পরী

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

একনিষ্ঠ অনুগত
  • ১০
  • ৩৮
(এক)
বেশ কয়েকদিন ধরেই দিনগুলো ভালো যাচ্ছে না ফজুর। ভালো নাম আবুল ফজল। সবাই ফজু বলেই ডাকে। ধামালিয়া লঞ্চ ঘাটে কুলি মজুরের কাজ করে সে। বয়স পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের মাঝামাঝি। স্বাভাবিক উচ্চতা, কিছুটা ময়লা বর্ণ, সুঠাম দেহ কঠোর পরিশ্রম করার উপযোগী বলা যায়। বিবাহিত। স্ত্রীর নাম ফুল বানু। ফুলি বলেই ডাকে সে। পরিবার বলতে আরও একজন আছে ঘরে। সে তার আট বছরের মেয়ে পরী। পরী বানু। তিনজনের মোটামুটি সুখী পরিবারই বলা যায়। কিন্তু কিছুদিন যাবত ফজুর কিছু সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটা হচ্ছে রাতে। গভীর রাতে ঘাট হতে ফেরার সময়। যা আগে কখনও ঘটেনি তার সাথে। সাধারণত রাত বিরাতে যাতায়াতে সে অভ্যস্ত, কিন্তু কিছুদিন যাবত রাতগুলো হচ্ছে অন্য রাত গুলো হতে আলাদা। রাতে ফজুর সাথে ঘটে যাচ্ছে অনেক অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা। ফুলির সাথে এ নিয়ে কথা বলেছেও ফজু। ফুলির চাচা আবার মস্ত বড় কবিরাজ। ফুলি তার থেকে ফজুর জন্য একটি গা-বন্ধের তাবিজও এনে দিয়েছে। এর পর হতেও রাতের সে ঘটনা গুলো আগের মতই ঘটে চলেছিল। ফুলি তার চাচার কাছে গিয়েছিল অবশ্য। চাচা বলেছে ফজুর গায়ের ঘামে ভিজতে ভিজতে তাবিজ নাপাক হয়ে গেছে। তাই তাবিজের ক্ষমতা কমে গেছে। কিন্তু এক পক্ষের আগে এ তাবিজ পরিবর্তন করলেও অন্য তাবিজ কাজ করবে না। এ বড় শক্তিশালী তাবিজ। অন্যান্য সাধারণ তাবিজ হলে এক সপ্তাহ পরেই পরিবর্তন করা যায়। ফিরে এসে ফুলি বলেছিল এ দিন পনের ঘাটে না যেতে। কিন্তু ফজু রাজী হয়নি। ঘাটে এখন কাজের মৌসুম চলছে। এ সময় কাজে নাগা দিলে বছরে অন্য সময় অভাবে কাটাতে হবে। এর পরে বাঁধা দিতে গিয়েও পারেনি ফুলি। ফুলির তো জানা আছেই কি করে তাদের সংসার চলে। দিনের কামাই দিনেই চলে যায়। সঞ্চয়ের জন্য খুব অল্পই বেঁচে থাকে। এখন যদি কাজে নাগা পরে তবে সত্যিই অভাবে পড়তে হবে তাদের। একটু ভেবে ফুলি বলল,
- তয় বেশী রাইত করবানা আর, সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় ফিরা আইবা বাড়িত, ঠিক আছে।
- আইচ্ছা তা আমুনে। তুমিও কিন্তু একটু সাবধানে থাইকো। রাইত বিরাইতে বাইর হইতে হইলে আগুন নিয়া বাইর হইবা। আর পরীরে দেইখা রাইখো। ওরে একলা ঘরে রাইখা যাইয়ো না কোথাও।
- ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি ফিরবা, বেশী রাইত করবা না, মনে থাকে যেন।
- হুম, থাকবো। এখন গেলাম।

(দুই)
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও আজ ঘাটে কাজের চাহিদা খুব ভালো ছিল ফজুর। ইচ্ছা থাকা সত্বেও সন্ধ্যার আগে ফেরা হয়নি। এখন রাত ১০টা। ঘাট বন্ধ হবে হবে। বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়াল ফজু। এমন সময় পেছন হতে একটা ডাক শুনতে পেল সে। ফিরে তাকিয়ে দেখল দামী পাজামা পাঞ্জাবী পড়া এক সৌম্যবর্ণ লোক দাঁড়িয়ে আছেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি।। পাকাকাঁচা মুখ ভর্তি দাঁড়ি। চোখে সোনালি ফ্রেমের দামি চশমা। হাতে দামী ঘড়ি, দয়ালু দয়ালু চিন্তিত চেহারা।
- এই, শোন!
- জ্বি, সাব আমারে ডাকেন?
- আর তো কাউকে দেখছি না। তোমাকেই ডাকছি।
- হু, আর কেউ নাই। ঘাট কিছুক্ষণ পর বন্ধ হইয়া যাইব।
- তবে তোমাকে যে পাওয়া গেল তা আমার ভাগ্যের জোর বলতে হবে। ভাই একটা উপকার করো, এই সামানা গুলো একটু বড় রাস্তার বাসস্টপ পর্যন্ত নিয়ে দাও...
- না সাব, আইজ দেরী হইয়া গেছে। এমনিতেই আমার তাড়াতাড়ি ফিরার কতা।।
- তোমাকে জোর করার অধিকার আমার নেই, কিন্তু দেখতেই পাচ্ছ আশেপাশে আর কেউ নেই। তুমিও চলে গেলে আমি খুব বিপদে পড়ে যাবো।
- সাব, আপনে কইত্তন আইছেন? এতো সুন্দর কইরা কইতাছেন মায়া লাইগা যাইতাছে। কিন্তু আমার তো রাইত করা মানা, আবার আপনেরে একলা রাইখাও যাইতে মন চাইতাছে না...
- কেন রাতে তোমার কি অসুবিধা?
- না সাব বলতে পারুম না। লন কোনহানে যাইবেন...
- আচ্ছা আসো...
দু’জনেই হাঁটতে থাকে। আধ ঘণ্টা হাঁটার পড়েই তারা বাসস্টপে এসে যায়। মাথা থেকে সামানা নামিয়ে ফজু সৌম্যবর্ণ লোকটিকে বলে,
- সাব এইবার আমারে বিদায় করেন।
- হু হু তা তো অবশ্যই। তা তোমার নাম কি? বলতে বলতে ফজুর দিকে একটা পাঁচশত টাকার চকচকে নোট এগিয়ে দেন তিনি।
- জ্বি আমার নাম আবুল ফজল। সাব আপনের বাসা কি অনেক দূর বাসে কইরা যে যাইবেন।
পকেট হতে চারশত টাকা বের করে ফিরিয়ে দেয় ফজু। আজ ঘাটে কাজ বেশী ছিল। তাই রোজগার ও ভালো হয়েছে। পাঁচশত টাকার ভাংতি দিতে পেরে ফজুরও ভালো লাগছিল।
- আরে কি করছো, আমি কি তোমার কাছে ফেরত চেয়েছি? পুরোটাই রেখে দাও। আমি খুশি হয়ে দিয়েছি তোমাকে। এতো রাতে বড়ই উপকার করেছ তুমি। বাকিটা তোমার বখশিশ। আর আমি বাসে করে যাবো না। আমার বাড়ি বেশী দূরে নয়। নূর মঞ্জিল নিশ্চয় চেন? ওটাই আমার বাড়ি। বাসস্টপে এসেছি যেন এখান থেকে সহজেই একটা রিকশা পেয়ে যাই।
- কিন্তু সাব বখশিশের পরিমাণ কি মজুরীর চাইতেও বেশী অয়?
- হুম হয়... বখশিশের কোন পরিমাণ হয় না। মজুরীর হয়।
-আচ্ছা সাব আসি, সালামু আলাইকুম।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফিরতে শুরু করে ফজু। কিছুক্ষণ হাঁটতেই এসে পড়ে সেই জোড়া তাল গাছের নিচে যেখান থেকে অস্বাভাবিকতা শুরু।।

(তিন)
রাত প্রায় ১২ টা বেজে গেছে। ফজু এখনও ফিরেনি। চিন্তা করতে করতে ঘোর লেগে এসেছিল ফুলির। পরীর ডাকে সজাগ হয়ে উঠে সে।
- মা, ঐ মা, বাইরে যামু।
- এহন বাইরে যাইবি ক্যান? সন্ধ্যার সময় যাস নাই?
- হু গেছি, এখন আবার পাইছে।
- উফ, আমার হইছে জ্বালা। বাপে এখনও বাড়ি ফিরল না, মাইয়া মাইজ রাইতে কয় বাইরে যামু। খাঁড়া আগুনটা লইয়া লই।
- উ উ তাড়াতাড়ি করো।
- হু হইছে, আয়।
বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষার্থেই ঘর থেকে বেশ দূরেই ছোট ঘরটা নির্মাণ করেছে ফজু। একটা বাঁশঝাড়ের আড়ালে, যেন সহজে চোখে না পড়ে। এই বাঁশঝাড়টির কারনেই রাতের বেলা ফুলিরও প্রকৃতির ডাকে আসতে কলিজা হিম হয়ে যায়। একা কখনই আসে না সে। ফজুকে ডেকে সাথে নিয়ে তার পরই আসে। আজ তার নিজেরই ভয় করছে, মেয়েকে অভয় দিবে কি? হাতে যদিও আগুন আছে। শুনেছে হাতে আগুন থাকলে ওসব কাছে আসে না। তবুও মন যে মানতে চায় না। নিজেকে স্থির রাখতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফুলির। তবুও নিজের ভয়টাকে আড়াল করে মেয়ের কাছ থেকে। মেয়ে যদি বুঝতে পারে সে ভয় পাচ্ছে তবে তার মেয়ের ভয়ের মাত্রা যে অনেক বেড়ে যাবে।।
- তুই ভিতরে গিয়া বস, দরজা খোলাই থাক। আমি আগুন নিয়া দাঁড়াইলাম।
- মা, বাজানে কখন আসবো?
- সময় অইলে আসবো... তুই তাড়াতাড়ি কর।
মায়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় পরী। অন্ধকারে হারিকেনের আলোয় সে হাসিতে গায়ে কাঁটা ধরে ফুলির।
- মা, তুমি কি ভয় পাইতাছ?
- চোপ বেয়াদব মাইয়া। লজ্জা শরম নাই। এই সময় কেউ হাসে?
- ক্যান হাসলে কি অয়?
- গুনা অয়, শয়তানে ধরে।।
নিজের মুখে নিজেই শয়তানের নাম নিয়ে নিজেই আরও ভয় পেয়ে যায় ফুলি। মায়ের পাংশু মুখটা দেখে আরও হাসি পেয়ে যায় পরীর। হি হি করে হেসে উঠে সে। মেয়ের হাসিতে কলজের পানি শুকিয়ে যায় ফুলির। তবে কি তার মেয়েকে... না, কিসব ভাবছে সে। কিন্তু মেয়েটা এভাবে হাসছে কেন? আর এতো দেরীই বা করছে কেন? আগুনটা নিয়ে গিয়ে মেয়েকে একবার ধরে দেখবে কিনা সে। কিন্তু সাহসেও কুলচ্ছে না। হঠাৎ মায়ের চুপ হয়ে যাওয়াতে পরীর ও দুষ্ট মনে ভাবান্তর ঘটল। হঠাৎ করে ওর ও কিছুটা ভয় ভয় লাগতে শুরু করল। ভয়টা মনে ঢুকতেই ওর সময়ের খেয়াল হল। ওর তো কখন ই শেষ হয়ে গেছে, হাসি তামাসায় সেদিকে খেয়ালই ছিল না ওর। আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি উঠে আসলো পরী। ততক্ষণে ফুলি কিছুটা চিন্তামুক্ত হয়েছে।
- যা ডর ডরাইছি না, এত রাইতে কেউ এমন কইরা হাসে।
- মা আমারও ডর করতাছে।
- ডর করলে তাড়াতাড়ি আয়। আর ডর পাইলে কখনো পিছন দিকে ফিরা তাকাইবিনা।।
- ক্যান মা, তাকাইলে কি অয়?
- চোপ, এতকিছু বলার সময় এখন না...
ফুলির কথা শেষ না হতেই পেছনের বাঁশঝাড়ে কিসের যেন একটা হিস হিস শব্দ শোনা গেল। তার পরেই কয়েকটা বাশ ভেঙে পরার শব্দ। তাদের দু’জনের ই কলজের পানি শুকিয়ে গেছে ততোক্ষণে। ফুলি অজান্তেই বলে ফেললে ‘কে?’ ও দ্বিতীয় আরেকটি শব্দ উচ্চারণ করার আগেই পেছন হতে শব্দ এলো ‘আমি পরী, পরী বানু’। ফুলি এক ঝটকায় পেছন ফিরে তাকাল। পরী, পরী বানু বসে আছে একটি আধা হেলে পরা বাঁশের উপর... তবে তার সাথে কে এলো...? কই কেউ তো নেই। তবে সে যা ভেবেছিল তাই সত্যি...। মুহূর্তে তার চারপাশটা ঘুরতে শুরু করলো। হ্যাঁ, সে স্থির আছে... পৃথিবীটা ঘুরছে... আহ্নিক গতির চেয়েও বেশী জোরে।

(চার)
ফজু কিছুটা সচকিত হয়ে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ। বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ল মনে মনে। পড়তেই মনে হল মনে কিছুটা সাহস এসেছে। ফুলি বেশী রাত করতে মানা করেছিল। কিন্তু রাত হয়ে গেছে। এখন এই জোড়া তালগাছ দুটো যদি ভালো ভালো পেরোনো যায় তবেই ভালো। শুরুটা যদি ভালো কাটে শেষটাও ভালো ভাবে কেটে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশী। কিন্তু লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে না ভালো কাটবে। আজকেও তালগাছ দুটোর মাথা ক্রমে কাছাকাছি সরে আসছে। সেদিনের মতো দুটি গাছের মাথা এক গোঁড়া দুই হয়ে যাচ্ছে। একটা ফটকের মতো তৈরি হচ্ছে আজও। যেন মায়াবীপুরীতে ঢুকার ফটক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ফজুকে ফিরতে হবে এ পথ ধরেই। না, আজ আর পুরোপুরি মিলল না মাথা দুটো। দু চারহাত ফাঁকা রয়ে গেছে যেন। এ দৃশ্যটা প্রথম যেদিন দেখেছিল ওর তো গায়ের রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল সপ্তাহ খানেক ধরে একই দৃশ্য দেখে অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ ফাঁকা রইল কেন তাই মাথায় ধুঁকছে না। কিছু না বুঝেই যেন দাঁড়িয়ে পড়ল ফজু। ভেতর থেকে আমিত্ব বলছে একটু চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিতে। হয়ত এরও কোন রহস্য আছে। পেছন দিকে তাকাতেই ও দেখল কে যেন হন হনিয়ে এদিকেই আসছে। একটু কাছে আসতে মনে হল যে আসছে সে পুরুষ নয়, আরও কাছে আসতে সে বুঝল এ কোন পুর্নাঙ্গ নারীও নয়, একটি বাচ্চা মেয়ে সাত আট বছর বয়স। তার মেয়ের বয়েসি। কিন্তু এ যে ওর মেয়েই। পরী, চিৎকার করে গলা উঁচিয়ে ডাক দিল ফজু কিন্তু স্বর বেরুলো না... এরপর পরীকে আর দেখা গেল না।। ফজুর মাথা ঘুরছে। ও সামনে যাবে নাকি পেছনে। তালগাছ দুটো আবার মিলিত হতে শুরু করছে। হ্যাঁ এ পথেই যাওয়া উচিৎ, এটাই চেনাজানা।

তালগাছ দুটো পেরিয়ে এসেছে ফজু। কিছুটা ভালোও লাগতে শুরু করেছে তার। কিছুই ঘটেনি তারমানে প্রতি দিনের মতো আর দু একটি ওস্বাভাবিক দৃশ্য তারপর প্রতিদিনের মতই বাড়ি ফেরা। কিন্তু ভাবনায় ছেদ পরল তার। সামনে সে আরও দুটো জোড়া তালগাছ চোখে পড়ল। এ রাস্তা তার খুব ভালো করেই চেনা আছে। এ রাস্তা দিয়ে আসতে কেবল একবারই দুটো তালগাছ পরে, রাস্তার দুইধারে দুটো। কিন্তু সে তো জোড়া তালগাছ পেরিয়ে এসেছে। পেছন ফিরে তাকাল ফজু। ঐতো জোড়া তালগাছ দুটি এখনও দেখা যাচ্ছে, এখন তাদের মাথা দুটো আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সামনের দুটো? ফজু তবুও এগিয়ে যেতে থাকে, সে বুঝে নিয়েছে এটা সেই অস্বাভিকতাদের একটি। এক সময় এ দুটোও পেরিয়ে যায় সে। তার অনুমান ঠিক হল। রাস্তা ঠিকই আছে। ঐতো ধামাই দীঘি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দীঘিতে আজ এতো শাপলা কেন? কাল তো খুব পরিষ্কার ছিল। ওর মনে পড়ল পরী শাপলা ফুল খুব পছন্দ করে। কয়েকটা তুলে নিবে কি না ভাবল একবার। তারপরই ভাবল নাহ, এটাও একটা অস্বাভাবিকতা। কাল যে দীঘি পরিষ্কার ছিল আজ তাতে শাপলা ফুটতে পারে না। দীঘি পেরিয়ে যাবার সময় হঠাৎ শুনতে পেলো ফজু,
- বাজান!
- কে? কে তুমি? ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠলো ফজু।
- আমার লাইগা শাপলা আনবা না বাজান?
- পরী, পরী মা তুই কই? আমারে ভয় দেখাইতাছস ক্যান?
- তুমি ভয় পাইতাছ ক্যান বাজান? আমি পরী, পরী বানু।
- হ মা, তুই পরী, আমাগো পরী বানু। আয় মা আমার কাছে আয়। ভয় দেখাইস না।
- না বাজান, আমি আসুম না, সকালে আসুম।
- ক্যান মা, এখন আসবি না ক্যান?
- আমি এহন খেলতাছি।
- কোথায় খেলস? কার সাথে খেলস?
- আসমানে। আমার বন্ধুগ লগে।
- কি কইতাছস মা। আসমানে কি মানুষ যাইতে পারে? আসমানে মানুষের কোন বন্ধু থাকে না।
- বাজান, আমি তো পরী। আমি আসমানে যাইতে পারি। আমার অনেকগুলা পরী বন্ধু আছে।
- মা তুই কবে থেইকা পরী হইলি?
- যেদিন থেইকা তুমি উল্টা পাল্টা সব কিছু দেখতাছ, সেদিন থেকা।
- ক্যান তুই আমারে এইসব দেখাইতাছস?
- বাজান আমি তোমারেও পরী বানাইতে চাই, তার জন্যই তোমার মনের ডর দূর করতেছিলাম। বাজান তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও। মায় উঠানে অজ্ঞান অইয়া পইরা রইছে। আমি প্রতিদিন রাইতে আমার বন্ধুগ লগে খেলতাম। মায় আর তুমি ঘুমায়া থাকতা। কিন্তু আজকা মায় ঘুমায়নাই। আমার বন্ধুগ কইছিলাম আজকা যামু না খেলতে। কিন্তু ওরা জোর করল। আমি ছাড়া নাকি ওদের খেলা জমে না। তাই মার সামনে দিয়াই আসতে হইল। আর তা দেইখা মায় ভয় পাইছে।
- তুই তোর মারে ডর দেখাইলি?
- আমি চাই নাই বাজান। এহন তুমি বাড়ি যাও। উল্টা পাল্টা আর কিছু দেখবা না।। আর একটা কতা আজকা যেই লোকটারে তুমি মাল সামানা বাসস্টপ পর্যন্ত দিয়া আসলা লোকটা খুব ভালা। কালকা তুমি তার বাসায় যাইবা। লোকটা তোমারে একটা চাকরি দিবো। আমি তার বাসায় গেছিলাম। হেয় তার বউয়ের লগে এইসব কইতাসে। আর আমি কালকা থেকা আর পরী নাও হইতে পারি। আমার বন্ধুরা কইছে আইজকাই আমার শেষ দিন।
- ক্যান মা, আজকা তোর শেষ দিন ক্যান?
- আমার বন্ধুরা কইছে তোমরা আমারে অনেক বেশী ভালোবাসো। তোমাগ মনে কষ্ট দিয়া আমারে আর আসমানে আনবো না। আইচ্ছা বাজান আমি গেলাম।। ওরা উপরে আমার লেইগা দেরী করতাছে, খেলা এখনি শুরু অইব।

(পাঁচ)
ভোর হয়েছে। মাঝরাতে উঠান হতে উঠিয়ে আনার পর জ্ঞান ফিরেছিল ফুলির। এরপর বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল ফজুর সাথে। পরীর ব্যাপারে সব বলেছিল ফজুর কাছে। ফজু একটুও অবাক হয়নি। কিন্তু ফুলি অবাক হয়ে গিয়েছিল ফজুর কাছ থেকে সত্য জেনে। এখন ওরা ঘুমিয়ে আছে। আর পরী... হ্যাঁ ও ফিরে এসেছে ভোর হবার আগেই। বাবা মায়ের সাথেই ঘুমিয়ে আছে জড়াজড়ি করে। গা বন্ধের তাবিজটা যদিও এখনও আছে ফজুর গায়ে। নাহ, ওটা নাপাক হয়নি। পাকসাফ ই আছে। ওটার খমতাও নষ্ট হয়নি একটুও । নাপাক প্রেতাত্মা, বদ জ্বিন পেত্নী আজও তাড়াতে পারে এটা... কিন্তু পরী, ফুটফুটে পরীরা কি কখনো নাপাক হয়?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু পরী বানুর একটি আধা হেলে পরা বাঁশের উপর বসে থাকা, জোড়া তালগাছ দুটির মাথা দুটো আলাদা হওয়া, ভোর হবার আগেই পরীর ফিরে আসা, সবই খুব ভৌতিক। খূব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
অনেক সুন্দর মন্তব্যে মনটা ভরে গেলো।। অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি কাহিনী তৈরী করার ক্ষমতা রয়েছে ......গল্প ভাল লেগেছে....ধন্যবাদ জাঃইসলামকে.....
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনেক অনেক অনুপ্রাণিত হলাম ভাই।। অনেক শুভ কামনা।।
কামরুল হাসান ভাল হয়েচে
ধন্যবাদ অনেক।।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
সময় সুযোগ হলে অবশ্যই আসব ভাই।। অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অাপনার গল্প লেখার হাত বেশ ভাল ! ভীষণ ভাল লাগল।
ধন্যবাদ ভাই।শুভ কামনা আপনার জন্য।।
ruma hamid প্রত্যয়ী, পড়েই বুঝেছিলাম আপনার লেখার হাত খুব ভাল, পরী গল্পটিও দারুন লাগল !
পাতায় স্বাগতম রুমা আপা। পুরনো লেখাগুলোও পড়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। এ লেখাটিও ভালো লেগেছে জেনে আমার কাঁচা হাতের লেখাটিকে সার্থক হল।। অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন।।
আফরান মোল্লা ভাল লেগেছে।শুভকামনা রইল॥
হাফিজ রাজু অনেক ভাল লাগল কবি, শুভ কামনা রইল
ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানবেন...
শামীম খান দুটো তালগাছ দুপাশ থেকে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় যে আবহ তৈরি হয়েছিল তাকে এক কথায় ভীতিকর বলা যাবে । খুব ভাল লেগেছে পড়তে । ভাল থাকবেন । শুভ কামনা আর ভোট রইল ।
অনেক সুন্দর মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।।
মাহমুদ হাসান পারভেজ আমাদের শহরে এক সকালে জোর গুঞ্জন উঠলো পাল পাড়ার এক পুরোনো গাছে একটা ছোট্ট মেয়েকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে- আমিও গেলাম সেখানে- অসংখ্য লোকের ভীড়। ততক্ষণে তাকে নাকি নামিয়ে এনে তার বাবা-মার কাছে ফেরৎ দেওয়া হয়েছে্। কাউকেও পেলাম না যে সরাসরি সেটি দেখেছিল।তবে সেখানে অনেক গল্প শুনেছিলাম। ভাল লাগলো ‘পরী’র গল্প।
গুজব অথবা সত্যি... অনেক ঘটনাই তো শোনা যায় কিন্তু নিজ চোখে না দেখলে কারও বিশ্বাস হতে চায় না। যদিও আমি কখনো দেখিনি (একবার দেখেছিলাম অনেক ছোটবেলায়, কিন্তু তা সত্যি নাকি আমার অনুমান ছিল আজও বুঝতে পারি না) তবে বিশ্বাস কিছুটা আছে আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের চোখে সচরাচর ধরা যায় না। আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।। শুভ কামনা জানবেন।।

২৭ আগষ্ট - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪