হাকালি মোড়ের হিজল গাছ

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

জুনায়েদ বি রাহমান
  • ১৪
  • ২৯
একঃ

গ্রামটি শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নাম কাঞ্চনপুর। গ্রামের ছোট্ট কাঁচা রাস্তাটি এঁকেবেঁকে তিন গ্রামের মাঝ দিয়ে বড়লেখা-সিলেট মহাসড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। রাতুল বাস থেকে নেমে একদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিল। আশে পাশে কেউ নেই, স্টেশনারি দোকানটা বন্ধ। কয়েকটা কুকুর পিচের মধ্যে গা এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। রাত তখন সাড়ে বারটা। মামার জন্য অপেক্ষা না করে হাঁটতে লাগলো রাতুল। রাতুলের মামা আছার মিয়া একজন মুদি দোকানদার। সারাদিন দোকান নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। আশে পাশে হাট না থাকায় দোকানে বেচা কিনা ভালই চলে। সাপ্তাহ বার রাতে দোকানের বারান্দায় তাসের আসর বসে। রাত বাড়ার সাথে সাথে খেলোয়াড়দের সংখ্যা ও বাড়তে থাকে। আজ শুক্রবার। মনে হয় তাসের ধ্যানে মগ্ন আছার মিঁয়া। হয়ত ভুলে গেছেন রাতুলের কথা। কিংবা, কয়টা বাজে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। মামার জন্য অপেক্ষা করার চাইতে হাটাই উত্তম। ভাবতে ভাবতে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল রাতুল।
অন্ধকার রাত। দূর থেকে কয়েকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ বেসে আসছে। মাঠের ঐ প্রান্তে কয়েকটা শিয়াল "হুক্কা হুয়া, হুক্কা হু আ" বলে চিৎকার করছে। রাতুল গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আশে পাশে কোন বসতি নেই। দূর থেকে হাঁকালি ম্যুরের হিজল গাছটা দেখা যাচ্ছে। শত বছরের পুরনো গাছ। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণেশের পরিবারের সদস্য দের গাছের নিচে জ্যান্ত গন কবর দিয়েছিল। এই জঘন্য হত্যা ক্যান্ডের সাক্ষী হয়ে আছে হিজল গাছটা।
গাছটা নিয়ে গ্রামে গল্পের শেষ নেই। এখন ও নাকি হিজল গাছের পাশদিয়ে আসা-যাওয়ার সময় মানুষ পথ হারিয়ে ফেলে। হাঁকালি-মোড়া থেকে গ্রামের দুরত্ব আধা মাইলের মত। এই একটু খানি পথ সারা রাতেও পার হতে পারেনি এমন অনেক মানুষ আছে গ্রামে । রাতের বেলা বাড়ি ফেরার সময় "গনেশ"কে গাছের নিচে বসে থাকতে দেখেছে এমন মানুষের ও অভাব নেই গ্রামে। কেউ কেউ বিবস্ত্র অবস্থায় বাঁচাও বাঁচাও বুকফাটা আর্তনাদ করতে দেখেছে গণেশের ষোড়শী মেয়েকে। যাই হোক, রাতুল এসব বিশ্বাস করেনা। তার কাছে এসব নিছক গল্প/ গুজব ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
দুইঃ
হাঁটতে হাঁটতে প্রায় গাছের কাছা কাছি চলে এসেছে রাতুল। ঐ তো গাছটা। গাছের দিকে তাকাতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। নিজের চোখ গুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কে? - গনেশ !!! আতকে উঠল রাতুল। ভয়ে গা শির শির করছে। স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কি মনে করে উল্টো ঘুরে দাঁড়াল। তাঁরপর বাড়ির পথে যেই পা বাড়াবে ঠিক তখনি তার মনে হল কেউ একজন তাকে ডাকছে!
-অ ভাই কৈ যাইতে?
রাতুল চমকে উঠে জোর গলায় বলল,,,,কে তুমি?
-ভাই আমি মন্টু। আমার বাড়ি নয়াগ্রামের শেষ মাতায়। ঐ আকালিমুরা থেনে মাইল খানিক দূরে। তুমার বাড়ি কৈ?
:ভাই আমার বাড়ি শংকরপুর। অনও আমার মামার বাড়ি যাইতাম আছলাম। এখন আর যাইয়ার না।
-তুমি আছার চাচার ভাইগ্না ন্যায় নি। ওত রাইৎকুর আম্ল যাইতে কিলা? ধুর মিঁয়া,চল আমার লগে। বেশি দরকার ওইলে কাইল যাই বায়।
প্রস্তাবটা খারাপ না। তাছাড়া তার তো কোন দরকারও নেই। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরে যাওয়া ও ঝামেলা। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে লোকটার সাথে রওনা দিলো। দুজনে গল্প করতে করতে এক সময় হিজল গাছের নিচে চলে এলো। এমন সময় হঠাৎ করেই মন্টু নামের লোকটা কাঁদার মধ্যে পড়ে গেল। রাতুল তাকে তুলতে গিয়ে চমকে উঠল।
এ কি এই লোকটার হাত এতো ঠাণ্ডা কেন? মানুষের শরীর কি এতো ঠাণ্ডা হয়?
রাতুল লোকটাকে তুলার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই পারছে না।

-কি গো তোমার কি হয়েছে? বলে পিছন থেকে কে যেন মেয়েলি কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো।
-কে? কে? ..... আপনি? বিষ্ময় নিয়ে জানতে চাইল রাতুল।
ঃআমি ওর বৌ। কি হয়েছে অর।
উত্তরের অপেক্ষা না করে, মহিলাটি লোকটি কোলে নিয়ে হিজল গাছের দক্ষিন পাশের ছোট্ট কুড়ে ঘরে প্রবেশ করল। ঘরের বারান্দায় বসে থাকা ষাটউর্ধ মহিলাটি দাঁত বের হাসছে।কোলের শিশুটি চোখ বড় বড় করে রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
কেমন যেন ভুতুড়ে পরিবেশ। পা একটু নড়ছে না। শরীল টা আস্তে আস্তে স্তব্দ হয়ে আসছে। মাথার উপর হাল্কা স্পর্শ অনুভব করতেই উপরে তাকাল রাতুল। হিজল গাছের ডালে ঝুলে আছে রক্তাক্ত খত বিক্ষত মেয়েটির দেহ। মুখ থেকে এখন ও ফোটা ফোটা রক্ত ঝরে পড়ছে।

তিনঃ
অতঃপর যখন তার ঙ্গান ফিরলো তখন রাতুল নিজেকে আবিস্কার করল ছোট্ট একটি ঘরে। পাশে বসে আছেন গ্রামের হুজুর, মামা সহ পরিচিত বেশ কয়েকজন লোক। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ জানতে চাইছে,কি হয়েছে রাতুল? কি হয়ে তোর?
রাতুল নির্বাক, নিস্তব্দ। গত রাতের ঘোর হয়ত এখন ও কাটেনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু রাতুল যে লোকটাকে তুলতে পারলো না তাকে তার বউ তুললো কিভাবে? গল্পটা খুব ভৌতিক। খুব ভাল লাগলো। শ্রদ্ধা জানবেন।
ruma hamid ছোট একটি গল্প , ভাল লাগল ।।শুভকামনা রইল ।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
Junayed Ahmed সুন্দর
Arif Billah চমৎকার রচনা। অনেক ভাল হয়েছে। শ্রদ্ধা জানবেন।
আল মামুন খান UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# গল্পটি পড়ে আনন্দ পেলাম। শুভকামনা রইলো। আমার লিখা পড়ার নিমন্ত্রণ রইলো।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব সুন্দর হল। শুভকামনা থাকল। "ভৌতিক সংখ্যায় আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ার আহ্বান জানিয়ে গেলাম। আমার পাতায় আসলে চির ধন্য হব হে প্রিয় কবিবন্ধু।"
আফরান মোল্লা খুব ভাল লাগলো॥

২৪ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী