প্রেম ও পুলিশ

ঘৃনা (আগষ্ট ২০১৫)

রূপক বিধৌত সাধু
রাত তিনটায় শাব্বিরের ফোন । আমি ঘাবড়ে গেলাম । এত রাতে তো ওর ফোন দেয়ার কথা না । কী ব্যাপার! কোন সমস্যা হয়নি তো! ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরলাম । সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, তোর কাছে পাঁচ হাজার টাকা হবে? আমার কাছে তিন হাজার টাকা আছে । এ মাসের বাসা ভাড়া দেয়া হয়নি । আমি বললাম, কেন বল তো? সে বলল, কাল আমি তোর কাছে আসছি! পরে সব বলব । তার আগে বল, কত দিতে পারবি? আমি বললাম, দুই হাজার । এক সপ্তাহের মধ্যে আবার ফেরত দিতে হবে । বাসা ভাড়া দেব । সে বলল, ঠিক আছে! আমার আরও তিন হাজার টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে । এই বলে সে ফোন রেখে দিল ।
সকাল আটটায় শাব্বিরের ময়মনসিংহে এল । তার সঙ্গে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে দেখা করলাম । কী হয়েছে? জিজ্ঞাসা করলাম । সে বলল, আমার এক বন্ধু জেলে । তাকে ছাড়িয়ে আনতে হবে । কী করেছে সে? আমি অবাক হয়ে জানতে আগ্রহী হলাম । সে অকপটে সব কিছু খুলে বলল । গতরাত্রে বান্ধবী পায়েলকে নিয়ে ত্রিশালে বেড়াতে এসেছিল তার বন্ধু মাসুদ । সারাদিন ঘোরাফেরার পর, এক হোটেলে ওঠেছিল । দুর্ভাগ্যবশত পুলিশের চোখে পড়ে যায় তারা । পুলিশ গ্রেপ্তার করে ত্রিশাল থানায় নিয়ে যায় । তারপর ত্রিশাল হতে ময়মনসিংহে ।
ময়মনসিংহের কোতয়ালি থানাটা কোথায়? শাব্বির জানতে চাইল ।
আমি বললাম, কালী বাড়ি রোডের দিকে ।
শাব্বির বলল, চল, সেখানে যাব!
আমি বললাম, তোর সাথে কেউ আসেনি ।
তার মুখটা ম্লান দেখাল । কিছুক্ষণ পর বলল, জনি, বশির, নাসির সবাইকে বলেছি। তারা কেউ আসেনি । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শাব্বির । তারপর বলতে লাগল । জনি বলল, মোহনা যেতে না করেছে, আমি যেতে পারবনা । তুই যা! কোন সমস্যা হলে ফোন দিস । বশির বলল, আমার কাজ আছে-যেতে পারবনা । নাসির বলল, আমার শরীর ভালো নেই । নইলে আমি যেতাম । শাব্বিরের একটু জোরে দম নিল । আমি একটু অবাক হলাম । এক সাথে তিন বছর ধরে আছে ওরা । একজনের বিপদে, অন্যজন আসেনা । আসার জন্য বান্ধবীর অনুমতি লাগে । হায় রে বন্ধুত্ব । বিপদে বন্ধুর পরিচয়। অবশ্য ঘটনাটা একটু স্পর্শকাতর । তাই হয়তো মান সম্মানের ভয়ে কেউ আসতে চায়নি । আমি বললাম, এরা কেমন বন্ধুরে তোর! শাব্বিরের মুখে কোন কথা নেই । বেচারাকে বড় অসহায় মনে হল । এ মুহূর্তে জগতে তার আপন বলে কেউ নেই । আমি আপত্তি করলাম, বললাম, আমিও যাবনা । ওর শাস্তি পাওয়া দরকার!
শাব্বির বলল, ছেলেটা খুব কান্নাকাটি করছে ।
আমি বললাম, করুক কান্নাকাটি । কিছুদিন জেল খাটা দরকার । নইলে অন্যায়কে পশ্রয় দেয়া হবে ।
শাব্বিরকে একটু বিচলিত মনে হল । বেচারা বন্ধুর জন্য কী কষ্টই না করছে! আমার মায়া হল । আমি তার সাথে যেতে রাজি হলাম ।

আমি কখনো থানায় যাইনি । আজই প্রথম । একটু একটু সংকুচ লাগছিল । তার ওপর কী একটা লজ্জাজনক ঘটনা ঘটল । থানার ভেতরে ঢুকলাম । ওসি সাহেব থানায় নেই । আমাদের তার জন্য অপেক্ষা করতে হল ।
এক কনস্টেবলের সঙ্গে দেখা করলাম আমরা । তার সঙ্গে আরও একজন, সম্ভবত দালাল গোছের কেউ । ওই লোক টাকার বিনিময়ে সব ব্যবস্থা করতে সম্মত হল । অবশ্য দরকষাকষি করতে হল । প্রথমে দশ হাজার টাকা দাবি করল । আমাদের কাছে এত টাকা নেই । তাকে জানালাম । সে বলল, ছেলের সাথে যে মেয়েটা এসেছিল, সে তো রাজি ছিল । এখন আপনারা বলছেন অন্যকথা ।
ছেলেটাকে জেলে রেখে মেয়েটাকে গত রাত্রেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে । সে এখন বাড়িতে আছে । মাঝে মাঝে শাব্বিরকে ফোন দিচ্ছে । শাব্বির তাকে বলছে, ও একটু পরেই ছাড়া পাবে; তুমি কোন চিন্তা করোনা ।

শাব্বির মাসুদের বড় ভাইকে ফোন দিল । তিনি বললেন, ওকে ছাড়াও, আমি আসছি । ওই লোক আর আসেননি । অথবা আসতে পারেন নি । শাব্বির বলল, তিনি ব্যবসায়ী মানুষ । হয়ত ব্যস্ত; তাই …। অবশ্য লোকটা টাকা পাঠিয়েছিলেন । পাঁচ হাজার । বাকী টাকা শাব্বির আর আমি দিয়েছিলাম । পুলিশের সাথে সমঝোতা হয়েছিল আট হাজার টাকায় ।
মাসুদকে ছাড়ানোর পর আমি আমার মেসের দিকে রওনা দিলাম । শাব্বির তাকে নিয়ে গেল সারিন্দায় । তারপর ঢাকার বাসে তুলে দিল ।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবুল বাসার অনেক শুভেচ্ছা রইল।ভাল লাগল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ এই গল্পটা বাছাই না করাই ভাল ছিল কারণ এর একটা নেতীবাচক প্রভাব আছে, যা সংক্রামক ব্যধীর মত কাজ করে । আপনার লেখার মান নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
Fahmida Bari Bipu গল্প ভাল তবে ঘৃণার উপস্থিতি বোঝা গেল না।

১৫ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী