জাদুর পথ ও হাস্নুহেনার সুবাস মাখা মেয়েটি

ভৌতিক (নভেম্বর ২০১৪)

জোহরা উম্মে হাসান
মোট ভোট ২৩ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৭
  • ২৫
  • ১৩
এক
বিশাল এ সেকেলে বাড়ীটার পারপাশটা সবসময় ক্যামন যেন অন্ধকার আর ঘন কুয়াশায় ভরা । একটা ধুঁয়া ধুঁয়া আর ছায়া ছায়া মেঘ মেঘ ভাব জড়িয়ে আছে বাড়ীর লম্বা বারান্দা , ঘাস ঘাস উঠোন আর বড় বড় ঘরগুলো জুড়ে ! বাড়িটার দুই মাথা উঁচু ফুল খেলানো মরচে ধরা লোহার গেটটার মাথায় বড় বড় দুটো বাতি , যা অজস্র জোনাই পোকাদের গলা জড়িয়ে ধরে সারারাত পর্যন্ত মিটিমিটি জ্বলে ! আলো বলতে রাতের ঐ ধার করা আলোটুকুই । এরপর এক একটা দীর্ঘ দিন! কিন্তু তা যেন সূর্যের আলোবিহীন ! চারদিকে মাথা উঁচু জানা অজানা সংখ্যাতীত গাছের সংযোজন যেন ইচ্ছে কোরেই দিনের আলো প্রবেশের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে এ বাড়ীর ভেতরটাতে !
এ বাড়ীর কোন প্রাণীর বাড়ীর মালিকের বিনা অনুমতিতে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি নেই । পাড়া-প্রতিবেশীদেরও নেই এ বাড়ীতে প্রবেশাধিকার ! কাজী বাড়ী বলে কথা ! বংশ গৌরব আর ঐতিহ্যে এ বাড়ী গ্রামের আর সব বাড়ী থেকে আলাদা ! কাজীদের বিংশতম পুরুষের বর্তমান উত্তরাধিকার কাজী আজরফউদ্দোল্লা । মরহুম কাজী আমানতউল্লার একমাত্র বংশধর ! আজরফউদ্দোল্লা লেখাপড়ায় তেমন আহামরি গোছের কিছু নয় । কিন্তু বাবার সাথে রাতদিন নানা ব্যবসার কাজে হাটে মাঠে বন্দরে আর বিভিন্ন দেশ বিদেশ ঘুরতে ঘুরতে কালক্রমে সে নিজেই একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কিনেছে !
রুমকির প্রথম থেকেই ব্যবসায়ী বাড়ীতে বিয়ে করার একেবারেই ইচ্ছে ছিল না । বিশেষতঃ এই বয়সে ! হোলই বা পাত্র বড় ব্যবসায়ী ! সে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কলেজে পড়ুয়া আধুনিক মেয়ে । পড়ালেখা শেষ কোরে নিদেনপক্ষে একজন স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখার পথে এ পর্যন্ত কোন বাঁধাই অতিক্রম করতে হয়নি তাঁকে । মেয়ে দেখা শেষ হোলে পাকা বিয়ের কথার আগে রুমকি আর রুমকির মা গোঁ ধরে বসেছিলো – ব্যবসায়ী বাড়ীতে বিয়ে ? কিছুতেই না ! রুমকির বাবারও ক্যামন ক্যামন যেন লাগছিলো । একেতো অনেক দূরের একটা জেলায় বসবাসরত অজানা অচেনা একটা পরিবার । আর পাত্রের বয়সও মেয়ের থেকে বেশ একটু বেশীই বেশী । যদিও বাহির থেকে দেখে তা বুঝবার উপায় নেই । পাত্র কাজী আজরফউদ্দোল্লার বয়স ছত্রিশ পেড়িয়ে সাইত্রিশ । সুন্দর একহারা দীর্ঘ শরীর । সারা শরীরে এক চিলতে মেদেরও আনাগোনা নেই । কালো মিশমিশে একমাথা চুল । সুবিন্যস্ত পোশাক আশাকে অত্যন্ত কেতাদুরুস্থ । সে কথা বলে কম এবং যা বলে তা বেশ বুঝে সুজেই বলে !
এহেন সুদর্শন ধনবান ছেলেটিকে পর্দার আড়াল থেকে এক নজর দেখেই শেষমেস রুমকির মার কেন জানি তাঁকে খুব পচ্ছন্দ হোয়ে গেল । রুমকি সবসময় তাঁর মার কথামতো চলতেই ভালবাসে , তাই সেও আর এ বিয়েতে তেমন আপত্তি করলো না !
দুই
বেশ অনেকটা গভীর রাত । বিয়ে বাড়ী কিন্তু তা বড়ই চুপচাপ । নীরব, নিঝুম । রুমকি ভেবে নিয়েছিল তাঁকে দেখতে ছেলের বাড়ীতে আত্নীয় স্বজন আর পাড়া পাড়াপড়শীদের ভীড় উপছে পড়বে । কিন্তু প্রথম দিনেই তাঁকে বড় হতাশ হতে হোল । বাড়তি কেউ কোথাও নেই । বড় নিশ্চুপ আর অন্ধকার যেন বিয়ে বাড়ীটা । চারপাশ জুড়ে শ্বশানের সুমসাম নীরবতা !
অতি সূক্ষ্ণ কারুকাজ করা লতাপাতা ফুলপাখী গাছপালা আর ময়ূর পঙ্খী আঁকা কালো কাঠের বিশাল পালংক জুড়ে অনেকটা আয়েশী ভঙ্গিতে শুয়ে আছেন যে বৃদ্ধা মহিলা , তিনিই যে তাঁর স্বামী আজরফের মা তা বুঝতে এতটুকুও অসুবিধা হোল না রুমকির । বরঞ্চ মহিলাটিকে দেখে খুব ভালো লাগলো রুমকির । কেমন একটা শান্ত সিগ্ধ সম্ভ্রান্ত ভাব তাঁর গোটা অবয়ব জুড়ে ।
আজরফউদ্দোল্লা নীচু হয়ে মায়ের পা ছুঁয়ে তিনবার করে কদমবুচী করলো । তার দেখাদেখি রুমকিও - উহ , কি সুন্দর সাদা দুখানা পা । একেবারেই যেন গোলাপি পদ্ম ফুলের মতো । মায়ের মুখটা অবিকল ছেলের মুখে যেন বসানো । দুধ সাদা রঙ , উন্নত নাসা আর ছোট্ট আলতো কপাল !
আক্কেল মান্দ বানু বেগ অধীর আগ্রহে ছেলের বউকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন । এরপর তাঁর নিজের বিয়ের প্রায় বারো ভরি ওজনের ভারী সীতাহারটা সিন্ধুক থেকে বের কোরে এনে তা বউয়ের গলায় পড়িয়ে দিলেন । তারপর একফাঁকে ফিসফিসিয়ে ছেলেকে অনেকটা সাবধান করে দিয়েই বললেন- এবার ভালো্মতে ঘর সংসার করিস বাবা । মরার আগে আমি যেন নাতিপুতির মুখ দেখতে পাই !
এবার ভালো্মতে ঘর সংসার করিস বাবা - শ্বাশুড়ীর মুখ থেকে এই ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো রুমকির কানে ক্যামন যেন অন্যরকম শোনাল । তার মানে কি আগেও একবার বিয়ে করেছিল তাঁর স্বামী ? আজরফউদ্দোল্লার যা বয়স তাতে তাঁর আগে একটা বিয়ে হওয়া অবাক হবার মতো কিছু নয় । কিন্তু তাঁর নিজের মাবাবা ক্যানো এ বিষয়টা খতিয়ে দেখল না । একটা প্রবল অভিমান আর নিগুঢ় সন্দেহে বিয়ের রাতেই মনটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল রুমকির ।
তিন
এ বাড়ীতে রুমকি আর তাঁর স্বামী বাদে আর তিনটে মানুষ বাস করে । একজন আজরফের মা । আর তাঁর সার্বক্ষণিক দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত বড় বড় চোখের শ্যামা সেই প্রায় চল্লিশ পেরোনো কাজের মেয়ে সাবিহা । আর সেই সাথে রান্না ঘরের অচলপ্রায় কাজের বুয়া ভানুর মা ।
প্রতিদিন বাহিরে বেড়োনোর সময় বাহিরের লোহার গেটের তালাটা নিজের হাতে লাগাতে লাগাতে আজরফ বার বার সাবিহাকে সাবধান করে বলে দেয় - নতুন বউকে ভালভাবে দেখে রাখতে । ভালভাবে দেখে রাখা বলার মানেই এক ধরণের বিশ্রী সাবধানতা । অতি সতর্কতা অথবা নিষেধের গূঢ় কোন বার্তা । আর এ্ক কথায় তার মানে গিয়ে দাঁড়ায়- এ বাড়ীর ভেতর দিকটা ছাড়া বাহিরের দিকটায় কোন নজর না দেয়া । বাড়ীর উঁচু প্রাচীরের একপাশে যে ঘাট বাঁধানো পুকুর আর মাথা উঁচু নারকোল গাছের সারি আছে সেখানে রুমকিকে যেতে না দেয়া । পুকুরে নাকি জল পরীরা প্রতিদিন রাত বিরতে নাইতে আসে । আর নারকোল গাছের মাথায় বসে দুষ্ট জীনেরা নাকি তা লুকিয়ে লুকিয়ে দ্যাখে । জীনদের নজরে যদি পড়ে যায় নতুন বউ , তাই নাকি এতো বিধি নিষেদের পালা । রুমকির যদিও এসব কথা একেবারেই বিশ্বাস হয় না । আর তাছাড়া পুকুরের বাম পাশে যে নানান জাতের ফুলের গাছে ভরা মস্ত বাগান সেখানেও কেন জানি যাওয়া একবারেই বারণ তাঁর । বাগানের চারপাশটা জুড়ে কোমর উঁচু বাঁশের বেড়া দেয়া । আর একদিকে ছোট্ট একটা গেট । সেখানে সর্বক্ষণ বড়সড় আকারের একটা তালা লাগানো থাকে ।
প্রতিদিন বন্দরের কাজ শেষে বেশ রাত করেই বাড়ী ফেরে আজরফউদ্দোল্লা । যতক্ষণ সে বাড়ী থাকে না , ততক্ষণ যেন কিছুই করার থাকে না রুমকির । সকালের নাস্তা শেষে সে প্রত্যেকটা দিন প্রায় দু বার কোরে শ্বাশুড়ীর ঘরে যায় । কোনদিন গিয়ে দ্যাখে গল্পের বই পড়তে পড়তে আক্কেল মান্দ বানু বেগ ঘুমিয়ে পড়েছেন । কোনদিন বা তাঁর হাতে ধরা থাকে হাদিস কালামের বই ।
সাবিহা রুমকির পায়ের শব্দ শুনলেই যেন টের পায় , সে আসছে । তাঁর চোখকান সব সময় যেন খোলা থাকে । সে রুমকির এখানে আসাটা খুব একটা ভালো চোখে দেখে বলে মনে হয় না ! রুমকি শ্বাশুড়ীর মাথার কাছে বসে তাঁর কাঁচাপাকা পাতলা চুলে হাত বুলালেই ওপাশ থেকে সাবিহা প্রায় ধমকের সুরে বলে উঠে – দেখতে পারছেন না নতুন ভাবী , আম্মাজান ঘুমাচ্ছেন । কাল সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেননি তিনি কোমরের ব্যথায় । এখন অসময়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সর্বনাশ হবে !
এসব শুনে রুমকি অনিচ্ছাস্বতেও মন ভারী কোরে চলে যায় । আবার দিনের অন্য একটা সময় এসে দ্যাখে আক্কেল মান্দ বানু বেগ সকালের মতোই অঘোরে ঘুমাচ্ছেন । এতই কি ঘুম একজন মানুষ ঘুমুতে পারে ? উনি খান কখন , প্রাত্যহিক অন্যান্য ক্রিয়া কর্মই বা কখন সারেন – রুমকি সাবিহার কাছে জানতে চায় !
সাবিহা সেসব কথায় হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলে- ওসবের দরকার পড়ে না তাঁর নতুন বউ । বুড়ো বয়সে খানা-পিনা , কথা বার্তা সব এমনিতেই কমে যায় !
সাবিহার কথা কতখানি সত্য তা ভেবে পায় না রুমকি । কি জানি সেকি ঘুমের ঔষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে নাকি এই বৃ্দধা মহিলাটিকে । সেই যে বিয়ের রাতে কথা হোল , এরপর হাতে গোনা দু চার দিন রুমকির কথা হয়েছে তাঁর শ্বাশুড়ীর সাথে । প্রত্যেক বারেই রুমকি ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে জানতে চেয়েছে তাঁর স্বামী আজরফউদ্দোল্লার অতীত জীবনের ছোটখাট কথা । আশা , যদি এই বূড়ো মানুষটি মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বলে ফেলে ! তবে তা শোনামাত্রই আশার সাথে সাথে বেদনাবোধ যে তড়তড়িয়ে বেড়ে যাবে সে হিসাবও মনে মনে কষে রেখেছে রুমকি !
নিজের স্বামী আজরফকেও যেন এতদিনে সামান্যও চিনতে পারলো না সে ! মানুষটার মধ্যে সব সময় কেমন যেন একটা দায়সারা গোছের হন্তদন্ত ভাব । রুমকির সুন্দর শরীরটা নিয়ে যে সে খেলতে বেশ ভালবাসে –তা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছিল রুমকি । কিন্তু মন ? স্বামীর মনের ছিটেফোঁটা নাগালও যেন পায়নি সে এতদিনে । আর ওপক্ষ থেকেও মন খোঁজার কোন প্রয়াসই যেন নেই । এ ক্যামন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক , রুমকি ভেবে পায় না !
আজরফ বাড়ীর বাহির থেকে যত রাতেই ফিরুক সাবিহা তাঁর জন্য রাত জেগে বসে থাকবেই থাকবে । কোনদিন রাত বাড়লে সাবিহা রুমকিকে সকাল সকাল খেয়ে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে নিতে বলবে । আগে সাবিহার এসব কথা না শুনে রুমকিও তাঁর মতো আজরফের জন্য না খেয়ে দেয়ে রাত জেগে বসে থাকতো । এখন আর থাকে না । থেকেই বা কি লাভ ?
আজরফ বাড়ীতে পা দেবার সাথে সাথে সাবিহার কাজ যেন হাজারো গুণ বেড়ে যায় । সারা শরীর আর মন জুড়ে তার বসন্ত বাতাস খেলা করে । রুমকি তা বেশ টের পায় । ইজি চেয়ারের নীচে হাঁটু গেড়ে বসে মুনিবের জুতো মুজো এক এক করে পরম যত্নে খুলে দেয় সাবিহা । নিজের গায়ের শার্টটা আজরফ নিজেই খুলে সাবিহার হাতে দেয় আর সে তা বেশ যত্ন কোরে দেয়ালের হেঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখে ! এরপর বাথরুমে গোসলের গরম পানি ঠাণ্ডা পানির এসবের তদারকিতে ব্যস্ত সময় কাটে সাবিহার । আজরফ আর সাবিহার এহেন অন্তরঙ্গতা ভালো লাগে না রুমকির !
কোন কোন দিন সন্ধ্যে সন্ধ্যে রাতে আজরফের সাথে বিছানায় ঘনিস্ট অবস্থায় রুমকির নজরে পড়ে লম্বা জানা্লার পর্দার চিক্কন ফাঁকে ড্যাবডেবে এক জোড়া চোখ ! সেই চোখ জোড়া আগে থেকেই চেনে জানে রুমকি । সাবিহা ! সাবিহা লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁদেরকে দেখছে ! চোখ দুটো তার ক্ষুধার্ত বাঘের মতো দারুন লোভে জ্বলজ্বল করছে । যেন সুযোগ পেলেই এখুনি থাবা বসাবে আজরফের সারা শরীরে !
কিন্তু গভীর রাতের বেলায় জানালার পাশে রোজ রোজ কে আসে অমন কোরে ? যাকে স্পষ্ট দেখা যায় না , কিন্তু অনুভব করা যায় ! একটা মেয়ের আদল । ছায়া ছায়া । ভাসা ভাসা । কে সে ? সে ক্যানো আসে এত রাতে তাদের স্বামী স্ত্রীর গোপন জানালার পাশে ! সে যেদিন যেদিন আসে , সেদিন সেদিন ঠিক ঠিক বুঝতে পারে রুমকি । ক্যামন যেন একটা রাতজাগা হাস্নুহেনার গোপন সুবাস ! এমন সুবাসিত মেয়ে ভালো না হয়ে যায় কি করে ?
আচ্ছা এই হাস্নুহেনার সুবাস কি আজরফের কাছে পৌঁছায় না , রুমকি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে !
চার
সাবিহার কাছে সেদিন বাগানের গেঁটটা খুলে ভেতরে যাবার জন্য চাবি চেয়েছিল রুমকি । অনেকগুলো গন্ধরাজ , রজনীগন্ধা আর বেলী ফূটে আছে থরে থরে ! ফুলগুলোর গন্ধ নিতে বড় সাধ হোচ্ছিল তার । আর সেই সাথে রাত জাগা হাস্নুহেনার সেই একটা চেনা সুবাস তাঁকে কেন জানি বারে বারে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বাগানটার দিকে ।
কিন্তু না , সাবিহা তো তাঁকে চাবিটা দিলোই না , বরঞ্চ এক রকম শাসিয়েই গেল তাঁকে । যার মর্মার্থ হোল – ভাই সাহেব এলে সে সব বলে দেবে তাঁকে । এ বাড়ীর নিয়ম , নিয়ম ভঙ্গ করে নতুন বউ নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির চারপাশে ঘোরে । বাগানের তালা খুলে সেখানে যেতে চায় !
সাবিহার এহেন ব্যবহারে খুব একটা অবাক হয় না রুমকি । আজরফের পোষা কুকুরটা আর তার মধ্যে খুব কমই একটা ফারাক খুঁজে পায় সে । তারা দুজনই সদা ব্যস্ত থাকে যেন প্রভুর ভালো মন্দ সেবায় ! কিন্তু বাগানে ঢুকা নিয়ে এতো নিষেধের কি আছে তা ভেবে কূল পায় না রুমকি । কিন্তু এ ব্যাপারে স্বামীকে মুখ ফুটে কিছু জিজ্ঞেস করতে কেন জানি অজানা এক ভয় এসে ইদানীং গ্রাস করে তাকে ।
রুমকির কিছুই ভালো লাগে না । এত এত শাড়ী গহনা সুবাস চন্দন কিছুই না ! কেমন শূন্য শুন্য লাগে রাত্রিদিন। শোবার ঘরের দেয়ালে ঝুলানো দামী বন্দুক , কাপড়ের ড্রয়ারে যত্নে রাখা ছোট্ট রিভলভার , বসার ঘরে ঝুলানো বাঘের ছাল –এসব সব যেন রুমকিকে আগেভাগে জানান দিয়ে বলে যায় , সাবধান ! আসলেই কেন জানি আজকাল বড় সাবধানি হয়ে গ্যাছে রুমকি । এ বাড়ীর হাবভাব তাঁকে তা হতে বাধ্য কোরেছে । তাঁর সদাই কেন জানি মনে হয় কোন এক ভূতুড়ে বাড়ীতে তাকে কেউ যেন বন্ধী কোরে রেখেছে । আর যেখান থেকে পালানোর যেন পথ নেই তার।
তবে আজরফের পোষা বিশাল ব্লাক হাউন্ডটাই কেবল এ বাড়ীতে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ কোরে থাকে , অন্তত তাই রুমকির মাঝে মধ্যে মনে হয় । মিসমিশে কাল কুকুরটা বাড়ীর উঁচু প্রাচীরটার চারপাশটায় ইচ্ছে মত ঘুরপাক খায় আর উচ্চ স্বরে চিৎকার কোরে চার পা দিয়ে বাগানের মাটী খুঁড়ে মরে। লালা ঝড়িয়ে গন্ধ শুঁকে বারে বারে মাতাল হ্য় !
সাবিহা চাবুক হাতে এসে তাকে সামলায় !
পাঁচ
কি হয়েছো গো তো্মার , নতুন বউ তুমি কাঁদছো ক্যানো ? ছুঁই ছুঁই সন্ধ্যেয় খোলা জানলার ও পাশ থেকে হঠাৎ ভেসে আসা অচেনা একটা মেয়েলী কণ্ঠস্বরে অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকায় রুমকি । খুব সুরেলা সেই গলা । গভীর আবেশ জড়ানো ।হাল্কা আঁধারে মেয়েটিকে ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না । কিন্তু বোঝা যায় যে সে তাঁর খুব কাছেই আছে। বড় আশ্চর্য হয় রুমকি । ভাবতে বেশ ভালো লাগে আশেপাশের কোন সমবয়সী নারী এই প্রথম তাঁর ব্যথায় ব্যথিত হোয়েছে । কিন্তু সেই পরিচিত হাস্নুহেনার সুবাস । প্রতিরাতে জানালায় দেখা সেই সুবাসিত মেয়েটি কি সে! আবারো সেই সুরেলা কণ্ঠস্বর ।
মেয়েটি বললো- আহা , আজরফ বুঝি কষ্ট দিয়েছে তোমায় ? দিবেই তো । যত দিন যাবে আরও ভালো কোরে বুঝতে পারবে সে কতটা দয়ামায়াহীন ! নিষ্ঠুর ।
হাজার হলেও স্বামী । একজন অচেনা মহিলার কাছ থেকে স্বামীর এহেন বদনাম শুনতে কোন মেয়েরই ভালো লাগার কথা নয় । রুমকিরও তেমন ভালো লাগলো না । তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সে জিজ্ঞেস করলো – তুমি এতসব জানলে কি করে ?
মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে । সে হাসছে তো হাসছেই । সে হাসির যেন আর বিরতি নেই । শেষ নেই । হাসতে হাসতে মেয়েটি এবার এগিয়ে এসেছে একেবারে জানালার বুকের কাছে । ফিকে আলো- আঁধারিতে ঠায় একাকী দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি । তাঁকে দেখে ক্যামন যেন আঁতকে উঠলো রুমকি ।এ কে ? দোলন চাঁপার মতো গায়ের রং । ডালিমের কোয়ার মতো গোলাপি দু ঠোঁট । আর মায়া ভরা গভীর কালো দুটি চোখ । এত সুন্দর মানুষ হয় কি করে? কতই বা বয়স হবে তাঁর ? রুমকির নিজেরই মতোন কিংবা দু চার বছর বেশী !
কিন্তু সে এখানে এলো কি করে ?চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর । ঘেরা জঙ্গল । চাবি আটা গেট । তার মাঝ দিয়ে এ মেয়েটি এখানে এসেছে কেবল তাঁরই কান্নার সমব্যথী হতে , ভাবতেই কেমন যেন মাথাটা ঘুড়ে গেলো রুমকির । তবে কি আজ ভুল করে বাহিরের গেটটা খুলে রেখেই চলে গেছে আজরফ ?
রুমকিকে এতশত ভাবতে দেখে মেয়েটি বললো – কি ভাবছ গো মেয়ে , আমি কে ? তুমি চেনো না বটে কিন্তু তোমার স্বামী চেনে আমায় । তাঁকে বলো গো আমার কথা । বল , জিনিয়া – জিনিয়া এসেছিলো তোমায় দেখতে । দেখবে তা শুনে কি রকম অবস্থা হয় তার । আবারও হাসি , তবে তা ব্যঙ্গের । তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ।
বলবো ! কিন্তু কি রকম অবস্থা হয় তার , একথা বলছো ক্যান ? তবে তার আগে বলো -তুমি এখানে আসলে কি কোরে । বাহিরের গেটটা কি আজ খোলা ? না কেউ খুলে দিয়েছে ?
হু , তুমিও তাহলে পাগল হোলে । ঐ গেটটা কি কেউ কোনদিন খুলতে পারে এক আজরফ ছাড়া , মেয়েটি ভ্রু নাচিয়ে বলতে থাকে ! অবশ্য আর পারে ঐ শয়তান সাবিহা ! সেই তো ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে তোমার স্বামীকে গো !
উহ , কি করে তাঁর মনের কথা বুঝতে পারলো এ মেয়েটি ! সে যে সাবিহা আর আজরফকে নিয়ে খুব বাজে একটা সন্দেহ করছে তা কি বুঝে গেছে এই অচেনা মেয়েটিও ! কিন্তু তুমি এ বাড়ীতে ঢুকলে কি কোরে , সব বাদ ছাদ নিয়ে রুমকি এখন এ কথাটিই জানতে চায় । আর এটা জানাই এখন তাঁর একান্ত জরুরী !
মেয়েটি যেন সহজেই রুমকির মনের কথা বুঝতে পারে । গভীর শান্তনার সুরে বলে – ভেবো না । এখানে ঢুকবার আর বেড় হবার এক জাদুর পথ জানা আছে আমার । তোমায় দেখিয়ে দেব !
জাদুর পথ ?
হু , কাল ভর দুপুর বেলা একলা পুকুরের ঘাটে এস, পথটা দেখিয়ে দেব । সে পথ ধরে যেথা খুশী সেথা যেতে পারবে তুমি । কিন্তু স্বামী শ্বশুর বাড়ী ছেড়ে কেন চলে যেতে চাইছ তুমি । মেয়েটি হেয়ালী করেই যেন জিজ্ঞেস করে তাঁকে । ওরা কি তোমায় কিছু বলেছে ? এই ধর আমার মতো । এই দ্যাখো , আজও এ বুকে তোমার স্বামীর ছোড়া গুলির দাগটা মিলিয়ে যায়নি । বলেই চারদিক মাতাল করে খিল খিল করে হাসতে থাকে মেয়েটি । ক্যামন কান্নাভেজা ম্লান করুণ সে হাসি । সে হাসি বারে বারে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে । উতাল করে চারপাশটা !
কে , কে ওখানে –কার সাথে কথা বলছ নতুন বউ – দূর থেকে সাবিহার চড়া গলা শোনা যায় !
কারো সাথে না , রুমকি বানিয়েই বলে ।
কারো সাথে না ! আমার কাছে লুকিয়ো না নতুন বউ । সে এলে আমি বুঝতে পারি । হাঁফাতে হাঁফাতে কথাগুলো বলে সাবিহা । রুমকির সাবিহাকে দেখে মনে হয় খুব ভয় পেয়েছে যেন সে । সেই সাথে একটা গভীর উৎকন্ঠা আর ক্রোধ যেন ধীরে ধীরে গ্রাস কোরেছে তাঁকে!
কে এলে তুমি বুঝতে পারো , রুমকি উল্টো প্রশ্ন করে সাবিহাকে । কে এলে বলছ না তো ।
সাবিহা রুমকির কথার কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না ! টমি , টমি বলে তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে সে । আর সে ডাক পেতলের শিকল দিয়ে বাধাঁ কুকুরটাকে উচ্চকিত করে তোলে । সাবিহার গলার সাথে গলা মিলিয়ে ভয়ার্ত চিৎকার আর গর্জনে চারদিক মাতাল করে সে!
কুকুরের গলার বাধাঁ শেকলটাকে এক হেচকায় খুলে ফেলে দেয় সাবিহা । উচ্চ কণ্ঠে বলতে থাকে , যা টমি তাঁকে যেয়ে ধর । ধরা চাইই ! আবার ভয় দেখাতে এসেছে সে ।
গগন বিদারী ডাকে আর ক্ষীপ্ত গতিতে বাড়ীর প্রাচীরের চার পাশটা কয়েকবার প্রদক্ষিণ করে টমি । তারপর এক সময় ঝিমিয়ে পড়ে ভয়ার্ত গলায় বাগানের হাস্নুহেনার তলে অযত্নে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাসগুলোর নীচে লুকিয়ে থাকা মাটি চার পা দিয়ে বারে বারে খোঁড়ে সে !
ছয়
ঘরে ফিরে আজরফকে আজ বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে । বারে বারে সে টেবিলে রাখা সিগারের প্যাকেটটা থেকে সিগারেট বের কোরে লাইটারটা জ্বালাচ্ছে । আর ঘন ঘন জানালা দিয়ে বাহিরের আকাশটার দিকে তাকাচ্ছে । সাবিহা তাঁকে সব বলে দিয়েছে । সে এসেছিল তাও আবার নতুন বউয়ের কাছে !
নতুন বউয়ের কাছে ! এসব কোন ভালো লক্ষণ নয় ! এত বছর বাদে সে আবার ক্যানো এলো , কি উদ্দেশ্যে ? আজরফ আবার একটা মেয়েকে নতুন কোরে বিয়ে কোরেছে , সেই ঈর্ষায় ? মরে যাওয়া মানুষের রাগ , ক্রোধ কিংবা হিংসা এসব থাকে নাকি ? আসলে জিনিয়া কি সত্যিই এসেছিল – তা তো আগে জানা দরকার । নাকি সাবিহা নতুন বউয়ের উপর হিংসা করে এসব তাঁকে বানিয়ে বানিয়ে বলছে ।
রুমকিকে বিয়ে করার পর আজরফ সাবিহার সংসর্গ যতটা পারে এড়িয়েই চলে । মা তাঁকে আগেভাগে সাবধান কোরে দিয়ে বলেছেন- আর নয় ! জিনিয়ার চোখ এড়িয়ে সে সাবিহার সাথে আগে অনেক কুকর্মই করেছে । এ এক বিশ্রী শরীরী আবেগের টান । মিথ্যে প্রলোভন । যা থেকে যেন মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই । আর তা জেনে ফেলায় অকালে মরতে হোল জিনিয়ার মতো সুন্দরী মেয়েটাকে । আসলে জিনিয়াকে মারতে চায় নি আজরফ ! ভালই বাসতো সে বউটাকে । কিন্তু কোথা থেকে যেন সাবিহাই আগ বাড়িয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা বন্দুকটা তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে জিনিয়ার ক্রোধে মাতাল মুখটা একেবারে বন্দ কোরে দিতে !
জিনিয়াকে বাগানের হাস্নুহেনার ঝাড়ের নীচে চিরকালের জন্য মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে । মা আর সাবিহা ছাড়া একথা পৃথীবির কোন কাকপক্ষীও জানে না । ব্যাপারটা ঘটে যাবার পর মা সেই যে শয্যাশায়ী হয়েছেন , তার আর ভালো হয়ে উঠার কোন সম্ভাবনা নেই , পাশ করা ডাক্তার বলে দিয়েছে ! জিনিয়ার বাবা মাকে সত্য মিথ্যা এটা ওটা বলে থামানো হয়েছে । তাও প্রতি বছর জিনিয়া গায়েব হয়ে যাওয়ার দিনটিতে তাঁরা এসে কাজী বাড়ীর গেটের বাহিরে ঘোরাঘুরি করে ! পাছে ভেতরে ঢুকে তাঁরা সব কিছু জেনে যায় – সে কারণেই জিনিয়ার মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক পর থেকেই বাড়ীর গেটে বিশাল তালা ঝুলানো হয়েছে । আর আজ অব্দি সে তালা ঝুলছেই । আজরফ ছাড়া সে তালা খোলার সাধ্য বা সাহস কারো নেই !
কিন্তু আজ আবার জিনিয়া এলো ক্যানো ! আজরফ হাতে গুনে । এখনও তো তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলার সেই দিনটার মাস খানেক বাকি !সেই বিশেষ দিনটাতে আর যাই হোক জিনিয়া আসবেই আসবে । কখনও তাঁকে দেখা যাবে , পুকুরের পাড়ে সিঁড়ির জলে পা ডুবিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে । কখনও বা এক গুচ্ছ হাস্নুহেনা হাতে বাগানের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে । সে এলেই বাড়ীর কুকুরটা ক্যামন যেন উন্মাদ হয়ে যায় । চারপাশটায় মাটি খুঁচিয়ে মাথা খুঁড়ে মরে !
তবে কি জিনিয়া সব কথা বলে দিয়েছে রুমকিকে ? আজরফ প্রমাদ গোনে । প্রায় একমাস হোল সে বিয়ে কোরেছে রুমকিকে । কিন্তু নিছক একটা শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া আত্নিক কোন টান গড়ে উঠেনি তাদের দুজনার মধ্যে । আর তার কারণ যে সে নিজেই তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে সে ।
আসলে জিনিয়ার মৃত্যুর ঘটনা আজ অব্দি বারে বারে আজরফকে পাগল করে দেয় । কিন্তু যার জন্য এত কিছু সেই সাবিহা এখনও বহাল তবিয়তে এ বাড়ীতে রাজত্ব করে চলছে । সাবিহাকে সেই ঘটনার পর থেকে মনে মনে ঘৃণা করে সে । কিন্তু তাঁকে এড়ানোর সাহস তাঁর নেই । যদি সে মুখ খোলে ?
জিনিয়া চলে যাবার প্রায় পাঁচ বছর পর রুমকিকে বিয়ে কোরে ঘরে আনা হোল । আর তা মার একান্ত চাপাচাপিতে । নাতিপুতির মুখ দেখতে চান তিনি । কিন্তু এখানেও চরম বাধ সেধেছিল সেই সাবিহা । রুমকির সাথে বিছানায় এক হলেই কোথা থেকে যেন হাজির হয় সে । জানালার পর্দার সূক্ষ্ম ফাঁক দিয়ে অতি আড়ালে থেকে সে তাঁর উপর নজরদারী চালায় !
আজও সাবিহা সেই পাঁচ বছর আগের মতো তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে । রুমকি নাকি সব জেনে গ্যাছে । কি জেনে গ্যাছে ? তাঁর আর সাবিহার গোপন কথা ? না , তা নয় । এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু । জিনিয়ার কথা আর সেই জিনিয়াই তাঁকে সব গোপন কথা বলে দিয়েছে ! এখন কি করবে আজরফ , রুমকিকে বাঁচাবে কি ভাবে ? রুমকি বেঁচে থাকলে সে তো বাঁচবে না । এটাই ভবিতব্য !
সাত
আজ আজরফও বাহিরে যায় নাই । দিন রাত গালে হাত দিয়ে কি এক ভাবনা ভাবছে সে । মাঝে মধ্যে সাবিহা এলে কখনও মুখটা উজ্জ্বল হোয়ে উঠছে তাঁর । আবার কখনও দুশ্চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠছে চোখে মুখে ! রাতদিন ভাবতে ভাবতে সহসা দু চোখের পাতা এক কোরেছে সে !
দৌড়াও রুমকি ! পালাও ! আর সময় নেই ! কে যেন রুমকিকে ডেকে বারে বারে বলে ! কে বলে ,সেই হাস্নুহেনার সুরভিত মেয়েটি কি ? রুমকি যেন জেনে গ্যাছে মেয়েটি কে । ক্যানো , তাঁকে আর তাকে নিয়ে তাঁর স্বামী আজরফ আর সাবিহার এত মাথা ব্যথা !
এই সুযোগ । বাহির থেকে তিনটে দরজার শিকলগুলো টেনে দেয় সে । ভেতর থেকে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে তা খুলতে ম্যালা সময় লাগবে । মিশকালো ভয়ঙ্কর সেই কুকুরটাও শুয়ে শুয়ে আরামে পা চাটছে !
কিন্তু ক্যামন করে বাহিরে যাবে রুমকি । গেটের চাবিটা আজরফের দখলে ! কিন্তু সেই হাস্নুহে্না গন্ধমাখা মেয়েটি তো তাঁকে বাহিরে বেড়োবার জন্য জাদুর পথ দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল ! কিন্তু কোথায় সে ?
আর কতটা সময় নিজেকে এভাবে বাড়ীর সবার রক্ত চক্ষু থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে তা জানে না রুমকি । কিন্তু কেবলই সে জানে , সে যখন তাঁকে কথা দিয়েছে সে আসবেই আসবে !
সেই হাস্নুহেনা গন্ধমাখা সুবাস । জিনিয়া ! আশ্চর্য সব জেনে শুনেও জিনিয়াকে দেখে রুমকির একটুকও ভয় লাগছে না । লাগছে না কোন দ্বিধা । আড়ষ্টতা কিংবা জড়তা । ভূতে পাওয়া মানুষের মতো সে জিনিয়ার হাতটা ধরে জোরে জোরে পুকুরের একেবারে পাশের প্রাচীটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । পেছন থেকে শোনা যাচ্ছে পরিচিত গলার হুঙ্কার । তারস্বরে চেঁচামেচি আর আত্ন চিৎকার ! সেই ভয়ঙ্কর কুকুরটা জেগে উঠেছে আবছা ঘুম থেকে । বারে বারে চিৎকার কোরে ছিড়ে ফেলতে চাইছে গলার রজ্জু ।
পালাও রুমকি পালাও । জিনিয়া তাঁর নিজের একটা হাত দিয়ে রুমকির একটা হাত যেন নিবিড় কোরে বেঁধে রেখেছে । বড় শীতল আর মায়াবী গন্ধ ভরা সে হাত । সে হাতের উপর আজ যেন নির্ভর কোরছে রুমকির বাঁচা মরা !
ক্যামন করেই বা জানে সে পুকুরের একেবারে কোল ঘেঁষে যে প্রাচীর , সেখানে ঝোপঝাড়ের নীচে অনেকগুলো ইট খোলা । এ পথেই পালাতে হবে রুমকিকে আজরফের দরজার শিকল ভেঙ্গে বাহিরে বের হবার আগে ।
রুমকির হাতে এখন অনেক কাজ । ট্যাক্সি ডেকে আগে তাঁকে পালাতে হবে এ অজানা হিংস্র শহর থেকে । তারপর তাঁর নিজের শহর । নিজের মানুষ ।
কিন্তু এসব সব কিছুর আগে থানায় যেতে হবে তাঁকে । সে যে জিনিয়াকে কথা দিয়েছে তাঁকে উদ্ধার কোরে তাঁর বাবামার হাতে তুলে দেবে । এর জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি পেতে হবে আজরফ আর সাবিহাকে । এসব সবই তাঁদের প্রাপ্য । কাজী বাড়ীর সেইসব পিশাচ মানুষগুলো্কে আজ আর মোটেও ভয় পায় না রুমকি !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৃজন শারফিনুল শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন ।
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অনেক অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা।
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
তানি হক শুভেচ্ছা জানবেন আপু ।
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ ! অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
মিলন বনিক অনেক অনেক অভিনন্দন....
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধ্ন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ অভিনন্দন !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ ! অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
সেলিনা ইসলাম অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা !
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
নাজনীন পলি অভিনন্দন আপু ।
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
এশরার লতিফ বিজয়ের জন্য অভিবাদন।
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
মাহমুদ হাসান পারভেজ অনেক অনেক অভিনন্দন! শুভকামনা জানবেন।
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
ভালো লাগেনি ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
গোবিন্দ বীন বেশ ভাল চমৎকার।। "আমার চলতি সংখ্যায় কবিতা গুলো পড়ার আমন্ত্রণ করে গেলাম। আশা করি আমার পাতায় আসবেন "
খুব ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে । অবশ্যই আপনার পাতায় আসব । অনেল শুভেচ্ছা !

১০ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৭

বিচারক স্কোরঃ ২.৭৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৯৭ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪