ধাঁধাঁ

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

তাপস এস তপু
  • ১০
  • ৪৯
বারান্দায় এসে ফস করে দেয়াশলাই টা জ্বালালো রাজীব; ঝিমঝিমে একটা ভাব এসে গিয়েছিল এতক্ষন, সিগারেটটার মাথায় আগুন জ্বালিয়ে একরাশ ধোঁয়া এক মুহূর্তে ছেড়ে দিল সে, রাত ৩টায় উত্তরপূর্ব কোণ থেকে মৃদু একটা বাতাস আসছে, বাতাসের হালকা বেগে ধোঁয়া গুলো আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে;
এতরাত অবশ্য সে জেগে থাকতে পারে না, একটা হালকা তন্দ্রা ভাব আসছে মাঝে মাঝে, তাই বাইরে এসে সিগারেটটা ধরিয়েছে রাজীব।
কাল অফিসে একটা ফাইল জমা দেবার কথা, সেটা নিয়ে কিছুটা ঘাটাঘাটি করছিল রাজীব, একটা গার্মেন্টস কোম্পানীর আন্যুয়াল বিলের ফাইল। প্রায় শেষ হয়ে এসছে কিন্তু হিসেব টা শেষতক মিলছে না, আবার একটু দেখতে হবে,
রাজীবের ফ্লাটের পাশেই বেশ কয়েকটি ফ্লাট ঘিরে আছে, মুখোমুখি করে সবগুলো ফ্লাট সাজানো, কেউ কাউকে এতটুকু জায়গা ছেড়ে দেয়নি, বেশ কাছাকাছি গায়ে গায়ে লেগে আছে উঁচু বাড়িগুলো। হাত বাড়িয়ে ধরা যায়!
হটাত পাশের ফ্লাট থেকে একটা বাচ্চার কান্না ভেসে এলো, বাচ্চার কতই বা বয়স? এক বছরের বেশী হবে না, তার পাশের ফ্লাটে এক ছেলে মনযোগ দিয়ে পড়ছে, কি যে পড়ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না রাজীব, কারন মাঝেমাঝেই সে মোবাইলে টেপাটেপি তে ব্যাস্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে তার চোখের চশমা বেশ পুরু, পাশে অনেকগুলো বই।
সিগারেটটা শেষ করে ফিল্টারটা বিনে ফেলে দিল রাজীব, এবার কিছু একটা করতে হবে! ফাইল টা গোছাতে না পারলে এবার চাকরী আর থাকছে না!
রুমে এসে বেসিন থেকে পানির এক ঝাপটা দিল মুখে, ঘরের আলোটা নিভিয়ে ল্যাপটপের শাটার টা তুলে দিল রাজীব, ল্যাপটপের ডিসপ্লের আলো কমিয়ে দিল রাজীব, এবার মনোযোগ দিয়ে কাজে লেগে গেল আবার, ভুলগুলো ঠিক করে আবার ডাটা এন্ট্রি করা শুরু করলো সে…
কতক্ষন হয়েছে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারনি রাজীব, চোখের সামনে ল্যাপটপের ডিজিটাল ঘড়ি দেখার কথা মনে করতে পারেনি সে, তবে একটা বিষয় এতক্ষন খেয়াল না করে থাকলে ও এখন খেয়া না করা ছাড়া হচ্ছে না, পাশের ফ্লাটে কেউ একজন বারবার ঘরের আলো জ্বলাচ্ছে আর নেভাচ্ছে, ঠিক অনেকটা বিয়ে বাড়ির মরিচবাতির মত, কাজের চাপে ইগ্নোর করে গেলেও এখন আর করা যাচ্ছে না,একবার ভাবল কোন বাচ্চার কাজ! ঘড়িটা এবার দেখল রাজীব ৪টা বেজে ২মিনিট।কিন্তু এত রাতে কোন বাচ্চা কি এভাবে লাইট অন-অফ করে?
পায়ের স্যান্ডেল টা গুজে উঠে দাঁড়াল রাজীব, কিছুটা উঁকি মেরেই দেখতে পেল, জানালার নিচে পর্দা টানা, আলো উপর দিয়ে আসছে, বাইরে থেকে সুতরাং বোঝার উপায় নেই, এত রাতে আর কি করা যাবে, তাই নিজের জ্বানালার পর্দা টেনে দিল রাজীব। তবে আলো এখন আর জ্বলছে না!
আজ অফিস থেকে ফিরেই সিগারেটটা ধরাল রাজীব, বারান্দায় চেয়ারে বসেই দেখল পাশের ফ্লাটের মোটা চশমা পরা ছেলেটা ফোনে বেশ হাসিখুশি মুখে কার সাথে কথা বলছে! নিজেও ভীষন খুশি রাজীব, আজ তার বেতন বেড়েছে! গতকাল যে শিশুটির বয়স এক বছর ভেবছিল আজ তাকেও দেখতে পেল রাজীব, তবে বয়স চার হবে!
মধ্যরাতে হটাত ঘুম ভেঙ্গে গেল রাজীবের, কি কারনে ভাঙল? কোন স্বপ্ন দেখেনি সে! তাহলে? হ্যাঁ, এবার বুঝতে পেরেছে রাজীব, পাশের ফ্লাটে আলো জ্বলছে আর নিভছে! এবার অবাক না হয়ে পারল না রাজীব, জানালা দিয়ে বার কয়েক দেখার চেষ্টা করল কিন্তু কিছুই দেখতে পারছে না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রাজীবের ঘড়িতে সময় দেখল ৪টা ১ মিনিট, সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিল রাজীব এবার বারান্দায় এসে সিগারেট ধরাল! এভাবে প্রতি রাতে জেগে গেলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে ভীষন অসুবিধা হয়, কাল সকালে লাইটের ব্যাপারে অভিযোগ করবে বলে ঠিক করল রাজীব, এভাবে আর পারা যাচ্ছে না!...
বাইরের কোলাপ্স গেটে এক দাড়োয়ান দাঁড়িয়ে ছিল, রাজীবকে দেখে বলল কাকে চান?
আমি তিনতলায় যাব,
ওই যে বাইরে দেহেন বেল আছে, তিনতলা লেখা, ওই ডা চাপেন!
রাজীব দেখতে পেল লাল মার্কার পেন দিয়ে শুধু ওই সুইচের নীচেই লেখা তিন তলা, দেখে মনে হচ্ছে স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে এমন বাচ্চার হাতে লেখা! দু‘বার বেল চাপল রাজীব,
বেশ কিছুক্ষন পর উপর থেকে একটা চাবি পড়ল ঠিক রাজীব যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তার ডান দিক বরাবর, দারোয়ান গেট খুলে দিল, এবার সিড়ি বেয়ে তিনতলায় এলো রাজীব, কালো করে কোকড়া চুলের এক লোক গেট খুলে দিয়ে বলল, ‘আসুন’ এরপর সোফা দেখিয়ে বলল। ‘ওখানে বসুন’ কি খাবেন?
না, আমি কিছু খাব না! আমার… (কথাটা শেষ করতে দিল না, বলল)
বসুন দেরী হবে, মিনিট বিশেক বসে আছি আমি একা এদের ড্রয়িং রুমে, কেউ কি নেই এখানে, কোন সাড়াশব্দ নেই, নিস্তব্ধ নিরবতা।
কিছুক্ষন পর স্লিপিং গাউন পড়া একজন বৃদ্ধ এলেন খুক খুক করে কাশি দিতে দিতে, লোকটার চুল লম্বা, সাদা-কালো মেশানো চুল কাঁধ পর্যন্ত এসে নেমেছে, আমি লোকটাকে দেখে উঠে দাঁড়ালাম। লোকটা শুধু হাত নেড়ে আমাকে বসতে বলল। আমি বসলাম, আমাকে দেখে এবার সে বলল, কি সমস্যা?
(আমি বললাম) আসলে কয়েকদিন ধরেই আপনার বাসা থেকে আমার ঘরে আলো চলে আসে, শুধু তাই নয় আলোটা জ্বলে আর নেভে! রাতে আমার ঘুমে একটু সমস্যা হয়, বলতে গেলে ঘুমই হয়না, আলোটা যদি না জ্বালানো হয় তবে খুবখুশী হতাম।
আমার অথা শুনে কয়েকবার খুক খুক করে কেশে গেলেন তিনি, এর মাঝে কালো মতন লোকটা আমাদের চা দিয়ে গেল, মনোযোগ দিয়ে দেখলাম চা দেয়া কাপগুলোর দুটোই একদমই নতুন কেউ চা খায় নি সেখানে,
আমার মনোযোগ ভেস্তে দিয়ে ভারী গলায় বললেন, দেখুন রাতে আমি আমার কিছু লেখা লিখি তাতে আমার আলো জ্বলাতেই হয়, কিন্তু বাচ্চাদের মতআলো আমি জ্বালাই না! আমি রাতে লিখি দিনে খুব একটা উঠিনা, আমার কাজের লোক সব দেখাশোনা করে,
লোকটার কথা শুনে আমার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল, (মনে মনে বললাম, আপনি হয়ত না ঘুমান বাকী সবার কি ঘুমের দরকার নেই!)
লোকটা আমার দিকে মুচকি হেসে বলল, কি আমাকে গালি দিচ্ছেন?
আমি হেঁসে বললাম না। আপনি এমনটা কেন ভাবছেন?
আমি না ভেবে পারি না, কারন আপনার মত আরো যারা আপনার ফ্লাটে উঠেছিল তাড়াও আমার মত একই কথা ভাবত!
না, না… কি যে বলেন। আমি এমনটা নই।
না হলেই ভাল, দেখি আপনার জন্য কি করতে পারি!
(কৌতূহল নিয়ে বললাম) আপনি লেখেন বলছিলেন? আপনার নাম তো জানা হলো না!
হা হা হা… হাসি দিয়ে লোকটা বলল, আমার নাম পূর্ণ কেশর গাঙ্গুলি। খুঁজে দেখবেন, আমার লিখা বই পেয়েও যাবেন, আপাতত আপনাকে দিতে পারছি না, আমার কাছে আমার লেখা বইগুলো একটা করেই আছে। নিন চা খান, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আমি চা খেলাম, বেশ নেশা ধরিয়ে দিল চা!
পরদিন রাতে, যথারীতি আমার ঘুম ভেঙ্গেছে, ঘড়ি দেখলাম ৪টা ৩মিনিট, আমি অবাক না হয়ে পারলাম না, প্রতিদিনই আমার এমন হচ্ছে, কিন্তু আজকে যা দেখালাম তা অদ্ভুত! পাশের কোন ফ্লাটে আলো জ্বলছে না। এমনতো কখনও দেখি না, তবে ভালো কথা আমার পাশের ফ্লাটের আলো আসছে না, সেটা বন্ধ।
এভাবে ভালই যাচ্ছিল, বেশ ক’দিন কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এটাই অভিযোগ করার পর থেকে আর কোন ফ্লাটের আলোই আমি দেখতে পাচ্ছি না। তাই একদিন ছুটির সকালে মোটা চশমা পরা ছেলেটার বাসায় গেলাম, আমাকে দেখে তার মা বলল, আপনি পাশের ফ্লাটে থাকেন?
জ্বী, আমি বেশীদিন হয়নি এসেছি, কিন্তু আমাকে ছেলেটা যা বলল তাতে আমার কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ল! প্রতি রাতেই সে আলো জ্বালিয়ে পড়ে! তাহলে আমি কেন দেখতে পাই না?আমার সাথে কি হচ্ছে?
আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আমার পাশের ফ্লাটে কি কোন লেখক থাকেন?
ছেলেটা বলল, লেখক! কি নাম?
বললাম, পূর্ণ কেশর গাঙ্গুলি।
ধুর! কি যে বলেন? এমন নাম তো দুরের কথা! এখানে আমার জানামতে লেখকই থাকেন না, আমি এখানে ছোটবেলা থেকেই আছি, সুতরাং কেউ হলে নিশ্চই জানতাম।
আমার মাথা ঘুরঘুর করতে লাগলো, কে? থলে আমি কার সাথে ওইদিন চা খেলাম কথা বললাম!...।
আজ রাতে আমার ঘুম ভাঙল, একটা কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি, একটা বাচ্চা কাঁদছে, বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, বারান্দায় এসে দেখলাম পাশের ফ্লাটে মোটা চশমা পরা ছেলেটা পড়ছে। আমার ঘরে তাকালাম দেখি একটা অদ্ভুত আলো জ্বলছে আর নিভছে!...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু গল্পের নামটা সার্থক হয়েছে। কারণ গল্পটায় একটা মস্ত ধাঁধাঁ আছে। পাশের ফ্লাটে আলো জ্বলছে আর নিভছে দেখে অভিযোগ করা হলো। কিন্তু তারপর আর লাইট জ্বলে না। আবার যে লোকটার সাথে কথা বলে আসা হলো খোঁজ নিয়ে দেখা গেল যে তার মত লোক ওখানে থাকেই না। ভৌতিক গল্প খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনি যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন তাতে আমি ভীষন আনন্দিত। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন "
অবশ্যই দেখব। আপ্নেক্বধন্যবাদ।
মাহমুদ হাসান পারভেজ ভালো লেগেছে এবং ভৌতিক ধাঁধাঁটা নিয়ে ভাবছি।ধাঁধাটা থেকে অনেক গল্প বের হচ্ছে ভেতরে ভেতরে। শুভকামনা সবসময়।
ধন্যবাদ। সুন্দর মন্তব্যর জন্য। দোয়া রাখবেন আমার জন্য।
নুসরাত জাহান ভালো লাগল। আর একটু গোছালে ভালো হত। :)
ভবিষ্যতে লেখাগুলোতে চেষ্টা করব। ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
ruma hamid ভালো লাগল ।লেখা চালিয়ে যাও ভাইয়া ।শুভকামনা রইল ।
আল মামুন খান সাবলীল লিখাটিতে মুগ্ধতা রেখে গেলাম। আমার লিখাগুলো পড়বার আম্নত্রণ রইলো। শুভকামনা নিরন্তর।
আপনাকেও ধ্ন্যবাদ। অবশিয়ই দেখব।
অনন্তের আগন্তুক ভালো লাগলো গল্পটি.. আমার কবিতা পরার আমন্ত্রণ রইলো.
ধন্যবাদ আপনাকে, নিশ্চই।
তাপস এস তপু লেখাটির বিষয়ে মন্তব্য আশা করছি। সবাইকে অগ্রীম ধন্যবাদ।

০৮ অক্টোবর - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪