বাসের পিছনের সিটে প্রচন্ড গরম সহ্য করে বসে আছি। হটাৎ বিকট শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো যান্ত্রিক সুরে। এম্নিতেই গাদাগাঁদিতে বসে মেজাজ খিঁচড়ে আছে। নিজের সাথে কসরত করে ফোনটা হাতে নেওয়ার আগেই সুর থেমে গেলো। মিসডকল। দেখে হাসি পেলো। এমনিতে আমার ফোনের ব্যালান্সে সবসময়ই খরাভাব প্রবল। গোঁদের উপর বিষঁফোড়ার মতো মিসডকল দেখে হাসি পাওয়াটা অন্যায় নয়। হাসির মাঝেই আবার শব্দ, আবার সুর কেটে যাওয়া এবং আবার মিসডকল। তৃতীয় বারের মতো ফোনটা বেজে উঠলো আর এবার সুর কাটলো না। ফোন ধরে ঠান্ডা গলায় বললাম "হ্যাঁ, রনি, বল?" উত্তর এলো "তুই কই?" প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন যে কতোটা বিরক্তিকর তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলাম। বিরক্তি চেপে বললাম "এইতো আইস্যা পড়ছি।" প্রশ্ন এলো, "তোর বাস সেকশন কোনটা?" আমি প্রথমে বুঝতে পারলাম না। কারন আমি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের স্ল্যাং এর সাথে এখনো মানিয়ে উঠতে পারিনি। পারার কথাও না। দু'দিন আগে ভর্তি হয়ে আজ যাচ্ছি সেমিস্টার ফি জমা দিতে। সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া বন্ধু নিশু। আমি প্রচন্ড ভীতু মার্কা হওয়ায় নিশুকে নিয়ে যাচ্ছি। এমনকি সেমিস্টার ফি এর টাকাও আমি সাথে আনিনি। আব্বা কে বলে দিয়েছি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতে। এতোগুলো টাকা সাথে আনার সাহস সঞ্ছয় করতে না পারাই এজন্য দায়ী। আমি নিশুকে জিজ্ঞেস করলাম "বাস সেকশন কি?" নিশু বলল "ক্লাশ শিডিউলে দ্যাখ!" আমি শিডিউল বের করে দেখলাম যথার্থই সেখানে বাস লেখা। পাশে কিছু সংখ্যা লেখা। রনিকে সেকশন জানানোর দায়িত্ব আমি নিশুর ওপর ছেড়ে দম ফেললাম। ফোন রাখার পর আমি নিশুকে জিজ্ঞেস করলাম, "বন্ধু, এই বাস জিনিস্টা কি? ক্লাশে বাসের কি কাম? আবার দেখি বাসের নম্বরও দেওয়া আছে!? ঘটনা ভাইঙ্গা ক তো।" প্রশ্ন শুনে নিশু আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যে তার চোখই বলে দিলো, "জঙ্গল থুঁইয়া এইখানে আইসত ক্যান?" যদিও মুখে তা বলল না। সামলে নিয়ে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে আমাকে বোঝালো, "বাস হইলো বিজনেস এর শর্টকাট, আর অই নাম্বার গুলা হইলো কোর্স কোড।" আমি প্রায় কিছুই না বুঝে বিজ্ঞের মতো বললাম "ও! বুঝলাম।"
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে নিশুর ফোন ধার করে রনিকে কল করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, "কই তুই?" উত্তর এলো "ডিপার্টমেন্টে আয়।" আমি নিশুকে জিজ্ঞেস করলাম, "ডিপার্টমেন্ট চিনোস?" ওর চোখে আবার সেই দৃষ্টি দেখে কথা না বাড়িয়ে ওর পিছু নিলাম। যদিও আমার তখন এক কাপ চা খেতে খুব ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু নিশুকে কথাটা বলার সাহস সঞ্ছয় করতে পারলাম না। বিল্ডিংয়ে ঢুকে দেখি লিফটের সামনে মাঝারী সাইজের লাইন। বাঙ্গালীর লাইন মেনে চলার ব্যাপারে আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল "বুজছত রে, বাঙ্গালী খালি OMS এর লাইন মাইন্যা চলে।" আমি ও যাচাই-বাছাই না করেই মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু এখানে এসে দেখি বন্ধুর তত্ব পুরোটাই ভুল! সবাই সুন্দর সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানো, এবং সবাই সত্যিই বাঙ্গালী। আরেকটা কথা মনে পড়লো, আমার পাগলা কিসিমের এক বন্ধু বলেছিল "ভার্সিটিতে লিফটের লাইনে খারাইলেই তিন তলায় উইঠ্যা যাবি! লিফটে উডা লাগবো না।" দেখলাম তার তত্বও ভুল। লাইনে ১০-১২ জন থাকলেও তা কোনমতেই তিনতলা পর্যন্ত হবে না। একদিনে দুই দুইটা তত্ব ভুল প্রমাণ পেয়ে মনটা খুশি হয়ে উঠলো। নিজেকে বেশ চালাকও মনে হল।
ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি রাসু আর রনি বিরস মুখে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, "ঘটনা কি?" রনি বলল "ফেল মারছি, রিটেক নিমু।" নিশুর কল্যাণে আমি যেহেতু এখন বাস চিনি, তাই বললাম, "বাসে ফেইল করসত?" উত্তর এলো, "হ!" আমি বললাম, "কয়টায় ফেল করসত?" রনি বলল, "সিএসই নামাই দিছিলাম।" আমি পড়লাম বিপদে। 'নামাই দিছি' মানে বুঝলাম না। তবুও নিজেকে বুঝদার প্রমাণ করারা জন্য বললাম, "ভালো করছত! মন চাইলে বাসও নামাই দে!" আমার জ্ঞান যেহেতু বাসেই সীমাবদ্ধ; তাই আমি অন্য প্রসংগ এলেই তা টেনে বাসে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। রনি তখন আমার দিকে বিষঁদৃষ্টিতে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলল, "এমনেই তিন সাব্জেক্টে রিটেক নিয়া প্রায় ৩০,০০০ টেকা গো**ছি, আবার বাস নামাই দিলে বাকি ট্যাকা কি তুমার শ্বশুড়ে দিবো?" আমি সাথে সাথে বুঝতে পারলাম, রিটেক শুধু ফেইল করলেই হয় না, কোর্স ড্রপ করলেও হয়। এবং এটাকে ভার্সিটি স্ল্যাং এ "নামাই দেওয়া" বলে। অথচ আমি আগে জানতাম, Abortion করানো কে সোজা বাংলায় নামাই দেওয়া বলে। বুঝতে পারলাম জানার কোন সীমা নাই। আর বুঝতে পারার সাথে সাথে সাব্জেক্ট নামানোর সাথে Abortion এর স্থূল মিল খুঁজে পেলাম। আমি তখন গলায় দার্শনিক ভাব এনে রনিকে বললাম,"নামাই দেওয়ারে Abortion কইলেই পারস; অইটাও বোঝা নামানো, এইটাও!" এটা শুনে রনি, নিশু কিংবা রাসু আমার সাথে আর কথা বাড়ালো না। আমি দেখতে লাগলাম একে একে নারী-পুরুষ আসতে লাগলো আর সাব্জেক্ট রিটেক নিলো। এদের দেখে আমার মাথায় ঘুরতে লাগলো "এরা সবাই Abortion করাইছে! সব্বাই!" ভাগ্যিস মুখ ফুটে বলি নাই। বললে কি হতো তা সহজেই অনুমেয়।
বিঃদ্রঃ Abortion এর আতঙ্ক নিয়ে শুরু হবে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বিষয়টা হতাশাজনক!
০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪