অনেকদিন হলো এ স্টেশন দেখা হয়না সেভাবে । অনেক আগে ঢাকা থেকে চিটাগাং পো®িটং হয়ে চলে গেছে ফুয়াদ সাহেব। নিজেও একজন স্টেশন মাস্টার । আজ প্রায় ত্রিশ বছর হলো চাকরি করে সেখানে। ঢাকার বাড়িতে আসা হয়না বললেই চলে। ফুয়াদ সাহেবের ভায়েরা থাকে সেখানে। সে নিজে চিটাগাংয়ে বাড়ি করেছে। নিজের সংসার নিয়ে সেখানেই থাকে। অফিসের একটা কাজে ঢাকায় এসেছিলো। আজ আবার চিটাগাং ফিরে যাচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের প্লাট ফর্ম তারকাছে মনে হচ্ছে একদম পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে যেনো মানুষের জীবন আচরনো।আগে যেখানে ফকিরের ভিরে যাত্রিদের পথ চলা সমস্যা হতো সেখানে এখন ভিক্ষুক নেই বললে চলে।পোষাকের চাকচিক্য বোঝা যায় সহজে। আগের চেয়ে লোকের ভিরও বেড়েছে ,তাছারা অনেক যায়গা বাড়ানো হয়েছে স্টেশনের, পিলারে পিলারে সাউন্ড বক্্র আর সি সি ক্যামেরা।নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আগের চেয়ে অনেক কঠোর। অনেক কষ্টে একটা টিকিট সংগ্রহ করে ট্রেনে উঠে বসে ফুয়াদ সাহেব । নিজে রেল বিভাগে চাকুরী করে পরিচয় দেয় বলে কাউন্টার থেকে একটা কামরার টিকিট পায়। অনেক দূরের জার্নি । একটু আরামে আয়েশে যেতে পারলে ভালোই হয়। একটা কামরায় দুতালা করে চারটা সিট থাকে। একটা সিটে নিজের ব্যাগটা রেখে পা তুলে বসে সে। কিছু সময় যেতে এক মাঝ বয়সি দম্পত্তি এসে উঠে বসে তার কামরায় । দম্পত্তি তার দিকে মনোযোগ নাদিয়ে নিজেদের বেডিং ঠিকঠাক করে রেখে নিজেদের মতো ব্যাস্ত হয়ে যায়। ফুয়াদ সাহেব একটা বইয়ে মন ডুবিয়ে দিয়েছিলো। দেখতে দেখতে কিছু সময়ের মধ্যে ট্রেন ছেরে যায় চিটাগাংয়ের উদ্দেশ্যে। শহর আর লোকেদের কোলাহল মুক্ত হতে প্রায় রাত অনেক হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ট্রেন নির্জন মাঠ পেরিয়ে যেতে থাকে চিটাগাং এর পথে। বড্ড ঘুম পায় ফুয়াদ সাহেবের । বইটা মাথার নিচে দেয় সে। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে।তারপর টান হয়ে শুয়ে রুমালটা মুখের উপর দেয়।ঘুমাতে চেষ্টা করে ফুয়াদ সাহেব,কিন্তু কামরার লাইটের আলো যেনো চোখে ছিটকে পড়ছিলো।ফুয়াদ সাহেব হঠাৎ বুঝতে পারে কামরার লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়তো তাকে ডিস্ট্রাব করবে না বলে স্মামি স্ত্রী দুজন বেডে ঘুমাতে যায়।মৃদু বাতাস আর ট্রেনের চাকার সাথে ¯িøপারের বারি লাগার ঘটাং ঘটাং শব্দ যেনো ঘুম পারার টনিক হয়ে যায় তার জন্য। মুখ থেকে রুমালটা টেনে চোখ বন্ধ করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে ফুয়াদ সাহেব বুঝতেও পারেনা।হঠাৎ সে দেখতে পায় একটা স্টেশনে তাদের ট্রেন থামিয়েছে। স্ট্রেশনটা সম্পূর্ন অচেনা তার কাছে। ট্রেনের লোকগুলো কেমন অন্যরকম দেখতে। চোখগুলো নিশাচর প্রাণির মতো জ্বলছে, স্টেশনে তেমন কোন আলো নেই। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। হু হু করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে ট্রেনের জানালার একপাশ থেকে আরেক পাশে।বরফ জমা ঢান্ডা যেনো শরীর কিন্তু তাতে চলতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।অন্ধকাওে বাহিরে যেতে হবে।ফুয়াদ সাহেবের মনে হয় তার কাছেতো একটা টর্চ আছে। অন্ধকারে পথ দেখতে সে সেটাকে ব্যাবহার করতে পারে। টর্চ বের করে জ্বালাতে লোকগুলো কেমন সরে যেতে থাকে। তাছারা তার নিজের চোখও কেমন ঘোলা হয়ে আসে । যেনো কিছুৃ দেখতে পাচ্ছেনা সে। টর্চটা দ্রুতো নিভিয়ে দিতে যেনো আবার দেখতে পায় সে। আস্তে আস্তে ট্রেন থেকে নেমে সে ঘুরে দেখতে থাকে প্লাটফর্মের চারপাশ। ট্রেন থেকে নামতে একটু দূরে দেখতে পায় একজন লোক লাল একটা পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে। একটু মনোযোগ দিয়ে লোকটাকে দেখতে বুঝতে পারে লোকটা আর কেওনা, তার বাবা । কিন্তু সে অবাক হয় , তার বাবা তো মারাগেছে অনেক আগে। একটু তার দিকে এগিয়ে যেতে তার বাবা যেনো আসতে নিষেধ করে তাকে। ফ্লাগটা একটু বাকিয়ে ট্রেনের পেছনের দিকে যেতে নির্দেশ করে। ফুয়াদ সাহেব আবার হাটতে থাকে । আর একটু দূরে যেতে তার চোখ আটকে যায় একজন মহিলার দিকে। প্লাট ফর্মে সে যেনো কারো জন্যে অপে¶া করছে । সাথে একটা ছোট ছেলে আর একটা ছোট মেয়ে দাঁড়িয়ে। ভালোকরে দেখতে সে চিনতে পারে মহিলাটা আর কেওনা ,তার মৃতো মা,অনেক দিন আগে মারা গেছে সে, সাথের ছেলেটা তার মৃত সন্তান,ছোট থাকতে পুকুরে পরে মারা যায়, মেয়েটা তার মৃতো বোন, যে কিনা অনেক বছর আগে মারা গেছে । ফুয়াদ সাহেবকে দেখে তারা যেনো দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু হাত উচিয়ে তার মা তাকে তাদের দিকে যেতে নিষেধ করে। অবাক হয় সে । হঠাৎ তিনজন একসাথে হাত উচিয়ে চলে যেতে বলে ফুয়াদ সাহেব কে। ফুয়াদ সাহেব তাদের থেকে একটু পিছে ফিরে চলতে থাকে। ফুয়াদ সাহেবের মন একবার রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটতে চায়। ঠিক যেমন যুবক বয়সে শায়লার হাত ধরে হেঁটেছে সে। কিন্তু পা দিবে বলে রেল লাইনে পা নামাতে সে অবাক হয়।ফুয়াদ সাহেব দেখতে পায় স্টেশনটা শূন্যে ভাসছে। রেলের ¯িøপার তাতে শূন্যে আটকানো। এদিকে উচ্চশব্দে মাইক বেজে ওঠে। তার কানে আসে আগামির ট্রেনের যাত্রিদের যাত্রা শুরু হচ্ছে। দ্রƒতো যাত্রিরা ট্রেনে উঠে বসুন। দ্রুতো পা ফেলে ট্রেনে উঠতে ফুয়াদ সাহেবের ঘুম ভেঙে যায়, চিৎকারের শব্দে। কামরার দরজা খোলা । দম্পত্তি দুজনের কেও ভেতরে নেই । চারিদিক থেকে করুন আর্তনাদ ভেসে আসছে। ফুয়াদ সাহেব দরজা দিয়ে বাহিরে এসে দাঁড়ায়, সে দাঁড়াতে একটা মহিলা তাকে আস্থার অবলম্বন মনে করে আকরে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, আমাদের বগি মূল ট্রেন থেকে ছুটে গেছে। দ্রুতো চলতে বগিটি উদভ্রান্তের মতো ছুটে যাচ্ছে। কি হবে , কিছূ করুন। কথা বলতে বলতে এরি মধ্যে বগিগুলো উচু পাহাড়ের মাঝের রাস্তা থেকে নিচে পরে। গভির নদী নিচে, শ্রোতবাহি একটা নদী।উঁচু পাহাড় থেকে ট্রেনের বগি এতো নিচে পরে, মনে হয় যেনো নিউটনের ভরের সূত্র এই পাহাড় থেকে এতো নিচুতে একটু বেশি প্রয়োগ হয়। গভির পানিতে ডুবতে থাকে বগি। দেখতে দেখতে ফুয়াদ সাহেব যেনো সকলের সাথে সেই আধার ঘেরা অচেনা স্টেশন এর পথে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রবিন রহমান
লেখাটি পরবার ও মন্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ ..
এমএআর শায়েল
সুন্দর ভাবনা, পরিচ্ছন্ন চিন্তার একটি লিখা পড়লাম..... শুভ কামনা রইল।
হ্যাপীর কথা ভাবতে গেলে আমার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভালোই হয়েছে। ভুল মানুষের প্রেমে না পড়ে, যদি আমি ঠিকঠাক মানুষের প্রেমে পড়তাম তবে কি যে হত আমার, আল্লাই মালুম--- পড়ুন আমার লেখা- সে কেন এমন করল গল্পটি। আপনার মন্তব্য আশা করছি।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।