সোনালী পাহাড় আর অদৃশ্য শক্তির তাণ্ডব ও একটি প্লেন ক্রাশ

প্লেন ক্র্যাশ (সেপ্টেম্বর ২০২৫)

মিজানুর রহমান রানা
  • 0
  • ৩৫
চট্টগ্রামের এক নিভৃত গ্রামে রয়েছে এক রহস্যময় পাহাড়—লোকজন একে বলে “সোনালী পাহাড়”। নামের পেছনে কারণ, সূর্যাস্তের সময় পাহাড়ের গায়ে সোনার মতো আলো ঝলমল করে। কিন্তু স্থানীয়রা বলে, ওই পাহাড়ে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না। দশজন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বন্ধু—সাবিহা, ইরফান, রাফি, তামান্না, জুবায়ের, নাবিলা, সাদ, মেহরাব, তানভীর ও রিমি—এই পাহাড়ে অভিযানে যায়, রহস্য উন্মোচনের নেশায়।

বন্ধুরা ক্যাম্পিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়। প্রথম দিনটা ছিল আনন্দে ভরপুর—গান, গল্প, পাহাড়ে হাঁটা। কিন্তু রাত নামতেই অদ্ভুত কিছু ঘটতে শুরু করে। রিমি হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। সবাই ভাবে হয়তো সে একা কোথাও গেছে। কিন্তু সারারাত খোঁজার পরও তাকে পাওয়া যায় না।

পরদিন সকালে তানভীরও নিখোঁজ। এবার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুত প্রতিচ্ছবি দেখা যায়—একটা ছায়া যেন পাহাড়ের গায়ে নেমে আসে। জুবায়ের বলে, “এটা কোনো প্রাকৃতিক ব্যাপার নয়। এখানে কিছু আছে।”

তৃতীয় রাতে মেহরাব নিখোঁজ। এবার সবাই বুঝে যায়, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। পাহাড় যেন একে একে তাদের গিলে নিচ্ছে।

সাবিহা ও ইরফান অবাক হয়। তারা দুজনই সাহস করে পাহাড়ের গভীরে ঢুকে পড়ে। তারা খুঁজে পায় এক পুরনো গুহা, যেখানে প্রাচীন চিত্রকর্মে আঁকা আছে এক অদৃশ্য শক্তির গল্প—যে পাহাড়ের পাহারাদার, এবং বহিরাগতদের ধ্বংস করে।

সাবিহা বলে, “এই শক্তি আমাদের বন্ধুদের একে একে মেরে ফেলছে।”
ইরফান যুক্তি দেয়, “কিন্তু কেন? আমরা তো কিছু করিনি।”
তারা বুঝতে পারে, পাহাড়ের গায়ে থাকা সোনালী আলো আসলে এক ধরণের বিভ্রম—যা মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

রাতের অন্ধকারে তারা গুহার ভেতরে ঢোকে। হঠাৎ চারপাশে ঠান্ডা বাতাস, ছায়ামূর্তি, আর এক অদ্ভুত শব্দ—যা মানুষের কান দিয়ে নয়, মনে প্রবেশ করে।

সাবিহা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, “ওরা আমাদের বন্ধুদের আত্মা নিয়ে গেছে!”
ইরফান বলে, “আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে, নয়তো আমরাও হারিয়ে যাব।”

তারা গুহা থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের নিচে নামতে থাকে। কিন্তু ছায়া তাদের পিছু নেয়। সাবিহা হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, আর ইরফান তাকে টেনে তোলে।

শেষ মুহূর্তে তারা পাহাড়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়—আর ছায়া যেন হঠাৎ থেমে যায়। তারা ফিরে আসে গ্রামে, কিন্তু বাকিদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।

সাবিহা ও ইরফান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে, কিন্তু কেউ তাদের কথা বিশ্বাস করে না।

তারা সিদ্ধান্ত নেয়, “এই পাহাড়ের রহস্য আমরা প্রকাশ করব। যাতে কেউ আর না হারায়।”

তারা লেখালেখি শুরু করে, ছবি আঁকে, আর একদিন “সোনালী পাহাড়” নামে একটি প্রদর্শনী করে—যেখানে তারা বন্ধুদের স্মৃতি, পাহাড়ের বিভ্রম, আর অদৃশ্য শক্তির গল্প তুলে ধরে।

একদিন আবারও সাবিহা স্বপ্নে দেখে সেই সোনালী পাহাড়, যেখানে তাদের বন্ধুরা এক গভীর গর্তে বন্ধী হয়ে আছে। পরদিন সে ইরফানকে জানায়।

সাবিহা এক রাতে স্বপ্ন দেখে—সোনালী পাহাড় আবারও তার সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এবার পাহাড়ের গায়ে সোনালী আলো নেই, বরং এক ধূসর ছায়া। সে দেখতে পায়, তাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা এক গভীর গর্তে বন্দী—চোখে ভয়, মুখে নীরবতা।

একটি কণ্ঠস্বর বলে, “তারা এখন পাহাড়ের অংশ। তুমি চাইলে ফিরিয়ে আনতে পারো… কিন্তু মূল্য দিতে হবে।”

সকালে সাবিহা ইরফানকে সব জানায়। ইরফান প্রথমে দ্বিধায় পড়ে, “এটা কি শুধু স্বপ্ন? নাকি পাহাড় আমাদের ডাকছে?”

তারা সিদ্ধান্ত নেয়, “যদি সত্যিই বন্ধুরা বেঁচে থাকে, তাহলে আমাদের ফিরতে হবে।”

তারা প্রস্তুতি নেয়—এইবার আরও সাবধান, আরও দৃঢ়। পাহাড়ে পৌঁছানোর পর তারা লক্ষ্য করে, আগের পথগুলো বদলে গেছে। গুহার মুখে এক নতুন চিহ্ন—যেন কেউ বা কিছু তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

তারা গুহার গভীরে গিয়ে খুঁজে পায় সেই গর্ত—অন্ধকার, নিঃশব্দ, আর ভয়ানক। সাবিহা বলে, “আমি ঠিক এখানেই দেখেছিলাম।”

তারা নিচে নামার চেষ্টা করে, কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তি বাধা দেয়। হঠাৎ তারা শুনতে পায় বন্ধুদের কণ্ঠস্বর—“সাবিহা… ইরফান… আমাদের মুক্ত করো…”

এক ছায়ামূর্তি তাদের সামনে আসে। সে বলে, “তোমরা যদি সত্যিই তাদের ভালোবাসো, তবে তোমাদের ভয় ত্যাগ করতে হবে। পাহাড় তোমাদের মনকে পরীক্ষা করবে।”

তারা একে একে ভয়, দুঃখ, অপরাধবোধের মুখোমুখি হয়। সাবিহা দেখে, সে রিমিকে একবার একা ফেলে দিয়েছিল। ইরফান দেখে, সে তানভীরের কথায় কান দেয়নি।

তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে, আর পাহাড়ের বিভ্রম ভেঙে যায়। গর্ত থেকে একে একে বন্ধুরা বেরিয়ে আসে—ক্লান্ত, কিন্তু জীবিত।

ছায়ামূর্তি বলে, “তোমরা প্রমাণ করেছ, বন্ধনই সবচেয়ে শক্তিশালী। এবার পাহাড় তোমাদের বন্ধনের কারণে মুক্তি দিল। তবে তোমাদেরকে বাকি জীবনটা প্রমাণ করতে হবে, তোমরা কখনো একা হবে না। যা-ই করো একসাথে করবে।”

সবাই মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় এবং সংঘবদ্ধতা যে একটা শক্তি তা উপলব্ধি করে। একে একে সবাই সবাইর হাতে হাত রেখে বলে, ‘‘হ্যাঁ আমরা সবাই একসাথে থাকবো, বিচ্ছিন্ন হবো না।’’

এবার ছায়ামূর্তি বলে, ‘‘বিচ্ছিন্নতা মানেই মৃত্যু, আর বন্ধুত্ব মানেই শক্তি।’’ এই বলে ধীরে ধীরে ছায়ামূর্তি পাহাড়ে হারিয়ে যায়।

এরপর তারা সবাই পাহাড় থেকে ফিরে আসে। এবার তারা জানে, “সোনালী পাহাড় শুধু রহস্য নয়, এটা আত্মার আয়না।”

সাবিহা ও ইরফান পাহাড়ে কাটানো সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ফিরে আসে ঢাকায়, নতুন উদ্যমে। বইয়ের নাম ঠিক হয়: সোনালী পাহাড়: আত্মার আয়না।

তাদের নিকটত্মীয়ের সন্তানরা একটি শিক্ষা সফরে ছিল। তারা ফিরছিল একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমানে। হঠাৎই খবর আসে—বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। সাবিহা ও ইরফান ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে শুধু  ধোঁয়া, ছিন্নভিন্ন স্মৃতি, এবং নীরবতা।

পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি এখন আর সোনালী নয়, বরং ছায়াচ্ছন্ন। তারা বুঝতে পারে, জীবনের প্রতিটি আলো একদিন ছায়ায় ঢেকে যায়। বইটি শেষ হয় এই উপলব্ধিতে: “আমরা আয়নায় নিজেদের খুঁজি, কিন্তু আয়না কখনো আমাদের সন্তানদের কান্না ধরে রাখতে পারে না।”

ইরফান বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লিখল :

“আমরা পাহাড়ে গিয়েছিলাম আলো খুঁজতে। ফিরে এসেছি ছায়া নিয়ে। আমাদের সন্তানরা ছিল আমাদের আত্মার আয়না। আজ সেই আয়না ভেঙে গেছে। তবু আমরা লিখি, কারণ কান্নাও একধরনের আলো।”

সাবিহা চুপচাপ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সোনালী পাহাড় দূরে, কিন্তু তার আলো আর পৌঁছায় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী মারুফ বেশ রহস্যে ঘেরা একটা গল্প। ভালো লেগেছে!
ফয়জুল মহী অসম্ভব সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "হতাশা”
কবিতার বিষয় "হতাশা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর,২০২৫