জুতো জোড়ার ডান পায়েরটি ডান ও বাঁ পায়েরটি বাঁয়ে ক্ষয়ে এসে একটু হেলে থাকছে। বহুদিনের অত্যচার, রোদ বৃষ্টি সয়ে আজ এই অবস্থা। বাটা থেকে কেনা হয়েছিল দু বছর চার মাস আগে। তারিখ টা মনে আছে কারণ অফিস থেকে কিছু টাকা পাওনা বিল হিসেবে এসে পড়েছিল। তিনি অবশ্য কিনতে চাননি।চেয়েছিলেন গুলিস্তান থেকে বা ফার্ম গেট থেকে সস্তা দরের একজোড়া নিতে। স্ত্রীর বাধার মুখে আর পারা গেলনা। কিপটেমি আর কত করবে বলে নিয়ে গেলেন বাটার দোকানে। দু হাজার দিয়ে নিতে হল। দাম বেশী হলেও আরামদায়ক। এখন আবার সেই কিপটেমির অপবাদ মাথার উপর আসছে। কিন্তু অপবাদ ঘুচানোর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেননা। মাসের বেতন কথা দিয়ে আসে আর কোথায় যায় ঠিক বঝা যায়না। জয়েল আইচের যাদু যেন। বিদ্যুত, গ্যাস, পানি, মুদীদোকানের বাকী, পাওনাদার, ডিশের বিল, পেপার বিল, কোচিং ফি, স্কুলের বেতন সব দয়ে পাঁচ তারিখেই হাত ফাঁকা। জোবায়ের সাহেব, নইলে দত্ত বাবু একেক মাসে একেক জনের কাছে বিশেষ দরকারে ধার করতেই হয়। বাড়িটা নিজেদের বলে রক্ষা। কতবার ভেবেছেন এইবার পাই পাই হিসেব করে খরচ করবেন। প্রয়োজনে সবার বায়নার উপর স্টীমরোলার চলবে। কোথায় কি? প্রতি মাসে কোন না কোন দাওয়াত, ডাক্তার ঊটকো প্রয়োজন থাকছেই।এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। গতকাল রাতে বিয়ের নিমন্ত্রন ছিল। সকালে তাই জুতোজোড়াকে চলনসই রুপ দেয়ার জন্য হাতে নিয়ে বাজারের তালিকা মুখস্ত করে ব্যগ হাতে বেরিয়ে গেলেন।বন্ধের সকালে মুচি যখন পালিশ করছিল তখন পিলারে ছায়ায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলেন। ঈদের অপেক্ষায় থেকেও লাভ হচ্ছেনা। বোনাস পেয়েও পাল্লা দেয়া যাচ্ছেনা। কারণ গত বারের রোজার সময়টাতেই ভেবেছিলেন এ জোড়া ফেলে দেবেন। কিন্তু ঈদ বাজার শেষে আর মনের জোর রইলনা। দেখা যাক পরেরবার বলে ভুলে গেলেন। রোজ টঙ্গী থেকে মতিঝিলে অফিস করতে আসেন। ট্রেনে আসেন কমলাপুর স্টেশন তারপর বাকী টুকু হেঁটে।ফিরেন সন্ধ্যা সাতটার ট্রেনে। লোকাল ট্রেন। ভিড় থাকে তবু যানজটের খপ্পরে ত পড়তে হয়না। নিজে সবসময় আপস করতে করতে পাপোষ হয়ে গেছেন। একেবারে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে বানানো। সবাই যেতে আসতে পাড়িয়ে জুতোর ময়লা পরিষ্কার করে যাচ্ছে।উপকার করছি ভেবে ভেবে খুশি মনে চালিয়ে যাচ্ছেন। ইদানিং তার উপলব্ধি হচ্ছে। তার এই ত্যাগের মুল্য কারো কাছেই নেই। সবাই ভাবছে তিনি অলস। যতটুকু করতে পারতেন করছেননা এবং করেনওনি। নিজেকে তালের রস নিংড়ে ফেলে দেয়া তালের আটি মনে হয় মাঝে মাঝে। কদিন পর শাস বেরুলে এক কোপে দু ভাগ করে সেটাও নিয়ে যাবে। পাশের বাড়িতে বিশাল টিভি দেয়াল জুড়ে ঝুলে থাকছে। ছবি নাকি একবারে জ্যান্ত মানুষের সমান। তার উত্তাপ কদিন ধরে টের পাচ্ছেন। মেয়ের নাকি একখানা কম্পিউটারের প্রয়োজন ছিল। অফিস লোন নিয়ে কিনে দিয়েছেন। এখন ছেলের আবদার তার একখানা ট্যাব আর ডিএসএলআর ক্যামেরা লাগবে। জবাব দেননি ঝিম ধরে ছিলেন। টুশনের টাকা জমিয়ে নাকি দামের অর্ধেক জোগাড় করে ফেলেছে। বাকী টাকা দিতে হবে। কি করা যায়। টানা টানির এই ভারসাম্য খেলা কিভাবে সামলাবেন বুঝে উঠতে পারেন না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হটাত মাথা ঝিম ধরে যায়, বুকটা একটু ব্যথা করতে থাকে বাঁ পাশে, কান যেন হটাত কেউ চেপে ধরল।পড়ে গেলেন। তার পকেটের মোবাইলটিতে নাম্বার খুঁজতে চেষ্টা করে একজন। মোবাইলটাই বন্ধ হয়ে আছে। কাল রাত থেকেই বন্ধ। ভেবেছিলেন আজ ফেরার পথে মিরনের কম্পিউটার ও মোবাইল সারাইয়ের দোকানে দেখাবেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শেখ শরফুদ্দীন মীম
আর একটু বড় হলে আরো ভালো লাগত। শুভেচ্ছা রইল। আমার ছোট্ট কবিতাটুকু সময় করে পড়বেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।