটা ঐ নীচু জলার ওপাশের ছোট্ট বাড়ী বা গ্রামগুলো থেকে আলোকবর্ষ দুরের কোন উঁচুতে এবং আরো বহু উঁচুতে অহনার জায়গা হয়েছিল তার অনেক অনেক দিন থেকে না খেতে পাওয়া শিশুটাকে কোলে করে যেটাকে সে চিরকালই তার নিজের সন্তান বলেই মনে করতে পেরেছিল।
খাদের পাড়ে খাড়া বা ঢালু হয়ে নীচে নেমে যাওয়া টিলার অংশে তখনও সারি সারি বয়স্ক গাছগুলো বাড়ীটাকে দিনের পর দিন ধরে অদৃশ্য উপায়ে পাহারা দিয়ে যাচ্ছিল ঠিক যেমন করে প্রভুভক্ত ‘বেয়ারা’ গুলো সুনসান বাড়ীতে চুপচাপ কথা না বলেই কাটিয়ে দিতে পারে দিনের পর দিন বা রাতের পর রাত ধরে বংশানুপরম্পরায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিন আরফান. দারুণ লিখেছেন ভাই. বানানেও যত্নশীল ছিলেন. সার্বিক দিক বিবেচনা করে অসাধারণ.
প্রেরণা যুগিয়েছেন তাই কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ মতামতের জন্য।
Rex Khan Kamrur অনেক সুন্দর। ভাল লাগল।
আন্তরিক মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।ভাল থাকুন।
শ্রীদ্যুতি বিনায়ক আপনার গল্পের গাথুনিটা খুব শক্ত।ভালই লাগল,আমার পাতায় স্বাগতম।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আসছি।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম চা বাগানের শ্রমিকদের খুবই নির্যাতন করা হত , অন্তত ইতিহাস তাই বলে । আপনার গল্পে ‘ জাস্ট হ্যালুসেশন’ এবং সত্যি সেটা ঘটেছিল কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ নিয়ে ---" সাহেব জোড়াতালি বুঝ দিলেও গল্পের পরিণতিটাতে মনে হয় সেরকম কোন ইতিহাসের হ্যালুসেশন তুলে ধরা হয়েছে । অন্তত আমার গোবর ভরা মাথায় আমি যতটুকু বুঝেছি । আপনার লেখার হাত দারুন । দোয়া করছি এভাবেই আপনার কলম চলবে ।
শ্রদ্ধাভাজনেষু, আপনার মন্তব্য থেকে আমি ’নবীন’ হিসেবে অবশ্যই সাংঘাতিক রকমের সাহস অনুভব করছি। এবং আপনার মত সবার কাছ থেকেই ‘দোয়া’ চাইব। শুভকামনা সবসময়। ভালো থাকুন।
মিলন বনিক খুব চমৎকার গল্প...গল্পের থিমটা আরও পরিষ্কার হলো হাসনা হেনার প্রতিউত্তরে....বলবো আপনার প্রথম রপকার হিসাবে সার্থক...আর যহেতু বলেছেন সম্পাদনার সুযোগ আছে তাই বলবো..বাক্যগুলো বেশ দীর্ঘ, ছোট করতে পারলে আরও সুখপাঠ্র হবে...োনেক ানেক শুভকামনা...
শ্রদ্ধাভাজনেষু, আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত অবশ্যই মনে থাকবে এবং আমার সৌভাগ্য যে আপনি বন্ধুর মতোই অামার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আশা করি এটা চলমান থাকবে। শুভকামনা সবসময়।
স্বপন চক্রবর্ত্তী প্রথম উদ্যোগ বেশ ভাল -- শুভেচ্ছা
প্রিয় দাদা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই গল্পটি পড়েছেন এবং প্রেরণা যুগিয়েছেন এজন্য। আশা করি ভবিষ্যতেও সাথে থাকবেন। ও হ্যাঁ, সুজাতার বাকি ঘটনা জানার অপেক্ষায় আছি। শুভকামনা সবসময়।
হাসনা হেনা লেখনী বেশ ভাল কিন্তু সমাপ্তিটা ঠিক বুঝতে পারলামনা .ধননবাদ
শ্রদ্ধেয় পাঠক, আপনার মন্তব্যটি আমার সবচাইতে পছন্দ হয়েছে। গল্পের শেষটা হয়েছে যেভাবে তাতে আপনার মত অনেক পাঠকের এই বিভ্রমটি হতে পারে বা হয়েছে। তবে গল্পের বাইরে এসে এর ’ব্যাখ্যা’ দেওয়াটা আমার গল্পের দুর্বলতা মেনেই বলছি- যে বানর শিশুটি অহনাকে মা ডেকেছিল বা তারও আগে রুশনাকে মা ডাকতো সে বানর শিশুটিই এ গল্পের প্রধান চরিত্র। লিকলিকে চেহারার বানর শিশুটি চা বাগানের ভেতরের বঞ্চিত মানুষগুলোর প্রতিবাদী ভূত। এবং এক অজানা মমতায় অথবা মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে অহনা ঐ বানর শিশুটিকে তার নিজের সন্তান হিসেবে কোলে তুলে নিয়েছিল চিরদিনের জন্য। এটি ছিল ব্যাখ্যা। যে কোন ভাবেই এই গল্পটা আমার প্রথম গল্প এবং ভবিষ্যতে সম্পাদনার সুযোগ থাকলে এই অংশটিকে আরো বোধগম্য করা এবং আরো কয়েকটি জায়গায় বেশ কিছু পরিমার্জন করতে চাইব। অাশা করি ভবিষ্যত লেখাগুলোতেও এভাবেই সাথে থাকবেন। শুভকামনা জানবেন সবসময়।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ চা বাগান সম্পর্কে এরকমই একটা বনেদি ভাব আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিল কিন্তু যদিও একাত্তরে প্রায় ত্রিশটি দিন শিলিগুড়ির পাহাড় চুড়ায় দৌড়ে বেড়িয়েছি তবুও চা বাগানের ভেতরের গল্প টা জানা ছিল না। আপনার গল্পের সবচেয়ে মজার দিক, যেটা আমার কাছে বেশী ভাল লেগেছে তা হ’লো গল্পের বর্ণণায় আগাগোড়া শান্ত মেজাজ টা ধরে রাখতে পারা ! খুব ভাল লাগল।
শ্রদ্ধেয় পাঠক, অনুপ্রাণিত হয়েছি আপনার অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করবার জন্য। আমিও চা বাগানের ভেতরের ’আসল‘ গল্পটা জানিনা।শুধু এটুকু দেখতে পারি যে চা বাগানের সীমানার ভেতরের সাথে বাইরের ’পরিস্থিতি’র কোন মিল নাই । কৃতজ্ঞতা জানাই খুব মনযোগ দিয়ে গল্পটি পড়বার জন্য। শুভকামনা সবসময়।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
প্রিয় গোবিন্দবিন দাদা, আপনার লেখা কবিতা আগেই পড়া হয়েছিলো এবং ভোট ও দিয়ে এসেছি। ধন্যবাদ, মন্তব্য করার জন্য। সাথে থাকবেন। শুভকামনা সবসময়।
সোপান সিদ্ধার্থ ...অসাধারণ। একটানা পড়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু— “পুঁই পাতার সাথে যে কোন দেশী মাছের ঝোল”— এই অংশটায় এসে একটু থেমে গেলাম। বুঝে নিন কেনো। সাবলীল বর্ণনার ধরণে গল্পের দৃশ্যগুলোকে বাস্তব মনে হয়েছে। অশেষ শুভকামনা রইলো।
প্রিয় সোপান সিদ্ধার্থ, কৃতজ্ঞতা এই জন্য যে আমি এরকম মন্তব্যই আশা করি যেগুলো আমার লেখার দুর্বলতাগুলোকে চিনিয়ে দেবে এবং এটিই আমার জন্য সত্যিকার প্রেরণাদায়ক। আপনার লেখার ওপর আমার মন্তব্যের রিপ্লাই থেকে যে ধারণা পেয়েছি তাতে আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই এবং সমর্থন করি। আশা করি ভবিষ্যতে এটা চলবে। ভালো থাকুন সবসময়।
‘পুঁই শাকের’ অংশে এসে থেমে যাই, কারণ ঠিক তখনি ইচ্ছে হচ্ছিল মাছের ঝোল দিয়ে পুঁইয়ের তরকারিটা একটু খেয়ে দেখি! মন্তব্যে একটু হেঁয়ালি রয়ে গিয়েছিলো... হা হা

২৭ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪