অভিশাপ

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

রূপক বিধৌত সাধু
নারাঙ্গী বাজারে এসে যখন গাড়িটা থামল, তখন অনেক রাত্রি । অন্ধকারে পথঘাট ঠিক মতো দেখা যাচ্ছেনা । মা শবনম বেগম আর তাঁর কিশোরী মেয়ে সুমাইয়া বেশ বিপদেই পড়ল । ঢাকা থেকে এসেছে তারা । কী এক ঝামেলায় পড়ে এত দেরি! তারা যাবে মরচী গ্রামে, সেটা এখান থেকে অনেকটা দূরে । বাজারে পরিচিত কোন লোক থাকলে হয়তো সহযাত্রী হতো । কোথাও কোন সাড়া শব্দ নাই । মা মেয়ের ভয় করতে লাগল ।
কিশোরী মেয়েটা ভীত হয়ে বলল, ‘‘মা, এহন কী অইব?’’ মা আর কী বলবেন! তাঁর উত্তর জানা নেই । তাঁর সব ভয় মেয়েটাকে নিয়েই । মেয়েটা যুবতী । দেখতে বেশ সুন্দরী! যদি কারো কুনজরে পড়ে! এই অজ পাড়া গাঁয়ে, তা অস্বাভাবিক নয় । অহরহ এখানে দুর্ঘটনা ঘটে ।
তবু মনে সাহস রেখে বললেন, ‘‘ভয় করিসনা । চল ।’’ মা আর মেয়ে দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগল । তাদের মনে আতঙ্ক । পথে কী জানি কী বিপদ হয়! কিছুদূর যাওয়ার পর একটা দু-তলা বাড়ি । সেখানে পিদিম জ্বলছিল । জুয়া খেলে কয়েকজন লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিল । হঠাৎ দুজন স্ত্রীলোককে আসতে দেখে একজন বলে ওঠল, ‘‘এত রাইতে কই যাইন আপনেরা?’’
মা শবনম বেগম চমকে দাঁড়ালেন । আতঙ্কিত হয়ে বললেন, ‘‘আমরা মরচী যামু ।’’ লোকটার নাম খালেক । নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, ‘‘এত রাইতে যাইতে পারতাইন না! ডাকাইতে ধরব!’’ বাস্তবিকই রাস্তাঘাট ভালো না । অহরহ ডাকাত পড়ে ।
‘‘আমরা কী করি, কইন তো! দুইডা মাইয়া মানুষ!’’ মহিলার কান্নার উপক্রম । খালেক বলল, ‘‘আপনেরা এই বাড়িতে থাইক্কা যাইন । ঘর খালি আছে । সকালে যাইয়েন ।’’
মেয়েটা ফিসফিস করে মাকে বলল, ‘‘লও এইহানে থাইক্কা যাই । কী আর অইব?’’ মহিলা কী যেন ভাবলেন । খালেক বলল, “ভয়ের কিছু নাই ।”
‘‘বাড়িতে নিশ্চয় কোন মহিলা আছে । কী আর হবে।’’ মহিলা এই ভেবে রাজি হয়ে গেলেন । তিনি অনুধাবন করতে পারলেন না, কী পরিণতি অপেক্ষা করছে!
বাড়িতে কোন স্ত্রী লোক নাই । এ ব্যাপারে খালেককে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, ‘‘আমার বউ বাপের বাইত গেছে । আমরা বন্ধুরা আছি ।’’ সে অদ্ভুতভাবে হাসল । মহিলা ভিমড়ি খেলেন । চুপচাপ বসে রইলেন, আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না । তাদের রাতের খাবার দেয়া হল । মা মেয়ে খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল ।
শেষ রাতের ঘটনা । জুয়া খেলায় হেরেছে খালেক । মদ খেয়ে পুরো মাতাল অবস্থায় সে । বন্ধুরা বিদায় নিয়েছে আজকের মতো । মা মেয়ের দরজায় কড়া নাড়ল সে । মহিলা ভেতর থেকে বললেন, ‘‘কেডা?’’
খালেক নিজের নাম বলল । মহিলা কপাট খোলে বাইরে এলেন । নিজের মেয়ের সর্বনাশ ডেকে আনলেন তিনি । খালেক কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলল, যাতে টুঁ শব্দটাও না করতে পারে । তারপর বারান্দায় মহিলাকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল । কিশোরী মেয়েটা তখন ঘুমোচ্ছিল । খালেকের ধাক্কায় জেগে ওঠল । খালেক তাকে কিছু বলার সুযোগ দিলনা । উলঙ্গ করে তার ওড়না দিয়ে নাক-মুখ বেঁধে ফেলল । শুধু চোখ দুটি খোলা রাখল । তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ল কিশোরীর বুকের দিকে । সবে কৈশোরে পদার্পণ করেছে মেয়েটা । শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ এখনো ছোট । দেখতে চমৎকার লাগছে! কোন পুরুষের স্পর্শ লাগেনি এখনো । খালেক পশুর মত ঝাঁপিয়ে পড়ল কিশোরীর ওপর । প্রথম কামড় বসাল কিশোরীর স্তনের ওপর । মেয়েটা কেঁপে ওঠল । স্তন কেটে রক্ত ঝরছিল । তারপর তার সারা শরীরে কুকুরের মত কামড়াল মাতাল খালেক । মেয়েটার চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরছিল । মাতালের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ মায়াও উদয় হলোনা । বাচ্চা মেয়েটাকে বর্বরের মত ধর্ষণ করতে লাগল উন্মাদটা । যোনি ফেটে রক্তে নৈরাকার হয়ে গেল । মাতালের খেয়াল যেন আরও বাড়ছিল । এভাবে একাদিকবার মেয়েটাকে ধর্ষণ করল খালেক সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত । তার বর্বরতায় প্রকৃতিও কেঁদে ওঠেছিল । রাতের শেষ প্রহরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয় ।
সকাল হওয়ার একটু আগে মা আর মেয়েকে ছেড়ে দেয় খালেক । এলাকায় আপনজন বলে তাদের তেমন কেও নেই । তার ওপর খালেক বেশ প্রভাবশালী । মহিলা কোথায় আর কার কাছে এই অন্যায়ের বিচার দিবেন! অভাগী মা নিভৃতে শুধু কাঁদলেন । আর চলে যাওয়ার সময় কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘‘আমার মাইয়ার যে ক্ষতি তুই করলি, আল্লায় তোর বিচার করব । ছয় মাসের মইধ্যে তোর মরণ অইব ।’’
অলৌকিক হলেও সত্য । ছয় মাসের মধ্যেই খালেকের মৃত্যু হয় । যে বন্ধুদের সাথে সে জুয়া খেলত, নানান কুকাজে লিপ্ত থাকত; একদিন তারাই তাকে মদের সাথে এসিড খাইয়ে মেরে ফেলে । বেচারার ভেতরের সবকিছু একেবারে পুড়ে গিয়েছিল । জানা যায়, ঘরে বাইরে তার শত্রুর অভাব ছিলনা । পয়সাওয়ালা হওয়ায় তার মাঝে এক প্রকার দম্ভ ছিল । বাজার করতে গেলে পুরো বাজারটাই নিয়ে আসত । অন্যদের সে কোন মূল্য-ই দিতনা । শত্রুরা-বন্ধুরা কেও আর তাকে বাড়তে দিতে চায়নি ।
ধীরে ধীরে তার পরিবারটাও ভেঙে পড়ে । স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে - কে কোথায়; এর কোন হদিস-ই পাওয়া যায়নি । লোক মুখে শোনা যায়, তার একমাত্র ছেলে রোকনের নাকি বাপের মত-ই নারী আর মদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি । এ যেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া উত্তরাধিকার ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী এসব আর ভাল লাগেনা---কেন এমন হচ্ছে প্রতিনিয়ত! নারী ভোগের এ কেমন বর্বরতা!! ভাল লিখেছেন
জুন বাস্তবিক চেতনার সুন্দর উপস্থাপন। ভালো লাগলো শুভ কামনা।
সোহানুজ্জামান মেহরান শুভ কামনা জানিয়ে ভাল গাল্পের জন্য ভাল ভোট করে গেলাম।
মাইদুল আলম সিদ্দিকী ভালো উপস্থাপনা করেছেন.... কাহিনীটা বাস্তবেই মনে হয়েছে...
Fahmida Bari Bipu মেনে নিতে খারাপ লাগলেও এসব ঘটনা ডাল ভাতের মত নিত্য নৈমিত্তিই ঘটছে। ভোট রইল।
ফরহাদ সিকদার সুজন ভালো লাগলো ভাই চালিয়ে যান........ ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো ভাই।
ফারুক নুর গল্পে কিছুটা বাস্তবতার ছোঁয়া ! ভালো লাগলো । শুভকামনা
রবিউল ই রুবেন সুন্দর গল্প। শুভকামনা থাকল।
আখতারুজ্জামান সোহাগ গল্পটা পড়ে মেয়েটার জন্য খারাপ লাগল খুব। খালেককে মানুষ না বলে পশু বলাই বোধ হয় ভালো হবে। শুভকামনা গল্পকার।

১৫ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী