বিকাল থেকেই থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যা হয়েছে অনেক আগেই। বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার ঘরে চলে গেছে। রহিম সাহেবের সময় কিছুতেই কাটছে না। স্মৃতির আয়নায় জীবনের নানাবিধ বিষয়গুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ঠিক কেমন যেন হিসাব মিলছে না।
মনে হচ্ছে একটু চা খেতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু নিজে তো আর বানাতে পারছেন না, এমনিই বয়স হয়ে গেছে তার উপর চা বানানোতে অভ্যস্থ নয়। বছর দুই হলো স্ত্রী মারা যাওয়াতে নিজকে আরো অসহায় মনে হয় তার।
এইতো সেদিনের কথা মনে পড়তেই রহিম সাহেবের চোখ মুখ আনন্দে ভরে উঠল। কাজ শেষ করে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে। এসে দেখেন সবাই ঘুমিয়ে গেলেও তার স্ত্রী তার জন্য অপেক্ষা করছেন খাবার সাজিয়ে রেখে। আদর মাখা সুরে সব খবর নিলেন। কাপড় পাল্টানো, খাওয়া সকল ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করল। খেতে খেতে পুরনো দিনের অনেক কথাই উঠল। মনটা অনেক পাতলা হয়ে গেছিল কথা বলতে বলতে। আর আজ চা বানানো তো দুরে থাক গল্প করার মত কোন লোকই নাই। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে তার। কেমন যেন ভয় মনের ভেতর উকি মারছে রহিম সাহেবের। কবে যেন পরপারের ডাক চলে আসবে। চলে যেতে হবে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে। অথচ এই পৃথিবীতে বেচে থাকার জন্য কত কিছুই না করেছি। একটু বুঝতে শিখার পর খেলায় ফাস্ট হতে না পারলে অন্যায়ভাবে জেতার চেষ্টা করেছি। পরীক্ষা ভাল করতে অন্যায় পন্থা অবলম্বন করেছি। সামান্য চাকরি তে যেতে অন্যায়ভাবে অন্যকে হারিয়েছি। অন্যায় প্রচেষ্টা চালিয়ে কত টাকাই না উপার্জন করেছি। নিজের দোষ লুকাতে অন্যকে ফাসিয়েছি।
আর আজ কি লাভ হলো এত কিছু করে। নামে সামান্য কিছু জমি আছে, আছে বাড়ি ঘর। তা আবার আমি মারা গেলে হবে সন্তানদের। কিছুই যাবে না কবরে। যে আমলটুকু যাবে তাও সময়মতো অর্জন করতে পারিনি। কাজের ব্যস্ততায় আজ না কাল করে ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে অধিক উপার্জনের নেশায় ঈমান আমলে ঘাটতি থেকে গেছে। এ সব চিন্তা করতে করতে একটু ঝিমঝিম চলে আসে করিম সাহেবের। কিন্তু ঘুম আর হয় না।
কি মনে করে পুরোনো দিনের বন্ধু কাশেম কে ফোন দেয় সে। তার বয়সও অনেক হয়েছে। প্রথম রিংয়ে ধরেনি তাই আবার ফোন দিতে হল। এবার ধরল। ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসলো কে বলছ। প্রথমে কাশেম সাহেব বুঝতে পারেনি কার ফোন। এ প্রান্ত থেকে রহিম বলাতে একটু উঠে বসল কাশেম। বাল্য বন্ধুকে পেয়ে অনেকটা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠল-ছেলেরা বৌ এর কথায় তেমন একটা খোজ খবর রাখেনা। আবার সেদিন হলো শাসিয়ে গেছে আমার সকল সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে। কি লাভ হলো এদের লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে বাবা-মার সাথে যদি এমন আচরণ করে। এর থেকে ছেলেমেয়ের পিছনে খরচ না করে যদি নিজেদের দিকে মনোযোগ দিতাম তাও কিছুটা সান্তনা পেতাম। লেখাপড়া না শিখে যদি কামলা কুলি হতো তাও মনে হয় আমাদের সাথে এমন আচরন করতে পারতো না। এমন আক্ষেপ করতে থাকে আর দু:খ প্রকাশ করতে থাকে।
বন্ধু কাশেমের সাথে কথা বলে রহিম সাহেবের মনটা আরো বিষিয়ে উঠে। কি একটা আর্তনাদ তার মনের মধ্যে ভর করে। কি পেলাম কি না পেলাম তার হিসাব মিলাতে থাকে। সে ভাবতে থাকে আর হতাশ হয়। সে ভাবে আর মনে মনে আওড়াতে থাকে মানুষ যেন আমাদের মতন ভুল না করে। তারা যেন দুনিয়ার আশা আখিরাতকে ভুলে না যায়। দুনিয়ার মোহে পাপে নিমজ্জিত না হয়। উপার্জনের আশায় খারাপিতে নিমজ্জিত না হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
জীবনের নানা ব্যস্ততায় পরকালের সংগ্রহে আমাদের কমতি থেকে যাই যা শেষ বয়সে এসে ভয়ের জন্ম দেয়।
০৬ মার্চ - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।