অন্ধকার রাত। ফতেয়াবাদ রেল ষ্টেশনের পাশের পুকুরের ঘাটে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। গল্পটা রুবেল বলা শুরু করে। চন্দনাইশের কানুনগো পাড়া থেকে যাত্রি নিয়ে রিক্সাওয়ালা আলম যায় ফতেপুর। সন্ধ্যায় রওইয়ানা দিয়ে পৌঁছুতে রাত। বাজার হয়ে মূল সড়ক দিয়ে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। তার চেয়ে বনপাড়ার ভেতরে বিলের পাশের রাস্তা ধরে গেলে অনেকটা সময় বাচেঁ। সেই দিকেই রিক্সা ঘোরালো আলম। বাড়িতে আজ ইলিশ মাছের তরকারি। দুপুরে বাজার করে দিয়ে এসেছে। সস্তায় পেয়ে গেল। অনেকদিন পর ইলিশের ঘ্রান পাবে ভেবে মনটা খুশি ছিল। এইভাবে কি দিন যায়। বয়স হলে কিভাবে রিক্সা দিয়ে কামাই হবে বুঝতে পারেনা সে। এক সাথে অনেক গুলো টাকা যদি পাওয়া যেত। বাজারে একটা মুদি দোকান দিয়ে দিন চলে যেত। ভেবে ভেবে রিক্সা চালাচ্ছিল। আকাশে গোল চাঁদ। মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। চাঁদের আলোয় সব মোটা মুটি পরিষ্কার দেখা যায়। পুবে পশ্চিমে লম্বা রাস্তা বহূদূর পর্যন্ত দেখা যায়। বিলে অবশ্য তেমন পানি নেই এখন। চাপটা অনেকক্ষণ ধরে চেপে রেখেছিল। আর পারা যাচ্ছেনা। রাস্তায় রিক্সা দাঁড় করিয়ে উত্তর দিকের শুকনো যায়গায় শরীরটা ভার মুক্ত হয়। ঘামে শরীরটা ভিজে জব জব করছে। রাস্তার দক্ষিনে পানি আছে। হাত মুখ তা একটু ধুয়ে নিতে চাইল। পানিতে চাঁদ আর মেঘের ছবি মৃদু কাঁপছে। কচুরিপানা সরিয়ে দিতে গিয়ে হাতে সুতার, জালের মত কি যেন হাতে বাধল। তুলে ফেলতে গিয়ে টের পেল কোথাও আটকে আছে। টানতেই কাপড় জড়ানো একটা মানুষের শরীরকাছে এল। লাফ দিয়ে দূরে সরে গেল। ঘাম ছুটছে। দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল। লম্বে চুল আর কাপড় দেখে বোঝা গেল শাড়ি পরা মেয়ে। রিক্সা থেকে হারিকেন টা নিয়ে মুখ দেখতে গেল। অনেক গয়না গায়ে জড়ানো। কে কোথায় আছ। এখানে একটা মানুশের লাশ। কেউ নেই। চন্দ্রালোকিত এই রাতে যেন পৃথিবীতে সে ছাড়া আর কোন জীবিত মানুষ নেই। গ্রামে গিয়ে খবর দেবে এই ভেবে রিক্সায় উঠে পড়ে। কিন্তু চকচকে গয়নার কথা মনে পড়ল। একটা নিলে কি এমন ক্ষতি। তার ত আর কোন প্রয়োজন নেই। রিক্সা থেকে নেমে আবার লাশের কাছে আসে। গলার হারটা খুলে নেয়। খুলতে খুলতে মনে হয় একটা নেয়ে আর সব নেয়া একই কথা।দিন তার বদলে যাবে। অভাব দূর হবে। পাকা ঘর হবে। দোকান হবে। নাকের, হাতের, গলার সব তো নেয়া হল। কিন্তু এই আংটিটা যে খুলছেনা। অনামিকায় পরা আংটিটা। ছেড়ে গেলে হয়। কিন্তু এই একটা থেকে কি হবে। আঙ্গুলে এটেঁ আছে। একটাই ঊপায়।
রিক্সার প্যডেলে পা রাখতেই তার কেমন ভয় ভয় লেগে উঠে। পুটলীটা কোমরে আছে কিনা দেখে নিয়ে। জোরে ছুটতে থাকে। কে জনে পেছনে আসছে। ফিরে তাকিয়ে দেখে না কেউ নেই। মনে হল কত দিন ধরে চলেছে। বিশ্বম্ভরপুর জমিদার বাড়ির কাছে এসে দেখলেজমিদার বাড়িতে অনেকে ঢুকছে। একটা ঘোড়ার গাড়িও ঢুকল। পানির প্রচন্ড পিপাসা। মনে সাহস জাগাতে তৃষ্ণা যেন বেড়ে গেল। সেও ঢুকে পড়ল বাড়িটে। দোতলা পুরোনো দিনের মলিন সাদা বাড়ি। কে যে কোথায় গেল। কাকে চাই। পেছন থেকে কেউ জিজ্ঞেস করল। বয়স্ক লোক হাতে লাঠি। পানি খাব। এই ঘরে বসুন। ঘরে মোমদানিতে মোম জলছে। সেই আলোয় দেখা যায় সাজানো গোছানো ঘর। ভারি আসবাব পত্র। দেয়ালে পেইন্টিংস। একজন মহিলার ছবি ঝোলানো আছে। কোথায় যেন দেখেছে আলম। আরে সেই মহিলার মত মনে হচ্ছে। পিতলের গ্লাস হাতে একজন মহিলা ঢুকলেন। জল নিন। হাত বাড়িয়ে নিতে গিয়ে লক্ষ করে আলম মহিলার অনামিকা নেই। আপনার হাত... কে করল? কে যেন পেছন থেকে জাপ্টে ধরে বলল তুমি। আমি চমকে তাকিয়ে দেখি রুবেলের বন্ধু সৌরভ। দু জন মিলে এই কান্ডটা ঘটালো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
গল্পের পটভূমি খুব ভাল ....প্রকাশ ভজ্ঞিতে কারিসমা রয়েছে ....লেগে থাকলে হবে....অনেক ধন্যবাদ রিয়াজকে......
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব
সুন্দর হল। ভাল লাগল।শুভকামনা।[চলতি সংখ্যায় আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আমার পাতায় গেলে ধন্য হব হে প্রিয় কবিবন্ধু।]
মাহমুদ হাসান পারভেজ
এটি সেইসব প্রচলিত গল্পগুলোর একটি যেগুলো বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে বিভিন্ন নাম চরিত্র নিয়ে বা ভিন্ন ভিন্ন স্থানের গল্প যেটা বন্ধুদের সাথে বা পারিবারিক কোন আড্ডায়- সীমহিীন লোডশেডিং এর ঘুটঘুটে অন্ধকারে- অলস গতিতে চলতে থাকা কোন রাতের ট্রেনের কামরায়- নিরুপায় কণের সাথে ‘সম্বন্ধ করে বিয়ে’তে আটকে পড়া বরের উসখুস এড়াতে বলা গল্প । যেখানে আমি গল্পটিকে শুনেছিলাম এইভাবে যে - কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে তাকা যুবকটি যখন জানতে চায় যে তার এ অবস্থা কে করেছে আর তার উত্তরে সে শুধুই শুনতে পেল ‘’তুই করছস’’ ...........................চমৎকারভাবে মুখে মুখে চলা সেই গল্পটিকে আপনি লেখনীতে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন কথকের ভুমিকায়। নিশ্চয়ই এটি ভালো উদ্যোগ। ভালো হয়েছে। তবে আমার শোনা সেই গল্পটি কিন্তু আমাকে এর চেয়েও বেশী ’ভয়’ পাইয়ে দিয়েছিল আর তখন ভয়ে বুকটা ‘ছ্যাৎ’ করে উঠেছিল।
শুভকামনা আপনার জন্য। ভোট দিয়ে গেলাম।
আফরান মোল্লা
এরকম ভাবে ঠিক এই গল্প দিয়েই আমাকে আমার এক মামা ভয় দেখিয়েছিল।গল্প কবিতায় অন্যের কোন লেখা কিংবা লোকমুখে শুনা গল্প পাঠানোর কোন নিয়ম নেই(অন্তত আমি যেটুকু জানি)।তাই ভোট দিতে পারলাম না।দুঃখিত . . . .
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।