আমার একটি বউ, একটি বেডরুম (শেয়ারড) আছে। একটি ফ্ল্যাটে টোনাটুনির সংসারে আমি আর আমার বউ বসবাস করছি প্রায় আড়াই বছর হল। বাচ্চাকাচ্চা উৎপাদন করি নাই এখনো। আমার বউ কখনো "টোনাটুনির সংসার" বলে কিছু আছে সেরকম মনে করে না। নারী অধিকার আন্দোলন এর বিশিষ্ট নেত্রী তার "সুখী এবং আধুনিক পরিবার" এর একচ্ছত্র অধিপত্নী (অধিপতি নয়)। আমি তার বিশিষ্ট সহযোগী।
আমার ব্যাপারে তার বিশেষ বিশেষ অ্যালার্জি রয়েছে। যেমন- দেরী করে বাসায় ফেরা, দেরীতে ঘুমাতে যাওয়া, সিগ্রেট খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। বিয়ের পরে বাসায় বসে কোন দিন সিগ্রেটে "সুখটান" দিয়ে বলতে পারি নাই, জীবন কত সুন্দর! গলির মোড়ে, চিপায়- চাপায়, চায়ের স্টলে গিয়ে বিড়ি টানতে হয়। বন্ধুরা দেখে বিশেষ মজা পায় এবং দাঁত খেলিয়ে হাসে। কেউ কেউ বলে, বউ পাইছস দোস্ত। জিনিস একখান।
কী জিনিস পাইছি রে দোস্ত, এটা আমি জানি। তোরা কী আর জানবি। আমাদের বেড একটা হলেও কাঁথা ছিল দুইটা। গত শীতে অনেক অনুনয়- বিনয় করে একঘরে (মানে, এক কাঁথার তলে) হয়েছি। সেটা করেও কম বিপত্তি হয়নি। মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে ওঠিয়ে বউ ঝাড়ি দেয়, অ্যাই নাক ডাকা বন্ধ করবা নাকি ছাদে যাবা? আহারে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর সুযোগটাও হাতছাড়া হল, শালার বিয়ে কপালে লাত্থি।
মাঝে মধ্যে অনিদ্রার বাতিক আমার সেই ছোটবেলার। তো ঘুমহীন চোখে যে বউয়ের হাত ধরে ছাদে গিয়ে জোছনা দেখব সে রকম সস্তামানের রোমান্টিক নয় আমার বউ। কোনদিন ভুলে ঘুম ভাঙিয়ে যে ছাদে নিয়ে গল্প করব, তারও জো নেই। তখন একলা একলা শুয়ে শুয়ে ভাবি, সুমী কীরাম ছিল, ওর ছোট বোন রুমিটাও তো বেশ রোমান্টিক ছিল। ধুত্তোরি ছাই, ওদের একজনকে বিয়ে করলেই ভাল হত।
বউ আমার নেত্রী বটে। নারী- পুরুষ সমান সমান ভাগ। মশারি টানানোর দায়িত্ব মাসে পনের দিন আমার, পনের দিন ওর। ভাবছেন একত্রিশ দিনে মাস, ঐ মাসে … গলা খাকড়ি দিয়ে বলছি, "কনসিডারেশন " এর একটা ব্যাপার আছে না। বউ আমার মোটামুটি মানের ফেইসবুক সেলিব্রেটি (নট ছেলেবেটি)। সমস্যা তো ঐ জায়গায় নয়। আমার ওয়াল থেকে কপিপেস্ট করা স্ট্যাটাস দিলেও লাইক পড়ে দুইশোর বেশী! আর আমার? বন্ধু- বান্ধব কলিগ মিলায়ে প্রায় গোটা পঞ্চাশ! যাক বাবা সুখে থাক। লাইক কমেন্টের ব্যাপারে বউকে জিজ্ঞেস করলে আঁচলে বাঁধা চাবির গোছা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে, বুঝবা না ব্যাপারটা সিক্রেট।
আগেই বলেছি সমতা বিধানে পারঙ্গম স্ত্রী আমার ব্যাপক অধিকার সচেতন। কোন কোন পত্রিকা দেখি তার লেখাও ছাপায়। নারী অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেই মাইক, ক্যামেরা ছুটে আসে আমার বাসায়। আমি তখন গর্বিত পিএর মত করে ওদের বলি, ম্যাডাম এখন ব্যস্ত আছে,পরে আসেন। ভাল করে সেজে গুঁজে এসে তারপর আচ্ছা মত ভাষণ দেবে, নারী নীতি মানতে হবে, মানতে হবে।
আর কেউ মানুক আর না মানুক আমাকে ঠিকই অনেক নীতিই মানতে হয়। ড্রেসিং টেবিলের দিকে যদি তাকাই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। যত প্রসাধন সামগ্রী আর অলংকার আছে তা "সব তোমারি জন্য" মানে আমার বউয়ের। আর আমার খালি একটা ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম আর একটা বডি স্প্রে। ড্রেসিং টেবিলের উপর অত্যাচার কেন, প্রশ্ন করতেই বউ আমার অগ্নিশর্মা! মনে মনে বকা দেই, তোর নারী নেতৃত্বের গোষ্ঠী কিলাই।
আমার এই শোচনীয় অবস্থা দেখে বন্ধু হাবিল জিগায়, দোস্ত, বাসর রাতের বিলাইডা বুঝি তুই মারতে পারস নাই! হাবিলকে কেমনে বলি, এ বড় কঠিন কারিগর রে বন্ধু, এ বড় কঠিন যাদুকর্।
০৫ মার্চ - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
১০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪