যত দুরেই যাই , যেখানেই যাই , মা মাগো তোমাকে আমি হারাতে পারবোনা, আমার খুব গর্ব হয় যে তুমি আমার মা, তোমার চোখে তো সারাক্ষণ জলেরা খেলা করে, সেই জলভরা টলমল চোখ নিয়ে কি নির্বিচারে সবার সেবা করে যাও । জীবনে কোনদিন তোমার স্বামী, তোমার সন্তান তোমার দু:খ বুঝেনি । কথায় কথায় বকা-ঝকা দেয়া হয় তোমাকে। তোমার সেই দু;খি মুখখানা বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে , যখনই মনে হয় তোমার সেই করুন চাহনি , সাথে সাথে আমার বুকের কাঁপুনি বাড়িয়ে দেয়। আমার হতভাগী মা, কিছুই করতে পারিনি আমি তোমার জন্য । সারাটা জীবন শুধু নি:স্বার্থ ভাবে দিয়েই গেলে । সেই ছোট বেলা থেকেই এক বুক কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছ ্ গায়ের রং একটু চাপা ছিল বলে তোমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে । কারণ তোমার অন্য ভাইবোনেরা ছিল ফসরা । নিজের পছন্দে ভালোবেসে বিয়ে করেছ বলে পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছ শুধুই লাঞ্ছনা । যাকে ভালোবেসে বিয়ে করলে তাঁর কাছ থেকে ও কোনদিন সুখ পাওনি । জীবনের এই শেষ বেলাতে এসে আজ ও তুমি নি:সঙ্গ । আমরা খুব স্বার্থপর । তোমার সুবিধা- অসুবিধা, ভালোলাগা-মন্দলাগা আমরা কোনদিন পাত্তা দেয়নি। শুধু নিজেদের টা ভেবেছি । মুখ বুঝে তুমি শুধু সহ্য করে গিয়েছ । কেন মা তুমি কোনদিন কোন প্রতিবাদ করোনি । কিসের ভয় মা তোমার ? আমাদের কে হারানোর ভয়?
না মা আমরা কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাবোনা । তোমার কাছে যে আমরা বড় ঋণী। তোমার সমতুল্য আমরা কোনদিন হতে পারবোনা। জানো মা কি যে ভালোবাসি আমি তোমাকে হয়তো মুখ ফুটে কোনদিন বলিনি। তাই তুমি বুঝতে পারোনি .. তবে যেদিন বুঝেছিলে সেদিন তোমার ভীতরে এক ধরনের আত্মগর্ব কাজ করেছিল সেটা তোমার চেখে-মুখে ফুটে উঠেছিল । কোন দিনটি মনে আছে মা তোমার? আমি অফিস থেকে বাসায় গিয়ে দেখি তুমি এক পাশ হয়ে বিছানায় জীবন্ত লাশ হয়ে পড়ে আছো, চোখ-মুখ অস্বাভাবিক লাগছে। তোমার মুখটা এরকম ভাবে দেখেই আমার সারা পৃথিবী টলে উঠলো । বাবা তোমার পাশে বসে টিভি দেখছে । আমি সহ্য করতে পারিনি মা সেদিন তোমার এই অবহেলা , নিজের ছোট্ট শিশুটির দিকে ও তাকানোর সময় পাইনি । তোমাকে জড়িয়ে ধরে নীচে নামিয়ে , আমার হাজব্যান্ড কে ফোন করে আসতে বলে আমি নিয়ে আসলাম বারডেম হাসপাতালে । তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারলাম মা তুমি ব্রেইন স্ট্রোক করেছ । মা মাগো তুমি জানোনা আমি সেদিন পাগলের মত হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদেছি । আমার সেই কান্না সেদিন তোমার কানে পৌছায়নি । কারণ তুমি তখন ছিলে গজও কক্ষে। তারপর তোমাকে ভর্তি করিয়ে সুস্থ করে বাসায় আনতে ১৫ দিন লেগে গেল । এই কটা দিন জানো মা আমার পৃথিবী বলতে ছিলে শুধু তুমি। আমার স্বামী, আমার সন্তান , আমার বাবা কারো কথা ভাবিনি । শুধু মনে হয়েছে মা তোমাকে আমার যেভাবেই হোক সুস্থ করতে হবে । আমি পেরেছিলাম মা । নিজের হাতে তোমাকে গোসল করিয়েছি, খাইয়েছি, চুল আঁচড়িয়ে দিয়েছি, কাপড় বদলে দিয়েছি। জানো মা আমার একটু ও ক্লান্ত লাগেনি , মনে হয়েছে আমি তো আমার সন্তান কে আদর করছি, তুমি শুধু আমাকে চেয়ে চেয়ে দেখতে আমি কি করি । কি ভাবতে মা তখন তুমি আমাকে নিয়ে, তোমার চোখে তখন আমি সুখের জল চিকচিক করতে দেখতাম। মা, মাগো কি যে ভালোবাসি আমি তোমাকে! , আমি ও তখন টের পেলাম । সারাটা জীবন তুমি আমার আর বাবার জন্য তো অনেক কষ্ট করলে, এই বয়সে এসে কোথায় একটু সুখ করবে তা ও হলোনা । রোগে-শোকে তুমি পাথর হয়ে গিয়েছ । কেন মা এমন হলো । মা মাগো আমার বাবা কে তুমি ক্ষমা করে দিও, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে আমি জানি, তারপরে ও ক্ষমা করে দিও । শেষ জীবনে এসে বাবা ও অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন , উনি আজ ক্যানসারে ভুগছেন । মা মাগো তুমি তো অনেক উদার , আমি জানি তুমি ক্ষমা করে দিবে । কারণ তুমি তাঁকে অনেক ভালোবাসো । তাঁর সুস্থতা কামনা করে একা একা চোখের জল ফেলো । তুমি যে আমাদেরকে জীবনের চেয়ে ও বেশী ভালোবাসো। শুধু আমরাই তোমাকে তোমার ভালোবাসার মূল্যায়ন করিনি, মা মাগো তোমার এখন ও কোন শান্তি নেই , তুমি নিজে অসুস্থ, অথচ আরেক অসুস্থ স্বামীর সেবা করে বাকি টা জীবন তোমাকে কাটাতে হবে । আর শুধু চোখের জল ফেলতে হবে। মা তুমি আর কত কাঁদবে মা । আমার হতভাগী মা, আমার জনম দুঃখী মা । পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে মা আমি সেই জন্মে ও তোমার গর্ভে ধারণ করতে চাই ।
মা মাগো তুমি ভেবোনা আমি-বাবা তোমাকে এখন অনেক ভালোবাসি , তুমি আর অসহায় নও । তুমি আর চোখের জল ফেলোনা ।
আমাদেরকে ক্ষমা করে দিও মা ।
১৯ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪