রাজ একটা ঠাণ্ডা পানীয়তে মুখ লাগিয়েছে, এরই মধ্যে একটা ছেলে এসে পানীয়-এর বোতলটা চাইল। কেন জানতে চাইল রাজ। ছেলেটি ইশারায় বলল সে খেতে চায়। রাজ খেতে দিল এবং বশে এনে নাম ঠিকানা সব জেনে নিল। কিন্তু ঘটনা অন্য জায়গায়; পরবর্তীতে যখন রাজের সাথে ছেলেটির দেখা তখন ছেলেটি কিছুই বলতে পারছিল না। অনেক কষ্ট করে চারদিন পর রাজ আবিষ্কার করল ছেলেটি পাগল। মাত্র দুই বছর ব্যবধানে একটা সুস্থ ছেলে পাগল হয়ে যায়! আজ পরিচয় জানতে চাইলে চেয়ে থাকে, কথা বলেনা শুধুই হাসে। সেই ছেলেটার নাম আক্তার। বয়স বার বছর। আক্তার পাগল হয়ে গেছে এই অবস্থা জানার পর রাজ খুব কষ্ট পায় এবং আক্তারের প্রতি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। প্রত্যেকদিন রাজ যে চায়ের দোকানে চা খায় সেখানেই দেখা মিলে আক্তারের, কেননা তার মা ছাড়া কেউ নেই; আর সেই ‘মা’ ছয় মাস থাকে ভালো, ছয় মাস থাকে পাগল। তাই যেখানে খুশী সেখানেই পরে থাকে আক্তার। এই জন্যে রাজ মনে করে অযত্নের কারণে পাগল হয়েছে আক্তার। তাই সে আক্তারকে যেভাবে পারে একটু যত্নের দায়ভার কাঁধে তুলে নিতে চায়। এ কারণেই আক্তার যে আবদার করে তা যথাসাধ্য পূরণের চেষ্টা করে রাজ।
একদিন রাজের গায়ে নতুন টি-শার্ট দেখে আক্তার টি-শার্টে ধরে টানতে শুরু করল। রাজ বুঝতে পেরেছিল যে টি-শার্টি তার পছন্দ হয়েছে তাই বিনা বাঁধায় গা থেকে খোলে আক্তারকে পড়িয়ে দিয়েছে। আক্তারও খুব খুশী। সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় কিন্তু রাজই তাকে আগলে রাখে। তাই রাজই তার একমাত্র বন্ধু। শুধু রাজ যে দেখে তা নয়; যে দোকানটায় প্রত্যেকদিন আক্তারের সাথে রাজের দেখা হয় সেই দোকানিও আক্তারের দেখাশুনা করে থাকে, তাকে আক্তারের দ্বিতীয় ভালো বন্ধুও বলা যায়। আক্তার খুব চা প্রেমিক তাই প্রথম আবদারই চা। আর এই চা সে দোকানি আর রাজের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে তাই এই দুইজন তার চোখে শ্রেষ্ঠতর।
তবে আজকাল আক্তারটা খুব জ্বালাচ্ছে। যেখানে সেখানে যা পারে তাই করছে। এর জন্য অনেকের হাতে মার খাচ্ছে। রাজের খুব খারাপ লাগে কেউ আক্তারকে মারছে দেখলে। রাজের যুক্তি সে তো আর আমাদের মত না তাহলে তাকে মেরে কি মজা! যাহোক, ইদানিং আক্তার কিছু শব্দ বলতে পারছে। মামা শব্দটা খুব বলে। রাজ প্রত্যেকদিন দোকানীর এখানে গিয়ে মামা চা দিন, মামা সিগারেট দিন বলত আর তা থেকেই হয়ত এমন উন্নতি। তাছাড়া কিছু গালিও শিখেছে। মানুষকে জ্বালালে তারা মুখ থেকে যে শব্দগুলো গালিরূপে ঝেরে ফেলে দেয় সেই ভাষাগুলোই আক্তার রপ্ত করেছে। চা খাওয়ার অভ্যাসটাও অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ঐতো সেদিন রাজের চশমা হাতে নিয়েই মাটিতে ঢিল মেরে ফেলে দিল। চশমাটা চৌচির হয়ে গেছে। রাজ খুব কষ্টও পেয়েছে। যে জিনিসটা ছাড়া তার চোখ নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে সেই জিনিসটা না থাকলে বাজে লাগারই কথা। কি আর করার? আক্তারকে সে তো মারতে পারেনা। এর কিছুদিন পর নেওয়া চশমাটা আক্তারের বাহুর তেজে ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে আর মুখ ভার করে বসে থেকেছে কিন্তু কিছু বলেনি, তার বিবেক কিছু বলতে পারেনি। অনেকে আক্তারকে মারতে চেয়েছিল, রাজ কিছু না বলায় আর কেউ কিছু বলতেও আসেনি। রাজ জানতে চেয়েছে কেনো এমন করলি আক্তার? “তোমার চশমা পড়াটা ভালো লাগেনা”- ইশারায় আক্তারের উত্তর।
এর পরদিন চশমা ছাড়াই একটা কারখানায় কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের খোঁজে গেছে রাজ। কারখানার তাপমাত্রা কোন একটা বিক্রিয়ার কারণে উচ্চ হয়ে যাওয়ায় অনেকের(যারা চশমা পড়া ছিল) চশমার কাঁচ ভেঙ্গে চোখে পড়েছে, কারো কারো তৎক্ষণাৎ অপারেশনের ঘন্টা বেজেছে। তার মানে আক্তার রাজের চশমা ভেঙ্গে ভালই করেছে; সেই দিক থেকে আক্তারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করাটাই রাজের কর্তব্য এবং রাজ তাই করেছে। এর পরেরদিন রাজ কারো কারো মুখে বলতে শুনেছে আক্তারের ফুঁয়ে কার নাকি হাতের ব্যাথা ভালো হয়ে গেছে। কেউ বলছে আক্তারের উপর জিনের আঁচড় লেগেছে। কিন্তু রাজ বিজ্ঞানের ছাত্র তাই সে এসব বিশ্বাস করেনা। সে একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখে। প্রকৃতির প্রতিটা সৃষ্টিই ঋণ মুক্ত থাকতে চায় আর আক্তার এর মধ্যে দিয়ে অবচেতনে ঋণমুক্ত হচ্ছে; এর বাইরে কিছু নয়।
সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন ফুটপাতের সব দোকান উঠিয়ে দিয়েছে রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। আর তাই আক্তার আর রাজের মিলনকেন্দ্র ফুটপাতের চায়ের দোকানও উঠে গেছে। যার জন্য অনেকদিন যাবৎ আক্তারের সাথে রাজের দেখা হচ্ছে না। হঠাৎ করে রাতে আক্তারকে স্বপ্ন দেখে মনটা ছটফট করছে রাজের। সে ঘুম থেকে উঠেই আক্তারের খোঁজে ঝুম বৃষ্টির মাঝে বেড়িয়ে পড়েছে। আজ আক্তারকে আর মাহমুদ কমপ্লেক্সের আন্ডার গ্রাউন্ডে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি আক্তারের প্রিয় জায়গা ফুড কর্ণারের সিঁড়িতেও। অবশেষে আক্তারের দেখা মিলল রাস্তার ধারে গড়িয়ে যাওয়া বৃষ্টির পানিতে। আজ আক্তার রাজকে দেখেও কাছে আসছে না। নতুন লাল ফ্রেমের চশমাটাও হাতে নিয়ে ভাঙ্গতে আসেনি। চোখ মেলে তাকিয়ে ময়লাযুক্ত দুই পাটি দাঁতে প্রাণ খোলে হাসেও নি। শুধু মাথাটা নিচের দিকে রেখে পানির মধ্যে দেহটা উপর করে পেতে বৃষ্টির পানিতে ঘুমিয়ে পড়েছে চির নিদ্রায়। এই নিদ্রা আর কখনো ভাঙ্গবেনা; আর আক্তার রাজের কাছে চা চাইবেনা। আর কখনো জ্বালাবেনা কোন মানুষকে। আগে কোন বার্তা রাজকে দেয়নি আক্তার তাই হয়ত এখন শুধু বৃষ্টির সাথে লাল রক্তে রাজের মনে লিখে দিয়েছে এই বাতুল বন্ধুটিকে ভুলে যেওনা। রাজও জানে না গভীর রজনীতে কোন পাপিষ্ঠ তার বাতুল বন্ধুর মস্তক তিন ঠুকরো করে দিয়েছে, শুধু দেখতে পাচ্ছে তার বন্ধু রক্তাক্ত। চোখের সামনে বাতুল বন্ধুর মস্তক থেকে রক্ত ঝরছে কিন্তু ব্যান্ডেজ করতে পারছে না। পানিতে ভেসে যাচ্ছে বন্ধুর টকটকে লাল রক্ত, নিথর পড়ে আছে দেহ। প্রাণহীন দেহকে ব্যান্ডেজে মোড়ানোর যুক্তিকথাও পাচ্ছেনা। শুধু চোখের কোণে অশ্রু ফেলছে রাজ। কান্নারূপে বৃষ্টি ঢেলে দিচ্ছে প্রকৃতি। বুক ফেটে যাচ্ছে রাজের। সে আক্তারের দেহটার পাশে গিয়ে প্রতিটা অঙ্গকে শেষ ভালোবাসায় মোড়িয়ে দিচ্ছে। বুকের কান্নাকে করাতের খোঁচ দিয়ে কে যেন কেটে দিয়েছে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আক্তারের নিথর দেহটাকে কোলে জড়িয়ে নিল রাজ। বৃষ্টিতে একটুকুও ভিজেনি, যতটা শরীর ভিজেছে সবটাই অশ্রু দ্বারা। রাজ আক্তারকে আপন হাতে সাজিয়ে দিয়েছে সাড়ে তিন হাত ঘরে। এরপর থেকে রাজকে আর সুস্থ দেখা যায়নি। যখনি দেখেছি মনে হয়েছে গভীর রজনীর চনমনে স্বপ্নের পর অসহায় হয়ে রাজের নিকট আসে প্রতিটা বৃষ্টির সকাল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আরশ আলো
শিরোনামটা ঠিক বুঝলাম না। যাই হোক লেখার সরলতার কারণে ভোট করলাম।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।