ইন্সট্যান্ট গিফট

ডিজিটাল ভালবাসা (নভেম্বর ২০২১)

জাতিস্মর
  • 0
  • 0
  • ৪০৯
একঃ

প্রলয়ঃ সোফি তোমাকে একটা শেষ সুযোগ দিলাম। এখন বলতো কাউকে কি আমার চেয়ে বেশি স্মার্ট মনে হয়? যদি হয় তাহলে আমি কিচ্ছু মনে করবোনা। তোমাকে ১০ সেকেন্ড সময় বেঁধে দেয়া হোল। তাড়াতাড়ি বলো। ১০----৯----৮। কি হোল এভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেন? বলো। ৭----৬---৫। আরে বাবা এখনও সময় আছে, বলো। আমি কিচ্ছু বলবনা তোমাকে। ৪---৩---২। আর মাত্র ১ সেকেন্ড। ১—০।

সোফিঃ শোন প্রলয়, আমার সঙ্গে আর কখনো এরকম ইমোশনাল ফাইজলামি মারবেনা। যদি কাউকে পছন্দ করারি থাকতো তাহলে তোমাকে বিয়ে করতাম না। আমার আরও অনেক সুযোগ ছিল। তুমি এই ধরনের পরীক্ষা করতে ভালোবাসো, আর এগুলো আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। শোন মরার আগের মুহূর্তেও তুমি আমার মুখ থেকে একই কথা শুনবে। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। মেয়ে এখন বড় হয়ে যাচ্ছে। ও যদি কখনো তোমার এই ধরনের দুষ্টমি দেখে বা শোনে তাহলে আমাকে খারাপ ভাববে। প্লিজ এখন থেকে এগুলো তোমাকে বন্ধ করতে হবে।

প্রলয়ঃ আরে বাবা, সাধনা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আমি কি তোমাকে সত্যি সত্যি মিন করে বলেছি নাকি? পাগল বউ কোথাকার। শোন তুমি যদি আসলেই অমন হতে তাহলে আমিই তোমাকে বিয়ে করতাম না। সিক্সথ সেন্স শুধু মেয়েদের একার সম্পত্তি নয়। পুরুষদেরও আছে। আসলে তোমার মুখ থেকে আমাকে ভালবাসার কথা শুনলে নিজেকে আরও বেশি পুরুষ পুরুষ মনে হয়।

সোফিঃ এই ছাড়োতো। সাধনা উঠে যাবে। আর পুরুষত্ব দেখাতে হবেনা।

দুইঃ

জিনিয়াঃ মারিয়া, কি যে করি বলতো? স্যার সেই তিন দিন আগে এই নাম্বার দিয়েছেন আমাদের “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যাম্পেইনের চতুর্থ বিজয়ীর জন্য। মিঃ মুখার্জিকে বারবার বলেছি যে, আমাদের চতুর্থ দিন বিজয়ীর ফোন বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। কিন্তু উনি সিদ্ধান্তে অনড়। যে বিজয়ী তাকেই পুরষ্কার দিতে হবে আর সে ফোন না ধরা পর্যন্ত আমাকে কল করেই যেতে হবে। আরে মারিয়া, দাড়া দাড়া। এই প্রথম জনাবের নাম্বারে কল গিয়রছে।

জিনিয়াঃ হ্যালো। স্লামালিকুম স্যার।

ক্যাম্পেইন বিজয়ীঃ কে আপনি?

জিনিয়াঃ স্যার আমি অপেরা টেলিকম থেকে জিনিয়া বলছি। আপনাকে অভিনন্দন। আপনি আমাদের এই সপ্তাহের “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যাম্পেইনের বিজয়ী। আপনার জ্ঞাতার্থে আরও একবার জানাচ্ছি যে, আমাদের সর্বনিম্ন টকটাইম ব্যবহারকারিদের উৎসাহ প্রদানের জন্য অপেরা টেলিকম এই ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। সর্বনিম্ন টকটাইম ব্যবহারকারীদের ভেতর থেকে র‍্যানডম ব্যাসিসে একজন ইউজারকে আমরা প্রত্যেকদিন বিজয়ী হিসেবে বেছে নেই। আর এভাবেই আপনাদের ভেতর থেকে প্রত্যেক সপ্তহে ৭ জন বিজয়ীকে “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যাম্পেইনের জন্য বিজিত ঘোষণা করা হয়। আপনি গত সপ্তাহের চতুর্থ দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারের বিজয়ী। স্যার, আপনি কি আপনার নাম এবং লোকেশন বলবেন প্লিজ? সেই ক্ষেত্রে আমাদের “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যম্পেইন টিমের সদস্যরা আপনার কাছে আপনার গিফট সহ পৌঁছে যাবে ২৫ মিনিটের মধ্যে। আর গিফট হিসেবে আপনি পাচ্ছেন একটি আনকোরা “আইফোন ১৫” ফোন সেট, আরও থাকছে একটি স্মার্ট সিমে পুরো একবছরের জন্য আনলিমিটেড টকটাইম এবং ইন্টারনেট এবং সেই সাথে আমাদের “ইনস্ট্যান্ট গিফট” টিভি রিয়্যালিটি শোতে একজন কাপল সহ অংশগ্রহনের সুযোগ। স্যার কি আছেন আমার সাথে?

ক্যাম্পেইন বিজয়ীঃ হ্যা বলুন। আমি আপনাদের এই ক্যাম্পেইনের বিজ্ঞাপন দেখেছি পত্রিকায়।

জিনিয়াঃ স্যার তাহলে নিশ্চই আপনি জানেন যে, এই ক্যাম্পেইনের বিজিতদের কাছে ফোন বা মেসেজ আসবে শুধুমাত্র ৯৮৭৪৫৬ নাম্বার থেকে।

ক্যাম্পেইন বিজয়ীঃ আমি দেখেছি। আপনি সঠিক নাম্বার থেকেই যোগাযোগ করেছেন।

জিনিয়াঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আবারো অভিনন্দন। স্যার আপনি কি আপনার নাম এবং লোকেশন বলবেন প্লিজ?

ক্যাম্পেইন বিজয়ীঃ স্যামুয়েল খন্দকার। সংক্ষেপে স্যাম। আমি আছি, ১২৯ ডি।এম. ইস্টার্ন রোডে, এঞ্জেল শপিং কমপ্লেক্সের ২১ তলায় “কাপল কফি শপে”।

জিনিয়াঃ স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যাম্পেইন টিমের প্রধান মিঃ মুখার্জি এবং তার সহযোগীরা আগামী ২৫ মিনিটের মধ্যে আপনার গিফটটি সহ পৌঁছে যাবেন আপনার কাছে। স্যার, আপনার সাথে আপনার মিসেস, গার্লফ্রেন্ড অথবা বিশেষ কেউকি আছেন। সেক্ষেত্রে আমারা তার জন্য ছোট্ট একটি গিফটের ব্যবস্থা রেখেছি।

ক্যাম্পেইন বিজয়ীঃ আমার গার্লফ্রেন্ড কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।

জিনিয়াঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবারো অভিনন্দন। Have a Good Day Sir. স্লামালিকুম।

জিনিয়াঃ প্লিজ মিঃ মুখার্জিকে দেবেন। কলসেন্টার থেকে জিনিয়া বলছি।

অপেরেটরঃ একটু অপেক্ষা করুন ম্যাম।

মুখার্জিঃ হ্যালো, মুখার্জি বলছি।

জিনিয়াঃ স্যার, কল সেন্টার থেকে জিনিয়া বলছি। মঙ্গলবারের বিজেতার ডিটেইল আপনার মেইলে চলে গেছে।

মুখার্জিঃ ধন্যবাদ তোমাকে জিনিয়া।

তিনঃ

সোফিঃ স্যাম, এভাবে আর না। যে কোন দিন যে কারো কাছে ধরা পড়ে যাব। প্রতিদিন এভাবে ২২০০ টাকা দেয়া কি সম্ভব? গত সাত মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন দিয়ে যাচ্ছি। তুমি কেন আমাকে তোমার বাসায় নিতে চাওনা?

স্যামঃ সোনা, এই ২২০০ টাকার জন্যইতো এতো সুন্দর একটা রুমে আমরা প্রতিদিন ১২০ মিনিট করে কাটাতে পারছি। কেউ ডিস্টার্ব করেনা। তোমার কাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হয়না। গতকাল তোমাকে নীল রঙে কিন্তু দারুণ মানিয়েছিল। তোমার ফরশা শরীরে ছোট ছোট দুটো নীল ড্রেস...

সোফিঃ এই দুষ্টুমি করছ আবার। আজ কিন্তু আমি লাল পড়ে এসেছি। দুটোই। কি দেখবে?

স্যামঃ ওহ! আমি আরও একটু অপেক্ষা করতে চাই। আজ আমাদের জন্য অনেক মজার একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। ২৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। তারপরেও প্রায় ৯০ মিনিট হাতে থাকবে। তখন তোমার লাল, গোলাপি সব রঙ দেখবো।

সোফিঃ যাহ! দুষ্টু।

চারঃ

ওয়েটারঃ স্যার, আসতে পারি?

স্যামঃ হ্যা, আসো। কি ব্যাপার?

ওয়েটারঃ স্যার, অপেরা টেলিকম থেকে ৪ জন ভদ্রলোক এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে।

স্যামঃ ঠিক আছে, ভিতরে পাঠিয়ে দেন।

অতিথিঃ আসতে পারি স্যার?

স্যামঃ জী, আসুন প্লিজ।

অতিথিঃ গুড আফটারনুন মিঃ স্যামুয়েল খন্দকার এবং মিসেস সিনথিয়া মুখারজি সোফি। আমি অপেরা টেলিকমের হেড অব কমুইনিকেশন এবং “ইনস্ট্যান্ট গিফট” ক্যাম্পেইনের প্রধান। আপনাদের অভিনন্দন।

স্যামঃ আপনি আমার গার্লফ্রেন্ডেরনাম জানলেন কি করে মিঃ মুখার্জি?

সোফিঃ স্যাম, প্রলয় আমার হাজবেন্ড।

পাঁচঃ

প্রলয়ঃ সাধনা মা, এভাবে খোলা রেলিঙ-এ ঝুঁকে দাড়ায়না বেটা। যে কোন সময় ছাদ থেকে পড়ে যেত পারো মা। তুমি রেলিঙ থেকে সোরে আসো মা। ৩১ তলার উপর থেকে পড়লে আর রক্ষা নাই। মাটিতে পড়ার আগেই নিউটন মিয়ার সুত্র তোমার যান নিয়ে নেবে, ঈশ্বর না করুক।

সাধনাঃ বাবা, আমি জানি মা রোজ কোথায়, কার সাথে দেখা করতে যায়। আমি সব জানি।

প্রলয়ঃ বেটা, তোমার বয়স ১১ বছর। তুমি সেই বয়সের বাচ্চার মতো কথা বল। তোমার মা এবং আমি, আমরা দুজনেই তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি। আমাদের নিজেদের চাইতেও বেশি।

সাধনাঃ বাবা, আমি জানি তুমি আমাকে কত ভালোবাসো। সাত সাতটা মাস, সব জেনেও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি সব সহ্য করেছো।

প্রলয়ঃ এগুলো কি বলছিস মা? কি আবোল তাবোল বকছিস। রেলিঙের পাশ থেকে সরে আয়। আয় আমার বুকে আয়।
সাধনাঃ বাবা, আজ আমি তোমার অফিসে গিয়েছিলাম। তোমার কম্পিউটার খোলা ছিল আর খোলা ছিল তোমার ডায়েরি।

প্রলয়ঃ আরে ধুর। ওটা আমার ডায়েরিনা। ডায়েরি স্টাইলে একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি। তুই ওইসব ছাইপাশ পড়েছিস? তুই সরে আয়তো আমার কাছে। আমার ভয় লাগছে।

সাধনাঃ বাবা, আমি মায়ের ব্যাগে একটা টেপ রেকর্ডার রেখে দিয়েছিলাম। ছোট্ট একটা। মাত্র ৪ ঘণ্টা রেকর্ড হয়। আমি গত ৫ মাসে প্রতিদিন সেগুলো শুনেছি।

প্রলয়ঃ সাধনা, এবার বাড়া বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুই রেলিঙ থেকে সরে আয়।

সাধনাঃ বাবা, তুমি পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ বাবা। তোমার উপর আর কেউ নাই। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা। আর নিউটন মিয়াকে তুমি একটা এক্সট্রা থ্যাংকস দিয়ে দেবে। কারন নিউটন মিয়ার কারনে তুমি অন্তত এটুকু সান্ত্বনা পাবে যে, তোমার মেয়ের শরীর মাটিতে আঘাত করার আগেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। বাবা, বিদায়।

প্রলয়ঃ সাধনা... না প্লিজ। বেটা। মা, মাগো...তোকে ছাড়া বাঁচবোনা মা। প্লিজ মা... না...আআআ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ডিজিটাল ভালোবাসা অনেক বড় একটি বিষয় নির্দেশ করে। এই লেখায় একখানা অপ্রয়োজনীয় প্রেম ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে সেই ঘটনা জন্ম দেয় একটি কষ্টকর দুর্ঘটনা।

০৪ ফেব্রুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪