মেয়েটার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিঁড়ির নিচে । দৌড়ে ওপর থেকে নিচে নামছিল সে । হঠাৎ সেলিমের সাথে ধাক্কা খায় । ব্যথা পেয়ে ওহঃ করে ওঠে সেলিম । অনেকক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়েছিল সে । মেয়েটাও তাকিয়েছিল তার দিকে । অদ্ভুত একটা চাহনি, সকরুণ মায়া । ঘোর লেগে গিয়েছিল সেলিমের চোখে । মেয়েটা যে কখন দৌড়ে পালিয়ে গেছে, সে টের-ই পায়নি ।
এই মেয়ের নাম কী, বাড়ি কোথায়; সবকিছু জানল বন্ধু মাহতাবের কাছে । নাম মিথিলা । সেলিম অবাক হল, এই মেয়ে নাকি তাদের পাশের বাড়ির । ‘‘কোথায় থাকি আমি?” নিজেকেই প্রশ্ন করল সেলিম । আবার এমনও হতে পারে, সে দেখেছে; মনে নেই । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তখন হয়তো তীব্র ছিলনা । এখন বয়ঃসন্ধিকাল! চোখে রঙিন চশমা! যারে দেখে তারেই ভালো লাগে ।
মাহতাব বলল, দোস্ত আমি ভাবছি, আমি প্রস্তাব দেব । এখন তুই…।
সেলিম বিরক্ত হয়ে বলল, তুই না প্রেম করিস? একে আমার জন্য ছেড়ে দে ।
মাহতাব কী যেন ভেবে তারপর বলল, আচ্ছা, তোর জন্য ছেড়ে দিলাম ।
মাহতাব বহির্মুখী স্বভাবের ছেলে । সবসময় দামি ব্র্যান্ডের পোশাক পরে থাকে । বাবার টাকা আছে । যখন খুশি যেভাবে খুশি উড়ায় । কেও কিছু বলেনা । অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার ওঠাবসা । এত এত প্রেম করে; তবু মেয়েরা তার পেছন পেছন ঘোরে । বন্ধু-বান্ধবরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে বলে, তোর মাঝে কী পায়রে ওরা । আমরা শালা এত লোক খালি পড়ে থাকি, তোর পিছেই সব । তোর তো শালা চেহারাও ভালনা! কীভাবে এত প্রেম করিস?
মাহতাব রাগ করেনা । বরং হেসে সব উড়িয়ে দেয় । বলে, চেহারা আসলে সবকিছু না । তুই কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করলি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ । মেয়েরা সব বলতে পারেনা । একটা কিশোরী মেয়েকে যদি মনের কথা বলতে পারিস । সে তোর প্রতি আকৃষ্ট হবেই, আর যদি প্রথমে না হয়, তোর কথা পরে একবার হলেও ভাববে! ভাবতে ভাবতে একসময় প্রেমে পড়ে যাবে । মানুষ প্রথম যৌবনের ছোঁয়া এড়িয়ে যেতে পারেনা । বয়সটা এখানে প্রভাবিত করে । বন্ধুরা তার কথা বিশ্বাস করে । কারণ, ইতোঃমধ্যে সে একাদিকবার সফলও হয়েছে ।
মাহতাব-ই সব ব্যাবস্থা করে দেয় । মিথিলাদের বাড়ির পাশে প্রতিদিন ফুটবল খেলতে যেত সে । মিথিলাদের বাড়ির ছেলেরাও খেলতে আসত । মিথিলার চাচাত ভাই মানিক মারফত একদিন খবর পাঠায় সে । মিথিলা আসে । মিথিলাকে সবকিছু বলে । মিথিলা প্রথমে রাজি হয়নি । মাহতাব তার পরিচিত । তার প্ররোচনায় সেলিমের সাথে দেখা করতে সম্মত হয় ।
একদিন রাতের বেলায় বাড়ির পাশের শালবনের ধারে মিথিলার সাথে দেখা করতে যায় সেলিম । মাহতাব সঙ্গে ছিল । সেলিম লজ্জা পাচ্ছিল । মাহতাব তাকে বলে, এসব কাজে লজ্জা থাকলে চলেনা ।
মাহতাব একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল । মাহতাব যা বলতে বলেছিল, সেলিম বেমালুম তা ভুলে গেল । সেলিমের লজ্জায় খুব হাসি পায় মিথিলার । মিথিলা বলেছিল, প্রেম করতে এসেছ, এত লজ্জা পেলে হবে? মেয়েটা নির্লজ্জতা দেখে সেলিমের লজ্জাও কেটে গিয়েছিল ।
এভাবেই তাদের মধ্যে প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে ওঠে । অনেকদিন চলে । শালবনের ধারে প্রতিদিন তাদের দেখা হয়, কথাবার্তা হয় । সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়ে যায় । সুযোগ পেলে সেলিম মিথিলাকে চুম্বন করে । মিথিলা লজ্জায় লাল হয়ে যায় । উঁকি দিয়ে দেখে আশপাশে কেও দেখেছে কি না । রাত্রি গভীর হয়ে আসে । সেলিম ওকে ছাড়তে চায়না ।
মিথিলার বাবা প্রতিদিন নেশা করে বাড়ি ফেরেন । একদিন রাতের বেলা মিথিলা আর সেলিমকে একসাথে শালবনের ধারে দেখলেন । তার মাথায় রক্ত ওঠে গেল । মিথিলাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে এসে ইচ্ছেমত পেটালেন । বেচারি চোখ বুজে কাঁদল সারাটা রাত, সারাটা দিন ।
তাদের প্রেম কাহিনী এলাকাতে রটে গেল । অনেকেই এ নিয়ে কানাঘুষা করতে লাগল । বিশেষত পাড়ার চোগলখোর মহিলারা সগর্বে পাড়ায় পাড়ায় বলতে লাগল নানান কেচ্ছা কাহিনী ।
সেলিমের বাবার কানেও গেল । তিনি ভালোভাবে ছেলেকে ঘরে ডেকে আনলেন । তারপর দরজা জানালা বন্দ করে বেধড়ক পেটালেন । রাগের বশে ছেলের পিঠে কাঁচির কোপও দিলেন । জ্যাঠা না এলে সেলিমের কী অবস্থা হতো, বলা মুশকিল । ভদ্রলোক ধমকে দরজা খুলিয়ে ভাইপোকে উদ্ধার করেছিলেন ।
সেলিমের বাড়িতে থাকা খাওয়া বন্দ ঘোষণা করা হয় । বাবা বলে দেন, আমি যেন আর কখনো এর ছায়াও না দেখি!
সেলিমের আশ্রয় হয় মাহতাবদের বাড়ি । সেলিম আগেও ঐ বাড়িতে যেত । মাহতাবের সাথে থাকত । মাহতাবের বাবাও তাকে স্নেহ করেন । ভদ্রলোক বলে দিলেন, তোমার যতদিন খুশি এই বাড়িতে থাক । কোন সমস্যা নেই । তিনি সেলিমকে কিছু টাকাও দিলেন ।
সেলিমের মা, জ্যাঠাই মা, জ্যাঠা মাঝে মাঝে দেখা করতে যেতেন । কিছু কিছু টাকা পয়সাও দিয়ে আসতেন ।
এক মধ্যরাত্রিতে উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শুয়েছিল সেলিম । মন বিষণ খারাপ! হঠাৎ দেখল, কে যেন আসছে! চমকে গেল সে । এত রাতে এখানে কে আসবে? মাহতাবের বাবা সামনে এসে দাঁড়ালেন । সেলিম তার দিকে তাকিয়ে রইল । ভদ্রলোক বললেন, তোমাকে সম্ভাব্য সবখানে খুঁজে এখানে এসেছি । সেলিম অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, কেন? ভদ্রলোক বললেন, শুনলাম দুদিন ধরে তুমি আমাদের ওখানে যাচ্ছনা । খাও কী, আর থাক-ই বা কোথায় । সেলিম এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, আমি কাল ঢাকা চলে যাচ্ছি ।
সেলিমকে ঢাকা যেতে হয়নি । তার বাবা তাকে নান্দিনা রেলস্টেশন থামিয়ে দেন । সেলিম অভিমানে কেঁদে ফেলে । বলে, না, আমি বাড়ি যাবনা । বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, বাপ, প্রেম করবি- ভালো কথা! লোকে জানবে কেন?
আজ আর মিথিলার সঙ্গে সম্পর্ক নেই সেলিমের । দূর দেশে তার বিয়ে হয়ে গেছে । পরিবার জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় । তার কান্নায় কারো মন গলেনি । তার আবেদন অগ্রাহ্য করেছে সবাই । অভিমানী মিথিলা বাপের বাড়িতে বেশি একটা আসেনা । সেলিম শুনেছে, তার নাকি সুন্দর একটা মেয়ে হয়েছে । স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখে আছে । মিথিলা যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক; সবসময় এই কামনাই করে সেলিম । কিন্তু তাকে ভুলতে পারেনা । প্রথম প্রেমের কথা কী কেও কখনো ভুলতে পারে!
১৫ জুন - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
২৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪