নভেম্বরের শেষ। মিনেসোটায় এসময় প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে, এ বছরও ব্যতিক্রম না।
উডম্যান ড্রাইভের একেবারে শেষ মাথায় দুইশো আট নাম্বার বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করলো সায়রা। গাড়ির হিটিং সিস্টেম কাজ করছে না দুদিন হলো, কাজের চাপে ঠিক করা হয়নি। গাড়ি চালাতে গিয়ে ঠান্ডায় হাত পা জমে বরফ। পাশের সিটের উপরে রাখা ফাইলটা হাতে নিয়ে ঝটপট বেরিয়ে পড়লো সায়রা। বাড়ির ভেতরে নিশ্চয়ই উষ্ণ পরিবেশ। একবার ভেতরে গেলে একটু আরাম হবে।
কালো ভারী কোট গায়ের সাথে একটু ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে বাড়ির সামনে লম্বা হাঁটার পথে এগুতে লাগলো সায়রা। বেশ বড় কিন্তু পুরোনো দোতলা বাড়ি। পরিপাটি গোছানো চারপাশ, সামনে বাগানে সাজানো গাছগাছালিতে এই মুহূর্তে তীব্র শীতের রুগ্নতা দৃশ্যমান, পাতাহীন ভুতুড়ে গাছের সারি। তবে গ্রীষ্মে নিশ্চই রংয়ে উজ্জ্বলতায় হেসে ওঠে বাগানটা । বাড়ির মালিক স্কট উলিয়ামের প্রাচুর্যের প্রমান দিচ্ছে ড্রাইভওয়েতে রাখা গাঢ় ধূসর বর্ণের ঝকঝকে বিএমডাব্লিউ সেভেন সিরিজ। গাড়ি দেখে মুগ্ধতায় একটু থমকে দাঁড়ায় সায়রা। গাড়ি নিয়েই যত কাজ সায়রার তবু গাড়ির ব্যাপারে খুব আগ্রহ নেই।
আকাশ ভারী হয়ে আছে ধূসর শীতল মেঘে। কুয়াশার একটা পর্দা আলগোছে নেমে এসেছে পুরো বাড়ির উপর। বিকাল সাড়ে তিনটা, একটু পরেই অন্ধকার ধেয়ে আসবে।
দমকা ঠান্ডা বাতাস এসে সায়রার অস্থিমজ্জা কাঁপিয়ে দেয়। সাত বছর হলো মিনেসোটায় বসবাস করেও এখানকার ঠান্ডার সাথে ঠিক বন্ধুত্ব হলো না। পা চালিয়ে মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল চাপে সায়রা। একটু পরেই ছোটোখাটো এক বৃদ্ধা এসে দরজা খুলে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "ইয়েস? কাকে চাচ্ছেন?"
সায়রা একগাল হেসে শীতার্ততা লুকিয়ে বলে, "হ্যালো ম্যাম। আমি এ-টু-জি কার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে এসেছি। মিস্টার উইলিয়ামের সাথে কি দেখা করা যাবে?"
"আপনার এপয়েন্টমেন্ট আছে?"
একটু ইতস্তত করে সায়রা বলে, "না, মানে গতকাল উনাকে তিনবার ফোন করেছি এপয়েন্টমেন্টের জন্য কিন্তু বারবার আনসারনিং মেশিনে চলে যাচ্ছিলো। জরুরী দরকার বলেই.............."
কথা শেষ হবার আগেই দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার ইঙ্গিত করলেন বৃদ্ধা। সায়রা ভেতরে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেলো। সুবিশাল হলঘরে ঝুলছে ক্রিস্টালের বিরাট ঝাড় বাতি। রুমের মাঝখানে দোতালা পর্যন্ত খোলা। ঝাড়বাতি দোতালার ছাদ থেকে নেমে এসে নিচ তলার মেঝে স্পর্শ করছে প্রায়। এত বড় ঝাড়বাতি কোনোদিন দেখেনি সায়রা। হল রুমের আরেক পাশে বিশাল জানালা ভেদ করে ওপাশে প্রায় অন্ধকার ঘন জঙ্গল দেখা যায়। জানালার দুপাশে দুইটা দরজা। দেয়ালে বিশ্ববিখ্যাত পেইন্টিংয়ের প্রতিলিপি ঝুলছে। আভিজাত্য ঠিকরে পড়ছে চারপাশে অথচ কেমন বেমানান আধো আঁধার দখল করেছে ঘরটাকে। হল রুমের বাম পাশে উপরে উঠার ঘোরানো সিঁড়ি। রুমটা অস্বাভাবিক ঠান্ডা। জায়গাটা খোলা বলে হয়তো হিটিং সিস্টেম নেই।
বৃদ্ধা সিঁড়ির দিকে মুখ করে শুকনো গলায় বললেন, "মিস্টার উইলিয়াম ওপরে আছেন। আপনি উপরে ওনার অফিসে গিয়ে বসুন। উপরে উঠে বামে দ্বিতীয় দরজা।"
কথা শেষ করে বৃদ্ধা অপেক্ষা করলেন না, হল রুমের এক পাশের ঘরে হারিয়ে গেলেন। সিঁড়ির পাশটা কেমন জমাটি অন্ধকার। অযথাই কেমন গা ছমছম করে সায়রার। এক বছর হয় গাড়ির ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করছে সায়রা, এর আগে দুবার গ্রাহকের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। আজকে তৃতীয় বার। এমন পরিদর্শন অপছন্দ করে না সে, এর জন্য তাকে আলাদা করে টাকা দেয়া হয়, লাঞ্চের পরেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়।
পুরোনো কাঠের সিঁড়িতে ক্যাচ ক্যাচ অস্বস্তিকর শব্দ তুলে ওপরে এলো। বৃদ্ধার কথা মতো দ্বিতীয় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো সায়রা। এখানেও প্রচন্ড ঠান্ডা। অফিসের এক মাত্র জানালা ভারী পর্দায় ঢাকা,ফলে অফিসের ভেতরেও আবছা অন্ধকার। জানালার সামনে কালো ওক কাঠের ভারী টেবিল। দুপাশে কাঠের তাকে প্রচুর বই আর কাগজপত্র, কিছুটা এলোমেলো। টেবিলের সামনে দুইটা চেয়ার, পাশে দুই সিটের একটা সোফা। দেয়ালে ঝোলা পুরোনো নকশার
ল্যাম্প শেডে মৃদু আলো জ্বলছে। অফিসের টেবিলের উপর কিছু কাগজ ছড়ানো আর একপাশে একটা কুৎসিত দর্শন কাঁচের বেড়াল হাত দোলাচ্ছে। চাইনিজ লাকি ক্যাট , এক হাত নেড়ে অর্থ ডেকে আনে, আরেক হাতে টাকা জমিয়ে রাখে।
সায়মা সোফায় বসলো। বুঝতে পারছে না মিস্টার উইলিয়াম কখন আসবে। পুরো বাড়ি নিঃশব্দ, শুধু মৃদু খট খট শব্দ তুলে এক হাত নাড়ছে চাইনিজ লাকি ক্যাট। সায়রা এক দৃষ্টে বেড়ালটার দিকে তাকিয়ে আছে, বেড়াল হাত নেড়েই যাচ্ছে। সায়রাকে চমকে দিয়ে বেড়ালের হাত আচমকা নিশ্চল হয়ে গেলো। ব্যাপারটা এতই আকস্মিক যে সায়রার বুক কেঁপে উঠলো। ঠিক তখনই অফিসের দরজায় মিস্টার উইলিয়াম এসে দাঁড়ালো।
"আপনি কি লাকি ক্যাট বিশ্বাস করেন?"
সায়রা চট করে উঠে দাঁড়ালো। মিস্টার স্কট উইলিয়ামের বয়স বেয়াল্লিশ, লোকটার ফাইল থেকে দেখে এসেছিলো সায়রা। তার সামনে যে ভদ্রলোক এসে দাঁড়িয়েছে তার বয়স তিরিশের বেশি মনে হচ্ছে না। যত্নে গড়া লম্বা পুরুষালী শরীর, মাথা ভর্তি গাঢ় বাদামি চুল, চোখের মনি এই মৃদু আলোতেও উজ্জ্বল নীল। সায়রা শীতে এতটাই কাবু যে ঘরের ভেতর ঢুকেও কোট খোলেনি অথচ এই ভদ্রলোক পাতলা সাদা শার্ট পরে আছে। এমন ভয়াবহ সুদর্শন লোকের সামনে সায়রা কয়েকমুহূর্ত বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
"আপনার কি আসার কথা ছিলো?"
সম্বিৎ ফিরে পায় সায়রা। "আমি খুবই দুঃখিত এপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই চলে এসেছি। আসলে গতকাল বেশ কয়েকবার ফোন করেও আপনার সাথে কথা হয়নি। আমি কাছেই একটা কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম যদি আপনার সাথেই দেখা হয়ে যায় তাহলে আপনার কাজগুলো করে নেয়া সম্ভব হতো।"
"সরি, এক্সিডেন্টের পর আমি ওপরেই থাকি। ডাক্তারের নির্দেশে বিশ্রাম নিচ্ছি, ফোন এটেন্ড করছি না।"
এতক্ষনে সায়রা খেয়াল করলো মিস্টার উলিয়ামের পায়ে প্লাস্টার করা, হাঁটছে একটু খুঁড়িয়ে।
"আমি দুঃখিত আপনাকে এই অবস্থায় বিরক্ত করছি। খুব বেশি সময় নেবো না, কয়েকটা বিষয়ে কথা বলে চলে যাবো।"
মৃদু হাসি খেলে গেলো স্কটের মুখে। রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে ঠিক সায়রার সামনে বসলো।
"চাইনিজ ক্যাট যে হাতে অর্থ ডেকে আনে সে হাত অনড় হয়ে যাওয়া কিন্তু খুব খারাপ লক্ষণ। অর্থিক ক্ষতি হবে আমার। আপনি আসতেই বেড়ালটার হাত বন্ধ হয়ে গেলো কেনো বুঝতে পারছি না। আপনি কিছু জানেন?
"না স্যার। আমি তো ওটার কাছেও যায়নি। হয়তো ব্যাটারি কাজ করছে না তাই হাত বন্ধ হয়ে গেছে।" থতমত খেয়ে বললো সায়রা।
স্কটের মুখের হাসি বিস্তৃত হলো। "আমি মজা করছিলাম সায়রা। আপনার নাম তো সায়রা, তাই না? মিসেস পাবলো বললো, যিনি দরজা খুলে দিয়েছেন, আমার মেইড। "
হাসিতে লোকটার নিখুঁত সাদা দাঁত ঝলকম করছে। এমন সুদর্শন লোককে ম্যাগাজিনের পাতায় মডেল হিসাবে মানায়, এমন আধো অন্ধকার পুরোনো ঘরে না।
"এবার বলুন, কী আর্থিক ক্ষতি করবেন আমার?"
সায়রা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হেসে বললো, "স্যার, আপনি গত তিন মাসে আটবার গাড়ি একসিডেন্ট করেছেন, তিনবার গাড়ি পাল্টেছেন। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন 'ভিজ্যুয়াল ইম্প্যারমেন্ট '। প্রতিবারই ইন্সুরেন্স ক্লেইম করেছেন, প্রতিটা ক্লেইম বেশ বড় অংকের ছিলো। স্বভাবতই ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে তদন্ত করা হচ্ছে কেন আপনি বারবার এক্সিডেন্ট করছেন , দুর্ঘটনার জন্য আসলে দায়ী কে। আপনার ম্যাডিকেল রিপোর্ট এখনো পায়নি। আপনার চোখের সমস্যার ব্যাপারে আরো ভালো ভাবে জানা দরকার। আপনি তো জানেনই দেখতে সমস্যা হলে ড্রাইভিং করার বিশেষ অনুমতি নিতে হবে ডিভিএস থেকে । সেক্ষেত্রে আপনার ইন্সুরেন্স পলিসি বদলে যাবে।"
স্কট নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। সায়রা স্কটের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। লোকটার দৃষ্টিতে কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে, বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না। যেন সায়রার মনের গহীন গোপন খবর জেনে যাচ্ছে লোকটা, সেজন্যই মুখে এমন অদ্ভুত রহস্যময় হাসি।
"একসিডেন্ট কেউ ইচ্ছা করে করেন সায়রা। লইয়ার হিসেবে ইন্সুরেন্স ক্লেইম করার জন্য ইচ্ছাকৃত একসিডেন্টের কেস জীবনে কম দেখিনি। তবে আমি এমন কিছু করবো না, এটা নিশ্চই আপনি বিশ্বাস করবেন না।"
"আপনি যেহেতু একজন লইয়ার, আপনি অবশ্যই বুঝবেন যে এত অল্প সময়ে এতগুলো একসিডেন্ট করা স্বাভাবিক নয়। আমাদের কোম্পানির তিনমাসের রেকর্ডে আপনার কেসগুলো হাইলাইট হয়েছে। আপনি এতবার একসিডেন্ট করছেন বলে ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাড়াতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও জানাতে হচ্ছে, প্রতিমাসে ইন্সুরেন্সের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে । তবে আপনার জন্য ভালো খবর হচ্ছে এক বছরে যদি আপনি আর কোনো একসিডেন্ট না করেন, তাহলে এই অতিরিক্ত কিস্তির পরিমান আবার নেমে আসবে। আসলে.........."
"বলেছিলাম না, আমার লাকি ক্যাটের হাত অনড় হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে আমার আর্থিক ক্ষতি, আপনি তো আমার খরচ বাড়িয়ে দিতে এসেছেন।" হাসতে থাকলো স্কট।
তারপর সামনের দিকে ঝুঁকে ঠিক সায়রার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "আপনি খুব সুন্দর সায়রা। সায়রা নামের সাথে সাহারা নামের খুব মিল আছে , তাই না? আপনার গায়ের রং ঠিক সাহারা মরুভূমির বালুর মতো। সূর্য ডোবার আগে বালুতে অদ্ভুত উজ্জ্বল বাদামি রং ফুটে ওঠে, আপনার গায়ের রং ঠিক তেমন। স্নিগ্ধ, নরম আর আকর্ষণীয়।"
স্কট প্রবল আবেশে সায়রার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চোখের সামনে সাহারা মরুভূমির বাদামি বালুর বুকে অস্তগামী সূর্যের আলোকচ্ছটা দেখতে পাচ্ছে । সায়রার বড় অস্বস্তি লাগতে থাকে। অস্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে বলে, "ধন্যবাদ। আমাদের বরং কাজটা শেষ করি? আমাকে যেতে হবে। "
স্কট হাসছে। এত সুদর্শন লোকটাকে এখন কেমন ভয়াবহ লাগছে। সায়রা বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। হয়তো অযথাই ভয় পাচ্ছে, কিছু করবে না লোকটা। অনেক আমেরিকান এমন ফ্ল্যার্ট করাকে খুব স্বাভাবিক মনে করে। সায়রার কলিগ এলভিন সুযোগ পেলেই ওর সাথে ফ্ল্যার্ট করে।
"অবশ্যই যাবেন, সময় হলে অবশ্যই যাবেন। এখন আমাকে আপনার ইন্সুরেন্সের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। সেজন্যই তো এসেছেন , তাই না?"
সায়রা ফাইল থেকে একটা সার্ভে ফর্ম বের করে। তারপর বলে, "জ্বি। আপনাকে কিছু প্রশ্ন করছি। চার বছর আগে যখন ইন্সুরেন্স করেছিলেন তারপর আপনার কী কী পরিবর্তন হয়েছে? আপনি কি এখনও আইনজীবী?"
পেছনে গা এলিয়ে আরাম করে বসে স্কট। "প্রফেশন আগেরটাই আছে সায়রা, তবে ইনকাম বেড়েছে।"
"শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন? কোনো বড় ধরণের অসুখ হয়েছে এর মধ্যে?"
"না। দেখতেই পাচ্ছেন আমি কতটা ফিট, শুধু পায়ের প্লাস্টারটা বাদ দিলে সব ঠিক।"
"পারিবারিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন?"
"না, স্টিল হ্যাপিলি সিঙ্গেল।"
কাঁপা হাতে ফর্মে টিক দিয়ে গেলো সায়রা। কাগজে চোখ রেখে বুঝতে পারছিলো স্কট তাকেই তীর্ব দৃষ্টিতে দেখছে। সায়রার ভালো লাগছে না, একটু অযাচিত স্তুতি ছাড়া স্কট তেমন কিছুই করেনি । তবু আতংকে হৃদস্পন্দন তীব্র হচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখনই পালিয়ে যায়। অস্বস্তিতে কোটের ভেতরে গলার কাছটা ঘেমে উঠেছে । তাড়াতাড়ি হাত চালায় , ফর্ম পূরণ করা শেষ করে। পকেটে ফোনটা স্পর্শ করে একবার, কোনো বিপদ দেখলে নাইন ওয়ান ওয়ান কল করতে দেরি করবে না।
"আপনার কিছু লাগবে? আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।" দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন মিসেস পাবলো। বৃদ্ধা নিঃশব্দে কখন যেন উপস্থিত হয়েছেন।
"আপনার কিছু লাগবে সায়রা ? চা, কফি? মিসেস পাবলো চলে গেলে আমি কিন্তু অচল, ভাঙা পা নিয়ে নিচে কিচেনে গিয়ে আপনার জন্য চা কফি বানাতে পারবো না।"
কুৎসিত হাসিটা এখনো ঝুলে আছে স্কটের মুখে। এখন তাকে এতটা সুদর্শন লাগছে না।
"কিছু লাগবে না, কয়েকটা সাইন নিয়েই চলে যাবো।"
মিসেস পাবলো রোবটের মতো শক্ত মুখে চলে গেলেন। এবার স্কট পিঠ শক্ত করে বসলো। কেমন অদ্ভুত সমোহনী ভঙ্গিতে বললেন, "এখন শুধু আমরা দুজন। জানেন, এবাড়িতে আমি ভীষণ একা। ভয়াবহ একাকিত্ব মানুষকে দুরকম বানিয়ে দেয়, অসহায় অথবা হিংস্র। একাকিত্ব ভ্যাম্পায়ারের মতো, হয় আপনার রক্ত শুষে নিঃশেষ করে দেবে অথবা আপনাকে পরিণত করবে আরেকজন ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারে। "
স্কট যেন সম্মোহন করছে। সায়রা আবার ভেতর থেকে কেমন বিবশ হয়ে পড়লো। বারবার নিজেকে স্বান্তনা দিতে লাগলো, লোকটা একটু নচ্ছার ধরণের, ভাঙা পা নিয়ে কী এমন করবে? তবু সায়রার মনে হয় লালসা উপচে পড়ছে স্কটের অবয়বে। যেন ক্ষুধার্ত নেকড়ে থাবা গেড়ে শিকারকে লক্ষ্য করছে।
অথচ সায়রা এমন কোনো সুন্দরী না, সাধারণ বাংলাদেশী চেহারা, শরীর। সুন্দর সাজসজ্জায় নিজেকে আকর্ষণীয় করার উপায় জানে না । সাধারণ কালো ট্রাউজার আর শার্ট কোট গায়ে। তাকে দেখে এমন সুদর্শন ধর্ণাঢ্য আমেরিকান পুরুষ আকর্ষণ বোধ করবে এমনটা কিছুইতেই বিশ্বাস করবে না কেউ। তাহলে এমন নেতিবাচক অনুভূতি এসে বারবার আঘাত করছে কেন সায়রাকে?
"সায়রা, আপনার কি বুকে তিল আছে?"
সায়রার বুক ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। তার বুকে তিল আছে, কিন্তু ওর সারা শরীর কোটে ঢাকা। ভেতরে তিল দেখার কোনো উপায় নেই। তাহলে লোকটা কিভাবে তিলের ব্যাপারে জানলো?
নিজেকে সামলে নেয় সায়রা। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে , "আমি প্রফেশনাল কাজে এসেছি, আপনার এধরণের কথায় আমি অস্বস্তি বোধ করছি স্যার। আমরা বরং কাজটা শেষ করি। প্লিজ , এই কাগজগুলোয় সাইন করুন। এটা আপনার নতুন ইন্সুরেন্স প্রিমিয়ামের কন্ট্রাক্ট পেপার। "
হেসে ফেলে স্কট। কুৎসিত কুটিল হাসি দেখে সায়রার অবশ লাগে, ঘরটা বুঝি আরেকটু বেশি অন্ধকার হয়ে আসে। দেয়াল আরো দূরে সরে যায়। ভয়ে ওর চেহারা রক্তশুন্য দেখায়।
সায়রাকে এমন আতঙ্কগ্রস্ত দেখে যেনো আরো মজা পায় স্কট। ঠোঁটকে একটু ছুঁচোলো করে বলে,
"রিলাক্স মাই ডিয়ার। আমি তো মজা করছিলাম। তবে কি জানেন, যার বুকে তিল থাকে সে দমবন্ধ হয়ে মারা যায় ! "
এবার সত্যি খুব বিরক্ত হলো সায়রা। রাগের সাথে সামান্য সাহস যোগ হলো। কঠোর স্বরে বললো, "আমার মনে হচ্ছে না এসব অসংলগ্ন কথার কোন প্রয়োজন আছে। আপনি কেন বারবার একসিডেন্ট করছেন সেটার একটা ব্যাখ্যা দিতে হবে। সেটা মৌখিক বা লিখিত হতে পারে। তবে আজকেই দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, দু-তিনদিন সময় নিতে পারেন। এখন আপনার নতুন ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দিন , প্লিজ। সেখানে সাইন করতে সেখানে হবে টিক দেয়া আছে।"
স্কটের মুখে কুটিল হাসিটা এখনও উপস্থিত। হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেয়া ফাইলটা নিয়ে সামনে টেবিলে রাখলো। তারপর কিছুক্ষন সায়রার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো, "আপনার মধ্যে সেন্স অফ হিউমার একেবারেই নেই। আমি তো মজা করছিলাম। এক্ষুনি সাইন করে দিচ্ছি। আপনার মতো সুন্দরীকে রাগাতে চাচ্ছি না।"
সায়রার এগিয়ে দেয়া কলমটা নেয় স্কট। ফাইল খুলে টিক দেয়া কাগজগুলোতে সাইন করতে থাকে। সায়রার মনে হচ্ছে লোকটা ইচ্ছা করে শ্লথ গতিতে কলম চালাচ্ছে। সময় যেন থমকে গেছে আলো আঁধারির এই বন্দিশালায়। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে কেঁপে উঠছে সায়রা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখন থেকে পালাতে হবে।
একসময় সাইন করা শেষ হলো। ফাইলটা ঝটপট গুছিয়ে নিয়ে ছোট্ট করে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে সোফা থেকে উঠে পড়লো সায়রা। দরজার দিকে এগুতেই আচমকা চেয়ার থেকে উঠে প্রায় দৌড়ে দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো স্কট। এক মুহূর্তে তার সুন্দর চেহারা ভয়াবহ আক্রোশ আর ঘৃণায় কুৎসিত রূপ নিলো। যেনো এক্ষুনি সায়রার ওপর চড়াও হবে লোকটা।
আতংকে মাথা ঘুরে উঠলো সায়রার, চোখে কেমন অন্ধকার নেমে এলো, বুকের ভেতর কে যেনো হাতুড়ি পেটাচ্ছে। সায়রা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো স্কটের পায়ে কোন প্লাস্টার নেই! কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারলো সেটা পকেটে নেই!
স্কট কর্কশ স্বরে বললো, "এই বাড়িতে আপনার ইচ্ছায় ঢুকেছেন কিন্তু বের হতে হবে আমার ইচ্ছায়। ইচ্ছা হলেই আমার বাড়িতে ঢুকবেন আর ইচ্ছা হলেই বেরিয়ে যাবেন সেটা তো চলবে না। এমনকি মিসেস পাবলোও পারে না। এটা আমার বলয়, আমার!"
স্কট ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। সায়রার মনে হলো লোকটা আরো লম্বা আর ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ওর মনে হলো আতংকে এক্ষুনি জ্ঞান হারাবে সে। স্কট নিচু হয়ে মুখ নামিয়ে আনলো পাঁচ ফুট দুই সায়রার মুখের উপর। ঠান্ডা হাতে ওর গলার কাছটায় একটু স্পর্শ করে বললো, "বিশ্বাস হয়নি আমার কথা? বলেছিলাম না, গলায় তিল থাকলে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়। প্রমান চান?"
এক্ষুনি জানোয়ারটা গলা টিপে মেরে ফেলবে। বাঁচার তাড়নায় সব সাহস এক করে চোখ বুজে চিৎকার করে সায়রা। ঠিক তখনই সায়রার মনে হলো সম্বিৎ ফিরে পেলো, এতক্ষন বুঝি ঘুমিয়ে ছিলো। চোখ খুলতেই দেখলো সে ঠিক আগের মতো সোফায় বসে আছে, তার সামনে টেবিলে রাখা ফাইলে অস্বাভাবিক ধীর গতিতে কাগজে সাইন করছে স্কট। পায়ে প্লাস্টার। তাহলে কিছুক্ষন আছে কী হয়েছিলো? লোকটা তো এখানেই বসে আছে, ভাঙা পা নিয়ে অমন ছুটে গিয়ে দরজায় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর তো কথা না। তাহলে কি পুরোটাই তার অলীক কল্পনা! কল্পনা এতটা বাস্তব কি করে হয়! সায়রার বুক এখনো কাঁপছে।
ভালো লাগছে না সায়রার। বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে এদিক ওদিক উদ্ভ্রান্তের মতো তাকাতে লাগলো সে। একটু আগের দৃশ্যাবলি কী করে কল্পনা হয়? ওর গলার কাছে ঠান্ডা স্পর্শ এখনও লেগে আছে!
"আপনি ঠিক আছেন তো সায়রা? কী হয়েছে?" কৌতুকপূর্ণ স্মিত হাসিতে জিজ্ঞেস করে স্কট।
"আমাকে যেতে হবে স্যার। প্লিজ।"
"অবশ্যই যাবেন, এই নিন আপনার ফাইল।"
ফাইলটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে তুলে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করতেই আবার অস্বাভাবিক ঘটনা হলো। সায়রা অবাক হয়ে দেখলো দরজার দিকে কোনো দরজা নেই! এক মুহূর্তে দরজা গায়েব হয়ে গেছে!
সায়রা বুঝতে পারলো সে প্রায় অন্ধকার একটা হলরুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। স্যাতস্যাতে কেমন একটা গন্ধে বুক ভারী হয়ে আসে ওর। হলরুমের চারপাশে শুধু জানালা, কোনো দরজা নেই।
সায়রার মনে হলো তার হৃদপিন্ড এক্ষুনি ফেটে পড়বে , ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। ছুটে গিয়ে একটার পর একটা জানালা খোলার চেষ্টা করে, কোন জানালা খোলা যায় না। সব খিল পাথরের মতো শক্ত। শরীরের সব জোর দিয়ে জানালা খোলার চেষ্টা করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে ও, ঘেমে শরীর ভিজে যায়। সায়রার মনে হয় ও এক্ষুনি মরে যাবে। ওর গায়ে কোট নেই, যে কোটের পকেটে ফোন ছিল।
হলরুমে আরেক পাশে অন্ধকার কোনে কি যেন একটা নড়ে ওঠে। চমকে ওঠে সায়রা। মৃদু খটখট শব্দ তুলে জন্তুর মত কিছু একটা বেরিয়ে আসে। অন্ধকার কোন ছেড়ে সামান্য আলোতে আসার পর সায়রা দেখতে পেলো মানুষের মতো একজন চারপায়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। সায়রার ইচ্ছা করে দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে, ভয়ানক জন্তুটাকে দেখার মতো মানসিক বল ওর মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। তবুও দৃষ্টি ঠিক সেদিকেই গিয়ে আটকায়। জন্তুটা আসলে একটা মানুষ, গায়ে একফোঁটা কাপড় নেই। লম্বা জট ধরা নোংরা চুল এসে নেমেছে মুখের সামনে। চার পায়ে ভর করে জন্তুর মতোই এগিয়ে আসছে, শরীরে রাজ্যের ময়লা। স্যাতস্যাতে গন্ধটা আরো তীব্র হলো, মনে হচ্ছে ওই মানুষটার গা থেকেই এমন গন্ধ আসছে। সায়রার গা গুলিয়ে বমি পায়। বিস্ফোরিত চোখে অপলকে জন্তুর মতো মানুষটার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা দেখে। জন্তুর মতো মানুষটা মুখ তুলে তাকালো, লোকটার মুখ বেয়ে লালা ঝরছে। এ তো স্কট! ঠিক ওর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আর সহ্য করতে পারে না সায়রা। প্রবল আতংকে জ্ঞান হারানোর আগে দেখতে পায় স্কট ঝাঁপিয়ে পড়ছে ওর ওপর। ঠিক তক্ষুনি চোখ খুলে সায়রা দেখলো ও ঠিক আগের মতো সোফায় বসে আছে, তার সামনে বসে কাগজে সাইন করছে স্কট। ঘেমে নেয়ে উঠেছে সায়রা। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। উদ্ভ্রান্তের মতো লাফিয়ে ওঠে ও।
স্কট শান্ত ভঙ্গিতে বলে, "ঠিক আছেন সায়রা? কী হয়েছে আপনার?"
"আপনি আমাকে নিয়ে কী চালাকি করছে মিস্টার উইলিয়াম? আমি কিছু দৃশ্য দেখছি, ভয়ংকর দৃশ্য, সত্যি মিথ্যা বুঝতে পারছি না। আমাকে যেতে দিন.......আমি যাবো...প্লিজ প্লিজ।" মিনতি করে বলে সায়রা।
হাহাহা করে হেসে ওঠে স্কট। "আপনাকে আমি আটকাইনি সায়রা। আপনি কী বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিসের দৃশ্য?"
"আপনি সব বুঝতে পারছেন, আপনি আমার মাইন্ড নিয়ে খেলছেন। আপনি কিছু একটা করছেন ........."
সায়রা হুড়মুড় করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার কাছে আসতেই আতংকিত হয়ে দেখে অন্ধকার গহ্ববরের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে, অন্ধকারের ওপাশে এই অভিশপ্ত প্রকোষ্ট থেকে বেরুনোর দরজার, দরজার ওপাশ আলোকিত। কিন্তু কিভাবে পার হবে এই অসীম আঁধার গহ্বর সেটা বুঝতে পারছে না। ওর সব বিবেক বুদ্ধি বুঝি লোপ পেয়েছে।
আতংক আর ধন্দে মাথা এলোমেলো লাগে সায়রার। কি করবে কিছুই খেলে না মাথায়। হটাৎ দেখতে পায় ওপরে অসীম অন্ধকার থেকে ঝুলে আছে ক্রিস্টালের ঝলমলে ঝাড়বাতি। সায়রার মনে হয় এই ঝরবাতিতে ঝাঁপ দিয়ে ঝুলে ও প্রান্তে বের হওয়ার দরজা পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু যদি একটু হেরফের হয় তাহলে ও পড়বে অতল অন্ধকারে। লম্বা একটা দম নেয় , বাঁচার শেষ চেষ্টা ও করবে। না হয় পেছনে ভয়ংকর লোকটা ওকে মেরে ফেলবে।
লাফ দেয়ার আগে শেষ বারের মতো পেছনে শেষ তাকায়। স্কট দাঁড়িয়ে আছে, পায়ে প্লাস্টার নেই, সুস্থ স্বাভাবিক ভঙ্গি। মুখে কুৎসিত হাসি, যেন সায়রার অসহায়ত্ব দেখে খুব মজা পাচ্ছে লোকটা।
"সায়রা, আপনি কিন্তু আপনার নামটা মিসেস পাবলোকে বলেননি, তাহলে আমি কী করে আপনার নাম জানলাম বলুন তো?"
সত্যিই তো! দরজায় যখন মিসেস পাবলোর সাথে দেখা হয়েছে , তখন তো নিজের নাম বলেনি! সায়রা শুনবে না এই বিকারগ্রস্ত লোকের কোন কথা। কথা বলে লোকটা তাকে বিভ্রান্ত করছে। তবু লোকটা কি এক সম্মোহনী কণ্ঠে বলতে থাকে, "সায়রা, একটা সময়ের চক্রে আপনাকে আটকে ফেলা হয়েছে। এতদিন আমি একা এই বলয়ে ছিলাম,এখন আপনিও আছেন। এই চক্র থেকে বের হতে পারবেন মা। এর নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই। কোন এক চক্রে আমাকে আপনার নাম বলেছিলেন, মন আছে? আচ্ছা,কেউ যখন একই দৃশ্য বারবার দেখতে থাকে, একই সময় বলয়ে আটকা পড়ে যায়, তখন একসিডেন্ট হওয়া স্বাভাবিক না? তাহলে আমার ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেয়া কি উচিত হলো মিস সায়রা ? হাহাহাহাহা ..........
নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে হাসতে থাকে স্কট। সায়রার বুক কেঁপে ওঠে। সত্যি মিথ্যা কিছুই উপলব্ধি করার মানসিক শক্তি লোপ পায়। সত্যি আর মিথ্যার বিবেধ করতে পারে না। প্রবল আতংকে লাফ দেয় ঝাড়বাতি লক্ষ্য করে।
নিচে হলরুমের মেঝেতে ঝাড়বাতির নিচে পড়ে থাকে সায়রার নিথর দেহ। তার শরীরের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকে ঝলমলে ক্রিস্টালের কিছু টুকরো , এই মাত্র ঝাড়বাতি থেকে ঝরে পড়েছে টুকরোগুলো। স্কট শান্ত ভঙ্গিতে ওপর থেকে দৃশ্যটা দেখে ফিসফিস করে স্বগোক্তি করে, "বলেছিলাম না, মানুষ যখন একই দৃশ্য বারবার দেখে তখন একসিডেন্ট হওয়া খুব স্বাভাবিক। আপনি নিজেই তো একসিডেন্ট করলেন। বিশ্বাস হলো তো আমার কথা, মিস সায়রা?"