একটি শীতের রাত

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

মারুফ ইসলাম
  • ১০
বলা নেই কওয়া নেই রাত্রির এই দুই প্রহরে হঠাৎ আমার মেসে বিটলুর আবির্ভাব! কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাল লাল চোখে সমুদ্রের ঢেউ তুলে বিটলু বলল, মেয়েরা শরীর বিক্রি করতে পারে, ছেলেরা কেন পারে না? ছেলেদের শরীরের কি কোনো দাম নেই?
আমি চোখ কচলে ভালো করে বিটলুর দিকে তাকাই। রাত্রির ঘড়িতে সময় তখন দেড়টা, আমি ঘুমাইনি যদিও তবুও পুরো ব্যাপরটাকে স্বপ্ন স্বপ্ন বিভ্রম মনে হওয়ায় আরেক দফা চোখ কচলে, শরীরে চিমটি কেটে নিশ্চিত হই- না, এটা কোনো ঘুমজনিত ইলিউশন নয়; আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে বিলকুল বিটলুই বটে। আমার বাল্যবন্ধু, আমার ব্যথাবন্ধু...।
আমরা শীত উপেক্ষা করে মেসের ছাদে গিয়ে বসি। রাতের আকাশে নিজস্ব বিষাদ উড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে এক ধরণের সুখ আছে। আবদ্ধ ঘরে দুঃখ-কষ্ট বিনিময় করে কোনো সুখ নেই। বিটলু-আমি সেই সুখ পেতে এখন ছাদে। পৌষের রাত উত্তর থেকে হিমেল হাওয়া বয়ে এনে আমাদের হাড়ে কাঁপন ধরাতে চায়। চেয়ে ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ না হয়ে পারে না, কেন না আমাদের দুজনের বুকের গভীরেই যে ততোধিক শীত। এ শীত প্রকৃতির শীতের কাছে বড়ই নস্যি। উত্তুরে হাওয়ার কি সাধ্য আছে এ শীতকে হার মানায়?
ফসসস করে সিগারেট জ্বালিয়ে বিটলুই কথা শুরু করে- আজ নতুন অভিজ্ঞতা হলো, বুঝলি; ছেলদের শরীরের কোনো দাম নেই। পাঁচ পয়সার দাম নেই।
আমি আরেকটি সিগারেট জ্বালিয়ে ‘হুমম’ বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাই। আকাশে চাঁদ নেই। চারপাশে কুয়াশার আবরণ। আমরা কেউ কারো মুখ দেখতে পাই না। শুধু ছায়া ছায়া অবয়ব অনুভব করি। উপরন্তু সিগারেটের ধোঁয়া এই কুয়াশার সঙ্গে মিলেমিশে পরিবেশটাকে কেমন রহস্যময় করে তুলেছে। সেই রহস্যের ভেতর বিটলুকে হঠাৎ ‘রহস্য-মানব’ বলে মনে হয়। কেমন ‘ভূত-ভূত’ বলে মনে হয়। মনে হয় বিটলু মানুষের গলায় কথা বলছে না; কেমন ভূতের মতো নাকি সুরে কথা বলছে।
‘জানিস, মেয়েরা যেসব জায়গায় শরীর বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে থাকে সেসব জায়গায় আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম। চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনের সামনে, ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক… নাহ্! কোনো জায়গাতেই কাস্টমার পেলাম না। আমার চোখের সামনে মেয়েগুলো দেদারসে বিক্রি হয়ে গেল। কত কত খদ্দের ওদের!’
‘হুমম…। এ বড় বৈষম্য হে, এ বড় বৈষম্য!’ বিটলুর আক্ষেপের আগুনে ঘি ঢালি আমি।
বিটলুর ভূতের গলা আবার ধুলোপড়া রেকর্ডের মতো ঘ্যার ঘ্যার করে বাজতে শুরু করে, এই যে এত জিম টিম করে সিক্স প্যাক বডি বানালাম, তাতে লাভটা কী হলো, বল? একটা খদ্দেরও জোগাড় করতে পারলাম না! আসলে মেয়েরা কি কোনো ছেলে খদ্দের খোঁজে?
কী জবাব হতে পারে এ প্রশ্নের। আমি তো কোনো মেয়ে নই। কিংবা এ ব্যাপার নিয়ে কখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে তো আলাপও হয়নি আমার। তাহলে জানবো কী করে যে মেয়েরা কোনো ছেলে খদ্দের খোঁজে কি না? আমার খুব অসহায় বোধ হয়। চোখের সামনে বিপদগ্রস্ত কোনো মানুষকে সাহায্য করতে না পারার মতো কষ্ট অনুভব করি আমি। এ রকম কষ্ট অনুভব করেছিলাম কিশোরবেলায় একবার। ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দিয়ে আমাদের চোখের সামনে এক লোক মারা যাচ্ছিল কিন্তু আমরা তাকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করতে পারছিলাম না। কারণ, লোকটা বারবার বলছিল, আমি হিন্দু, ব্রাহ্মণ। আমাকে কেউ ছোঁবেন না। ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় কেউ আমার জাত নষ্ট করবেন না। দয়া করে কেউ আমার জাত মারবেন না…। আমরা সেদিন সত্যিই খুব মহানুভবতা দেখালাম; মরার আগে হিন্দু বামুনের জাত মরলাম না, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, লোকটা একসময় নিথর হয়ে গেল।
বিটলুও ওই হিন্দু ব্রাহ্মণের মতো একদিন এক অদ্ভূত ভাবনায় ঝাঁপ দিয়ে বলেছিল, মেয়েরা যদি শরীর বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিতে পারে তবে ছেলেরা কেন পারবে না?
আমরা ইয়ার্কি করতে করতে বলেছিলাম, বিলকুল পারে। কেন পারবে না। তা তুই তো হতে পারিস এ পেশার পথিকৃৎ উদ্যেক্তা।
বিটলু আমাদের ইয়ার্কিকে সিরিয়াসভাবে নিয়েছিল সম্ভবত। আমরা দেখলাম বিটলু হঠাৎ জিমে ভর্তি হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা ধানমণ্ডি লেকে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমাদের চোখের সামনে একটু একটু করে বদলে যেতে শুরু করল বিটলুর শরীর। তারপর এতদিন বাহু ফুলিয়ে আমাদের সামনে এসে বলল, দিস ইস কলড সিক্স প্যাক।
সেই সিক্স প্যাক বডি বিল্ডার বিটলু এখন কুয়াশার অন্ধকারে বসে আমার সামনে ছোঁক ছোঁক করে কাঁদছে। ‘আমার সব পরিশ্রম বৃথা গেল রে… সব শ্রম বৃথা গেল…।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া হঠাৎ করেই যেনো গল্পটি দম নিল; আরেকটি দম নেয়ার জন্য;
মোঃ আক্তারুজ্জামান গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছে। গল্পের জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। আশির্বাদে রাখবেন আক্তারুজ্জামান ভাই।
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভিন্নমাত্রার লেখা,প্রকাশগত উৎকর্ষতা আছে, আর সামান্য শ্রম দিলে পূর্ণতা পেত,ধন্যবাদ।
আমি একটু অলস। পরিশ্রমবিমুখ। আমার চরিত্র ধরতে পারার জন্য ধন্যবাদ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের তৃষ্ণা যখনই বেরে গেলো তখনই অসমাপ্ত। অসাধারণ হয়েছে, তবে যদিও/তবুও এখানে কেমন যেন মনে হল.....
শামীম খান গল্পটা থেমে গেল কেন ? আরও এগিয়ে যেতে পারতো । আগামীতে আরও সুন্দর কিছু পাব আশা করি । শুভকামনা ।
ধন্যবাদ। গল্পটি বড় করার ইচ্ছা আছে।
Salma Siddika ভালো প্রচেষ্টা, আশা করছি ভবিষ্যতে গল্পটি পূর্ণতা পাবে।
ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা!
মনজুরুল ইসলাম Description is nice but very short. You could enhance the story. good luck.
ধন্যবাদ মনজুরুল। ভবিষ্যতে গল্পটি বড় করার চেষ্টা করব।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত খুব ভাল লাগল । শুভকামনা ভোট সহ । আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
ধন্যবাদ বিশ্বরঞ্জন!
মারুফ ইসলাম ধন্যবাদ ফেরদৌস আলম!
ফেরদৌস আলম গা শিউরে উঠার মত থিম। বেশ অসাধারণ!

২০ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী