এক্কা, দোক্কা, তেঙ্কা

কৈশোর (মার্চ ২০১৪)

জোহরা উম্মে হাসান
  • ১৮
  • ৪৩
বাবা যখন বলতেন , সন্ধে হোয়েছে , হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস সবাই । তখন খুব খুব খারাপ হয়ে যেত মনটা । মন পড়ে থাকতো তখনও এক্কা দোক্কা খেলার মাঠে । খেলার গুটিগুলো একের পর এক সাজিয়ে ছোট্ট একটা রংচটা টিনের কৌটায় ভরে তা রেখে দিতে হতো আড়ালে । একেবারে সবার চোখের আবডালে । গুটির অনেক দাম ।
ফেলে দেয়া বড় কোন বোতলের পেতলের চ্যাপ্টা মুখ, কাঠের চারকোনা টুকরো , মাটির থালার ভাঙ্গা অংশ যা ঘষে ঘষে চারদিকে মসৃণ করা , নারকেল মালার মাঝের মাথা উঁচু ভাগ , এরকম হরেক হরেক ধরণের এক্কা দোক্কা খেলার গুটি । এ গুলো সব সব কুমুর সম্পত্তি ।
তাঁর সাথে এক্কা দোক্কা খেলায় পারে না কেউ । এ তল্লাটের চ্যাম্পিয়ন সে এ খেলায় । এক্কা, দোক্কা, তেঙ্কা, চারকা , পাঁচকা তার পর ছক্কা । ছয় ঘর । ছয় ঘরে গুটি চেলে চেলে শেষ করতে পারতে এক পাট্টি । না পারলে , যে ঘরে গুটি পড়েনি , সেখান থেকে আবার শুরু ।
কুমুর বড় জানা । কোন ঘরের জন্য কোন গুটি চালতে হবে । এক্কা হাতের কাছে । তাই পাতলা যেন তেন একটা গুটি হলেই চলবে । দোক্কাও তাই সই । কিন্তু তেক্কা থেকেই শুরু হয় সাবধানতা । চারকা , পাঁচকা বড় ভয়ানক । এর জন্য চাই বিশেষ বিশেষ গুটি , যা হবে ভারী আবার উড়োজাহাজের মত ঝটপটে । চারকা , পাঁচকায় গুটি ফেলতে হলে গাইতে হয় নানা রকম ছড়া ছড়া গান। আয়রে আমার চারকা , আয়রে আমার চারমুখী, আয়রে আমার চারুবালা । আর পাঁচকাকে সাধতে হয়; ওরে আমার পঞ্চবটী, ওরে আমার রুপকুমারি , ওরে আমার জানের জান। এই সব কত কি। ছক্কা জয় করা একটু সহজ , মস্ত বড় ঘর , কোর্টে গুঁটি পড়বেই পড়বে ।
কুমুরা তিন বোন । কুমু সবার ছোট । বড় দুই বোন এসব খেলার ধারে কাছে নেই। কেবল লেখা পড়া । কিন্তু কুমুই যেন কেমন । পড়ায় মন নেই । খালি পাড়ার বন্ধু দের নিয়ে এক্কা দোক্কা খেলা। কখনও ছি বুড়ি, কখনও গোল্লা ছুট , কখন বা হা ডু ডু । ইদানীং বাড়ীর সামনের মাঠে যাওয়া বারণ তার। মা বলেছেন, তুমি অনেক বড় হোয়েছ, এখন বাহিরে যাওয়া চলবে না । বাদ দাও ছেলেপুলেদের সাথে খেলা । বাড়ীর উঠোনে খেলতে পার, তাও কেবল মেয়েদের সাথে । তাই এখন কেবলই উঠোনে দাগ কেটে এক্কা দোক্কা খেলা ।
কুমুর মেয়েরা আজ বড় হয়েছে , ওরা দুজন । মায়ের এক্কা দোক্কা খেলার গল্প শুনে হেসে কুটিকুটি হয় ওরা । উহ , কি পচা খেলা । সারা হাত পায়ে মাটি মাখিয়ে , এক্কা, দোক্কা, তেঙ্কা, চারকা । আর গুটি জমানো । এত বোকা ছিল তাঁদের মা, ভাবলেই হাসি পায়। কম্পপিউটার নেই, টীভির হাজারো চ্যানেল , মোবাইল নেই, চ্যাট নেই , বন্ধু নেই ! ইস , কি প্রিমিটিভ লাইফ । আমাদের অত হাই ফাই বাবা কি করে যে মাকে পছন্দ করেছিলেন । আর কি করেই যে তাঁদের এত ভাব ভালবাসা । জানতেই হবে ।
আচ্ছা , কুমু কি ওদের বলবে কোনদিন , ওদের বাবাও তাঁর এক্কা, দোক্কা খেলার বন্ধু ছিল সেই কৈশোরে । জমানো গুটিগুলো আজও যক্ষের ধনের মতো তাঁরা আগলিয়ে রেখেছে আপন আপন মনের তোরঙ্গে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সকাল রয় সুন্দর সৃষ্টি
অনেক ধন্যবাদ সকাল রায় আপনাকে !
এশরার লতিফ ভালো লাগলো এক্কা দোক্কা খেলার দিনগুলোর কাহিনী।
খুশী হলেম । অনেক ধন্যবাদ !
তানি হক Ekka dokka me ghire koto kishorir je valobasa ache ta guns shesh kora jabena .apu apnake one onekdhonnobad ato sound or them niye golpota likhlen bole :-) khubkhub valo legeche.
(Ekka dokka ke ghire )
অনেক খুশী হলেম তানি তোমার মন্তব্যে । ভাল থেক !
দীপঙ্কর বেরা ভাল গল্প । ভাল লাগল /।
এখানে আমার প্রথম লেখা গল্পটা পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ! ভাল থাকবেন ।
ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত darun likhechhen didi....
ধন্যবাদ তোমায় ইন্দ্রানী, তুমিও খুব ভাল লেখ !
রোদের ছায়া আপু আপনিও যে এক্কা দোক্কা খেলায় পারদর্শী সেটা গল্পে খেলার বর্ণনাতেই বুঝতে পেরেছি । আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়লো , এক্কা দোক্কা আর পাঁচ গুটি খেলতাম সমবয়েসিদের সাথে । খুব সুন্দর ছোট্ট একটা গল্প ।
তুমিও খেলতে নিশ্চয় । খেলার সাথী না হয়েও যাক ভাবনার সাথি হলেম , এও আর কম কি? ভাল থেক ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান শেষ প্যারায় মাত্র ছোট ছোট দুটি লাইন কিন্তু তাতে অন্তর্নিহিত আছে অনেক অনেক কথা। অনেক অনেক ভাল লাগল।
ভাল লাগার জন্য অনেক অনেক ভাল লাগা রইল !
নাফিসা রহমান সেই এক্কা দোক্কা খেলার কথা মনে পড়ে গেলো... ভীষন ভালো লাগল...
তোমারও খেলতে নাকি ? এটা তো আমাদের যুগের খেলা । ভাল লাগলো !
আমার শৈশব কৈশোর গ্রামে কেটেছে তাই এটা আমরাও এক সময় খেলতাম...আপনার লেখা ভালো লেগেছে
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) সুন্দর স্রিতিচারন । আজ এই খেলা টিও বিলুপ্তির পথে , তাহলে আমাদের শৈশব কি হারিয়ে যাবে???????
শৈশব হারানোর নয় আর ঐতিহ্য মুছে ফেলার নয় । এখন কিভাবে নুতুন আর পুরাতনের মাঝে সেতু বন্ধন রচনা করা যায় , তাই আমাদের ভাব্বার বিষয় । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !
তাপসকিরণ রায় গল্প পড়তে একটু দেরী হয়ে গেল। আপনার কবিতা আগেই পড়ে নিয়েছিলাম। ছোট্ট গল্প,কিন্তু তার মাঝেই আপনি আপনার লেখার নৈপুণ্য পুর দমে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।শেষের দুটি লাইন গল্পকে আরও উদ্ভাসিত করে দিয়েছে।
আপ্লুত হলেম আপনার অনেক সুন্দর মন্তব্যে । ভাল থাকবেন !

১০ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪