একজন কাজী মামুন

বিজয় (ডিসেম্বর ২০১৪)

তাপস এস তপু
বিছানা থেকে উন্মত্ত পাগলের মত উঠে পড়লেন কাজী মামুন। পাশের টেবিলে রাখা স্বছ্ব কাঁচের গ্লাস কোনমতে হাতে নিয়ে ঘড়ঘড় করে পানি খেয়ে ফেললেন তিনি। অসম্ভব দ্রুততার দরুন পানি তালুতে এসে ঠেকল। ভীষন কাশি পাচ্ছে এখন! ঘুম ভাঙাতেই বুঝলেন কে যেন দেয়ালে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক গাঁথছে, ধুম-ধাম সেই শব্দে ঘুম ভেঙেছে তার। মেজাজ তিরিক্ষে করে বিড়বিড় করলেন কয়েকবার।

কাজী মামুন, পেশায় বড় ব্যাবসায়ী। আজকাল ঢাকা শহরে এক নামে সবাই তাকে চেনে। নিজেকে সবার সেরা ভাবতে পিছপা হন না কখনও। কোটি কোটি টাকার সম্পদ, ছেলে একজন দেশের বাইরে পড়ছে, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন মাস ছ'য়েক। এখন বাসায় একাই থাকেন। নিজেকে সুখী মানুষদের একজন ভাবেন সবসময়। এখন ব্যাবসার পাশাপাশি জনসেবা করেন। সামনের নির্বাচনে এম পি পদে ভোটও চাইবার আশা রয়েছে।

বর্তমানে অনেক বড় কাজে ব্যাস্ত! স্বাধীনতার ৪৩ বছর উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা দের পুরস্কার বিতরনী নিয়ে। পুরস্কার দিচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠান থেকে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর তার প্রতিষ্ঠান এবারই সুযোগ পেয়েছে দেশের সোনালী সুর্যোসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কৃত করতে। এজন্য কম তদবির করেন নি তিনি, বিশেষ শ্রেণীর সরকারী লোকজন, মন্ত্রনালয় কাউকে বাদ দেননি তিনি! একরোখা সেই ভাব এখনো জেগে আছে কাজী মামুন সাহেবের মনে। সবকিছুই চাই তার!

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল সময়ের মত এখনো পাঞ্জাবি গায়ে চড়ান কাজী মামুন। গায়ে সুগন্ধি আতর মাখেন। তবে সময়টা শুধু বদলে গেছে, দশতলা উচুঁ ভবনে অফিস। দামী গাড়ি, ঢাকায় সরকারী খাস জমিতে জবর দখল করে বাড়ি! কি নেই এখন তার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আজকের কোটি টাকার কানাকড়ি ছিলনা মামুন সাহেবের হাতে। তিন সন্তানের মাঝে সবচেয়ে ছোট মামুন। কারও সাথে মন খুলে কোন কথা বলেনি কখনও, দারিদ্র্যের মাঝে কিভাবে হঠাৎ এত বড়লোক হলেন তিনি সেটা তার ফেলে আসা গ্রামের কেউ ভেবে পান না। এখন গ্রামে খুব একটা যান না তিনি। মাঝে একবার গ্রামে গিয়েছিলেন। সেও আবার গত ঈদুল আযাহার সময়। গ্রামের এতিমখানার জন্য একটি ঊট কুরবানি দেবার জন্য। নিজের নামে একটা মাদ্রাসা দিচ্ছেন খুব তাড়াতাড়ি।
কাজী মামুন সাহেবের ফোন বাজছে! ক্রিং ক্রিং....
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম
-স্যার, আমি রতন।
-কোন রতন?
-ভুলে গেলেন, গতকাল আপনি অনেক গুলো ক্রেস্টের অর্ডার দিলেন। ওগুলা রেডি!
-তুমি আমার স্মৃতি শক্তি নিয়ে মশকরা কর!
-সরি স্যার, আমি তেমনটা বলিনি।
-তোমার বিল রেডি কর, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রাগলে চোখের সাদা অংশ লালচে হয়ে যায় কাজী মামুন সাহেবের!
ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে, গায়ে সুতির পাঞ্জাবি জড়ালেন। তার পছন্দের আতর গায়ে মাখতেও ভুললেন না তিনি।
গাড়ি চাপিয়ে এবার গন্তব্য সোজা মন্ত্রনালয়। পুরস্কার বিতরনী কোথায় হবে সেটা তো ঠিক করতে হবে।
মন্ত্রী সাহেবের কক্ষ, অনেকটা সাজানো, ব্যাস্ত মন্ত্রী!
ভেতরে এলেন কাজী মামুন, উচ্চস্বরে সালাম দিলেন
-আসসালামু আলাইকুম!!!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আরে মামুন সাহেব যে? বসুন। আপনার কথাই হচ্ছিল! আপনি তো অনেকদিন বাঁচবেন!
-কি সৌভাগ্য আমার!
-কি খাবেন ঠান্ডা না গরম!
-না স্যার এত ব্যাস্ত হবেন না, আমি কিছুই খাব না। এতদিন পর জাতির কিছু সুর্যোসন্তান দের পুরস্কৃত করতে পারছি, এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে!
-হ্যা। আপনার জন্য আগামি সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করেছি। বিজয় দিবসের আগের দিন। স্থান ইঞ্জিনিয়ারিং মিলনায়তন। ইতিমধ্যে আমাদের মন্ত্রনালয় থেকে এনলিস্টেড মুক্তিযোদ্ধা দের চিঠি দিয়েছি। তারা সবাই আসবেন। তবে যারা অসুস্থ বা মারা গেছেন তাদের ক্ষেত্রে তাদের পরিবার থেকে আত্বীসজন আসবেন।
-অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাস্ট্রপতি পেলে আরও ভাল হত স্যার!
-আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর আমি তো আছিই!
আপনাকে স্যার কি বলে যে ধন্যবাদ দেব।
-হাহা সেকি? জাতীয় বীর সম্মাননা পাচ্ছে এতে ধন্যবাদ দেবার কি আছে? আমরা হতভাগা জাতি, এখনো সব করতে পারছি কই!
-আজ আমি তাহলে আসি।
-হ্যা আসুন। (মন্ত্রীর সাথে করমর্দন করলেন কাজী মামুন)

কাজী মামুনের বুকের ছাতি অনেক বড়! না হলে কি করে এত বড় আয়োজন করতে পারেন! বলুন?
অফিস থেকে নেমে, ধীর পায়ে নিজ গাড়ির দিকে পা চালালেন মামুন সাহেব,
গাড়িতে বসে ড্রাইভার এফ এম রেডিওতে গান শুনছিল, গাড়িতে বসেই বিধর্মী গান শুনতে পেলেন কাজী মামুন। গাড়িতে গান শুনে মাথায় রক্ত চড়ে গেল তার। হাতের পাঁচ আঙুল মুঠো করে শক্ত করলেন তিনি!
এবার লাল চোখে সতর্ক করলেন ড্রাইভারকে, 'আবার যদি আমি এই কাজ করতে দেখি, তোমার চাকরী খতম! নাজায়েজ গানা বাজনা! '
ভয়ে চুপসে যায় ড্রাইভার। হতদরিদ্র লোক চাকরী হারাবার চেয়ে বড় কিছু ভয় আর পায় না।

আজ ১৫ই ডিসেম্বর, সেই কাঙ্খিত দিন, স্টেজ সাজানো হয়েছে নানা বর্নিল রঙে! পুরস্কৃত করা হবে জাতির সুর্যোসন্তান দের!
অতিথি হিসেবে আসছেন স্বয়ং রাস্ট্রপতি! আরও গন্যমান্য ব্যাক্তিত্ব। মন্ত্রী সাহেব তো আছেনই।
ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর একে একে বক্তব্য দিতে থাকলেন তারা।
রাস্ট্রপতি দেশের সবাইকে প্রকৃত দেশপ্রেমী হবার মন্ত্রনা দিলেন। দেশের জন্য একত্রে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। "নিজেদেরকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হতে হবে "
এবার শুরু হল পুরস্কার বিতরনী,,,,
একে একে নাম ডেকে দেয়া হচ্ছিল পুরস্কার
কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে একজন বৃদ্ধ ছুটে এলেন স্টেজে, তাকে ধরে রাখতে হিমশিম খেয়ে গেছে যুবক বয়সের এস এস এফ সহ নিরাপত্তারক্ষীরা।
স্টেজে উঠে তার প্রথম কথা "রাজাকারের বাচ্চা "
হাত উচিয়ে লোকটি মারতে গেল কাজী মামুন কে!
উপস্থিত সবাই অবাক বনে গেলেন এ ঘটনায়।
এস এস এফ সদস্য রা তাকে ধরে না ফেললে হাতের জুতো প্রায় ছুড়ে দিয়ে ফেলেছিলেন বৃদ্ধ!
উপস্থাপক মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বললেন। এলোমেলো হয়ে গেল কিছু মুহুর্ত! কেউ কথা বলছে না।
রাস্ট্রপতি কি বলবেন? তিনি সাময়িক এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ।
অনুষ্ঠান শেষ! সবাই চলে যাচ্ছে, বৃদ্ধ কি বলল, কেউ তা একবার ভেবেছেন?
কাজী মামুন সাহেবের মত রাজাকার এখনো বেচেঁ! উর্দি বদল করে কোটি টাকার মালিক।
সব একসময় বদলে যাবে, দুদিন পর সংবাদের পাতাও ভুলে যাবে এ ঘটনা।
শুধু দেশ ক্ষমা করবে না। দেশের বিবেক জাগ্রত। আমরা শুধু মৃত লাশ। জেগেও মৃত আমরা।



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আর কিউ জোন্স nice
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ :) আর কিউ জোন্স
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মাহমুদ হাসান পারভেজ আপনার গল্প - আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে। সমসাময়িক চিত্রটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়- আমাদের নৈতিক অবস্থান। কিভাবে আমাদের সত্যিকার বিজয় হবে? আরো একটা যুদ্ধ তো সম্ভব নয়! তবে কলমের যুদ্ধটা চলতে থাকুক। একদিন বিজয় আসবেই। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ ভাইয়া, লেখনী হোক নব্য হাতিয়ার!!
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৫
ruma hamid খুব সুন্দর লেখনি ও ভাবনা । শুভকামনা রেখে যাচ্ছি ।
ধন্যবাদ। রুমা আপু। দোয়া রাখবেন।
ভালো লাগেনি ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪
রিক্তা রিচি অসাধারণ উপস্থাপন .
ভালো লাগেনি ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। ভীষন উৎসাহিত হয়েছি।
ভালো লাগেনি ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪
রুহুল আমীন রাজু সুন্দর গল্প ....ভালো লাগলো . (আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো )
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ আপনাকে। অবশ্যই।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
সৃজন শারফিনুল অসাধারণ ভালোলাগা ও ভোট রেখে গেলাম। আর, আমার পাতায় আমন্ত্রন রইলো। শুভ কামনা..।
ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
ভোট করার জন্য আরো এক বার ধন্যবাদ।সৃজন শারফিনুল ভাই।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
আখতারুজ্জামান সোহাগ দুঃখজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন গল্পে। খোলশ পাল্টে অনেকেই এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক বনে গেছেন। শুভকামনা গল্পকারের জন্য।
আখতারুজ্জামান সোহাগ, একদমই ঠিক বলেছেন। সে দিকটিই তুলে ধরতে চেয়েছি। আপনাকে ও ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
তাপস এস তপু গল্পটি সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।কাল্পনিকচরিত্র হলেও বাস্তবিক কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

০৮ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪