সময়টা ছিল আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগের দুর্গা পুজরে আগে। বিকাশ তখন কাজের সুত্রে মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে আছে। সাথে স্ত্রী আর ছোট ছোট ছেলে এবং মেয়েরা। অনেক দিন ধরে তার কলকাতায়ে বোনেদের কাছে গিয়ে ভাইফোঁটা নেবার সুযোগ হয়ে ওঠে নি,। তার প্রধান কারণ ছিল ছেলেদের স্কুলের ছুটি আর ওর পুজোর ছুটই ঠিক একসাথে পড়ত না। এবার তাই ঠিক করে ফেলল যে এবার একটু তদ্বির করে ভাইফোটা নাগাদ কলকাতায় যাবে। ছেলেদের ছুটী কালীপুজার জন্য দেওয়ালীর ছুটি হিসাবে দিন দশেকের মত থাকে নাহয় আরও কদিন ছুটি নেবে, ওকেও অফিস থেকে সেই অনুযায়ী ছুটি নিতে হবে।
বিকাশ তার দুই বোন রুবি আর ছবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল যে বহুদিন বাদে সে এইবার তদের ওখানে কালী পুজা নাগাদ যেতে পারে। একেবারে ঠিক যাচ্ছে বলে দিলনা এই জন্য যে যতক্ষন না কলকাতায় পৌঁছচ্ছে ততক্ষন বিশ্বাস করতে নেই যে ছুটি পেয়েছে। তার দুই ছেলে মন্টু আর পিন্টু খুব খুসী। একে কলকাতাতে নাকি খুব ধুমধাম করে কালী পুজা হয়, অনেক বাজী পটকা পোড়ে। তার উপরে তার পিসতুতো (ফুফাত) দিদির সাথে আনক মস্তি করা যাবে। দিদি তাদের চেয়ে অল্পই বড়।
বিকাশের স্ত্রী মনিকা খুব খুসী। কোলের ছেলেটা একটু বড় হবার পরে আর বাপের বাড়ীতে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। এবার বিকাশের কথাতে সে প্রায় নেচে উঠেছে। কি কি করতে হবে তার লিষ্টি মনে মনে বানাতে শুরু করে দিয়েছে।
বিকাশের চাকরী একটা অফিসের ইঞ্চার্জ হিসাবে। সারা দিন অফিস আর তার সঙ্গে আউটডোর ডিউটি নিয়েই ব্যস্ত। যা একটু রবিবার ছুটি পায়, তাও সেদিনেও প্রায়ই কোন না কোন ঝুট ঝামেলা লেগে থাকে। কাজেই মণিকার কাছে রান্নাঘর আর শোবার ঘর ছাড়া এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। যাকগে ট্রেনে রিজার্ভেশনের জন্য তাদের টিকিটের বন্দোবস্ত করতে দুমাস আগেই ছুটির দরখাস্ত দেওয়ার বন্দোবস্ত করল। নয়ত বিকাশের যা ভুলো মন, নিজের কি কাজ বাকী পরে আছে তার কোন খেয়াল নেই, কিন্তু অফিসের কি বাকী আছে তা আঙ্গুলে গুনে বলে দেবে।
সব ঠিক, যাবার দিন আগতপ্রায়। হঠাত বিকাশের অফিসের একটা ব্রাঞ্চে ষ্ট্রাইক। বিশেষ কিছু কারণ নেই। কে এক অফিসার তার নীচের এক কর্মচারীকে নাকি গালি দিয়েছিল, তাই সেখানে সব কাজ বন্ধ। বিকাশের মাথায় হাত। কেননা ঐ অফিসে ষ্ট্রাইক মানে তাদের অফিসে জরুরী অবস্থা ঘোষণা। কোন ছুটি নেই। কাজ থাকুক বা না থাকুক, সময় ধরে অফিস যাও। মণিকা কে বলে দিল মনে হচ্ছে এবার তোমার ফোঁটা দেওয়া হবে না। তাও আশা ছাড়ছি না। ছোট্ট ব্যপার খুব সম্ভবত মিটে যাবে, আর তাহলেই জরুরী অবস্থা উঠে যাবে। কাজেই যাচ্ছি না ধরে নিয়েও বাক্স প্যাটরা খুলে দিও না। ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত দেখব।
দিন এসে গেল। সকালে খবর পাওয়া গেল যে ষ্টাইকারদের সাথে একটা মিটমাট হয়েছে। লোকেরা কাজে যোগ দিয়েছে। বিকাশ খবরটা পেয়ে নাচে আর কি। কিন্তু জরুরী অবস্থা না উঠলে তার বাইরে যাওয়া হবে না।
বিকেল সাড়ে পাচটাতে ট্রেন। বাড়ী থেকে ষ্টেশন মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা। বিকাশ অফিসে বেড়োনর আগে মণিকাকে বলে দিল, তুমি জামাকাপড় পরে রেডী হয়ে থাকবে। আমি জোগাড় লাগাচ্ছি যাতে আমার ষ্টেশন লিভিং পারমিশনটা পাই। আর পেলেই আমি একেবারে গাড়ি নিয়ে আসব সোজা তোমাদের তুলে ষ্টেশনে।
মণিকা সেই অনুযায়ি রেডি হয়ে রইল। ছেলেরা জামা জুতো পরে একবার ঘরের ভেতরে আর তারপরেও বাড়ির গেটের কাছে উকি মারতে লাগল, বাবার গাড়ির কোন চেহারা দেখা যদি যায়।। ক্রমে পাঁচটা বাজল। পাচটা কুড়ি। অবশেষে সাড়ে পাচটা। ট্রেন তাদের বাড়ীর পেছন দিয়ে সিটি বাজিয়ে চলে গেল। হতাশ হয়ে মণিকা চেয়ারে বসে পড়ে। তার দুই ছেলে রেগে লাল। কেন বাবা এলনা তা তাদের বোঝাও। এক্ব নিজের বিরক্তি তার উপরে ছেলেদের জ্বালাতন, ক্ষেপে গিয়ে দুটোকে এক ধমক আর শুরু হল তাদের কান্না।
ছটা নাগাদ বিকাশ বাড়ী ফিরল। মুখে অজস্র গালাগালির ফুলঝুরি ফুটছে। সেই জরুরী অবস্থার সুরাহা হল। কখন, না সাড়ে পাচটার সময়, ট্রেন ছেড়ে যাবার সময় তাঁকে বলা হল যে সে যেতে পারে। আর তাও গাড়ী ডাকার ব্যবস্থা করতে করতে দেখে ট্রেনের সিটি বাজছে।
রাতে বিকাশ আর মনীকা মনটা ঠিক করতে বিকাশের সহকর্মী জোশির বাড়িতে গেল। একথা ওকথার পরে জোশির বৌ বলে আচ্ছে দাদা আমি যদি ফোঁটা দিই তবে আপনার কিছু আপত্তি আছে। মনিকাও আপানার জোশি ভাইকে ফোঁটা দিতে পারে। আমরা তো বিদেশে ভাই বোনের মতন আছি। রক্তের সম্পর্ক নাইবা থাকল। বিকাশ আর মনিকা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। রুবি আর ছবির মনে কষ্ট হবে নিশ্চয় কিন্তু এই মিসেস জোশি আর তার স্বামীর মনের আনন্দকি সেটাকে পুরণ করে দিতে পারবে না। পরের চিঠিতে যখন ওরা সব জানতে পারবে তখন ওদের মনে আনন্দটই বেশী হয়ে ফুটবে। রইল বাকী ছেলেরা। মিশেস জোশীর মা এখানেই আছেন। ওনার সাধারণত এখানে থাকার কথা নয়। তিনি হঠাত বলে উঠলেন দাদুভাইকো ম্যায় বিন্দি লাগাউঙ্গি। কৈ ফিকির মত কর বেটা। সমস্ত জিনিশটা মধুরেণ সমাপয়েত হয়ে গেল। সবাই যার যাত ফোটার অংশ পেল, নাইবা হল সে ফোঁটা আপন বোনের থেকে ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।