সেই কবে সূর্য অস্ত গেছে - দিগন্তের আকাশে মেঘে মেঘে লাল আবিরে অপূর্ব এক মায়া যেন ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে ।
তারপর ঝুপ করেই ঠিক নেমে আসবে অন্ধকার । অজ পাড়া গাঁয়ে রাত যে কেন খুব তাড়াতাড়ি নামে তা নিয়ে বোধ করি কোন গবেষনা কখনও হয়নি, এই ঝুপ করে নামা রাত নিয়ে কোন গল্প উপন্যাস বা কবিতাও সুজাতার চোখে পড়ে নি । কেউ লিখে নি এমন কথাতো বলা যায় না, হয়তো লিখেছে কেউ কোথাও, কিন্তু এই দুনিয়ার সব কি আর নখদর্পনে রাখা যায় না তা আদৌ সম্ভব ।
আজ দুপুরেই সুজাতা এই গ্রামে এসেছে স্থানীয় সরকারী স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ডাক্তার হিসাবে । সুজাতার স্বামী আজমও ডাক্তার, কিন্তু তার পোষ্টিং জেলা শহরে । গ্রামের ক্লিনিকে আসা না আসা নিয়ে অনেক টানাপোড়েনে সুজাতা ক'দিন খুব ভুগেছে , শেষ পর্যন্ত আজমের কথাতেই রাজী হয়েছে । আজম বলেছে, কয়েকমাস কষ্ট করে শহরে আসা যাওয়া করে চাকরি চালিয়ে যেতে, তারপর জেলা সিভিল সার্জনকে ধরে টরে জেলা শহরে ট্রান্সফার করে নেবে ।
এই কয়েকমাস সুজাতাকে গ্রাম শহর করেই কাটাতে হবে । এই ক্লিনিকের ডাক্তারের জন্যে নির্ধারিত বাসাটি এর মধ্যে দারোয়ান জুমন লোক লাগিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন করে দিয়েছে । সপ্তাহে দু'তিনদিন ক্লিনিক করে শহরে চলে যাবে- এমনই পরিকল্পনা করেছে আজমের সাথে ।
ক্লিনিকের একজন নার্স ও আছে । দেখে মনে হয়, বড্ড চাপা স্বভাবের মানুষ । খুব কম কথা বলে । তবে দেখে মনে হয় ভাল মানুষ । পাশের গ্রামেই পরিবার নিয়ে থাকে- এমনই বলেছে জুমন ।
ডাক্তারের অবর্তমানে এই নার্সই নাকি ক্লিনিক দেখাশোনা করে । আজ বিকেলে শুধু দুইজন রোগী এসেছিল । দুইজনই সর্দি জ্বরের রোগী । স্থানীয় ইউনিয়ন কাঊন্সিলের মেম্বার এসেছিলো দেখা করতে । সুজাতা তাকে খুব একটা পাত্তা দেয় নি ।
দুপুরে জুমন তার বৌয়ের হাতের রান্না করা সাদা ভাত ও মাছের ঝোল এনে দিয়েছে । তাই অমৃতের মত লেগেছে সুজাতার -; প্রচণ্ড খিদে লেগেছিল । খিদে যে কি জিনিস তা সে আজ বেশ উপলদ্ধি করেছে । বিকেলেও জুমন খাবার নিয়ে আসবে বলে গেছে ।
বিকেলে ক্লিনিকের সামনে খোলা মাঠে ঘাসের উপর চেয়ারে বসে বসে সুর্যাস্ত দেখলো আনমনে । তারপর আর উঠতে ইচ্ছে করছিলো না । ভাবছিলো জুমনকে ডাকবে একটু চা করে দেবার জন্যে । ভাবতে ভাবতেই - বাহ - অবাক কাণ্ডতো - একটা অল্প বয়সী মেয়ে একহাত ঘোমটা মাথায় সামনে দাঁড়িয়ে একটা চায়ের কাপ হাতে ।
সুজাতা একটু অবাকই হলো । এই কি জুমনের বৌ ! এতো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে ! পাড়া গাঁয়ে তাই হয় - জানে সুজাতা । চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে - সুজাতা জিজ্ঞেস করল মেয়েটিকে - কি নাম তোমার ? তুমি কি জুমনের বৌ । একহাত ঘোমটার আড়াল হতে মেয়েটি ফিস ফিস করে কি যে বললে তা সুজাতা ভাল করে বুঝতে পারল না - তবে ঘোমটার ফাঁকে মুক্তোর মত সাদা দাঁতের মুচকি হাসিটা তার চোখ এড়াল না । বাহ - মেয়েটির হাসিতো অপূর্ব !!
এই ভাবতে ভাবতেই মেয়েটি লম্বা লম্বা পা ফেলে জুমনের বাড়ির দিকে চলে গেল । মেয়েটি চলে যাবার সাথেই সাথেই সুজাতার মনে হলো অন্ধকার যেন গাঢ় হয়ে চারিদিকে নেমে এলো হুড়ুস করেই - সুজাতার গা ছম ছম করে উঠলো, একটু ভয়ে ভয়েই যেন সে চায়ের কাপে চুমুক দিলে।
সে মেডিকেলের ছাত্রী - ডর ভয় বলে কিছু তার কোনদিনই ছিলো না । কিন্তু আজ এমন শরীর ছম ছম করা অনুভূতি কেন !! তার পা দুটি যেন মাটির সাথে আটকে গেছে । তার শরীর যেন কেউ চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে -- তার সমস্ত বোধ অবশ হতে হতে সে শুনতে পেলে সারা দিগন্ত কাঁপিয়ে অসংখ্য নারী পুরুষের গলায় অট্টহাস্যের শব্দ - হা হা হা -- হি হি হি -- হা হা হা -- হি হি হি !!
এরপর আর কিছুই মনে নেই সুজাতার । জেগে উঠে সে দেখতে পেলে সে শুয়ে আছে কোন বড় হাসপাতালের বেডে - মুখের উপর ঝুঁকে তার হাতের শিরা দেখছেন সুজাতারই শিক্ষক ইন্টারন্যাল মেডিসিনের বিখ্যাত ডাক্তার স্বনামখ্যাত সোবহান সাহেব । তাঁর পাশে গভীর উদ্বেগে রক্তবিন্দুহীন মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজম । তাহলে কি সে পিজি হাসপাতালে !! কি করে সে এখানে এলো । সেতো সেই গ্রামের ক্লিনিকেই থাকার কথা -- কি হয়েছিল তার ? সে এখানে কেন?
মুখ খোলার আগেই -- তার ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ করে সেই অশরীরী অট্টহাসি তার বোধ ও চেতনাকে ঢেকে দিল অবলীলায় -- হা হা হা -- হি হি হি --!! কোন এক অচৈতন্যের অচেনা মহাসাগরে সুজাতা ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে লাগল - তলিয়ে যেতে লাগল !
এরপর সুজাতার কি হয়েছিল, সে কি বেঁচেছিল? সে কি ফিরে গিয়েছিল গ্রামের সেই ক্লিনিকে ? কে তাকে নিয়ে এসেছে পিজিতে? কে খবর দিয়েছে আজমের কাছে ? আজম এসেছিলো কি তাকে নিয়ে যেতে? সুজাতা কি ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন ?
সে সব নাহয় আরেক দিন বলা যাবে । এখন শুধু চুপচাপ সবাই সুজাতার জন্যে একটু প্রার্থনা করুন ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
কারও শরীর যদি চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখার মত মনে হয়, দিগন্ত কাঁপানো অসংখ্য নারী পুরুষের গলায় অট্টহাস্যের শব্দ কেউ যদি শুনতে পায় তবে তার অবস্থা স্বাভাবিক না থাকারই কথা। সুজাতা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেল কিনা তা জানতে পারলে ভালো লাগত। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
শুরুটা এতো ভাল করে লেখক কেনো যে গল্পটাকে অবহেলা করলেন বোধগম্য হচ্ছেনা। এছাড়া আরো একটা বিষয় যেমন ডাঃ সুজাতাকে গ্রামে কিছুদিন থাকার পর ম্যানেজ করে জেলা শহরে নিয়য় যাওয়ার বিষয়টা অনৈতিক বলে মনে হয়েছে....কারন ডাক্তার তো মানতার সেবায় নিয়োজিত থাকবার কথা.হোক সে গ্রাম কিম্বা শহর...আসলে গ্রামের মানুষদের কেউ ভালবাসে না ...ধন্যবাদ আপনাকে...
সুজাতা যেদিন এসেছে গ্রামে সেইদিনই বিকেলে গ্রাম ছেড়েছে- কিছুদিন তো থাকে নি -- ভাল করে পড়লে দেখবেন - যে আসলে গ্রামকে অবহেলা করার জন্যে নয় বরং ভৌতিক গল্পের দাবী মেটাতেই এমনটি করা -- ভাল থাকুন -- শুভেচ্ছা নিরন্তর ।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব
সুন্দর। ভালবাসা থাকল।।"ভৌতিক সংখ্যায় আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ার আহ্বান জানিয়ে গেলাম। আমার পাতায় আসলে চির ধন্য হব হে প্রিয় কবিবন্ধু।"
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।