নাইনা তীর্থ পথের যাত্রী

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

শেখর সিরাজ
  • ১৯
  • 0
  • ৬৮
নাইনা নিরুদ্দেশ সবাই বলে-কিন্তু আমি জানি ও এ শহরেই আছে।আমার অবচেতন মন বলছে-অপ্রসন্ন ভাগ্য দেবতাকে প্রবোধ দেই।আমার পুরোনো আমলের বাবা মাকে নিরর্থক দোষ দিয়ে কি হবে।তারা বংশ পরম্পরা পাওয়া মুল্যবোধ রক্ষণশীলতার ধ্বজার শেষ সলতেটুকু আঁকড়ে পড়ে আছেন কখন পটল তুলবেন।কিন্তু নাইনা আধুনিক শিক্ষিতা আত্ম নির্ভশীল মেয়ে।শিক্ষার মহান গুনের সর্ব গুনে শিক্ষিতা।আমি মদন মোহন লাল বামন হয়ে চাঁদ ঘরে এনেছিলাম।বিয়ের প্রথম মাসেই বলল-ওগো শুনেছ,বল শুনছি-আরে এদিকে তাকাও না।আমি শুয়ে শুয়ে সাপ্তাহিক কাগজের ক্রোড়পত্র পড়ছিলাম।শঙ্খচিলের মতো ছোঁ মেরে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিল।বলল-সারাদিন পেপার পত্রিকায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকলে চলবে।এবার একটু ভূত ভবিষ্যতের দিকে মন দাও।আজ দুজন আছি।কাল তিনজন……বাবা মা ভাই বোন কে দেখে দেখেই কি জীবন যৌবন সব খুইয়ে বসবে।তবে আর আমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলে কেন?-আমি বললাম এসব তুমি কি বলছ নাইনা।তোমাকে বিয়ে করেছি বলে কি বাবা মা,ভাইবোনকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে হবে।নাইনা একটু আদুরে আদুরে গলায় বলল-আমি কি তাই বলেছি নাকি।
-তবে।
-তবে কি?
-আমি ঠিক তোমাদের এখানে মানিয়ে নিতে পারছি না।-কেন?সমস্যা কোথায়?আমি তো দিব্যি তেতত্রিশ বছর নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিলাম।আমার তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না।নাইনা অনেকটা খেপে গিয়ে বলল-তাই বলে আমার যে সমস্যা হবে না।এটা কেমন কথা।সমস্যার ফিরিস্তি দিয়ে সব কিছু তোমাকে বোঝাতে পারবো না।-যে কথা বোঝাতে পারো না।সে কথা না বললেই পারো।

নাইনা মশারি খাটিয়ে পাশ ফিরে গাল ফুলিয়ে শুয়ে থাকে।শরীরে হাত দিলে ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে দেয়।অথচয় এমনটি তো নাইনা কখনও ছিল না।বাইরে থেকে মানুষকে যতটা না চেনা যায় তার চেয়ে বরং একেই ছাদের নিচে এক সঙ্গে বসবাস করতে গেলে ঘরের বাইরের মানুষটিকেও তখন অনেক বেশি করে চেনা যায়।

বিয়ের আগে যখন সবে মাত্র দুজনার ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।পরস্পরকে চেনা জানা শুরু করেছি।নাইনার অফিস ছুটি হওয়ার আগেই আমি গজনী লেনের মোড়ে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।প্রেমের শুরুতে হয়তো সব পুরুষদেরেই তার নবাগত প্রেমিকার প্রতি একরকম একটা অগ্রীম দায়বদ্ধতা এসে যায়। নাইনা তার কাঁধের ভ্যানটি ব্যাগ থেকে টিসু কাগজ বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল-অফিস থেকে বের হতে আজও দেরি হয়ে গেল।রোজ এমন হচ্ছে।কি করবো বল,হাতের কাজ শেষ না করে উঠি কি করে।ম্যানেজার লোকটিও খুব সুবিধের নয়।খুব খচ্চর,কথায় কথায় নাক কচলান।হাঁটতে হাঁটতে আমরা গজনী লেন পার হয়ে অনেকটা পথ সামনে এগিয়ে এসেছি।

নাইনা বলল-আর হাঁটতে পারছি না।চলন্ত একটা খালি রিকশা যেতে দেখে দরদাম না কষিয়ে উঠে পড়ল।এই উঠে এসো।তুমি আবার দাঁড়িয়ে আছো কেন?আমার হাত ধরে টেনে রিকশায় উঠিয়ে নিতো।রিকশার হুট্ উঠিয়ে দিয়ে আমার একটি হাত নাইনার কামিজের নিচ দিয়ে ছেলোয়ারের উড়নি বরাবর কোমরের কাছে নিয়ে বলতো-ধরে রাখো,ভালো লাগে।

আমি একটু হেসেই বলি-এতো অল্পতেই,পুরোটা পেলে………নাইনা আমার দিকে বড় বড় চোখ রাঙ্গিয়ে বলতো-দেখো চুপচাপ বসে থাকো।তা না হলে চলন্ত রিকশা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।একদম ফাজলামি করবে না।নতুন জোয়ার ভাঙ্গা উদ্দাল প্রেম জমতে না জমতে সম্পর্কের গভীরতা এতো দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছিল।

সেই নাইনা এখন কথায় কথায় ভেটকি মাছের মতো গাল দুটো ফুলিয়ে রাখে।শরীরে হাত দিলে ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে দেই।আমিও পাশ ফিরে শুয়ে থাকি।ঘুম আসে না।তন্দ্রার ভিতর জেগে থাকি।জীবন চলার পথে অনেক দুঃখ যন্ত্রণা কষ্টের বৈতরণী পার হয়ে এসেছি।অনেক না পাওয়া আশার ইচ্ছা অনিচ্ছার অকাল মৃত্যু হয়েছে।সব কিছু ভুলে থাকতে চেয়েছিলাম নাইকে আশ্রয় কেন্দ্র করে।জানতাম একজন আমার পথ চেয়ে আছে অধীর আগ্রহে।খোলা জানালার গ্রীল ধরে প্রসন্ন উদার দৃষ্টি মেলে।বেলা শেষে বাড়ি ফিরে এসে তার আদর সোহাগে সারাদিনের কর্ম ক্লান্তি ধুয়ে মুছে অশরীরী ভর করবে।তার পেজো তুলো নরম বুকে মাথা রেখে শুনবো অজস্র সুখ সহানুভূতি পায়রার বাকবাকুম।

কিন্তু মন সেদিন আমার রীতি মতো বিদ্রোহ সুরে বলেছে-নাইনা আমার জীবনে হয়তো আর বেশি দিন টিকবে না।খুবতো বেশি দিনের কথা নয়।এখন নাইনা নিশ্চয় দক্ষিণের জানালার গ্রীল ধরে ভাবছে।আমাকে বিয়ে করে নাইনা খুব ঠকে গেছে।বিয়ের পর মেয়েদের এমন অনেক অদ্ভুত চিন্তা ভাবনার খৈ ফুটে।
আচ্ছা আমার সাথে বিয়ে না হয়ে যদি নাইনার অন্য কোথাও বড় সচ্ছল ঘরে বিয়ে হতো।স্বামী সন্তান নিয়ে জীবনটাকে স্বাচ্ছন্দ্যে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে নিয়ে যেত অনায়াসে।স্বামী বরটির সরকারী জীব ছাড়াও নিজের কেনা গাড়ি হাঁকান।কলোনি ছেড়ে আধুনিক এ্যার্পাটমেন্টের ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন।সন্ধ্যায় হয়তো রাতের কোনও ডিনার পার্টিতে যান।কিংবা কোনও দামী রেস্টুরেন্টে যেয়ে রাতের ডিনার সেরে আসেন।বছরে বছরে ছুটি কাটাতে যেতেন দার্জিলিং।লোকসমাগমে সন্তানদের জম্ম দিন উদ্যাপন করে হৈচৈ ফেলে দিতেন।কোনও অভাব নেই,অভিযোগের ইস্তেহার নেই।সে এক বিলাস বহুল আড়ম্বর সুখী দাম্পত্য জীবন।
আমাকে বিয়ে না করলেও এমন কোনও ক্ষতি ছিল না।এমন না যে আমি তাকে কোনও টোপের মুখে ফেলেছি।বড় লোকের আদুরে ঘরের মেয়ে না হলেও মোটামুটি মধ্যবিত্ত ঘরের সচ্ছল পরিবারের মেয়ে নাইনা।একটু চেষ্টার সঙ্গে তদবির চালালে হয়তো উচ্চ পদস্হ সরকারী চাকুরি জীবি বর জুটাতে তেমন কোনও অসুবিধে ছিল না।নাইনার শরীরের রং ময়লা তবে দেখতে নেহাত মন্দ নয়।আট দশজন মেয়ের মধ্যে থেকে আলাদা ভাবে সহজেই সনাক্ত করা যায়।বড় স্বাধীন চেতা সৌখিন স্বভাবের মেয়ে নাইনা।
নিজেই চাকুরি করতো গজনী লেনের বড় ঔষধ কোম্পানিতে।কত ধরনের লোকের সাথে জানাশুনা উঠা বসা পরিচয় তাদের মধ্যে কি আমার চেয়ে সুদর্শন ছেলের অভাব ছিল?আমি তো সেই তুলনাই তাদের নখেরও যোগ্য নই।আমার কোনও এম এসসি বিএসসি ডিগ্রী নেই।আমি নিতান্ত হাভাতা অভাবের সংসারে কোনও রকম টেনে হিঁচড়ে দু কলম লেখাপড়া করতে শিখেছি।তাতে হয়তো বড় জোর মুড়ি মোয়া বিক্রি করা চলে।কিন্তু নাইনার মতো শিক্ষিতা স্বাধিন চেতা সৌখিন স্বভাবের মেয়ের সামনে বিদ্যে জাহির করে অন্তত পণ্ডিত্য চলে না।সব কিছুর বিশদ বিবরনের তথ্য উদ্ঘাটন করেই তো এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছিল।তারপর কেন এই চলে যাওয়া।পুরোনো দগদগে ক্ষত চিহ্ন মাঝে মধ্যেই ব্যথায় বুকটা টনটনিয়ে উঠে।
পরিচয় পর্বের সূত্র ধরে প্রেম ভালোবাসা অতপর বিয়ে।দীর্ঘ আট বছর আমার পিঠের উপর সওয়ার হয়ে দৌড়ালে।কোনও বাঁধা বিঘ্নের মুখোমুখি হয়নি।সেই নাইনা বিয়ের পর কেমন দ্রুত পাল্টে যেতে লাগল।ঘন ঘন সাপের সলম পাল্টানোর মত পরিবর্তন।আমার কাছে যা স্বাভাবিক নাইনার কাছে তাই যেন অস্বাভাবিক ঠেকে।দিন দিন যেন মত বিরোধ চাঙ্গা দিয়ে উঠছিল।মাথার উপড়ের ছাদ আর ঘরের চার দেয়াল থাকলেই কি সংসার হয়।বোধোদয় হয় না।তার জন্য হয়তো সম্পর্কের ভিতটাকেও আরও শক্ত করতে হয়।
চট করে সেদিন মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল।মুখ চোরা লাজুক শান্ত স্বভাবের ছেলেটিও ক্রোধে আক্রোশে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে উঠেছিল।ক্রোধের সূচো ফুঠোয় একটা হাত উঠে গিয়েছিল নাইনার বা পাশের গালে-তুমি,তুমি শেষ পর্যন্ত আমার গায়ে হাত উঠালে।আমি বললাম-এখন শুধু হাত উঠেছে।প্রয়োজন হলে একে একে আরও অনেক কিছুই উঠবে।কাজটা কিন্তু ভালো করলে না।তুমি-মহিন।রাগের মাথায় কি আর মানুষের ভালো মন্দ জ্ঞান থাকে।

আমি চুপ চাপ খাটের এক পাশে বসে ছিলাম।নাইনা গজরাতে গজরাতে বলল-আর এক মূহুর্ত এখানে নয়।মশারী খাটানোর ফ্রেমে ঝুলানো শাড়ি ছায়া ব্লাউজ ব্রা আরও টুকি টাকি টুথ ব্রাশটাও পটাপট হালকা একটা সুটকেসে গুঁজে নিল।সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার কথা মাথায় এলো না।সুটকেস হাতে নিয়ে নাইনা হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো।চোখের সামনে দিয়ে.....
দরজার ও পাশে বোধোদয় বাবা মা দুজনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।বাবাকে বলতে শুনলাম-বউমা এই ভরা সন্ধ্যায় কোথায় চললে।কথা শোনো মা-সংসারে এক সঙ্গে থাকতে গেলে একটু আধটু ঠোকাঠুকি লাগে।ছেলের বউ ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।একথা লোকে শুনলেও তো ছি-ছি করে বেড়াবে।তোমার এই বুড়ো বাপটার কথাও রাখবে না।ও মহিন-বউ মা যে চলে যাচ্ছে।
আমি ঘর থেকে বের হতেই সুমন অর্চনা দৌড়ে গিয়ে নাইনার শাড়ির আঁচল ধরে টানতে টানতে বলল-ভাবি বাড়ি ফিরে চলো।ভাইয়াকে তুমি চিনোনা।ভাইয়ার রাগ এখুনি পড়ে যাবে।
বড় রাস্তায় উঠে নাইনাকে আবার বলতে শুনলাম-ন্যাকামি করতে হবে না।নাইনা হাত উঠিয়ে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে উঠে পড়ল।ভেবে ছিলাম দু চার দিন মায়ের বাসায় থেকে ফিরে আসবে।সেই যে রাগের মাথায় বাড়ি ছাড়ল।আর ফিরে এলো না।
বুঝতে পারেনি নাইনার আত্ম সম্মানে এতোটা ঘা লাগবে।সে জন্য আমিও কি কম তুষের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরিনী।রাতের পর রাত বিছানায় যেয়ে একা ঘুমাতে পারি না।এখনও পারি না।ঘুমাতে গেলেই সেই উদ্দাল জোয়ার ভাঙ্গা প্রেম মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
আজও আমি একাকীত্বের নিঃসঙ্গতায় ভারে মধ্য দুপুরের ক্লান্ত পথিকটির মতো নুয়ে পড়েছি।কিন্তু আর কত?আমার কথা কি নাইনার একটি বারের জন্য মনে পড়ে না।আজ আমাদের বিয়ের পঞ্চ বার্ষিকী।এ দিনটি এলে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না।মা বলে খোকা-আর কত ওর পথ চেয়ে থাকবি।একজন গিয়েছে তো অন্য জন আসবে।আবার বিয়ে থা করে সংসারী হবি।তার পথ চেয়ে থেকে থেকে কি বিয়ের বয়সটাও পার করে দিবি।দিন রাত মায়ের অন্তর সার শুন্য শান্তনার বাণী শুনি।আমি মায়ের সামনে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না।কিন্তু মা আমার হাবে ভাবে ঠিকেই বুঝে যেত,শত হলেও মা তো….ঠিক সন্তানের ব্যথা বেদনা কোথায় লুকিয়ে আছে টের পেয়ে যেত।আমি মায়ের সামনে থেকে চুপচাপ উঠে যেতাম।
বাবা মায়ের গোপনে নাইনার পরিচিত বন্ধু মহলে একটু আধটু খোঁজ খবর নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি।মেয়েটা আমাকে এমনি করে শুকনো একটা ছ্যাঁক দিতে পারল।তবুও কেন জানি নাইনার প্রতি এখনও আমার এক নিষ্ঠা সমান্তরাল ভালোবাসর কোনও ঘাটতি পড়েনি।বরং উত্তর উত্তর তা যেন দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।তবুও নাইনার সামনে আমাকে একটি বারের জন্য হলেও মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।আর কত বসন্তের কোকিল হয়ে এ ডালে ও ডালে উড়ে পালিয়ে বেড়াবে।আমার সুন্দর ছন্দময় স্বাভাবিক জীবনটাকে নিয়ে জুয়াচুরি খেলার কোনও অধিকার নাইনার নেই।
ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ভালোবাসার ইতিহাসে অনেক বেদনাদায়ক করুন ট্রাজেডী আছে।আমি জানি-প্রেম পরিণয় ভাঙ্গন।ক্ষেত্র বিশেষ ভাগ্য দেবতা অপ্রসন্ন হলে মৃত্যুর হিম শীতল অমৃত সুরা পান করতে মানুষ দ্বিধা বোধ করেনা।আমিও দ্বিধা দ্বন্দ্বের হীনম্মন্যতায় ভোগিনী।ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে অজস্র দৃষ্টান্ত উপমা প্রমাণ উপস্হাপনের করবার প্রয়োজন নেই।হাল আমলে আমার মত প্রেমিক পুরুষটিই বা কম কিসে!পঁচিশ বছরের চোখের ভালো লাগার মোহকে তেতত্রিশ বছর বয়সের ভালোবাসার ফুলশয্যায় পরিণত করেছিলাম।ভালোবাসা এমনেই অন্ধ।সেই অন্ধ ভালোবাসার মূল্য আমি দিয়ে ছিলাম।কিন্তু নাইনা…..জীবন যুদ্ধের লং মার্চের পিছন থেকে সটকে পড়েছে।
নাইনা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ঠিক তার কিছু দিন পর নাইনার হাতের একটা ঠিকানা বিহীন চিঠি পেলাম।অনেক দিন হয় কাউর হাতের কোনও চিঠি পত্র পাইনা।আজকের তথ্য প্রযুক্তির দিনে চিঠি লেখার চলটা প্রায় উঠে গেছে।তবুও চিঠি পেয়ে বুকটা আমার আচমকা ধক্ করে উঠল।বিয়ের আগেও নাইনার হাতের অনেক চিঠি পেয়েছি।নিয়ম করে সেসব চিঠির উত্তরও লিখে পাঠিয়েছি।কিন্তু কখনও এমন বিশ্রী অনুভূতির শিহরন খোঁচা দেয়নি।চিঠি টা পড়ে আমি কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।চিঠির কিছুটা অংশ ছিল এইরকম-মহিন তুমি তোমার বিয়ের পূর্বের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারোনি।তুমি আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করেছ।আমি কোনও দিন তোমাকে ভালবাসিনি।বরং তুমিই ভালোবাসার নামে এতোদিন মিথ্যে অভিনয়ের একটা নগ্ন প্রহসন করে এসেছ।বিয়ের পূর্বে তোমার সাথে রাতের পর রাত একেই বিছানায় শুয়ে কাটিয়েছি।তার জন্য আমার কোনও রকমের মাথা ব্যথা নেই।শুধু এই ভেবে অনুতপ্ত হচ্ছি সস্তা আবেগের মোহে পড়ে তোমাকে বিয়ে করে আমি বিষন ঠকে গিয়েছি।
বিয়ের আগে নাইনাকে এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম বলে আমার মনে পড়ে না।চিঠিটা পড়তে পড়তে বার দুয়েক মাথাটা বোধোদয় ঝিমিয়ে উঠল।।আমি যা,আমি বরাবরেই সেই রকম ছিলাম।বিন্দু পরিমাণ ঠকায়নি।কোনও কিছু লুকোচুরি করিনি।বিয়ের পূর্বে নাইনাকে নিয়ে একেই বিছানায় রাত কাটিয়েছি।সেও তার ইচ্ছাকৃত সীমা লঙ্গনের জন্য।অনিচ্ছা কৃত কোনও কিছু জোড় করে আদায় করে নেওয়া আমার স্বভাব বিরুদ্ধ।
তাছাড়া আজকাল বাঙ্গালী মেয়েদের ফাস্ট ফুটের দোকান থেকে শুরু করে পার্কের বেঞ্চিতে গাছের গুড়ির আড়ালে বসে তার পুরুষ সঙ্গিটির সাথে খুনসুটি করতে দেখে কেউ আর নতুন করে জিব কাটেনা।দেখতে দেখতে চোখ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।চার চোখের সঙ্গমের আগে দুটি দেহের মিলন এখন আর নতুন কিছু নয়।মাথার উপর সামাজিক ছি-ছি হুলিয়ার দণ্ড থাকার কারণে ডিম গুলি ফুটি ফুটি করেও শেষ পর্যন্ত ফোটে না।বাচ্চা হয়ে বের হয়ে আসবার আগে সামাজিক সনদের স্বীকৃতি লাগবে।তা না হলে আমরা তাকে অবৈধ জারজ সন্তান বলে গালি দিবো।সাথে সাথে এও বলবো শিশুরা ফুলের মত নিষ্পাপ পবিত্র।পক্ষ পক্ষপাতিত্ব আচরণ শিশুর জন্য কতটা শোভনীয়।তা সচেতন নাগরিকরাই আমার চেয়ে টের বেশি ভালো জানেন।
নাইনার এরকম উটকো চিন্তা ভাবনা ছিল না। বোধোদয় আমারও ছিল না।নাইনা বলতো-মনের মিলন হলে আবার শরীরের মিলনে আপত্তি কিসে।তার জন্য আবার রেজিস্ট্রি সীল মোহর লাগে নাকি।মেয়ে মানুষ বিবাহের পূর্বে থাকে পুরুষের প্রেমিকা আর বিবাহ রেজিস্ট্রি সীল মোহরের মাধ্যমে হয়ে উঠে পুরুষের স্হাপর সম্পত্তি,স্ত্রী বিশেষনের আড়ালে,রাতের বিছানায় সে হয়ে উঠে একজন বেশ্যা।জীব বৈচিত্রে মানুষের জীবনের রতিক্রিয়ার সঙ্গম পর্বের জৈবিক চাহিদাটই যে অনেকটা প্রকৃতির কাছাকাছি।নিয়ম করে আইন করে তার যে কত রকমের শ্রেণী বিভাজন।কত রকমের নাম,কেউ বউ,কেউ বেশ্যা...কেউ.....।আমি নাইনার সঙ্গে যুক্তি তর্কে পেরে উঠতাম না।অনেকটা হেরে যাওয়া উকিলের গলায় বলতাম-আমি কিন্তু তোমার সাথে এক মত নই।আমি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলি-এ মূহুর্তে যদি তোমার গর্ভে আমার সন্তান আসে।আর আমি তোমাকে রিফিউজ করি।নাইনা আমার দিকে এক গাল হেসে বলে উঠল।তুমি কি মনে করেছ লোক লজ্জার ভয়ে আমি তোমার পায়ে পড়ে সেচ কাঁদুনি কান্না কাঁদবো।মোটেই না-আমি সেই সন্তান ধারণ করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখাতাম।-মুখে বলা যতটা সহজ বাস্তবে কিন্তু তার চেয়ে আরও অনেক বেশি কঠিন।
-নানা মহিন আমি সত্যি বলছি-আমি কোনও কিছুর পরোয়া করতাম না।আমার সেই মনোবল আত্ম বিশ্বাস দুটোই আছে।
-শুনেছি পশ্চিমা বিশ্বে কুমারী মেয়ের সন্তান জম্ম দেওয়ার রেওয়াজ আছে।তাই বলে বাংলাদেশের মত ধর্ম অন্ধ দেশে।
নাইনা আবারও বলল-কথা শুনে ঘাবড়ে গেলে মনে হয়।
-শুধু ঘাব্ড়ে যায়নি তার সাথে একটু অবাকও হচ্ছি।
-তুমি গজনী লেন মোড়ে ঔষধ কোম্পানিতে চাকুরি করো সেই নাইনা না।
-আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো।
সমাজের উপর তলায় বসে যারা আধুনিকতার কল কব্জা কাটি নাড়েন।তাদের ঘরের বউ,মেয়েরাও অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর জন্য রীতিমত নার্সিং হোম গুলোতে ভীড় জমান।সেখানে নাইনার মত মধ্যবিত্ত ঘরের রক্ষণশীল পরিবারের এই মেয়েটি এমন দুঃসাহসের ধৃষ্টাতা দেখায় কোন শক্তি বলে।
-নাইনা আমাকে খোঁচা মেরে বল-এই কি ভাবছ
-আমি বললাম-না তেমন কিছু না।
নাইনা আবারও বলল তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।আমি অফিস থেকে এক সাপ্তাহের ছুটি নিয়েছি।চিটাগাং যাবো বড় মামার ওখানে বেড়াতে।-তাই বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে
-কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হলো
-ঈদের ছুটিতে গেলেই তো পারতে
-ততোদিন পর্যন্ত বাঁচলে তো।মন যেতে চাইছে এখন আর আমি বসে থাকবো কবে ঈদের ছুটি পাবো সে আশায়।এই শুনছো-তুমিও আমার সঙ্গে চল না।বড় মামার ওখানে বেড়ানোও হবে।কক্সসবাজারের সমুদ্রও দেখা হবে।রথও দেখা তার সঙ্গে সঙ্গে কলাও বেচা।ওরে বাবা আমি-বাপের কানে এ কথা তুললে আমাকে ঠেঙ্গাবে।সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলবে।তুমি তো আমার বাবাকে চিনো না।আস্ত চিনে জোঁক একটা।যেমনী রাগ তেমনী গোঁয়ার।নাইনা মুখ ভেংচি কেটে বলল-কি আমার বাপের আদর্শবান ছেলেরে।এতো বড় তাগড়া ছেলে এখনও বাপকে যমের মতো ভয় পায়।একথা আমাকে বলেছ ভালো কথা।অন্য কাউকে বলতে যেও না।লোক হাসাহাসি করবে।আসলে আল্লাহ তোমাকে ছেলে না বানিয়ে মেয়ে বানালেই পারতেন।-একথাতো সেলিম ভাইও বলে।
-সেলিম কে?
-তুমি চিনবে না,এক মিনিট দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি একবার বলেছিলে-তোমাদের গ্রামের শমশের কাঁকার ছেলে।তোমার বড় আপার বিয়ের কথাবার্তা যার সঙ্গে পাকা হয়ে ছিল।আচ্ছা তোমার বড় আপার আর কোনও খোঁজ খবর পেলে না।-কেউ যদি নিজ থেকে হারিয়ে যায়।তবে কার সাধ্য তাকে খুঁজে বের করে।-তাই বলে তোমরা সব হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে।একটা জল জ্যান্ত মানুষ বাড়ি থেকে হাওয়া হয়ে গেল।আর তোমরা তার কোনও খোঁজ খবরটা পর্যন্ত নিলে না।এটা কোনও সুস্হ্য মানুষের কাজ হতে পারে না।
-তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ,আমরা সব পাগল।
আর নয়তো কি?তোমাদের সবাইকে হেমায়েদপুরের রাস্তায় ডান্ডাবেরি পড়িয়ে ছেড়ে দিয়ে আসা উচিত।এই সেই নাইনা।যেদিন বড় আপার পক্ষ নিয়ে আমার সাথে উকিলের বাক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।এখন সে নিজেই সে পথের তীর্থ যাত্রী।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান শুরুটা চমত্কার কিন্তু শেষটা কেমন জানি lokkhovrosto তীরের মত ফসকে গেল kintu lekha khub sundor banan bakko gothon chomotkar........
স্য়েদা তাবাসসুম আহমেদ siaj apnar lekha amar besh ভালো lage ...আপনি এত ভালো কিভাবে liken?
এস, এম, ফজলুল হাসান ভালো লেগেছে সুন্দর গল্পটি
খোরশেদুল আলম আপনার লিখা গল্পটি খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আগামীতে বিষয় ভিত্তিক লিখা পড়ার আশায় রইলাম।
নাজমুল হাসান নিরো লেখায় কলকাতার লেখকদের লেখার স্টাইলের ছাপ স্পষ্ট। তবে যদিও বিষয়বস্তুর সাথে মিল নেই তবে সাহিত্যের আর্ট বিচারে রীতিমত পরিপক্ক হাতের অসাধারন একটি লেখা। কিন্তু এমন লেখকের লেখায় অনেক বানান এবং শব্দের সঠিক প্রয়োগজনিত ভুল মেনে নিতে পারি নি। লেখাটা রিভিশনের দাবি রাখে।
রওশন জাহান পুরুষ বাদী চিন্তা স্পষ্ট . লেখার style খুবই ভাল . কিন্তু আপনার প্রতিটি গল্পই একই বিষয়ের উপর. বিষয় পরিবর্তন আনা উচিত
বিন আরফান. Brother s shiraj pl come back. we are all love & like ur writing. u r really good writer.
বিষণ্ন সুমন আপনি অবশ্যই ভালো লিখেন, কিন্তু বিষয় বস্তুর সাথে কোনো মিল'ই পেলাম না. যেহেতু এটা একটা প্রতিযোগিতা , তাই এখানে বিষয়বস্তুর বাহিরে কোনো লিখা দেওয়া মানে হলো নিজেকে প্রতিযোগীর দল থেকে সরিয়ে নেওয়া. আপনার মত একজন ভালো লেখক শুরুতেই প্রতিযোগিতার বাহিরে চলে যাবে, এটা সত্যিই বেদনাদায়ক .
ওয়াছিম পুরুষদের মানিসিকতা পরিবর্তন করা উচিৎ।

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪