ছেলে মানুষ

রম্য রচনা (জুলাই ২০১৪)

মিনতি গোস্বামী
  • ১৩
ছেলে মানুষ এখন এক সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত শিবু কেরানির পরিবার থেকে হারু মাস্টার, গ্রামের পাতি জমিদার থেকে পান ব্যবসায়ী সকলেই। সকাল হলেই শহরের ব্যাঙের ছাতা গুলোর তলায় চলে কচি কচি কুড়িদের প্রতিযোগিতার লড়াই।
আমি প্রতিদিন ভোরে উঠেই প্রাতঃভ্রমণে বেরোই.সেদিন বি.সি রোড দিয়ে হাটতে হাটতে সি.এম.এস স্কুলের সামনের চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম চা খাবার জন্য। গেটের বাইরে তাকিয়ে দেখি মায়েদের মেলা বসে গেছে। এইসব মায়েরা তাদের কচি কাচাদের গারদ ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে স্কুলের রাস্তার ওপারে সকালের বন্ধ দোকানগুলোর সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকে ঘণ্টা চারেক। সংসার চুলোয় যাক। বাসী পচা ফ্রিজের খাবার খেলেই হলো। রাতেতো ছেলেকে মানুষ করার জন্য রান্নাই বন্ধ হয়ে গেছে। পারার রুটি তরকারির দোকানগুলো এইসব ছেলেমানুষ মায়েদের দৌলতে রমরমিয়ে চলছে।
এইসব মায়েদের দেখি আর ভাবি, হায় রে আমাদের ছেলেবেলা। আমাদের ছেলেবেলা লেখাপড়ার সঙ্গে মায়েদের ছিল যোজন দূরত্ব। এখানে মায়েদের কলকাকলিতে সকালটা মুখর হয়ে গেছে। কৌতুহলবসত কান পেতে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করি। একজন মায়ের হাতে একটা রংচঙে বই দেখে অন্য মায়েরা সোরগোল জুড়ে দেয়। দেখি দেখি পিকুর মা, নতুন বই মনে হচ্ছে, পিকুর মা গর্বের সঙ্গে বলে, অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তবে এই বইটা যোগার করেছি বাছুর যেমন মায়ের বাঁটে হামলে ঠোকা মারে, সব মায়েরা তেমনি পিকুর মায়ের বইটাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
পিকুর মা বলে, দেখ সবাই শান্ত হয়ে বসো। আমি তোমাদের বইটা পড়ে শোনাচ্ছি। পিকুর মা দাঁড়িয়ে ক্লাস নেবার ভঙ্গিতে বইটা পড়তে লাগলো।
এই বইটার নাম ''ছেলে মানুষের কলা কৌশল''। বইটা বাজারে চলছে ভালোই। বইতে কি কি আছে এবার পরছি, তোমরা মন দিয়ে শোনো। পিকুর মা বলতে সুরু করে -ছেলে মানুষ করতে হলে গর্ভে থাকাকালীন মাকে ভালো ভালো বই পড়তে হবে। সেই বই জগদীশ চন্দ্র থেকে জগদীশ্বর, রবীন্দ্রনাথ থেকে অমর্ত্য সেন। শিশু গর্ভে থাকাকালীন ডাবের জল থেকে হুঁকোর জল, শুশনির শাক থেকে কড লিভার অয়েল, ফল, মাকড়, দুধ, ঘি, মাখন, খই সব খেতে হবে। এতে গর্ভাবস্থাতেই শিশুর বুদ্ধি বাড়বে। সন্তান গর্ভে ধারণ করার দিন থেকে প্রসবকালীন সময় পর্যন্ত মাকে বেড রেস্টে থাকতে হবে। এসময় হাঁটাচলা করলে গর্ভস্থ শিশুর বুদ্ধি কমে যাবে।
প্রসব প্রাকৃতিক নিয়মে করানো যাবেনা। এভাবে সন্তান হলে শিশুর মাথায় আঘাত লাগবে। আঘাতের ফলে শিশুর বুদ্ধঙ্ক হ্রাস পেতে পারে। সিজারিয়ান বেবি হওয়ার পর সপ্তাহে এক দিন করে মায়ের কলে দিতে হবে। এতে মায়ের কাছ থেকে দুরে থাকার প্রবণতা বাড়বে। এর ফলে শৈশব থেকে ছাত্রাবাসে থাকার প্রবণতা জন্ম নেবে।
শিশুকে কৌটোর দুধ খাওয়াতে হবে, যাতে হায়ব্রিড মুরগির মত ৪৫ দিনেই পাঁচ কেজি ওজন হয়। শিশুকে এইসময় বাবার বাড়ির পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে মামার বাড়ির শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় করতে হবে। এর ফলে ঠাকুরদা, ঠাকুমা, কাকা, পিসি এসব অসৎ সঙ্গের খপ্পরে পরার ভয় থাকবেনা।
মুখে ভাত দেওয়ার পর বাবার বাড়িতে প্রবেশ। ভাত খাওয়ার পর থেকেই নৃত্যগীত অঙ্গভঙ্গি সহকারে বিভিন্ন রাইমস শেখাতে হবে। বাড়ির সমস্ত কাজ ফেলে রেখে ঘুমন্ত শিশুর মাথার গড়ায় বসে থাকতে হবে। নিবির পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে তার হাসিকান্না বিশ্লেষণ করে তার বুদ্ধির গ্রোথ সম্পর্কে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ঘন ঘন কাউন্সেলিং করাতে হবে। এক বছর তিন মাস বয়স থেকেই শিশুকে বিদ্যালয় মুখী করাতে হবে। বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষা ছাড়াও আসা যাওয়ার পথে স্কুল ভ্যান বা রিক্সায় থাকাকালীন স্মরণ পাঠদান চালাতে হবে। রাত্রিকালীন ঘুম ছাড়া ব্রেন যেন কোনো সময়েই কর্ম বিমুখ না থাকে।
দুবছর বয়েস থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি নাচ, গান, আঁকা, সাঁতার, ক্যারাটে, বক্সিং ইত্যাদি জায়গায় প্রবেশের ব্যবস্থা পাকা করতে হবে। এই সমস্ত শিক্ষায় হবে অভিজ্ঞ শিক্ষক মণ্ডলী দ্বারা। খালার মাঠে অযথা শৈশব যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। দামী দামী খাবার দাবার, নতুন নতুন ব্রান্ডের পোশাক ও দামী দামী জিনিস উপহার দিয়ে বস্তু জগতের প্রতি শিশুর মনের আকৃষ্টতা বাড়াতে হবে।
শৈশব থেকে যৌবনের শিক্ষাকালীন সময় পর্যন্ত বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। শিশুকে সমস্ত বিষয়ে প্রথম হবার জন্য প্রথম থেকেই চাপ দিতে হবে। যদি কোনক্রমে দ্বিতীয় হয় তবে ভত্সনা ও অবজ্ঞার মধ্য দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে, সে গর্হিত অপরাধী। সামাজিক কোনো কাজকর্মে ছাত্রাবস্থায় যেন হাত না লাগায়। হাত লাগালে সে সমাজমুখী হয়ে পরবে। এর ফলে নিজের দেশ ও সমাজকে পরবর্তীকালে ভুলে যেতে কষ্ট হবে।
এই বইটি যথাযথ পর্যবেক্ষণ করলে সকলে এন.আর.এই হতে পারবে সহজেই। বই পরা শেষ হলে সবাই চেঁচিয়ে উঠলো। ইস বাচা জন্মানোর আগেই যদি বইটা পেতাম, তাহলে জীবনটাই বদলে যেত। সবাই পিকুর মাকে বইটি পাবার জন্য অর্ডার দেয় জানিনা চায়ের কাপ হাতে নিজের অজান্তেই কখন মায়েদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরেছি। মন্ত্রমুগ্ধের মত ছেলে মানুষের গল্প শুনলাম। কিছুটা দূরত্বে থাকলেও মায়েদের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই তাড়াতাড়ি লজ্জায় দোকানে ফিরে আসি।
পরের দিন বাজারে গিয়ে বইটির খোজ করলাম। নাতি নাতনি হলে যদি কাজে দেয়। দোকানদার বলল বইটির বিক্রি হ্যারি পটারকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখন বইটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছেনা। নতুন সংস্করণ না বেরোলে বইটির একটি কপিও কোনো দোকানদারই দিতে পারবেনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান বড়ই বিচিত্র পুস্তক । তবে বিচিত্রতর আজিকার সময়ে প্রয়োজন অনস্বীকার্য । অন্যদের মতই একটি কপি সংগ্রহের আশায় রইলাম । লেখাটি ফাটাফাটি শ্রেনীর ।শুভ কামনা রইল ।
এশরার লতিফ এই বইয়ের এক কপি আমিও চাই। ভালো লাগলো গল্পটি।
dhonnobad valo lagar jonno.boiti chapa holei hate paben.
সহিদুল হক ROMONIYO EBONG SHIKKHONIYO GOLPO. SUVO KAMONA
biplobi biplob Valo laga roylo aponar golpa didi. Valo thakban.
মোজাম্মেল কবির হেসেছি কিন্তু অনেক কষ্ট নিয়ে... এই হাসির আড়ালে যে লুকিয়ে আছে আমাদের সমাজের দৈন্য দশা... চমৎকার লেখা।
পুলক বিশ্বাস শিক্ষনীয় গল্প। বৈচিত্রও আছে। আমার খুব ভালো লেগেছে। শুভকামনা জানবেন সবসময়।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি দোকানে দাঁড়ালাম চা খাবার জন্য। গেটের বাইরে তাকিয়ে দেখি মায়েদের মেলা বসে গেছে। এইসব মায়েরা তাদের কচি কাচাদের গারদ ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে স্কুলের রাস্তার ওপারে সকালের বন্ধ দোকানগুলোর সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকে ঘণ্টা চারেক। //......... bhalo laglo didi,,,,,,,,,,,,,
valo lagar jonno dhonnobad.amar kobitar patai asar amontron roilo.
তাপস চট্টোপাধ্যায় গল্পটি ভালো লাগলো .
valo lagar jonno dhonnobad.amar kobitar patai asar amontron roilo.
সৈয়দ আহমেদ হাবিব সুন্দর, হাসির ছলে একটা শিক্ষামুলক গল্প পড়লাম, এমন গল্প খুব প্রয়োজন

২৫ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী