শান্তির ছায়া

মা (জুন ২০১৪)

শিউলী
  • ৩৬
আমরা যখন প্রথম কথা বলা শিখি, আমাদের জীবনের প্রথম বলা শব্দটা কি? “মা”। আমরা বড় হয়েছি এই মায়ের আদর মাখা ভালবাসায় ভরা কোলের মধ্যে। আমাদের এই মায়ের মত দুনিয়াতে আর কেও কি আছেন যে এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসেন? দুনিয়াতে এমন কেও নেই একমাত্র আমাদের মা ছাড়া যে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজের কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে, আমাদের ৯ মাস গর্ভে ধারন করে জন্ম দিয়েছেন। যদি তোমাকে কেও কখনও জিজ্ঞেস করে, “ তোমার জীবনে সবচেয়ে প্রিয় নারী কে?” আমি জানি তুমি বলবে, “ সে আমার মা”।
নোরা বসে বসে ভাবছে, আমার মা আজ কত দূরে! মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় মাকে দেখার, মায়ের কাছে গিয়ে কটা দিন থাকার। কিন্তু কোন উপায় নেই। কি করে যাবে? ও যে বিদেশ থাকে। আজকে এত মনে পড়ছে ওর মায়ের মুখটা। তাই সে সব ছবি গুলো নিয়ে বসল। ছবি গুলো দেখছে আর সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে।
একবার হয়েছে কি, নোরা তখন ৪ কি ৫ বছরের হবে, তখন নোরার এক চাচাতো বোনের জন্ম হয়েছে। সেদিন নোরার চাচাত বোনের আকিকার দাওয়াত ছিল সবার। নোরার মা-চাচি-ফুফু সব মহিলারা মিলে ওর সেই চাচার বাড়ি যাচ্ছিল দাওয়াত খেতে। পায়ে হেটে যেতে ১৫ মিনিট লাগে। সব মহিলারাই কালো বোরখা পরা। নোরার মা ও বোরখা পরেছে। হঠাৎ নোরা মা মনে করে আর এক বোরখা পরা মহিলাকে জড়িয়ে ধরে। আর সেই মহিলা ওর হাত টা ঝামটা মেরে সরিয়ে দিল। ও আবারও জড়িয়ে ধরল, মহিলা আবারও হাত সরিয়ে দিল। নোরা তখন ভাবল, একি, মা আমাকে এমন করে সরিয়ে দিচ্ছে কেন? হঠাৎ ও মহিলার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে এটা ওর মা না। ও পাগলের মত তখন সব গুলো মহিলার মাঝখান থেকে ওর মা কে খুঁজে বের করে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।
মা তখন ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে মা, তুমি কাঁদছ কেন?”
নোরা তখন ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে, “মা, মা, আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম”।
“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তো আমাকে পেয়েছ, আর কান্না করোনা”। মা ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে গালে একটা চুমা দিয়ে হাঁটা শুরু করল।
মাকে জড়িয়ে ধরলে মা যে কোনদিন হাতটা দূরে সরিয়ে দেয়না। মা আরও বুকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়, আদর করে। পৃথিবীর অন্য কেও কি কোনদিন এমন করবে? না, কখনও না। এই হল মায়ের আদর, ভালবাসা।
এখন তো নোরাও একজন মা। ওর একটি ছোট মেয়ে আছে। নোরা মেয়েকে আদর করে ময়না ডাকে। ওর আসল নাম নওরিন।
এই মেয়ে পেটে আসার পরেই ও চাকরিটা ছেড়ে দিল। মেয়ে জন্ম হবার পরে আর চাকরির চেষ্টা করেনি। কারন এখানে এই বিদেশে কে দেখবে ওর বাচ্চাটাকে। যদিও এখানে অনেক জায়গা আছে যেখানে বাচ্চা রেখে অনেক মহিলারাই কাজ করে। নোরা একবার ভেবেছিল ডে কেয়ার এর কথা, কিন্তু ওর মনের ভিতর থেকে সাঁয় দেয়নি। কারন ও জানে একজন মা যেভাবে তার বাচ্চা যত্ন করবে, অন্য একজন মহিলা কোনদিন তা করবেনা, যদি ভাল মনের মানুষ না হয়। আর এই দেশের মানুষ গুলো একটু অন্য রকম। নোরা নিজেও কাজ করেছে কিছুদিন ডে কেয়ার এ। সে দেখেছে অন্য মহিলারা বাচ্চাদের সাথে কেমন ব্যবহার করে। তাই নোরার তেমন ইচ্ছেও নেই ডে কেয়ার এ নিজের বাচ্চা দেবার।
নোরা র এই বিদেশ একদম ভাল লাগেনা। মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে থাকতে হয়। ইচ্ছে হলেও যখন তখন দেশে যাওয়া যায় না। কাওকে দেখতে মন চাইলেও দেখা যায়না। কি আর করা, সারাদিন মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকা ছাড়া আর তো কোন কাজ নেই। যখন হাতে কোন কাজ থাকেনা, তখন শুধু দেশের কথাই বসে বসে ভাবে নোরা।
এইত গতবছর মা এসেছিলেন নোরার এখানে বেড়াতে। কত যে খুশী হয়েছিল মা কে পেয়ে, সে ভাষায় প্রকাশ করার মতনা। কি রেখে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলনা। মাকে কাছে পেয়ে মনে হচ্ছিলো পুরো দেশটাই চলে এসেছে ওর কাছে। ভালই কাটছিল দিন গুলি। এর মধ্যে আড়াই মাস কেমন করে চলে গেল নোরা টেরই পেলনা। মায়ের দেশে ফেরার সময় হয়ে এল। মায়ের লাগেজ গুছিয়ে সব রেডি।
দুই সপ্তাহ ধরে নোরার মেয়ের ঠাণ্ডা কাশী হয়েছে। একদিকে মেয়ের শরীরটা বেশি ভালনা, আর অন্য দিকে মা চলে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে নোরার মনটা বেশ খারাপ।
কালকের দিনটাই আছেন মা। রাতে ব্যাগ গুছিয়ে বসে বসে মায়ের সাথে গল্প করছিল। দেখতে দেখতে রাত ৩ টা বেজে গেছে। হঠাৎ মেয়ের কাশির শব্দ শুনে দৌড়ে গেল বিছানায়। গিয়ে দেখে মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে খুব। তাড়াতাড়ি পানি খাওয়াল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়ে আর তাকায়না,হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। কেমন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। নোরা অস্থির হয়ে গেল, মাথায় কিছু আসছেনা কি করবে।
“চলো এমারজেন্সি চলো” নোরার স্বামী বলল। ও আর এক মুহূর্তও দেরি না করে মেয়েকে কোলে নিয়ে দৌড়ে নিচে গাড়ীর কাছে যেতে যেতে মাকে শুধু বলল, “মা আপনি থাকেন, আর ফোনটা কাছে রাখবেন”।
নোরা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কোলে নিয়ে বসে বলে, “তাড়াতাড়ি যাও, আমার ময়না কেমন যেন করছে। ও আল্লাহ্‌, আমার ময়নাকে বাঁচাও”। এই বলে ও হাওমাও করে কান্না করতে লাগলো আর আল্লাহ্‌ কে ডাকা শুরু করে দিল।
বাসা থেকে হাসপাতাল ২২ মিনিট এর ড্রাইভ। এই ২২ মিনিট নোরার কাছে ২২ বছরের মতো লাগছে। সে ময়নার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর নাড়াচাড়া দিচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাস টা আছে কিনা দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পরে দেখে ময়না শ্বাস নিচ্ছে অনেক পরে পরে। গুঙ্গাচ্ছে আর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। এই দেখে ত নোরা এক চিৎকার আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
“তাড়াতাড়ি যাও, থেমো না। আমার ময়না শ্বাস নিচ্ছেনা”।
নোরার স্বামী বেচারা খুবই নরম, শান্ত মানুষ। এই শুনে সে তার গাড়ীর গতি আরও বাড়িয়ে দিয়ে চুপচাপ গাড়ী চালাতে লাগলো।
মেয়েকে কোলে নিয়ে ঝড়ের বেগে গাড়ী থেকে নেমে নোরা দৌড়ে এমারজেন্সির ফ্রন্ট ডেস্ক এ এসেই বলে, “ আমার মেয়ে শ্বাস নিচ্ছেনা, কিছু কর”। ও আর কি বলেছে কিছুই মনে নেই। ও কথা বলার সাথে সাথেই এমারজেন্সির ফ্রন্ট ডেস্ক এর সাথেই যে আর একটা দরজা ছিল সেটা খুলে গেল। একজন নার্স এর পিছন পিছন ভিতরের দিকে একটা রুম এ নিয়ে গেল। নার্স বলল, “এখানে শুইয়ে দাও”।
ও কাঁদতে কাঁদতে ময়নাকে সেই রুমের বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর ওরা একে অপরে কথা বলছে যে ময়নার শ্বাস প্রশ্বাস নেই। তাড়াতাড়ি করে ওরা ময়নার মুখের ভিতর একটা লম্বা নল ঢুকিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস আনার চেষ্টা করছে। এই শুনে আর দেখে নোরা অজ্ঞান হয়ে গেল।
৩/৪ ঘণ্টা পরে যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন নোরা আবার চিৎকার আর কান্না শুরু করে, আর বলে, “ আমার ময়না কই, ও শ্বাস নিচ্ছে তো? ও কোথায়, আমাকে ময়নার কাছে নিয়ে যাও”।
“তোমার ময়না এখন শ্বাস নিচ্ছে, কিন্তু নিজে নয়, ক্রিত্তিম উপায় ( vendilation), ওর শ্বাসপ্রশ্বাস চলে গিয়েছিল”। একজন নার্স বলল।
“দয়া করে আমাকে একবার ময়নার কাছে নিয়ে চলো, আমার ময়না আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা, আমি সামনে গেলেই ও ভাল হয়ে যাবে”, পাগলের মতো কথা গুলো বলে নোরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
“আচ্ছা চলো”, নার্স এই কথা বলে ওকে ময়নার সেই রুম এ নিয়ে গেল।
ময়নাকে এখনও সেই রুম এই রাখা হয়েছে, তখন পর্যন্ত আইসিইউ এর রুম এ নেওয়া হয়নি। ডাক্তাররা ওকে ৪/৫ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ এর মধ্যে রেখেছে, যখন ওর শ্বাসপ্রশ্বাস একটা সীমার মধ্যে চলে আসবে তখনি ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাবে।
রুমের দরজার সামনে আসতেই সে দৌড়ে ময়নার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে আরও কান্না শুরু করল। “মা, আমার ময়না,এই যে দেখ, মা এসেছি, একটু তাকাও, আমার সোনামণি”।
নোরা র এমন পাগলামি দেখে ডাক্তার আর নার্সরা ওকে জোর করে ধরে বাইরে নিয়ে গেল। একজন ডাক্তার বলল, “ এখন আপনার মেয়ে ভাল আছে। ওর নিউমনিয়া হয়েছে,একটু পরে আইসিইউ তে নিয়ে যাবো। আমাদের আরও অনেক পরীক্ষা করার বাকি আছে, সে গুলো হলে আরও জানতে পারবো আপনার মেয়ের অবস্থা সম্পর্কে”। কথা গুলো শুনার পরে একটু ভরসা পেলো নোরা।
নোরার স্বামীও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নোরা কে দেখে ওর কাছে এসে শক্ত করে হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে নোরার হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়লো। বেচারী বিদেশের বাড়িতে একা একা না জানি কত চিন্তা করছে।
“মাকে ফোন দিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ, তুমি চিন্তা করোনা, মা কে আমি সব জানিয়েছি, সারারাত তো ঘুমায়নি ,বলেছি ঘুমিয়ে নিতে”।
৪০ মিনিট বাইরে অপেক্ষার পর একজন নার্স এসে ওদের জানিয়ে দিল আইসিইউর রুম নাম্বার এবং ওদের ওখানে যেতে বলল।
রুমের ভিতরে বসে ওরা অপেক্ষা করছিল ময়নার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই দেখে একটা বিছানায় করে শ্বাসপ্রশ্বাসের মেশিন সহ ময়নাকে নিয়ে আসছে। নোরা দেখে তার মেয়ের শরীর কেমন মরা মানুষের মতো ফুলে গেছে। মুখে মেশিন, হাতে –পায়ে কয়েকটা আই ভি লাগানো হয়েছে। এগুলো দেখে ও আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পরে।
কিছুক্ষণ পরে নার্স এসে ময়নার সবকিছু চেক করে দেখে। ময়নার বাবা জিজ্ঞেস করে সব ঠিক আছে কিনা। নার্স বলে, “ এখন মোটা মুটি সব কিছু স্থিতিশীল আছে”।
নোরা মেয়ের গা- মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর কাঁদতে থাকে। ওর এই কান্না শুনে নার্স এসে বলে, “ আপনারা এখন বাসায় যেতে পারেন। আমরা ময়নাকে দেখব, রাতে থাকা যাবেনা। দরকার পড়লে আমরা আপনাদের ফোন করবো”।
“বাসায় চলো, বিকেলে আবার আসবো”। নোরা র স্বামী বলল।
“না আমি কোথাও যাবনা, আমি আমার ময়নাকে ফেলে কোথাও যাবনা। ও জেগে যদি দেখে আমি নেই, তাহলে ও ভয়ে অনেক কান্না করবে। আর তাছাড়া আমি ওকে এই হাসপাতালে একা রেখে কেমন করে বাসায় যাবো? তুমি যাও আমি যাবনা”।– বলে আবার কান্না।
মায়ের মন কেমন করে পারবে একা তার মেয়েকে ফেলে যেতে? যে মা নাকি এক মুহূর্তের জন্যও তার এই মেয়েকে চোখের আড়াল করেনি। যত্ন হবেনা ভেবে কোনদিন ডে কেয়ার এ দেয়নি। মেয়ে একটু ব্যথা পাবে ভেবে বাসার সব কোণায় কোণায় নরম জিনিস দিয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাবার ভয়ে ওখানে গেট লাগিয়েছে। সব কাজ ফেলে মেয়ের সাথে বসে পুতুল দিয়ে খেলা, আর যত খেলনা আছে সব কিছু দিয়ে খেলা করা, এগুলো সব ই তো মেয়েকে আনন্দ দেবার জন্য, খুশী রাখার জন্য করেছে। এখন কেমন করে যাবে নোরা তার বুকের ধনকে এই হাসপাতালে নার্স এর কাছে রেখে?
একটু পরে নার্স আবার এসে বলে, “ এত কান্না কাটি করলে এখানে থাকা যাবেনা”।
নোরার স্বামী জানে, নোরা কে এখানে রেখে গেলে ও শুধু কান্নাই করবে। তার চেয়ে বরং বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়াই ভাল। আর নোরা ময়নাকে ফেলে যেতেও চাচ্ছেনা। সে জানে নোরা তার মায়ের কথা ফেলবেনা, তাই সে এক ফাঁকে বাসায় মা কে কল করে নোরার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দেয়। “ মা আমি ময়নাকে একা ফেলে কি করে যাবো?” নোরা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
“আর আমিই বা কেমন করে থাকব তোকে ছাড়া? তোরা এসে আমাকে নিয়ে যা” বলে দুজনেই কাঁদতে শুরু করল।
নোরা এবার আর না করলনা স্বামীর কথায়।
পরের দিন মায়ের দেশে ফেরার কথা, কিন্তু মা নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে টিকেট আরও বেশ কিছুদিন পিছিয়ে দিতে বলল মেয়ের জামাইকে।
নোরা খেতে চায়না, মা তখন বলে, “ তুই না খেলে আমিও খাবনা”। নোরা রেগে গিয়ে বলে, “ মা এমন করছেন কেন? আমি কি করে খাব আমার ময়না আমার কাছে নেই, ওকে ছাড়া আমি খেতে পারবনা”। এই বলে সোফায় শুয়ে রইল। মা কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, “ মা রে, তোর যেমন লাগছে তোর মেয়ের জন্য, আমারও ঠিক তেমনি লাগছে আমার মেয়ের জন্য। তুই যদি এখন না খাস, তাহলে আমিও খেতে পারবনা। তোকে তো আরও শক্ত হতে হবে, জীবনে আরও কত কঠিন পরীক্ষা আসবে, সেগুলোর মোকাবেলা করতে হবে। এভাবে ভেঙ্গে পরলে তো চলবেনা। দেখিস ময়না ভাল হয়ে যাবে। অবশ্যই ভাল হবে। আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর, আমিও করছি, দেখিস ও সত্যিই ভাল হয়ে যাবে”।
মা আরও অনেক কথাই বলেছিলেন । মায়ের সেই কথা গুলো ওর অন্তরের ভিতরে গেঁথে রইলো। মায়ের কথা গুলো ওকে মনের দিক থেকে আরও অনেক অনেক সাহস আর আশা জাগালো। ওর ভিতরে কেমন যেন মায়ের প্রতি আরও দায়িত্ববোধ জেগে উঠলো। এত কষ্টের মধ্যেও ও ঠিকই মায়ের জন্য রান্না বান্না করে রেখে যায়। মায়ের যেন কষ্ট না হয়। এক দিকে মেয়ের জন্য ভালবাসা অন্য দিকে মায়ের জন্য। এই ভালবাসার টানে ও যেন আরও বেশি করে মনের মধ্যে বল পেলো।
তেরো দিন পরে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিলো ময়নার ক্রিত্তিম শ্বাসপ্রশ্বাসের মেশিন খুলে ফেলবে। ওরা বলছে মেশিন খোলার সময় জীবনের ঝুঁকি আছে। কারন অনেক সময় মেশিন খোলার পরে আর শ্বাস নিতে না পেরে অনেকেরই অনেক সমস্যা হয়েছে। এসব কথা শুনার পর ওর অন্তরের ভিতরে ধরফড় শুরু করলো আর গলা মুখ শুকিয়ে যেতে লাগলো।
আজকে সেই সময়। মেশিন খোলা হবে। নোরা, ময়নার বাবা আর মা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। মা নোরার হাত শক্ত করে ধরে রাখল। আর মা বলতে লাগলেন, “ মনের মধ্যে সাহস রাখ, সব ঠিক থাকবে। আল্লাহ্‌র ওপরে ভরসা কর”।
ময়নার মুখ থেকে মেশিন খোলার সাথে সাথে ময়না আস্তে করে “মা” বলে ডাক দিল। এই ছোট একটি ডাক ওর অন্তরের ভিতরে সমুদ্রের ঝড় তুলে দিল। সেই ঝড়ের ভিতরে একটা শান্তির ছায়া ঢেউ খেলে গেল। আর সাথে সাথে নোরা মেয়ের পাশে বিছানায় শুয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল, “ এইতো আমি মা, এই যে মা এখানেই”। মায়ের স্পর্শ পেয়ে ময়নার চেহারার মধ্যে কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব চলে আসে, আর আস্তে করে ঘুমিয়ে যায়।
“মা” – নোরা র হঠাৎ চমকে ওঠে মেয়ের ডাকে। এতক্ষণ যত চিন্তা করছিলো সব পিছনে ফেলে দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে। আর ওর অন্তরের ভিতর শুধুই ওর মায়ের দেওয়া সেই শক্তি, সাহস, মনের বল সব কিছুই শান্তির ছায়া হয়ে থাকে, আর থাকবে সারা জীবন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু চমৎকার গল্প উপহার দিয়েছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।

০৫ মার্চ - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪