উকিল নোটিশ

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

শেখর সিরাজ
  • ১৫
  • 0
  • ৭২
নাহ!শেষ পর্যন্ত শ্রেয়ার সাথে সম্পর্কটা আর টিকিয়ে রাখা গেল না।মচমচে কাঁচা ডাল ভাঙ্গার শব্দের মতন করে অবশেষে ভেঙ্গে পড়ল সম্পর্কের সব কয়টা সূত্র।এতোদিন যেন সম্পর্কটা মাছের কাটার মতন গলার কাছে এসে বিঁধে ছিল।আহা!কি অস্বস্তিকর যন্ত্রণা।ঘুমের ঘোরে প্রায় বকে উঠে ছিলাম।শ্রেয়া এ অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে আমাকে মুক্তি দাঁও.আমি মুক্তি চাই।

এতোদিনের সেই চাওয়া যেন সত্যি হয়ে উঠল।উকিল নোটিশ পাঠিয়ে শ্রেয়া আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।সাথে চিঠির মত করে লেখা ছোট একটা চিরকুট।১০/১ গ্রীন রোড শাহাজাহান ল চেম্বার।এখানে আমি বিবাহ বিচ্ছেতের সমস্ত কাগজ প্রত্র রেখে যাচ্ছি।তুমি একবার এসে একটা দস্তখত দিয়ে যেও।উকিল সাহেব কোর্ট কাঁচারির সব দৌড় ঝাপ সামলাবেন।

তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে যে ভুল করলাম।আজ তার পূর্ণ মাত্রায় প্রায়শ্চিত্ত করলাম।ভালোবাসার নামে কেবল মাত্র তোমার সাথে অসম্পূর্ণ সম্পর্কের একটা বলয় তৈরি হয়েছিল।আর একটা অসম্পূর্ণ সম্পর্ক-শুধু আমি নই,কোনও মানুষকেই হয়তো শেষ পর্যন্ত সুখী করে তুলতে পারে না।আজ একটা অসম্পূর্ণ সম্পর্কের অকাল মৃত্যু হলো।যা বোধোদয় দুজনের জন্যই মঙ্গল জনক।ঘরের চার দেয়ালের প্রাচীর, আর মাথার উপর ছাদ থাকলেই কেবল সংসার হয় না।
পুনশ্চঃশ্রেয়া।

ব্যর্থতা প্রেম বিয়ে বিচ্ছেদ-একটা সম্পর্কের অকাল মৃত্যু।ভাবা যায়!মনে হয় কোনও এক দুঃস্বপ্নের মতো খুব দ্রুত জীবনের প্রথম অংশে ঘটে গেলো।আর একটু বিলম্ব করে ঘটলেও হয়তো জীবনের মহাভারতটি খুব বেশি অশুদ্ধ হয়ে উঠতো না।খুব কাঁচা বয়সে মনের আঙ্গিনায় একটা ভুঁইফোঁড় আঁচিলের মতো দাগ পড়ে গেল।কাঁচা আবেগের ফল কখনও শুভ হয় না।ভাবতে যেয়ে বুকের ভিতর যেন অনবরত মাঘ মাসের শীতের কাঁপন ধ্বনি শুনি।

আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা,একটা মাত্র দস্তখত।তারপর চির বিচ্ছেদ।লিগ্যাল সেপারেশন।আর কেউ কোনও দিন দীর্ঘ দাবি র ফর্দ নিয়ে কেউ কারও সামনে দাড়াবে না।মান্নাদের সেই গানের মতো-আজ দুজনার দুটি পথ/দু দিকে গেছে বেঁকে…..

শ্রেয়ার উকিল নোটিশ পাবার পর থেকেই আমার মনটা বার বার দুলছিল অতীত বর্তমান ভূত-ভবিষ্যতের নানা ভাবনায়।আমি কি আর একটি বার চেষ্টা করে দেখবো ভাঙ্গনের এ পতন ধ্বনি ঠেকানো যায় কিনা?এতোদিন তো রুদ্র অক্ষরের মালা জপের মতো শ্রেয়ার কাছ থেকে মুক্তিই চেয়ে ছিলাম।তবে আজ কেন এ ভাঙ্গনের পতন ধ্বনি ঠেকানোর ব্যার্থ চেষ্টা মনের ভিতর অনর্গল অর্গ্যান বাজায়।আমি ঠিক বুঝতে পারিনা এর কোনও অর্থবহ কারণ আছে কিনা?নাকি এর নামেই ভালোবাসা।যার টানে মানুষ ঘর ছেড়ে বাউণ্ডুল হয়।কিংবা নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে।নাকি সবটাই দু চোখের নান্দিক সৌন্দর্য বোধের শরীর বৃত্ত মোহ,নাকি ভালোবাসা মানুষের ভাবগত আর্দশ।তবে ভালোবাসা কি?যার সাথে রূঢ় বাস্তবতার মহার্ঘ সংঘর্ষ হয় প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব আর সংঘাতে।যে ভালোবাসা মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতিশীল উদার দৃষ্টি ভঙ্গির স্বচ্ছতা দিতে পারে না।একে অন্যের ছায়া হতে পারে না।তাকে নিশ্চয় আমি ভালোবাসা বলতে পারি না।বললে হয়তো ভালোবাসার মহার্ঘতম পবিত্র শবদটিকে এক রকমের অপমানেই করা হবে।ভালোবাসা ছাড়া শুধু মাত্র একটা শরীর নামক প্রাণ নিয়ে কি করে যে মানুষ একই ছাদের নিচে বছরের বছর দিব্যি কাটিয়ে দেয়।শুধু বংশ বৃদ্ধি প্রজননের উৎসকে কেন্দ্র করেই।ভাবতেই আমার কেমন জানি ঘৃণা লাগে।সন্তান সম্ভাবনা রমণীর মতো মুখে ওগুলি বমি আসে।ঘরের স্ত্রী আর বাইরের বেশ্যাতে আমি কোনও পার্থক্য খুঁজে পাই না।আমার রুচিবোধে বাধে।ভালোবাসার এমন দৈন্যতা দেখাতে পারেনি বলেই হয়তো সন্ধ্যা আরতির ঘণ্টা ধ্বনি মতো আমার জীবনেও এমন একটি বিরহ অবিচ্ছেতের ঘণ্টা ধ্বনি আজ বেজে উঠেছে।

নদী পাড় ভাঙ্গে পুনরায় চর ফেলে,গতি পথ পরিবর্তন করে মানুষের জীবন তো অনেকটা নদীর মতোই।উত্থান পতন পরিবর্তন নিয়েই তো মানুষের জীবন।তবে আমি কেন এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা।দ্বন্দ্ব সংঘাত আর সংশয়ের একেই বৃত্তের বলয়ে বার বার ঘুর পাক খাচ্ছি।ছেঁড়াখোঁড়া পুরোনো মুদ্রার মতো জোড়া তালি দিয়ে এতোদিন সম্পর্কটা মরন ব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে জিইয়ে ছিল।এবার হয়তো ঠুনকো কলমের এক খোঁচায় ফোঁড়্ ফোঁড়্ বাতাসে উড়ে যাবে দুজন দুজনার জীবন থেকে।

একবার কি শ্রেয়াকে মুঠোফোনে ফোন করে দেখবো?নম্বর গুলো টিপে কি ভেবে রি-ডায়াল মেরে আবার ছেড়ে দিলাম। মন সায় দেয় না।কি হবে আর ফোন করে।তিন মাস নয়,ছয় মাস নয়,এক বছর নয়।আজ আমাদের বিয়ের পঞ্চ বার্ষিকীতেও এসেও,আমাদের দেউলিয়া সম্পর্কের টানাপড়েন শেষ হয়নি।

একদিন এক হেমন্তের অপরাহে যাকে আমি জীবনের পাদ প্রদীপ ভালোবাসার আর্শীবাদ রূপে গ্রহন করেছিলাম।আজ তাকেই আবার ভালোবাসার অভিশাপে মা দুর্গা প্রতিমার মতো স্বেচ্ছায় নিজ হাতে গঙ্গা জলে বিসর্জন দিলাম।এ যে আমার জন্য কি বিষন ট্রাজেডী।তা কেবল আমিই জানি।যত বড় বৃক্ষ ততো বড়োই বুঝি তার ছায়া।

মানুষের হয়তো কোনও নিকট আত্মীয় স্বজন মারা গেলে।তার শোঁকের আয়ু বড় জোড় ছয় মাস।তারপর বছর ঘুরে এলেই একদিন ঘটা করে লোক খাইয়ে মৃত্যু বার্ষিকীর স্মরণ সভার শ্রাদ্ধ করেই তার স্মৃতির পরি সমাপ্তি টেনে দেই আর একটি নতুন বছরের দিন পঞ্জিকার পাতায়।এমনি করে চোখের আড়াল হতে হতে একদিন আবারও নতুন বছরে এসে দিন পঞ্জিকার পাতা থেকেও মৃত্যু বার্ষিকীর তারিখটাও মনের আড়াল হয়ে যায়।দৈব চক্রে ঘটে দিনের আহার্য প্রণালী পালাবদল।

কিন্তু শুনেছি মানুষ তার প্রথম কৈশোরের প্রেমের আবেগ,প্রথম যৌবনের ভালোবাসার তোরণ শোক নাকি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নাকি তাকে তারিয়ে বেড়ায়।আজ এই পরিণত বয়সে এসেও আমি আমার কৈশোর প্রেমের আবেগ,প্রথম যৌবনের ভালোবাসা তোরণ শোঁকের ধাক্কা সামাল দিতে পারছি না।চোখ বুঝলেই সম্পর্কের হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শুনছি।ভালোবাসা বুঝি এমনেই অন্ধ হয়।ভালোবাসার এমন পরশ পাথরের ছোঁয়ায় মানুষ যে এতোটা অন্ধ হয় তা তো জানতাম না শ্রেয়া।আজ যেন আমি নিজের কাছেই নিজে এই আধুনিক উত্তরাধুনিকের মহারথির যুগে ভালোবাসার মহান এক প্রেমিকের জ্বলন্ত উদাহরণের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছি।সম্পর্কের এতো বছরের যত সব জ্বালাতন আজ যেন সব নিজের কাছেই কষ্টের কারণ বিরম্ভনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমি ঘুমাতে পারি না।

বিশেষ কয়েকটা কারনেই শ্রেয়ার উপর থেকেই মনটা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছিল।সম্পর্কে যেখানে শ্রদ্ধা সম্মান স্বচ্ছতা বিশ্বাস আস্থা সহানুভূতি নৈতিকতা ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখতে পারে না।সেখানে ভালোবাসা বোধোদয় আর ভালোবাসার টনিকের মতো কাজ করে না।ভালোবাসার সম্পর্ক ততক্ষণ পর্যন্ত বোধোদয় ঠিক থাকে।যতক্ষণ পর্যন্ত না তাতে ব্যক্তি সার্থের দুর্গন্ধ উঠে না আসছে।বয়প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠ লোকেরা বলে জমিনে আগাছা পরগাছা জন্মালে জমিনের আবাদী ফসল ভালো হয় না।তেমনি করে ভালোবাসার জমিতে বিশ্বাসহীনতার পরগাছা জম্ম দিতে হয় হয় না।এতে করে ভালোবাসার সতেজ সবল বৃক্ষটিও ইটের নিচে চাপা পড়া ঘাসের মতো ফিকে হলদে রং ধারণ করে।শুধু নীড়ানিতেই চলে না।জমিটুকুও উর্বর করে তুলতে হয় শ্রেয়া।

এতো যুক্তি তর্কের বাধ ভেঙ্গে ভাবনার তলানীতে যেয়েও অবশেষে কিছু আর অবশিষ্ট পেলাম না।সব যুক্তি তর্ক আজ যেন নিজের অজান্তেই সময়ের চোরা বালিতে,কখন যে হারিয়ে গেছে।আমি নিজেও তা টের পেলাম না।যখন টের পেলাম,অনেকটা সময় অতীত হয়ে গেছে।

রেজিস্ট্রি কাগজ দস্তখত-ভাঙ্গা পোড়া একটা সম্পর্কের ভিতকে কতদিন ধরে রাখতে পারে।যা একদিন না একদিন ভেঙ্গে পড়বেই।তা জানা সত্ত্বেও তাকে আবার জোড়াতালি দিয়ে খড় কুটোর মতো ভাসিয়ে রাখা।সে তো জানে স্রোতের টান এলেই আবার সে একদিন ভেসে যাবেই।এমন সব ভাবনা থেকেই হয়তো শ্রেয়া অনেকটা বাধ্য হয়েই আজ আমাকে উকিল নোর্টিশ পাঠিয়েছে।

শ্রেয়ার উকিল নোটিশ পেয়ে আজ আমি মোটেই বিচলিত হলাম না।এমনটাই হবে,এটাই যেন আমার ভালোবাসার স্বাভাবিক মূল্য দানের প্রাপ্তি।ভালোবাসা যখন আর ভালোবাসার প্রকৃতি সলুভ ভেষজ টনিকের মতো কাজ করে না।তখন সেখানে বিকল্প পন্হা অবলম্বন করাই শ্রেয়!

শ্রেয়া নয়,সামান্য একটা কাগজের জন্যই বোধ হয় আমি চৌকাঠের ওপাশে এতোদিন যাবত অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম।
ধন্যবাদ শ্রেয়া!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সিদ্দিক অনেক সুন্দর লেখা। কিন্তু বিষয়র সাথে মিলেনা ।
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
ঝরা জানিনা ভালোকিনা এরকম কিছু পড়তে ভালো লাগেনা l
ওবাইদুল হক খুব সুন্দর লেখা অারো লিখেন অাশা রাখি।
মাহমুদা rahman গল্পকবিতার বিসয়ের সাথে মিল নেই কিন্তু গল্পটার আলাদা আবেদন আছে..ভাল লেখা
শাহ্‌নাজ আক্তার যদিও বিষয় বস্তু মিল নেই তবু ও আমার খুব ভালো লেগেছে অদ্ভুত আকুতি লিখাটায়, ভোট দিলাম আপনাকে
বিষণ্ন সুমন গল্পটা ভালো . কিন্তু বিষয় বস্তুর সাথে মোটেও সম্পর্কযুক্ত নয়. এই লিখাটি সম্ভবত গল্পকবিতার ঝিমানোর সময়টিতে চলে এসেছে. তাই এ বিষয়ে গল্পকবিতাকে পূর্ণ সজাগ থাকার অনুরোধ করছি.
মোঃ শামছুল আরেফিন আধুনিক ভালবাসার কাহিনি।ভালই লাগলো ।অনেক অনেক শুভ কামনা থাকলো ।
মা'র চোখে অশ্রু যখন ভালো লিখেছেন বাস্তব গল্প
ফাতেমা প্রমি আগের মতই ভয়াবহ virus type গল্প. এরকম লেখা এই সমাজে কাম্য নয়.. Germany /America চলে যান.. আপনার লক্ষী মাতা এবং বউ(যদি থাকে ) তাকে ওই ''বউ'' আর ''-'' এর সাথে j তুলনা করেছেন তা জানাবেন. তারাই জানিয়ে দেবে আপনার গল্পটি কেমন হয়েছে..

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪