দায়ভার

বিজয় (ডিসেম্বর ২০১৪)

হাসনা হেনা
  • ১১
যে কোন প্রতিযোগীতার উদ্দেশ্য হল যোগ্যতা পরিমাপ করে জয় পরাজয় নির্ধারণ করা আর যুদ্ধ হল এমনি এক প্রতিযোগীতা যা ক্ষমতা, আধিপত্য আর অধিকার প্রতিষ্ঠার এক মরণ খেলা। দুই পক্ষই ভাবে ন্যায়ের পক্ষে নিজেদের আদর্শ আর আধিপত্যকে সমুন্নত রাখা ঈমানী দায়িত্ব। যায় যাক প্রাণ যায় যাক মান তবুও হারাতে চায়না আপনার সুখ। পাপবোধ আর ধর্ম জ্ঞান বিলীন হয়ে যায় ধ্বংস ও মানব নিধনের উৎসবে। কেউ কেউ বলেন যুদ্ধ আর ভালবাসায় কোন অপরাধ নেই তাই অবলীলায় প্রতিপক্ষের মানুষ হত্যা আর তথাকথিত অবলা নারীকে টেনে হিঁচড়ে সম্ভ্রম কেড়ে নিয়ে ভোগের উল্লাসে মেতে উঠতে বিন্দু মাত্র কুন্ঠিত হন না এ সভ্য জামানার আশ্রাফুল মাখলুকাতরা। এ জগৎ সংসারে অবলা নারী যেন সবল পুরুষের কাছে বড় অসহায় তাই সকল প্রয়োজনে নারীকে হতে হয় অন্ধবিশ্বাস আর খেয়াল খুশির খেলনা আর তাদের বহন করতে হয় সমাজের অনেক মনগড়া অপবাদ আর দায়ভার। এ একবিংশ শতাব্দীর সভ্য সমাজেও অনেক নারী প্রতিহিংসা, লালসা আর বঞ্চনার শিকার। নারীর আজন্ম অধিকার আর ইচ্ছেকে বিসর্জন দিয়ে পুরুষের সৎচরিত্র রক্ষার দায় দায়িত্বও যেন অবলা নারীর উপর। নারী যেন প্রতিহিংসার চরিতার্থের সহজ উপায়। কবে হবে মানবতার জয়, কবে পাবে নারী মানুষ হবার অমিত শক্তি?

সাধারণ হিন্দু পরিবারে পুস্প রাণীর জন্ম। আর দশটি গাঁয়ের মেয়ের মতই কৈশোর পেরুনো সাদামাটা সদ্য তরুণী সে। প্রাইমারী স্কুল শেষ করেই থেমে গেল লেখা পড়া কারণ একটি সাধারণ পরিবারের মেয়ের জন্য অর্থ ব্যয় করে এর চেয়ে বেশী লেখা পড়া করানোর ইচ্ছা বহু পরিবারেরই নেই। কোন মতে ভাল পাত্র যোগাড় করে বিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যায় পরিবার। ন¤্র ¯^ভাবের পুস্প এখন ¯^প্ন দেখে অন্য এক জীবনের যেখানে সঙ্গী হবে তার অজানা কোন এক পুরুষ। হাজার রঙ্গিন ¯^প্নের পুস্প আর পল্লবে সেজেছে তার অন্তরের অবারিত অঙ্গন তাই আগামীর দীর্ঘ পথে ছড়িয়ে পড়েছে শুদ্ধ বাসনার ¯িœগ্ধ সুন্দর শুভ্র আলো আর সে আলোতে যেন কোন অচেনা ¯^প্নসাথীর আভাষ। মা-বাবা ভীষণ চাপের মুখে রাখে যেন এদিক সেদিক সে খুব একটা ঘুরা ফেরা না করে। প্রথম প্রথম পুস্প ঠিক বুঝতে পারতনা কেন এই বাধা কিন্তু তার বড় ভাইকে কেন ¯^াধীন চলাফেরার জন্য বাধ সাধে না কেউ। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল নারীর জীবন ও ¯^াধীতা ধর্মীয় ও সামাজিক অন্ধ বিশ্বাসে বাধা আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দুর্বল নারীর ¯^াধীনতা কন্টকময় এবং অনিরাপদ তাই ইচ্ছে থাকলেও পুস্প আর অবারিত মাঠে আঁচল উড়িয়ে বেণী দুলিয়ে গাইতে পারেনা, দৌঁড়াতে পারনো, পাড়ার ছেলে মেয়ে নিয়ে সাঁতার কাটতে পারেনা গাঁয়ের পাশের ছোট্ট নদীতে। তার পরিপূর্ণ শরীর যেন কাল হয়ে উঠেছে বিপরীতমুখী দুই মানব জাতির বিচিত্র বোধের আবর্তে তাই দুর্বল পক্ষই কোণঠাসা এখানে।

১৯৭১ সাল। চারিদিকে ভয়াবহ জয় পরাজয়ের আমরণ লড়াই। কুক্ষিগত ক্ষমতাকে হারাতে চায়না ক্ষমতাধররা সহজে কেননা ক্ষমতা যেন মানব জনমের শ্রেষ্ঠ পাওয়া তাই কেউ ধর্ম, মানবতা, সভ্যতা, ¯েœহ-ভালবাসা ও বিবেকের ধারধারেনা কারণ ছাড় দেয়া মানে বীরত্বের অবমাননা এবং দেশ, জাতি, গোষ্ঠী আর ব্যক্তি ¯^ার্থের অন্তরায়। যে নারীরা যুদ্ধ বোঝেনা, রাজনীতি কুটনীতি বোঝেনা সে সহজ সরল নারীরাও ন্যায় অন্যায়ের সে যুদ্ধে চরম লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়ে অহংকারে লালিত মূল্যবান সম্ব্রম হারিয়ে এ মানব সমাজে হয় কলঙ্কিত, লজ্জিত ও অসহায়।

এ যুদ্ধ শহর ছেড়ে গ্রাম গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ল। পাক সেনাদেরকে পথ চিনিয়ে নিয়ে এল এ দেশীয় দালালরা। একদিন পুস্পদের দীঘলদি গ্রাম পাক হানাদাররা আক্রমণ করল। এ গাঁয়ের জোয়ান ছেলেদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধে গিয়েছে তাছাড়া দীঘলদী গ্রামে হিন্দু পরিবার অনেক। গ্রামের মানুষ যে যার মত পালিয়ে যেতে লাগল কিন্তু অনেকেই পালাতে পারলনা বিশেষ করে হিন্দু পাড়া রোষানলে পড়ল বেশী। কোথাও আগুন, কোথাও গুলাগুলি, কোথাও হত্যা আর কোথাও আহাজারী। পুস্প এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল। একজন যুবতী মেয়েকে কোথায় সামলাবে ভেবে পাচ্ছেনা বাবা-মা। বাবা বলে পুকুরের পানিতে যেয়ে লুকিয়ে থাক। মা বলে বাড়ীর পেছন দিয়ে পালিয়ে যা। পুস্প জানে ওর মত মেয়েদের বিপদ অন্যসব বিপদের চেয়ে আলাদা। আগেও শুনেছে অনেক নারীর পরিণতির কথা তাই সে বোঝে। মা মেয়েকে পথ দেখাতে যেদিক নিয়ে যায় সেদিকেই পাক সেনারা ¯^দর্পে দাঁড়িয়ে আছে। পুস্প চারদিকের অবস্থা দেখে কাঁপতে কাঁপতে বলল, মা কোনদিক যামু? আমার বড় ডর লাগতাছে। এমনি সময় গুলির শব্দ শোনা গেল খুব কাছ থেকে। পুস্প ভয়ে চিৎকার করে উঠল। মা মুখ চেপে ধরে বলল, চুপ। শুনতে পাইলে রক্ষা নাই। ঈশ্বররে ডাক। বাবা বলল, পুস্পরে নিয়া তুমি বাড়ীর পিছন দিয়া পালাও। অবস্থা ভালনা। আমি ওগোরে নিয়া যাই। বাবা পরিবারের অন্য সকলকে নিয়ে কোন মতে পালিয়ে গেল। মা উপায়ন্তর না দেখে মেয়েকে নিয়ে পাশের বাড়ীর পেছন দিক দিয়ে পালাবার চেষ্টা করল। পুস্প ভয়ে ভয়ে বলল, মা চ্ইার দিকে ওরা দাঁড়াইয়া রইছে কমেনে যামু। মা বলল, তুই ঐ ঝোপে লুকাইয়া থাক, আমি দেখি কোনখান দিয়া বাইর হওয়া যায় কিনা। মা সর্তক দৃষ্টি ফেলে সামনের দিকে গেল। পুস্প ঝোঁপের ভেতর বসে ভগবানের নাম জপ করতে লাগল। সাথে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ-এর একটি বাঁধানো ছবি বুকে চপেে নয়িে এসছেলি যদি ত্রাণকর্তা রক্ষা করেন। ঈশ্বরের যতগুলি নাম জানা ছিল তাই স্মরণ করল সে কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা। এরি মধ্যে একজন রাজাকার ঝোঁপের পাশ কেটে যেতেই ঝোঁপের দিকে দৃষ্টি গেল তার। তার কাছে মনে হল ঝোঁপটা যেন সামান্য নড়ে উঠেছে তাই সতর্ক দৃষ্টি ফেলে সে ঝোঁপের দিকে পা বাড়াল। একটু এগুতেই কাপড়ের মত কিছু একটা দেখে এগিয়ে এসে বলল, কেরে এইখানে? কি করছ? এগিয়ে এসে মাথা এদিক ওদিক কাত করে কিছু আবিস্কারের চেষ্টা করল এবং একসময় পুস্পকে অবিস্কার করল এ ঝোঁপের ভেতর। ঘাড় কাত করে বলল, এই--এই বাইর হ, পুস্প ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল। সে লোকটাকে চেনে, সে এ গাঁয়েরই একজন; নাম তার মরম আলী আর সে একজন রাজাকার। মরম আলী ধমকের ¯^রে বলল, এই ছেমড়ি, ঝোঁপের মইধ্যে কি করছ মালুয়ানের বাচ্চা? এই হারামীর বাচ্চারা দেশটারে নাপাক কইরা ফালাইছে। চল্ হুজুরের কাছে নিয়া যাই। তরে পাইয়া ভালই হইল। হি-হি করে হাসল মরম আলী। পুস্প জানে লোকটা ভারী মন্দ আর হিন্দুদেরকে সে মোটেও পছন্দ করেনা তাই পুস্প ঝোঁপ থেকে বের হয়ে পালাবার চেষ্টা করল। মরম আলী হাত ধরে বলল, কই যাছ মালুয়ানের বাচ্চা? এই দেশে তগ জাগা নাই, হারামির বাচ্ছারা, এই দেশটারে হিন্দু দেশ বানানের ব্যবস্থা করতাছে হে। পু¯প হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল তারপর মিনতি করে বলল, কাকা, আমার সর্বনাশ কইরেননা, আফনের পায়ে ধরি। মরম আলী বলল, কয় কি হুন, সর্বনাশ অইব কেন, বড় আনন্দে থাকবি। তারপর অনতি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাক সেনাদের ডেকে ভুল উর্দূতে বলল, হুজুর, এদারমে আয়া, ল্যাড়কি হ্যায়। একজন পাক সেনা এসে পুস্পকে বড় বড় চোখ করে দেখে বলল, খুব সুরত লাড়কি হ্যায়, বহুত আচ্ছা কিয়া মরম আলী। মরম আলী তৃপ্তির হাসি হেসে বলল, আপকা মেহেরবানী হুজুর। পুস্প কাঁপতে কাঁপতে মিনতি করে বলল, আমারে ছাইড়া দেন। মরম আলী বলল, হুজুর , হিন্দু হ্যায়, দুশমন হ্যায়। পুস্প বলল, আপনেগ ভগবানের দোহাই। অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে পাকসেনা তারপর পুস্পর হাত চেপে ধরে বলল, ভগ্বান? ভগ্বান নেহি আয়েঙ্গে, আব তুম মেরা সাথ যায়েঙ্গে, চল্। তারপর তারা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলল। পুস্পর কোন কাকুতি মিনতিই কেউ শুনল না। সে চিৎকার করে বলল, মাগো আমারে বাছাও, বাবাগ আমারে বাছাও, আপনেগ পায়ে পড়ি, আমারে ছাইড়া দেন। হায়নারা ছাড়লনা তাকে।

কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধারা কোম্পানীগঞ্জ স্কুলে পাক হানাদারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। তুমুল লড়াইয়ের পর পাক সেনাদের পরাস্ত করে সেই ক্যাম্প দখল করল মুক্তিযোদ্ধারা। এ যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হল। পাক সেনারা এখানে হত্যা ধর্ষণ থেকে শুরু করে নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত করত। তারপর কতিপয় ধর্ষিতা মেয়েদেরকে উদ্ধার করে তারা আর উদ্ধারকৃত নারীদের মধ্যে একজন হল দীঘলদী গ্রামের সেই পুস্প রাণী। কি ভয়াবহ, কি করুণ সে নারীদের অবস্থা যেন মানব পশুর উন্মত্ত হিং¯্র থাবায় মানবতা আর সভ্যতা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে প্রতিনিয়ত এখানে। পশুকেও হার মানায় সে নির্মম নৃসংশতা, সে বর্বরতা। কারু পরনে সামান্য কাপড় কেউবা একেবাবেই বিবস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধারা কাপড় যোগাড় করে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসল নিরাপদ জায়গায়। পুস্পের মত নিস্পাপ সুন্দর পুস্প মেয়েটির যে চোখে উপছে পড়ত রঙ্গিন ¯^প্নের উচ্ছ¡াস সে চোখে আজ লজ্জা, ঘৃণা আর বেদনার প্লাবন। অন্যদের অপরাধের দায়ভার এখন পুস্পর মত লক্ষ নির্যাতিত মেয়েদের উপর। ওদের আলোকিত সবুজ পৃথিবী যেন কলংকের কালিমায় অন্ধকার হয়ে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধারা সবার ঠিকানা নিয়ে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করল। কেউ কেউ বলল বেঁচে থেকে আর কি হবে; সব শেষ হয়ে গেছে, কি করে সমাজে মুখ দেখাবে। অনেকে ফিরতে চাইল না। বলল, বাঁচতে চাইনা। পুস্পও এই একই কথা বলল। দেশ মাতাকে রক্ষার ব্রত নিয়ে যে সূর্য সন্তানেরা প্রাণকে বাজী রেখে যুদ্ধে নেমেছে তারাতো পুস্পদেরকে অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারেনা। মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার শামীম বলল, জীবনের শেষ মৃত্যুতে, কে বলেছে সব শেষ হয়ে গেছে। তোমরা আবার নতুন করে জীবন গড়বে। পথের বাঁকেই পথের শেষ নয়। আমাদের মত তোমরাও যোদ্ধা। জীবন বড় মূল্যবান, এ অবমাননার প্রতিশোধ নিতে হবে। ফুলে নোংড়া কিট বসলে ফুল নোংড়া হয়না। মতিন বলল, আত্মহত্যা মহাপাপ। আমরা আমাগ মা বোনদের অসম্মানের প্রতিশোধ নিমু। সব মুক্তিযোদ্ধারা সকল মেয়েদেরকে শান্তনা দিয়ে বাঁচ্তে অনুপ্রাণীত করল।

মুক্তিযোদ্ধারা পুস্পকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য পুস্পদের বাড়ী এসে দেখে বাবা-মা অন্য সবাইকে নিয়ে ভালই আছে। ওদের কোন ক্ষতি হয়নি শুধু মেয়ের জন্য যেন ওরা লজ্জিত ও বিব্রত। সবার সঙ্গে পুস্পকে দেখে বাবা-মা কেউ খুশি হলনা যেন মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে বড় কষ্ট হচ্ছে তাদের। গর্ভজাত আর ঔরসজাত নারী সন্তান যেন অস্পৃস্য আর অপাংতেয় হয়ে উঠেছে এ ৩ মাসের মধ্যে। ¯েœহ,মায়া মমতা ভারী বোঝা হয়ে গেল নিমিষে যেন ফেলতে পারলেই বেঁচে যায় তারা। তখন জীবনের চেয়ে জাত ধর্ম হয়ে উঠল অনেক বড় অনেক গ্রহণযোগ্য। হায়রে বিশ্বাস! হায়রে নষ্ট বোধ! বাবা বিষণœ মনে বলল, ওকে আর আমরা ঘরে ঠাঁই দিতে পারবনা, আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবা। মা বলল, আমাদের কিছুই করার নাই। মুক্তিযোদ্ধা মতিন বলল, এইডা কেমন কথা, ও আপনাগ মেয়ে। পুস্পিতা অবনত মস্তকে শুধু কাঁদে আর বলে, মা আমি কই যামু? মা বলল, ফিরা আসছস কেন। বাবাও তাই বলল। মুক্তিযোদ্ধরা অনেক বোঝাবার চেষ্টা করে কিন্তু কোন কাজ হলনা। কেউ কেউ বলল, এ কেমন নিষ্ঠুরতা, এ কেমন জাত ধর্ম যে সন্তানকে গ্রহণ করছেনা। ওর কি দোষ? পুস্প কেঁদে বলল, আমি থাকতে চাইনা আর এখানে, আমারে যুদ্ধে নিয়া যান। আমি যুদ্ধ করব। কিন্তু পুস্প একজন সহজ সরল মেয়ে সে যুদ্ধে যেয়ে কি করবে। শামীম বলল, আমাদের সাথে গেলে তোমার আরও বিপদ হইতে পারে। পুস্প চোখ মুছে বলল, আর কোন বিপদরে ডরাইনা। মুক্তিযোদ্ধা অরুণ বলল, এখন আর কি করা, ও যখন যেতে চায় নিয়ে চল। ক্যাম্পে আমাদের রান্না আর অন্যান্য কাজ করে সহযোগীতা করতে পারবে।

অবশেষে পুস্পর ঠাঁই হল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। পুস্পিতা ভাবে যুদ্ধে যদি জীবন যায় যাবে তবুও এ জীবনের কিছুটা ¯^ার্থকতা থাকবে। তাছাড়া এ মৃত্যু নামের ভয়াল সত্য সবাই সহজে গ্রহণ করতে পারেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের রান্নাবান্না থেকে আরম্ভ করে অস্ত্র পরিচর্যা ও বিভিন্ন ধরণের সহযোগীতাও করে পুস্পিতা। পুস্পিতা এখন শুধু একজন অবলা নারী নয় যেন একজন যোদ্ধা আর ক্যাম্পের পুরুষগুলি এখন শুধু পুরুষ নয়: ন্যায়ের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনার আত্মপ্রত্যয়ী মুক্তিসেনা ওরা পুস্পিতাকে একজন নারী ভাবছেনা ভাবছে পুস্পিতা তাদের একজন সহযোদ্ধা। যে কোন মহৎ চিন্তাই মনের আদিম প্রকৃতিকে করে তোলে সুন্দর ¯^াভাবিক। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী নানা ক্যাম্পে হানা দিয়ে কয়েকটি এলাকা মুক্ত করে কিন্তু কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও এতে নিহত হয়। তারপরেও দমেনি তাদের অমিত সাহস আর শক্তি। ওরা কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে লড়াই করছে ন্যায়ের পক্ষে।

অতঃপর লাখো লাখো প্রাণ আর লাখো লাখো নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসল ৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর। চারিদিকে আকাশ বাতাস কাঁপানো জয়ধ্বনি আর বিজয়ের বিমল উল্লাস। এখানে সেখানে উড়ছে ¯^াধীন বাংলাদেশের প্রিয় পতাকা। পুস্পদের ক্যাম্পের সবাই যখন উল্লাসে বিভোর তখন পুস্পর চোখে বেদনার জল আর অসহায়ত্বের অন্ধকার। এ বিজয় যে তার জন্য কলংক আর যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে এসেছে কোন আনন্দ বয়ে নিয়ে আসেনি। এই বিজয় উল্লাসে সে যেন ¤্রয়িমান, নিস্প্রভ আর নিরানন্দ। সবার উচ্ছ¡াস আর আনন্দের সাথে যেন সে একাত্ম হতে পারছেনা। বুকের গহীনে কে যেন শুধু খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্ত ঝরাচ্ছে অবিরাম। এ কিছুকাল আগেও পৃথিবীটা মনে হত অনেক সুন্দর অনেক আনন্দের। আজ মনে হচ্ছে জীবন যেন দুঃসহ বোঝা; যা বয়ে বেড়াবার ক্ষমতা নেই তার। কোন অপরাধ না করেও কেন এই চরম শাস্তি? এ কেমন নিয়ম? তার বেঁচে থাকার কি প্রয়োজন। মনে মনে ভাবে, কোথায় যাবে সে, কার কাছে যাবে। সব থেকেও যে তার কেউ নেই, কিছু নেই। সম্ভ্রম হারিয়ে যতখানি না যন্ত্রণা পেয়েছে তার চেয়ে হাজার গুণ যন্ত্রণার হবে সমাজের কৌতুলী বাঁকা দৃষ্টি আর অপবাদ। মুক্তিযোদ্ধা শামীম এসে বলল, পুস্প তুমি কি করছ? চারিদিকে আনন্দের জোয়ার বইছে আর তুমি এখানে বসে আছ, উঠ বাইরে এসে দেখ, কেমন ¯^দর্পে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। কত মানুষ জয়োল্লাস করতে রাস্তায় নেমে এসেছে। বিজয়ের আনন্দে সবাই আত্মহারা। যুদ্ধতো শেষ, আমরা এখন ¯^াধীন, আমাদের এখন আপনজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। আমরা যে যার বাড়ীতে ফিরে যাব, তুমি কি করবে? পুস্প কেঁদে বলল, জানিনা দাদা। অরুণ উচ্ছ¡াসে উদ্বেল হয়ে এসে বলল, আজ আমরা ¯^াধীন দেশের মানুষ, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! এ দিনটা যেন নতুন এক সূর্য নিয়ে এসেছে। পুস্পের দিকে চোখ পড়তেই বলল, সেকি পুস্প, তুমি কাঁদছ কেন? উঠ। এরি মধ্যে পতাকা জড়িয়ে মতিন এসে বলল, শামীম ভাই, বড় শান্তি লাগতাছে। এইবার বাড়ী ফিরার পালা। শামীম চিন্তিত হয়ে বলল, হে বাড়ীতো আমরা সবাই ফিরব, কিন্তু পুস্প ফিরবে কোথায়। ওকেতো আমরা কেউ এভাবে সঙ্গেও নিয়ে যেতে পারব না। অরুণ বলল, এতো মুশকিলের কথা, পুস্পকে এখন কোথায় রাখব। শামীম বলল, একটা উপায়তো বের করতে হবে। এরি মধ্যে অন্য সবাই আসল। মতিন বলল, শামীম ভাই, আজই বাড়ী যাইতে চাই। সবাই একই কথা বলল, আজই বাড়ী ফিরবে। শামীম বলল, বাড়ী ফিরলেইতো হবেনা। অস্ত্র শস্ত্র আছে এসবের কিছু একটা করতে হবে। পুস্প আমাদের অনেক সহযোগীতা করেছে সাহস যোগীয়েছে; আগে তার কথা আমাদেরকে ভাবতে হবে। সবাই এ বিষয়ে সায় দিল। ওকেতো আমরা ফেলে যেতে পারব না। হারামি বাবা-মাকেতো বোঝানো গেলনা। আরেক জন বলল, কিছুতো একটা করতে হবে। আমাদের একটা দায়িত্ব আছেনা। পুস্পিতা বলল, দাদা, আপনেরা যান, আমার একটা ব্যবস্থা হইব। শামীম বলল, কি ব্যবস্থা হবে?
-আত্মহত্যা করব। শামীম বলল, খবরদার এ কথা কখনও মুখে আনবেনা। আত্মহত্যা মহা পাপ। একটা ব্যবস্থা হবে। মতিন বলল, পুস্পিতা, আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। এই বিজয় সবার জন্য কেন আনন্দ নিয়া আইল না।

ওরা পাশের রুমে যেয়ে সবাই বসে পুস্পর একটা গতি করার ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে লাগল। শামীম বলল, তোমাদের মধ্যে এখানে কয়েক জনইতো অবিবাহিত, কেউ পুস্পকে বিয়ে করতে পারনা? সবাই চুপ হয়ে রইল। অনেক কিছু করা যায় কিন্তু বিয়ে করা যায়না। সবার একই কথা এটা সম্ভব না কারু বাবা-মা তা মেনে নেবে না। অনেকেই ছাত্র বিয়ে করা সম্ভব না। একেতো ধর্ষিতা তার উপর হিন্দু মেয়ে। বাস্তবতাকে সহজে কেউ মন থেকে সরাতে পারেনা; যে যতই মহৎ কাজ করুক না কেন। এ ধরণের কঠিন সত্যকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনা কারণ এ ধরণের কাঠিন্য বহন করবার ক্ষমতা সকল মনের থাকেনা। বড়ই বেকায়দায় পড়ে গেল ওরা পুস্পকে নিয়ে। পুস্প পাশের রুম থেকে সবই শুনল। মনে মনে ভাবল, ওর জন্য তারা কেন ঝামেলায় পড়বে। পুস্পিতা ওদের কাছে যেয়ে বলল, দাদা, আমারে নিয়া ভাইব্বেন না, আমি আমার পথ বাইচ্ছা নিব। শামীম বলল, কি পথ?
-আমারদ একইটাই পথ, সেইডা হইল মরণ। অনেক কষ্ট দিছি ক্ষমা কইরা দিয়েন। গৃহস্থের মোটামোটি শিক্ষিত ছেলে মতিন পুস্পর মায়া ভরা ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, এসব কথা মুখে আনবা। একটা ব্যবস্থা হইবই, মানুষের জীবন বাছানো ফরজ। শামীম ভাই পুস্পকে আমি বিয়া করব। সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মতিনের দিকে। পুস্প বলল, নাহ্, আপনারে বিপদে ফালাইতে চাই না।
-সেইটা আমি বুজমু, একজন মানুষ আশ্রয়ের জন্য মইরা যাইব এইডা অয়না।
মানবতার বিজয় হল। মানুষ যেমন মানুষকে বিষাক্ত মরণ এনে দিতে পারে তেমনি মানুষই মানুষকে বিষাক্ত মরণ থেকে সুশোভিত সুখকর জীবন এনে দিতে পারে। সবার সহযোগীতায় বিয়ের কোন আয়োজন আর সাজ সজ্জা ছাড়াই মুসলীম ধর্মীয় রীতিতে কোন রকম বিয়েটা হয়ে গেল মতিন আর পুস্পর। এরপর যে যার বাড়ী ফিরে গেল। মতিন পুস্পকে নিয়ে বাড়ী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

দেশ ¯^াধীন হয়েছে তাই মতিনের বাবা-মা অধীর আগ্রহে ছেলের পথ চেয়ে আছে, কবে ফিরবে বীর পুত্র তাদের বুকে। মা ছেলের জন্য কত কেঁদেছে ওরা কত উৎকন্ঠায় দিন কাটিয়েছে। অনেকেই ফিরেছে কিন্তু মতিন এখনও ফেরেনি তাই মা, বাবাকে পাঠিয়েছে ছেলের খবর আনতে আর নিজে আঙ্গিনায় আল্লাহকে ডাকছে, ছেলে যেন ভালয় ভালয় ফিরে আসে। সাত দিন হয়ে গেল এখনও ফেরেনি মতিন। এরি মধ্যে পাড়ার এক ছেলে মোহন এসে বলল, চাচী মতিন ভাই আইতাছে। মা হন্তদন্ত হয়ে বলল, কই আমার বাজানে? কতদিন দেহিনা অরে।
-আইতাছে। মা এগিয়ে যেতেই বাবা এসে বলল, মতিন ভাল আছে, আইতাছে। পাশের গ্রামের সেলিমের লগে দেখা অইছে, ও কইছে। কিছুক্ষণ পরই মতিন পুস্পকে নিয়ে এসে বাবা-মাকে সালাম করে জানতে চাইল কে কেমন আছে। পুস্পও সালাম করে নিরবে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইল। পাড়ার দুতিন জন ফিসফাস করল, এই মেয়ে কে। বাবা-মা সহ সবাই মতিনকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। যুদ্ধ জয় করে এসেছে সে। মা বলে কেমুন আছস বাবা? আল্লায় আমার বাজানরে ফিরাইয়া আনছে। বাবাও ভীষণ খুশি, মাকে বলে আগে মতিনের খাওয়ার দাওয়ার ব্যবস্থা কর। পরে সব শোনা যাইব। পাড়ার অনেকেই এসে ভাল মন্দ জানতে চাইল। ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে পুস্প সম্পর্কে জানবার সময় হয়নি তাদের। বাবা বলল, মতিন এই মেয়েটা কে? মাও দৃষ্টি ফেরাল পুস্পর দিকে। মতিন এ আনন্দের মাঝে আসল কথাটা বলতে চায়নি শুধু বলল, ঘরে চল, খুব ক্ষিদা লাগছে, পরে সব কমু।

পুস্প ভয়ে ভয়ে রইল না জানি কি হয়। সে শুনেছে মতিনের বাবা ভীষণ রাগী মানুষ। মতিনও শংকিত ছিল না জানি কি হয়। আবার ভাবে পুস্পর সব শোনে যদি ওদের মায়া হয়। খাওয়া দাওয়ার পর মতিনের কাছে পুস্পর কথা জানতে চাইল। মতিন সব কিছু বলার পর মা বলল, এইডা কি করছস তুই? আমাগরে একটা কতাও জানাইলিনা। তোর বাপ জীবনেও এইডা মানবনা। কেঁদে ফেলল মা মতিন মাকে অনুনয় বিনয় করল। এরি মধ্যে বাবার কানেও সে কথা গেল, শোনেই রেগে আগুন হয়ে গেল সে। বাবা বলল, কার অনুমতি নিয়া বিয়া করছস? এমুন পোলার দরকার নাই আমার, এমুন একটা মাইয়ারে তুই কেমনে বিয়া করলি। আরে আমাগ কতা একবারও ভাবলি না, নাদান। আমাগতো একটা সমাজ ধর্ম আছে, নাকি। ভিন জাতি মাইয়া তার উফর আবার ছিঃ ছিঃ। মা বিলাপ করে বলে, হায় আল্লাহ আমার পোলাডা এইডা কি করলরে খোদা। আমার কফালে এই আছিল। পাশের বাড়ীর মহিলা এসে বলল, এইডা কি করলা মতিন, কাউরে জানাইবা না তুমি। তোমার বাপ-মা খুব কষ্ট পাইছে। মতিন বাবা-মার কাছে, বার বার ক্ষমা চাইল কিন্তু তাদের মন গলল না। মতিন বলল, আমিদ কোন অপরাধ করি নাই, একটা অসহায় মেয়েরে বাছাইছি। বাবা চিৎকার করে বলে, আর দুনিয়ায় মানুষ নাই তরে ছাড়া, হেরা কি করছে। এসব অপবিত্র মাইয়া মানুষ আমার বাড়ীত জাগা দিমুনা। পুস্প শুধু নিরবে কাঁদল কিছুই বলতে পারল না। মনে মনে নিজেকে অপরাধী ভাবল ওর জন্য মতিনের এ অবস্থা। পুস্প শুধু বলল, সব আমার দোষ মা, আমারে মাফ কইরা দেন। পুস্পকে ওরা যোদ্ধা বলেছে কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস এ বিজয়ী ত্যাগী যোদ্ধা সম্মান আর ভালবাসার পরিবর্তে ঘৃণা আর অপমানের আঘাতে জর্জরিত। এ বিষয়টি অনেকের কানেও গেল কেউ কেউ ছিঃ ছিঃ করল আবার কেউ কেউ সাধুবাদ জানিয়েছে কিন্তু বাবা তার সিদ্ধান্ত থেকে এক পাও নড়ল না।

আরও লোকজন ওদেরকে দেখতে আসল। মতিনের সাথে পুস্পকে দেখে জানতে চাইল কে। পরিচয় পেয়ে অনেকেই অবাক হল। মতিন সবকিছু খোলে বলার পরও বাবা-মা কোন মতেই তা মানতে চাইল না। ছেলের এ উদারতার মূল্য তারা দিল না। বাবার এক কথা এ বউ নিয়ে বাড়ী থেকে চলে যা। আমি তোর মুখ দেখতে চাই না। এ মেয়েকে কোন মতেই তারা ঘরে তুলবেনা। বাবা-মা দুজনেই বলল, এ বাড়ীতে তোদের জায়গা নাই। শেষ অবধি এ বাড়ীতে ওদের ঠাঁই হলনা। তারপর মতিন পুস্পর হাত ধরে বের হয়ে পড়ল ঠিকানা বিহীন প পুস্পকে দেয়া সমাজ ধর্মের দায়ভার মতিনও ভাগ করে নিল।
ধ্বংস প্রায় নতুন বাংলাদেশের চারিদিকে অভাব আর হাহাকার। মতিন এত কিছুর মাঝেও পুস্পকে ছেড়ে যায়নি। এক যুদ্ধ শেষ করে তারা আবার নেমে পড়ল টিকে থাকার কঠিন সংগ্রামে। (গল্পের মূল সত্য ঘটনা)।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান মতিনকে সালাম। মানবতার জয় হয়েছে। বর্ণনা বাস্তবতা পেয়েছে। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে বিচরণ করছি। ভালো লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
আপনাকে অনেক ধ্ন্যবাদ আমাকে উৎসাহিত করবার জন্য। শুভ কাম্না।
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
জোহরা উম্মে হাসান অনবদ্য গল্প । মুক্তি যুদ্ধের বিভীষিকা আর সেই সময়ে জীবন সংগ্রামের টান পোড়নের গল্প অত্যন্ত নিপুণভাবে উপস্থাপিত করছেন । খুব ভাল লাগলো !
ভালো লাগেনি ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
আপা, আপনাকে অনেক ধ্ন্যবাদ আমাকে উৎসাহিত করবার জন্য। শুভ কাম্না।
ভালো লাগেনি ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
আরমান আহমেদ সুন্দর গল্প ....ভালো লাগলো .ধন্যবাদ লেখককে .
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব সুন্দর চমৎকার কথামালা দিয়ে সাজানো আপনার প্রবন্দ গল্প।অনেক ভাল লাগল। রইল সেই সাথে শুভ কামনা।।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ আমি তখন একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ।মতিন যা করেছে সেটাই সব, বিশেষ করে যুবক মুক্তিযোদ্ধাদের করা উচিৎ ছিল, তবেই নারীর ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন হ’তো। বিষয়টি আমার কিশোর মনে অনেক বার নাড়া দিয়েছে ক্ন্তিু বলারও যেমন সুযোগ ছিল না আর বললেও শুনতো কে ? স্বাধীনতার এতদিন পর আপনার কলম দিয়ে যে সত্যটি বেড়িয়ে এসেছে সেটাই মুক্তিযুদ্ধের পর পরই কারো না কারো মুখ দিয়ে অথবা কলম দিয়ে বেড়িয়ে আসা উচিৎ ছিল। তবেই বোঝা যেত কে কতটা দেশ প্রেমিক ! আপনার প্রতি রইল আমার গভীর শ্রদ্ধা।
ভালো লাগেনি ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪
একজন মুক্তযোদ্ধা হিসাবে প্রথমেই আমি আপনাকে জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন সেই সাথে জানাই ধন্যবাদ আমার এ লেখনীকে অনুধাবন করার জন্য।
ভালো লাগেনি ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪
শামীম খান ধর্ম আর সংস্কার এমন নিপুন ভাবে আমাদের বেঁধে রাখে যে সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল সত্যকেও আমরা কখনো কখনো অস্বীকার করি । পিতা মাতা যখন সমাজের ভয়ে সন্তানকে অস্বীকার করে , তখন আর কার কাছে কি চাইবার থাকে ! আমাদের অর্থাৎ দর্শকদের হৃদয়ে গভীরে রক্তক্ষরন হতে থাকে । তবু সাহস করে কিছু বলতে পারিনা , কারন ঐ পিতামাতার সংস্কার আর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগুক সেটাও সমাজ মানে না । অবশেষে আমরা মহীরুহের মতন একজন মানুষ তথা মতিনের মত একজন কিংবদন্তীর পুরুষের অপেক্ষা করতে থাকি । আমাদের বিবেকের নীরব কান্না থামাতে মতিনরা এগিয়ে আসেন , আর সেরে ফেলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী কাজটি অমিতবিক্রমে । ঠিক এমনই একটি ঘটনার কথা আমি জানি যেটা মধুমতীর পাড়ে ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধকালে । তাঁদের নাম বলার অধিকারও সমাজ দেয় না । তবে সমস্ত চেতনা দিয়ে সম্মান দেখানোর অধিকার কে কেঁড়ে নিতে পারে ! সুন্দর এবং সুলিখিত একটি কাহিনী উপহার দেবার জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ । শুভকামনা সতত ।
আমার লেখনী যদি কারুর সামান্যটুকুও সুবোধকে জাগাতে পারে তবেই আমার লেখনীর স্বার্থকতা। আপনি জীবনের পরম সত্যটুকু যে অনুধাবন করতে পেরেছেন তারজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মত সংশপ্তকরাই পারবে অন্ধ বিশ্বাসের আঁধার ভেঙ্গে সত্য আলোর সূর্য আনতে।
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভালো লাগলো গল্পটি .....(আমার লেখা 'সুলক্ষী' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো .)
আখতারুজ্জামান সোহাগ খুব মন দিয়ে গল্পটা পড়েছি। পুস্পিতার দুঃখ-কষ্টগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছিল সব সময়। শেষটাতে এসে চমকে উঠলাম যখন লেখা দেখলাম ‘গল্পের মূল সত্য ঘটনা’। সত্যি দুর্দান্ত লিখেছেন গল্পটা- শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। শেষটাতে অন্তত সুখের কিছু ঘটল, এই যা সান্ত্বনা। তবে এ রকম অসংখ্য ঘটনা হয়তো তখন ঘটেছে যেগুলোতে পুস্পিতাদের পরিণতি হয়েছে মারাত্মক।
অনেক ধন্যবাদ আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।
ruma hamid প্রতিটি কঠিন সংগ্রামের শেষটা হোক বিজয় । শুভ কামনা রেখে গেলাম ।
মাহমুদ হাসান পারভেজ প্রিয় লেখক, গল্পটিতে গল্পের বাইরে কথক এর ভাবনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও গল্পের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম প্যারা এবং এর পর মাঝে মাঝেই সেরকম বেশ কিছু ব্যাখ্যাও এসেছে। এছাড়া মুল গল্পটি দুর্দান্ত। শুভ কামনা।
গল্পটির চেয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যাগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা একটি বক্তব্যধর্মী গল্প তাই এর সূচনা হয়েছে বক্তব্য দিয়ে। সত্য এ গল্পটির ভেতর দিয়ে আমি মানুষের ভেতরের সত্যটুকু প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি। এ সমাজে অনেক অন্যায়কে বিশ্বাস দিয়ে ন্যায় করে তোলে অবলীলায় আর অবলা নারী যেন সে দায় বহনের সহজ মাধ্যম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

০৫ এপ্রিল - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪