অন্তরালে অলক্ষিতে

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

ফাহিম ফয়সাল
  • 0
১.
বটতলী বাসষ্ট্যান্ড। এবরোখেবড়ো জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা জরাজীর্ণ বাস।স্থানীয় লোকজন এগুলোর নাম দিয়েছে ‘মুড়ির টিন’।লক্কর-ঝক্কর মার্কা এই বাসগুলো বিশ মাইল দূরের নিমতলীর মানুষজনের জেলা সদর রংপুরে আসার একমাত্র সম্বল।রংপুর অবশ্য এখন বিভাগ হয়েছে।কিন্তু বাসগুলোর গায়ে এখনো তার ছোঁয়া লাগেনি।শহরে বিভিন্ন কাজকর্ম সারতে এই বাসগুলোতেই ঠাসাঠাসি করে আসতে হয় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে।মাঝখানের কোমরপুর থেকে সেরুডাঙা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাটুকুতেই যা একটু আরাম। এই টুকু রাস্তা যে সংসদীয় এলাকায় পড়েছে তার এমপি সাহেব ডাকসাইটে নেতা হওয়ায় রাস্তা ভাঙতে না ভাঙতেই প্রতিবছর মেরামত করা হয়।কিন্তু বাকি রাস্তাটাকে রাস্তা না বলে শুকিয়ে যেতে বসা মড়া নদী বললেও অত্যুক্তি করা হয়না!রাস্তাজুড়ে খানাখন্দ আর ইটের খোয়ার সাথে কাদামাটির অপূর্ব সংমিশ্রণ।বাসগুলো ঝড়ের মধ্যে সাগরে ভেসে চলা আরব্য-রজনীর সিন্দাবাদের নৌকার মতো তুমুলভাবে দুলতে দুলতে এগিয়ে চলে পেটভর্তি যাত্রী নিয়ে ।বাস থেকে প্রতিবার নামার পর যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, আর এবারের মতো বাস উল্টে হাত-পা ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার শোকরগুজার করে।তবে শহরের কলেজগুলোতে পড়তে আসা তরুন ও যুবকেরা বেশ মজাই পায় এই বাস ভ্রমণে।বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে, ছাদে দলবেধে গান-বাজনা করে, আর ভেতরে সহপাঠী কিংবা কিশোরী স্কুল-কলেজগামী যাত্রীদের সাথে মাঝে মাঝেই বাসের দুলুনিতে গায়ে গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে নিত্য দিনের এই বাসভ্রমন তাদের কাছে রীতিমত অ্যাডভেঞ্চার! আর বাসের চাকা পাঙ্কচার হলে তো কোন কথাই নেই! হৈহুল্লোর করে নেমে সবাই খোশগল্প আর খোলাগলায় গানে মেতে ওঠে।এই সুযোগে তারা অপেক্ষাকৃত সুন্দরী কিশোরী সহযাত্রীনীর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য নানা ছলাকলা খূঁজতে থাকে।

তো যাই হোক।আষাঢ় মাসের এক বিকেলে সেই বটতলী বাসষ্ট্যান্ডে নিমতলীগামী একটি বাস ছাড়বে ছাড়বে করছে। এমন সময় দেখা গেল, অদূরেই সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা এক মধ্যবয়সী লোককে ঘিরে ধরেছে তিনটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে। লোকটার বগলে একটা কালো রং এর ছোট্র অফিসিয়াল ব্যাগ।বেচারা ভীষন বেকায়দায় পড়েছে পাবলিক টয়লেট এর সামনে।টয়লেট বলতে একটা লম্বা ড্রেনের পাশে দুটো করে ইট বসিয়ে বাঁশের চাটাই দিয়ে পৃথক করা একসারিতে পরপর সাজানো ত্রিকোণাকৃ্তির তিনটি প্রসাব করার জায়গা, একজন ব্যাক্তির দাঁড়াবার পক্ষে খুবই সংকীর্ণ!ভদ্রলোককে ঘিরে ধরেছে যে তিনটি বাচ্চা তার মধ্যে বড়টি চোখে কাজল আর মাথায় দুটি ঝুটি বাধা মিষ্টি চেহারার সাত-আট বছর বয়সি একটি মেয়ে।বাকি দুটি পাঁচ-ছয় বছর বয়সী ছেলে।তিনজনের চেহারাই বেশ নাদুসনুদুস।বোঝা যাচ্ছে মেয়েটাই এই দলের লিডার।ওরা কোনভাবেই লোকটাকে বাসের দিকে এগোতে দিচ্ছেনা। এদিকে বাসও ছেড়ে দেয় দেয় অবস্থা! এই বাস মিস হলে সর্বনাশ, পরের বাস সেই সন্ধ্যা সাতটায়! বেচারার অবস্থা বেগতিক। তিনি জানতেন না যে এই টয়লেট ব্যবহার করলে টাকা দিতে হয়।তিনি প্রসাব করে যেই বাসের দিকে এগুনো শুরু করেছেন অমনি এই ক্ষুদে তিনজন একেবারে বিচ্ছুবাহিনীর মত ঘিরে ধরেছে তাকে।লিডার মেয়েটি বলে ‘দুই ট্যাকা দেন’।লোকটি বলেন, ‘কিসের টাকা চাইস তোরা?’।মেয়েটি বলে, ‘পেচ্ছাব করলেন যে’। মাঝবয়সী ভদ্রলোক বলেন, ‘যে টয়লেট এর টয়লেট, সেইটার জন্যে ফির ট্যাকাও দেয়া নাগবে!’। মেয়েটিও ব্যঙ্গ করে বলে, ‘টয়লেট ব্যবহার করলে তো দেওয়া নাগবেই’। লোকটি ঈষৎ ধমক দিয়ে বলে ‘খুচরা টাকা নাই, আরেকদিন নেইস, যা ভাগ’। এবার ছোট ছেলে দুজনের মধ্যে একজন বলে ‘ট্যাকা না দিলে যাবার দেমোনা, ট্যাকা দিয়া যান’।তবুও লোকটি বাসের দিকে এগুতে থাকলে এবার দলের তিনজনই অদূরে জমে থাকা কাদা থেকে নিজেদের মুঠি ভর্তি করে কাদা তুলে নেয়, আর সমস্বরে বলতে থাকে ‘ট্যাকা না দিলে কিন্তুক গায়ে কাদো ছিটি দেমো, তাড়াতাড়ি ট্যাকা বাইর করেন’।এবারে ভদ্রলোক মহাবিপদে পড়ে যান!মানিব্যাগ হাতড়ে দেখেন সত্যিই কোন খুচরা টাকা নাই, কয়েকটা একশ টাকার নোট ছাড়া।পাশেই নিমতলিগামী বাসে উঠে পড়া যাত্রীরা বাসের জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে খুব মজা পায়। তাদের হাস্যরত মুখগুলো দেখে খুব লজ্জা পেয়ে যান মাঝবয়সী ভদ্রলোক।তিনি বাচ্চাগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলেন, ‘সত্যিই খুচরা টাকা নাইরে বাবা, আমি কালকেও শহরে আসবো, কালকে তোমাদের টাকা দেব’। কিন্তু তাদের লিডার অনড়। মেয়েটি বলে ‘ও বুঝচি, ফাকি দেওয়ার বুদ্ধি ! ট্যাকা না দিলে এই দিলাম কিন্তুক কাদো ছিটায়া, ট্যাকা দেন তাড়াতাড়ি’। এই বলেই মেয়েটি কাদা সমেত তার হাতটি পেছনে নিয়ে যায়, তার সঙ্গে সঙ্গে বাকী দুজনও কাদা ছিটানোর ভঙ্গী করে।ছিটিয়ে দেয় দেয় অবস্থা! এই সময় একজন বৃদ্ধ এগিয়ে আসেন। বৃদ্ধ ব্যাক্তিটি দুটি এক টাকার কয়েন মাটিতে ছুঁড়ে দিয়ে বাচ্চাগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন ‘এই হারামির বাচ্চারা, সর্ সর্, এই নে তোদের টাকা’।টাকা পেয়ে ওরা তিনজন সরে দাঁড়ালে মাঝ বয়সি লোকটি হাফ ছেড়ে বাঁচেন।উদ্ধারকারী বৃদ্ধের দিকে সকৃ্তজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন ‘কী যন্ত্রনা দেখে তো চাচা মিয়া, খুচরা টাকা একটাও ছিলোনা পকেটে কিন্তু এরা নাছোড়বান্দা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ’। বৃদ্ধ বললেন ‘ঠিক আছে, এইরকম হইতেই পারে, চলেন বাবা, বাস ছাড়ি দেবে, বাসে গিয়া গল্প করা যাবে’।তারা দুজন বাসে ওঠা মাত্রই যাত্রীরা নানানকথা বলা শুরু করল। একজন শুকনামতো লোক বললেন, ‘ এই মেথরের বাচ্চাগুলার সাহস দিন দিন বাড়তিছে, ছোট-বড়, ভদ্র-অভদ্র কিছুই মানেনা!’। আর একজন বৃদ্ধ গোছের মানুষ বললেন, ‘যত দোষ ঐ বাসষ্ট্যান্ডের কমিটির, শালারা যাত্রীগুলার জন্যে টয়লেট দিবা নায় কিন্তুক যাত্রীর ট্যাকা দিয়া বছর বছর নয়া নয়া বাস নামাইবে, এইগলাক আগে ঠিক করা দরকার’।একটা কলেজছাত্র বললো, ‘টয়লেট বানে দিলে ইজারার ট্যাকা খাইবে কেটা চাচামিয়া, ইজারা দিয়া টয়লেটের ট্যাকাও তো খায় এই বড়লোকগুলা, বাঙালী জাইতটায় তো খারাপ, খালি খাই খাই করে’। এহেন নানা গুঞ্জনের মধ্যেই হঠাৎ বাসের গায়ে জোরে জোরে দুইটা থাপ্পর দেয়ার শব্দের সাথে সাথে হেল্পার এর কন্ঠ শোনা যায় ‘ চলি গে-লো-অ বটতলী নিমতলী ডাইরেক্ট গেটলক, যা ওস্তাদ, বাড়ুক…

২.
বাসটা ছেড়ে যাওয়ার পর ক্ষুদের দলটা বটগাছের নিচের কংক্রিটের বেঞ্চগুলোতে এসে বসে। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে যোগ দেয় দলটার সাথে। ছেলেটির বয়স দশ বছরের কিছু কম হবে। সে এসেই মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ওই শান্তি, কয় ট্যাকা উঠছে রে? দে তো দেখি’। ‘বেশি ওঠে নাই, মাত্র দশ’ বলেই শান্তি খুচরা টাকাগুলো ছেলেটির হাতে তুলে দেয়। ছেলেটি টাকাগুলো গুনতে থাকলে শান্তি বলে, ‘ওই রতন, দুইটা ট্যাকা দেতো বিস্কুট খাই’। রতন বলে, ‘ইসস! শখ কতো, তিস্তার বালু দিয়া আগে দাত মাঞ্জি আয়, যা ভাগ’।এবার বাকী দুটি পিচ্চি শান্তির সাথে যোগ দিয়ে বলে, ‘দেওনা রতন দাদা বিস্কুট খাই, ও রতন দাদা দেওনা!’।রতন বটতলার চায়ের দোকান থেকে তিনটাকা দিয়ে ছয়টা বিস্কুট কিনে এনে ওদের তিনজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়।বিস্কুট পেয়ে ওরা মহা খুশি হয়। কংক্রিটের বেঞ্চে বসে পা দোলাতে দোলাতে ওরা বিস্কুট খেতে থাকে।রতন ওদের সাবধান করে দিয়ে বলে, ‘খবরদার, বাড়ীতে এই কথা কাকো কইসনা, তাইলে আর কোনদিন বিস্কুট কিনি দিবার নাও কিন্তুক!’। তিনজনই মাথা নেড়ে অভয় দেয় রতনকে।

‘আমি এস্কের বাত্তি জ্বালাবো, ও আমি এস্কের বাত্তি জ্বালাবো…’ গানের লাইনগুলি উচ্চস্বরে গাইতে গাইতে লুঙ্গি আর শার্ট পরিহিত মুখে অজস্র দাগবিশিষ্ট প্রায় পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর বয়সী একজন ছোকরা মতোন লোক এসে বাচ্চাগুলির সামনের বেঞ্চিতে বসে পড়ে।বাচ্চাগুলিও লোকটাকে দেখে তাঁর গানের তালে তালে মাথা দোলাতে থাকে।বোঝা যায় লোকটির সাথে তাদের পূর্বপরিচয় আছে। লোকটি এবার তাঁর সামনের বেঞ্চে বসে থাকা শান্তির দিকে অশ্লীলভাবে তাকিয়ে বলে, ‘কি রে শান্তি, কেমন আছিস? দিনদিন তো খালি ফুলতিছিস, ইচ্চা করে তোক কাঁচায় খায়া ফেলাও!’। কথাটা বলেই সে শান্তিকে হাত ধরে টেনে এনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে শান্তির ঘাড়ে, গালে নিজের গাল ঘষতে থাকে। শান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করে, পারেনা।অন্য বাচ্চাদুটি এই দৃশ্য দেখে খিলখিল করে হাসতে থাকে। লোকটা পাশে বসে থাকা রতন কে বলে, ‘কিরে, শান্তির সাথে প্রেম করিস নাকি তুই?’। রতন লজ্জা পেয়ে বলে, ‘কি কন এইগলা?, শান্তি তো মোর কাকাতো বইন হয়’।শান্তির শরীরটাকে নিজের কোলের মধ্যে দুইহাতের ভেতর জোরে চেপে ধরে দলতে দলতে লোকটা বলে, ‘আরে রতন, বুঝলিনা রে, এইটা বড় হইলে একটা ডাসা মাল হইবে রে!, হাত ছাড়া করিস না। আর তো মাত্র কয়েকটা বছর তারপর উয়াক বিয়া করবু আর খালি…’ দুই হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে একটা খারাপ ইঙ্গিত করে দেখায়। রতন, শান্তি আর ছোট দুইটা খিলখিল করে হেসে ওঠে।শান্তি লোকটার চুলগুলো ধরে টানাটানি করতে থাকে।মুখ দিয়ে একধরনের শব্দ করতে করতে লোকটা বলে, ‘আহারে শান্তি, তুই কুনদিন বড় হবু রে, আর যে দেরি সয়না!’ রতন শান্তিকে বলে ‘আব তু বাড়ি যা শান্তি’। ‘মোবাইল মে গান শুনকার যাউঙ্গি’ বলে শান্তি লোকটার পকেটে থাকা মোবাইলটা বের করার চেষ্টা করে।লোকটা বলে ‘চার্জ নাই’। শান্তি বলে ‘খালি অ্যাকবার সুনবো’।লোকটি তখন তার মোবাইলে ‘আমি এস্কের বাত্তি জ্বালাবো, ও আমি এস্কের বাত্তি জ্বালাবো…’ গানটা বাজিয়ে দেয় আর তার কোলে বসা শান্তির নাদুসনুদুস শরীরটাকে দলতে থাকে অতৃপ্ত কামনায় আর বলতে থাকে, ‘ ইসরে শান্তি! তোর স্বামীটা যে কি মজা পাইবোরে…!’।শান্তি খিলখিল করে হাসতে থাকে। লোকটা জিজ্ঞেস করে, ‘বিস্কুট খাবু শান্তি?’। শান্তি উত্তর দেয় ‘না, খাইছি’। লোকটা ফের বলে ‘মোবাইলে গান শুনবু?’। শান্তি বলে ‘হ, আর একটা গান বাজা’।লোকটা বলে ‘ইসস, মাগীর শখ কতো! গান শুনবার চাইলে মোক চুমা দেওয়া নাগবে, দে চুমা দে, তাইলে গান শুনাইম, যয়টা চুমা তয়টা গান’। শান্তি মোবাইলটা তাঁর পকেট থেকে নিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। রাগ করার কপট ভঙ্গী দেখিয়ে মোবাইলটা তুলে নেয় লোকটা।এর মধ্যে একজন ডাক দিলে শান্তির গালে একটা জোর চুমু খেয়ে উঠে যায় লোকটা। অদূরের শ্রমিক সমিতির অফিসে ঢুকতে দেখা যায় তাকে।শান্তিরা আবার দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে নিজেদের মধ্যে ।

৩.
রাত আটটা নাগাদ লোকজনের ভীড় কমে আসে বটতলি বাসষ্ট্যান্ডে।শান্তি আর রতনের দাদু হরিয়া বটতলীতে আসে। এসেই শান্তির উদ্দেশ্যে বলে ‘কি রে, এতো রাত হয়ে গেলো তু বাড়ি যাইস নাই ক্যানে? যা বাড়ি যা, তোর মা তোকে ডাইকছে’। শান্তি দাদুর ধুতি টেনে ধরে বলে ‘বিস্কুট কিনে দে তাহলে’। হরিয়া বিস্কুট কিনে দিয়ে শান্তিকে বাড়িতে পাঠায়।হরিয়া নিজের ছোট্র কাঁচের গেলাসটা চায়ের দোকানদার বুড়ো কার্তিক এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘দেও দাদা দেখি এক কাপ চা, আইজ সারাদিন চা খাওয়া হয় নাই’।দোকানী গেলাশের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে কন্ডেন্সড মিল্ক এর কৌ্টায় গরম করা চা থেকে ঢেলে হরিয়ার গেলাশটা ভর্তি করে দিলে হরিয়া চা খেতে খেতে বলে, ‘আকাশে যা মেঘ, বৃষ্টি বুঝি নামবে খুব কার্তিকদা, তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করো’। কার্তিক হরিয়াকে বটগাছের গুড়িটার আড়ালে যাওয়ার ইঙ্গিত করে। হরিয়া গুড়িটার আড়ালে এলে কার্তিক দোকানদার তাঁর কাছে এসে বলে, ‘তোর নাতনীটারে সাবধানে রাখ হরিয়া, ছয়ফুইল্যা প্রতিদিন তোর নাতনীটাক কোলত নিয়া নানান খারাপ কথা কয় আর শরীরটা ছানাছানি করে।গত কয়েকদিন হইলো বিষয়টা মোর চোখত পড়তিছে, কুনদিন না জানি কি একটা অঘটন ঘটি যায়!’। কার্তিকের কথা শুনে হরিয়া বলে, ‘কি করিম কওতো কার্তিক দা? মুই বুড়া মানুষ, সারাদিন শুকরগুলা চরাই। মোর বউটা মারা যাওয়ার পর ঐ শান্তির মা বউটাই তো স্কুলের ডিউটি করি আসি রান্নাবান্নাসহ বাড়ির সব কাজ করে।ছেলে দুইটা তো মোর চাকরী করে কুড়িগ্রাম, মাসে দুই মাসে আইসে।ওই পিচ্চিগুলা ছাড়া আর কাকে এই টয়লেট এর টাকা তুলতে পাঠাই?’ কার্তিক বুদ্ধি দেয়, ‘সমিতির সেক্রেটারিরে বিষয়টা জানাও হরিয়া, তিনি ছয়ফুইল্যারে একটু কয়া দিলেই সব ঠিক হয়া যাইবে’। ‘দেখি কি করা যায়’ বলে হরিয়া টেপের পানিতে নিজের গেলাশটা ধুয়ে নিয়ে ধুতির খুটে মুছতে মুছতে বাড়ির দিকে চলে যায়।

৪.
দিনদুয়েক পর হরিয়া একটু ফুরসৎ পেয়ে বাসষ্ট্যান্ডে এসেই দেখে বটতলার বেঞ্চিতে ছয়ফুল শান্তিকে কোলে নিয়ে দুষ্টুমি করছে আর শান্তি খিলখিল করে হাসছে।হরিয়াকে দেখা মাত্রই শান্তিকে ছেড়ে দিয়ে ছয়ফুল জিজ্ঞেস করে, ‘কি হে হরিয়া, কেমন চলছে?’। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রেগে গেলেও মুখে হাসির ভাব এনে হরিয়া জবাব দেয়, ‘জি বাবু, আপনাদের দয়ায় কেটে যাচ্ছে একরকম’। এরপর শান্তিকে বলে ‘ তুর মা ডাকছে, তু বাড়ি যা রে শান্তি’। শান্তি বাড়ির দিকে চলে গেলে হরিয়া শ্রমিক সমিতির অফিস ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সেক্রটারি মানিক মৃধার আশায় দাঁড়িয়ে থেকেও ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ডাক দেয় সে, ‘সেক্রেটারি বাবু আছেন ভেতরে?’। ভেতর থেকে ঝাঝালো কন্ঠে আওয়াজ আসে, ‘কে রে ডাকে?’। সে জবাব দেয়, ‘আমি হরিয়া বাবু, একটু আর্জি ছিলো, যদি দেখা দিতেন একটু’। সেক্রেটারি বলেন, ‘বটতলায় অপেক্ষা কর্, একটু পরে আসছি’।প্রায় ঘন্টাখানেক পর সেক্রেটারি মানিক মৃধা বটতলায় চায়ের দোকানে এলে হরিয়া তাকে একটু বটগাছের গুড়ির আড়ালে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে অনুরোধ করে।বিরক্ত মুখে সেক্রেটারি গুড়িটার আড়ালে গিয়ে বলে, ‘কি ব্যাপার রে হরিয়া, কী এমন গোপন কথা তোর?’। হরিয়া তখন তাকে ছয়ফুল এর আচরণ এর কথা এবং নাতনীকে ঘিরে তার আশংকার কথা খুলে বলে। সেই সঙ্গে জানায় যে, যদি সেক্রেটারি সাহেব ছয়ফুলকে একটু বলে দেয় তবে সে একটু চিন্তামুক্ত হয়। এই কথা শুনে সেক্রেটারি বলেন যে, ‘ঠিক আছে, তুই আইজকা সইন্ধাবেলায় অফিসরুমে আয়, দেখি কী করা যায়’। হরিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, ‘বাবু এত কিছু করার দরকার নাই, আপনি যদি দয়া করে ব্যাক্তিগতভাবে ছয়ফুলকে একটু বলে দেন তাতেই কাজ হবে’।‘সন্ধ্যায় অফিসরুমে আসিস’ বলে সেক্রেটারি চলে যান।

৫.
সন্ধ্যাবেলায় সেক্রেটারি সাহেব ছয়ফুলসহ আট-দশ জন শ্রমিক সদস্য ও হরিয়াকে নিয়ে সমিতির অফিসকক্ষে মিটিং এ বসেছেন।কাঁচা ঘরের মেঝেতে বসেছে হরিয়া, বাকিরা বেঞ্চে বসেছে, আর সেক্রেটারি সাহেব তার নির্ধারিত চেয়ারে। সেক্রেটারি সাহেব শুরু করলেন, ‘হরিয়া বল তোর কী অভিযোগ?’। হরিয়া অপ্রতিভ হয়ে বলে, ‘না, ঠিক অভিযোগ নয় হুজুর, আপনাকে তো তখন খুলেই বললাম, আপনাদের দয়ায় ছেলেপুলে নিয়ে বেচেবর্তে আছি। আমাদের ভালোমন্দ তো আপনারাই দেখেন বাবু, আর কোথায় যাব আমরা, তাই আপনাকেই বলেছি’।সেক্রেটারি এবার ছয়ফুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ছয়ফুল, তুই হরিয়ার নাতনী শান্তির সাথে মাঝে মাঝেই অশ্লীল কথাবার্তা বলিস, কোলে নিয়ে নাড়াচাড়া করিস, এইসব কোন ধরনের আচরণ?’। ছয়ফুল রাগে লাল হয়ে ওঠে। ‘এই মেথরের বাচ্চার এতবড় আস্পর্ধা! আমার নামে এতবড় মিথ্যা অপবাদ দিছে! শালা, আইজকা তোর একদিন কী মোর একদিন’ বলেই হরিয়ার দিকে তেড়ে আসে সে।তখন দুই-তিনজন তাকে থামিয়ে আবার বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। হরিয়া মাথা নিচু করে থাকে। সেক্রেটারি সাহেব ছয়ফুলকে ধমক দিয়ে নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলার নির্দেশ দেন।ছয়ফুল বলে, ‘এই ধরনের মিথ্যা অপবাদ শুনলে কার মাথা ঠিক থাকে নেতা কন্ তো?এই মেথরের জাতক কী হামরা কেউ ছুই?উয়ার নাতনীটা একনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, দেখতেও মায়াবি, আর মোর মোবাইল দিয়া গান শোনার জন্যে মাঝে মাঝেই মোর আশে পাশে ঘুরঘুর করে। সেইজন্যে চেংরিটার প্রতি মোর মায়া জন্মি গেইছে, ছইল মানুষ আল্লাহর দান, তাই জন্যে উয়াক একনা আদর-স্নেহ করো কিন্তুক তাই বলি এতবড় খারাপ অভিযোগ! ছি ছি ছি!শালা মেথরের জাইতটায় খারাপ, এইগলা মাইনষে নোয়ায়’।উপস্থিত সদস্যদের মধ্য থেকে ফর্সা মতন একজন বলে ওঠেন, ‘আরে হরিয়ার নাতনীর বয়েস তো খুবেই কম, এলাও খালি গায়ে ঘোরে, উয়ার সাথে ছয়ফুল এইসব করবে, নাহ্, এটা বিশ্বাস হয়না’।মেয়েদের মত করে কথা বলা একজন বলে ওঠে, ‘ আরে বাসষ্ট্যান্ড এলাকাত কী চেংরি মাইনসের অভাব পড়ছে নাকি রে হরিয়া, যে ছয়ফুল শান্তির কাছে যাইবে? তোর নাতনীর তো এলাও বুকে ওঠে নাই’।বক্তার মেয়েলী ঢং এ বলা এই কথা শুনে কয়েকজন সমস্বরে হাসতে থাকে।অপেক্ষাকৃত তরুন একটি ছেলে বলে, ‘আরে হরিয়া, নাতনীটা আরো বড় হউক, তখন না হয় এইঙ্কা কাহিনী বানেয়া কিছু ট্যাকা-পইসা কামাইস। এত তাড়াহুড়া ক্যান! একনা ধৈর্য ধর’। এইসব তীর্যক মন্তব্যে হরিয়ার দুই কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে, আর কোন শব্দই যেন সে শুনতে পায়না, লজ্জায় মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধুরন্ধর টাইপের একজন সেক্রেটারিকে উদ্দেশ্যে বলে, ‘ধুরো! কী সব আউল-ফাউল বিষয় নিয়া মিটিং ডাকেন, খালি সমায় নষ্ট’।

এবার সেক্রেটারি সাহেব হরিয়াকে বলেন, ‘তোর কোন সাক্ষী আছে?’। হরিয়া বলে, ‘আছে, কার্তিক বুড়া সাক্ষী আছে, তার কাছ থাকিয়ায় প্রথম এই বিষয়ে শুনছিলাম বাবু, কিন্তুক গুরুত্ব দেই নাই। আইজকা নিজের চোখে দেখার পর আপনার কাছে বলছি’। সেক্রেটারি সাহেব তখন উপস্থিতদের মধ্য থেকে একজনকে বললেন, ‘সবুজ, যা তো, কার্তিক বুড়াক ডাকি আন’।

কিছুক্ষণ পর কার্তিক বুড়াসহ সবুজ আসলে তাকে সেক্রেটারি জিজ্ঞেস করেন, ‘কার্তিক, ছয়ফুল আর শান্তির বিষয়ে তুই কিছু জানিস কী না? জানলে খোলাসা করি কও সবার সামনে’। কার্তিক বুড়া বলে যে সে এই বিষয়ে কিচ্ছু জানেনা। একজন বলে, ‘হরিয়া তো কইলো তুই বলে উয়াক প্রথমে এই কথা কচলু?’। কার্তিক বলে, ‘মিছা কথা, মুই উয়াক কিছুই কও নাই, খামোখা মোক এইগলাত জড়াইতোছে’। সেক্রেটারি এবার খুবই খারাপ ভাষায় হরিয়াকে গালিগালাজ শুরু করলেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ না করার জন্য সাবধান করে দিয়ে অফিসরুম থেকে চলে যেতে বললেন।

বটতলায় এসে হরিয়া বুড়ো কার্তিকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পরে কার্তিক আসে। এসেই হরিয়ার হাত ধরে আকুল হয়ে বলতে থাকে, ‘এই দোকানটাই মোর বুড়া বয়সের সম্বল, তোর পক্ষে সাক্ষী দেলে এই দোকান থাকি মোক উচ্ছেদ করার হুমকী দিছে সবুজ। সেইজন্যে সালিশত মিছা কথা কওয়া নাগছে, তুই কিছু মনে করিসনা হরিয়া’। হরিয়ার দু’চোখে জল নেমে আসে।পৃথিবীটাকে তাঁর কাছে খুব হাস্যকর ঠেকে। মনে হয় এটা একটা সার্কাসের প্যান্ডেল!মানবতার ধ্বজাধারী এই তথাকথিত সভ্য মানুষগুলোকে টয়লেটের ট্যাংকির ভেতর পচে যাওয়া মলমুত্রের চেয়েও দূর্গন্ধযুক্ত বলে মনে হয় তাঁর।তুমূল ঘৃণায় নাড়িভূঁড়ি উল্টে আসতে চায়।বমি করে দিয়ে এই সমাজটাকে ঢেকে দেয়ার এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে তাঁর মনে।

বাড়িতে ফিরে এসে প্রচন্ড কষ্ট আর অভিমানে ভাত না খেয়েই শুয়ে পড়ে হরিয়া।পরদিন সকালে রতনের কান্না মিশ্রিত আকুল ডাকে ঘুম ভেঙে যায়।বন্ধ দরজার ওপার থেকে রতনের কান্না মিশ্রিত ডাকগুলো কানে ভেসে আসে তাঁর ‘হেই দাদা, দাদা, তাড়াতাড়ি উঠ্ রে দাদা, হামাদের টয়লেটের ইজারা বাতিল কারকে ছমিতি এক নতুন ইজারাদার বসাইছে রে দাদা, তাড়াতাড়ি চলরে দাদা, তাড়াতাড়ি চল্’…
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
godhuli sondha চমৎকার লেখা ! অনেক ভালো লাগলো লেখার ধরণ ও বিষয়বস্তু। ভোট ও শুভেচ্ছা দুই-ই রেখে গেলাম।
সূনৃত সুজন ভালই লাগলো ...আমার লেখা পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ...
আখতারুজ্জামান সোহাগ সাবলীল আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার, কাহিনী বিন্যাস, শব্দচয়ন, গল্প বলার ভঙ্গি- সব কিছুই দারুণ। খুব ভালো লেগেছে ভাই। শুভকামনা।
সকাল রয় সুন্দর ভাষারুপ গল্প। বিন্যাসও সুন্দর। ভালো লাগা।
বুলবুল দরবেশ কেমন করে লেখেন এইসব ভাই ? কী অতুলনীয় পর্যবেক্ষন ক্ষমতা আপনার! কী প্রখর জীবনবোধ! ... ''হরিয়ার দু’চোখে জল নেমে আসে।পৃথিবীটাকে তাঁর কাছে খুব হাস্যকর ঠেকে। মনে হয় এটা একটা সার্কাসের প্যান্ডেল!মানবতার ধ্বজাধারী এই তথাকথিত সভ্য মানুষগুলোকে টয়লেটের ট্যাংকির ভেতর পচে যাওয়া মলমুত্রের চেয়েও দূর্গন্ধযুক্ত বলে মনে হয় তাঁর।তুমূল ঘৃণায় নাড়িভূঁড়ি উল্টে আসতে চায়।বমি করে দিয়ে এই সমাজটাকে ঢেকে দেয়ার এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে তাঁর মনে।''... এমন তীর্যক শ্লেষ , এমন শানিত শব্দের ব্যবহার আমাকে খুব আশাবাদী করে তুললো। কে বলেছে আমাদের সাহিত্য দিনদিন ঝিমিয়ে পড়ছে? গল্পকবিতা ডট কম কর্তৃপক্ষ কে শুভচ্ছা এমন একটা প্লাটফর্ম সৃষ্টি করে দেবার জন্য। আপনার লেখক জীবনের দীর্ঘায়ূ কামনা করছি ফাহিম ভাই।
শামীম খান প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর লেখা এমন কাহিনী খুব কম পড়েছি । লেখার পরতে পরতে আমি ভুঁইমালী সমাজের জীবনের হাসি কান্না দেখেছি । এ সংখার খুব ভাল লেখা তিন চারটি গল্পের মধ্যে এটি একটি । ভাল লাগা আর ভোট রেখে গেলাম । শুভকামনা ।
বিবাগী বিদ্যুৎ উফফ ! কী অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম! অসহায়ত্বের এমন বহুমাত্রিক বর্ণনা এত স্বল্প পরিসরে এত চমতকার করে একেছেন যে একটা ক্লাসিক চিত্রকর্ম বলে মনে হচ্ছে। সমাজে যে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃ্ত শক্তিশালী মানুষগুলোর কাছে অসহায় আর সেগুলো যে অন্তরালেই আমাদের অলক্ষেই থাকে তার এক কাব্যিক বর্ণনা পেলাম এই লেখাটায়।অভিনন্দন আপনাকে, আপনার আরো ভালো ভালো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম অবোধ্য ফাহিম ভাই।
মালেক জোমাদ্দার চমৎকার লিখেছেন ভাই !!! । আমার লেখা পড়ার অনুরোধ থাকলো। শুভ কামনা।

০৫ মে - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪