শূন্যের মাঝে সে

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

রবিন রহমান
  • ৩৭
ভয়ংকর এক স্বপ্ন দেখলো মনে হয় অরিন। হঠাৎ ঘুম ভাঙতে দেখে ট্রাকটা শূন্যে ভাসছে। প্রবল বাতাস বহিছে বাহিরে। মেঘের গায়ে যেনো গাড়িটা লেটকে আছে। গাড়ির কাঁচে পানি জমে চোখের নেত্র জলের মত গাড়ির চিবুক কাঁচের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। গায়ে প্রচণ্ড শীত লাগতে থাকে অরিনের । গায়ের শালটা একটু টেনে জড়িয়ে নেয় অরিন। পাশে ট্রাকের জানালা দিয়ে তাকাতে দেখে ট্রাক চালক কতগুলো লোকের সাথে কথা বলছে । তাদের কেউ দাঁড়িয়ে নেই, ভেসে আছে মনে হচ্ছে, তারা সকলেই উড়ে উড়ে কথা বলছে। পা গুলো একদম অদৃশ্য। মৃদু আলো জ্বলছে সেখানে। হঠাৎ অরিনের কানে ভেসে আসে কিছু নামানোর শব্দ। একটু পরে অরিন দেখতে পায় ট্রাক থেকে কিছু নামিয়ে রাখা হলো সেখানে। একদম শূন্যে যেনো ভাসমান ভাবে রাখা হলো বক্্রগুলো, বক্্র খুলতে ঠিক তাদের মতো এক একটি লোক বেরিয়ে আসতে থাকে। ভয়ে অরিনের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। গুটিসুটি হয়ে চোখ বন্ধকরে ফেলে অরিন। কিছু সময় পরে ট্রাকের ওপাশের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পায় অরিন। আধো চোখ খুলে তাকাতে দেখতে পায় লোকটি আবার ট্রাকে উঠে বসে। কিছু সময়ের মধ্যে ট্রাকটা আবার চলতে শুর করে। আস্তে আস্তে গাড়ি নিচে নামতে থাকে। মেঘলা অরিনের বান্ধবী তখনি বলেছিল :
এ রাস্তায় রাতে জাওয়া ঠিক হবেনা। রাতটা থেকে দিনে গেলে ভালো হতো, যদি কোন সমস্যাতে পরে যাস।
কিন্তু ওর কথায় কান দেয়নি অরিন। এখন আফসোস করতে হচ্ছে। কি যে করবে বুঝতে পারে না। মেঘলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে অরিন দ্রুত গাড়ি চালায়। তখন গোধূলি ছিল, ইচ্ছা ছিল রাত বারার আগে এই নির্জন এলাকা পেরিয়ে দুলাভাইয়ের অফিসে পৌঁছে যাবে। কিন্তু না, মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। মেঘলা তখনি বলেছিল এই রাস্তায় সন্ধ্যার পরে কোন গাড়ি চলেনা। এমনকি কোন মানুষ চলাচল করেনা রাতে এ রাস্তায়। অরিন বুঝতে পারে কোন সমস্যা হয়েছে। গাড়ির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। এরি মাঝে রাত বারতে শুরু করে। এই নির্জন রাতে একলা একটা মেয়ে, অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অরিন। মাঝরাত, নির্জন রাস্তা, হঠাৎ একটা ট্রাকের শব্দে ওর আধো ঘুমের চোখ খুলে যায়। অরিন তাকাতে দেখে সত্যি একটা ট্রাক আসছে, সস্তির একটা নি:শ্বাস ফেলে অরিন। হাত তুলে দাঁড়ায় রাস্তায়। গাড়িটা ওকে পাশকাটিয়ে চলে যায়। নিরাস হয়ে গাড়ির কাছে ফিরে আসছিলো অরিন, হঠাৎ আবার গাড়ির শব্দ ভেসে আসে । ট্রাকটা এসে দাঁড়ায় ওর সামনে :
জি বলুন, কিছু বলতে চাচ্ছেন ।
হ্যাঁ, একটু লিফট চাচ্ছিলাম ।
আসুন, এ পাশের দরজা দিয়ে গাড়িতে উঠে বসুন।
লোকটি ট্রাকের পাশের দরজা খুলে দেয়। অরিন গাড়িতে উঠে বসে। কোন কথা বলেনা। গাড়ি দ্রুত চলতে থাকে । চলতে চলতে এক সময় অরিন ঘুমিয়ে যায়। হঠাৎ ঘুম ভাঙতে আবিষ্কার করে এই শূন্যের শহর। অদ্ভুত মানুষের সহচার্য। এরি মধ্যে গাড়ি প্রায় উঁচু উঁচু গাছের শীর্ষের কাছে পৌঁছে যায়। অরিন বুঝতে পারে কিছু সময়ের মধ্যে গাড়িটা রাস্তায় নামবে। বুঝতে পারে লোকটা ওর কোন ক্ষতি করতে চায়না। সাহস করে লোকটাকে প্রশ্ন করে:
বলুন তো, আপনি কে।
লোকটি খুব সতর্কতার সাথে গাড়ি রাস্তায় নামাতে নামাতে বলতে থাকে:
ও আপনি তাহলে জেগে আছেন। সবি দেখেছেন তবে। ঘুম না এলে আপনাকে আগেয় বলতাম। আমি আসলে কোন মানুষ না। এক আত্তা আমি, বলতে পারেন মানুষ যাকে ভূত বলে। আর আপনি যে শহরটা দেখেছেন, সেটা আত্মাদের শহর। পৃথিবীতে বসবাস করা এখন খুব কষ্টকর আত্মাদের জন্য। নানা যান্ত্রিকতা আর বিশৃক্ষ্খলার জন্য সেখানে বসবাস করা খুব কঠিন। তাই আত্মারা নিজেরা তৈরি করে নিয়েছে শূন্যের শহর। যে শহরের এক বাসিন্দা এখন আমি নিজেই। আপনি যে শহরটি দেখেছেন সেটা আত্মাদের শহর।
তাহলে মেঘলা ঠিকি বলেছিলো, এ রাস্তায় কোন মানুষ চলাফেরা করেনা রাতে। একটা কথার উত্তর দেবেন : দেখলাম আপনার গাড়ি থেকে কিছু বক্্র নামানো হলো, যা থেকে আপনার মতো কেউ বের হয়ে গেলো ,বলুন তো কি ছিলো ওগুলো।
ও, সাহস করে গাড়ি নিয়ে এ রাস্তায় ঢুকে ছিলো আজ রাতে, গাড়িটাকে একদম ফেলে দিয়েছি খাদে। গাড়ি থেকে ওদের দেহ আর কেউ খুঁজে পাবে না। তাই ওদের আত্তা গুলো শহরে রেখে এলাম। ওদের কিছু শিক্ষা দিয়ে ছেরে দেয়া হবে আমার মত। আপনি না থাকলে আমিও আর আজ পৃথিবীর মাটিতে ফিরতাম না । আপনারো ভাগ্য ভালো , আপনাকে দূর থেকে দেখে আমার স্ত্রীর কথা মনে পরেছিলো । তাই আপনাকে ছেরে দিয়েছি, নাহলে আপনা কেউ আজ আত্মাদের সাথে যেতে হতো ।
ও, তাহলে আপনি একজন খুনি। তাদেরকে আজ রাতে খুন করেছেন আপনি।
কি করবো বলুন। আমিওতো একদিন আপনাদের মতো রক্ত মাংসের মানুষ ছিলাম। রাত প্রথমা থেকে শেষ পর্যন্ত এ রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছি কতো। কিন্তু একদিন এক নিষ্ঠুর মানুষ আমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিলো উত্তাল ঢেউয়ের নদীতে, স্রোতে ভাসতে ভাসতে এক সময় তলিয়ে গেলাম। আত্তা হয়ে গেলাম। রাগ করে ঠিক করলাম রাতে এই রাস্তায় আর কাউকে চলতে দেবো না। কিছু মনে করবেন না। ভোর হয়ে আসছে, আমাকে যেতে হবে। আপনাকে কোথায় নামিয়ে দেবো, বলুন তো। কোথায় যাবেন আপনি।
ওভাল স্ট্রিট, সেখানে বোনের বারি। আমার বাড়ি বাংলাদেশে। ঘুরতে এসেছি এই দেশে ।
ওভাল স্ট্রিট, লেক পারের শহর। অনেক গিয়েছি আমি। আমার খুব প্রিয় শহর ছিলো, রাতে লেকের পারে হেঁটে বেরানো, দিনে পাখিদের উড়তে দেখা। সুন্দর সুন্দর বাড়ি গুলো। অপূর্ব সুন্দর, কিন্তু আমিতো লোকালয়ে যেতে পারিনা, তাছাড়া দিনের আলো ফুটবার আগে আমাকে যেতে হবে। আপনাকে আমি মেলতিতে নামিয়ে দিচ্ছি , একটু অপেক্ষা করলে ভোর হতে অনেক গাড়ি পাবেন। চলে যেতে পারবেন সহজে।
অরিন কিছু আর বললোনা। লোকটা একটা গাছ দেখে গাড়ি থামায়। তারপর জানালা দিয়ে মাথা বেরকরে গাছের সাথে কি সব কথা বলে।
নামুন, ভোর হওয়া পর্যন্ত এ গাছের নিচে অপেক্ষা করুন।
অরিন নামতে নামতে, তাহলে আপনার সাথে আবার দেখাহচ্ছে..
কথা বলতে বলতে পেছনে তাকাতে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরিন। ততক্ষণে শূন্যে গাড়িটা.............

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান বেশ রসালো গল্প । ভাল লাগা জানবেন । ভোট প্রাপ্য ।
ruma hamid সুন্দর একটি গল্প পড়লাম ।
মাহমুদ হাসান পারভেজ এরকম একটি শুন্য ভৌতিক শহর পেয়ে অামি কিন্তু দারুণ খুশি। এবার অামিও ওখানে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে অামি যেতে চাচ্ছি খুনিটাকে শায়েস্তা করেত। --গল্পটা ভালো লাগলো। শুভকামনা জানবেন সবসময়।
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন
আল মামুন খান ভালো লাগা রেখে গেলাম। আমার লিখায় আমন্ত্রণ রইলো।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব সুন্দর। ভাল হল। শুভকামনা রইল"ভৌতিক সংখ্যায় আমার লেখা গল্প কবিতা পড়ার আহ্বান জানিয়ে গেলাম। আমার পাতায় আসলে চির ধন্য হব হে প্রিয় কবিবন্ধু।"
ওয়াহিদ মামুন লাভলু আপনার গল্পটা সত্যিই খুব ভৌতিক। যে আত্মাটা অরিনকে লিফট দিলো, তার আত্মা হওয়ার পশ্চাতে দুঃখজনক একটা কারণ আছে। গল্পের পটভূমিটা খুব ভালো।

১৩ আগষ্ট - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪