এষণ

অস্থিরতা (জানুয়ারী ২০১৬)

কেতন শেখ
  • ১১
  • ১৫
মনটা ভালো নাই ... কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

- কেন ?

- কারণ বলতে ইচ্ছা করছে না।

মিতু খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো। গতকালের ঘটনার পর এখন আমানকে বুঝিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলাও ঠিক হবে না। এই ধরণের যে কোনো একটা দুর্বলতার খোঁজ পেলেই ও গতকালের ব্যাপারটা নিয়ে আবার ঘ্যানঘ্যান করা শুরু করবে। ঐ ধরণের কোনো কথোপকথনে মিতুর কোনো আগ্রহ নেই।

শ্রাবণ মাসের সন্ধ্যা। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। মিতু বারান্দায় বসে আছে। এমন বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় প্রিয় মানুষের সাথে কথোপকথনে “কথা বলতে ইচ্ছা করছে না” শুনতে ভালো লাগে না। কিন্তু ইদানিং আমানের সাথে ঠিকমতো কথা হচ্ছে না। কথা শুরু করলেই ও মন খারাপের কথা বলে আলাপ শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমান এমন ছিলো না। কয়েকমাস আগেও হাসিখুশি আর আমুদে ছিলো। নিজে গাড়ি চালিয়ে চলে আসতো মিতুর ক্যাম্পাসে। ওর সাথে বেড়ানোর জন্য মিতুকে বেশ কয়েকবার টিউটোরিয়াল বা গ্রুপস্টাডি বাদ দিতে হয়েছে। বেড়াতে বের হলে ওদের সময়ের খেয়াল থাকতো না। ফিরতে রাত আটটা-নয়টাও বেজেছে।

মিতুর মা শাহেদা বেগম এসব জানেন। রাতে দেরী করে ফিরলেও তিনি মিতুকে তেমন কিছু বলতেন না। মাঝেমাঝে শুধু বলেছেন, আর যাই করো মা, দুদিন পরে বোলো না যে এসব না বুঝে করেছো।

একুশ বছর বয়সী কোনো মেয়ের না বুঝে কিছু করার কোনো কারণ নেই। মিতু কোনোকিছুই না বুঝে করেনি। তবে মায়ের বলা এই কথাটার অর্থ কি সেটা ও জানে। শাহেদা বেগম মাঝেমাঝে নিজেও এর অর্থ বলে দেন। গতমাসে একবার অপ্রাসঙ্গিকভাবেই বললেন, যার সাথে মেলামেশা করো, তাকেই বিয়ে করবে মা। যদি বিয়ে করার ইচ্ছা না থাকে, তাহলে মেলামেশা কোরো না।

- হঠাত এই কথা কেন বলছো মা ?

- বলছি কারণ তোমাদের সময়টা আলাদা। অনেকগুলো সম্পর্ক আর অনেক যোগাযোগের মধ্যে থেকে বিয়ে সংসার কমিটমেন্ট এসব নিয়ে চিন্তা করার ফুরসত তোমাদের হয় না। তোমরা এসব চিন্তা না করেই মেলামেশা শুরু করো। এমন মেলামেশা ঠিক না।

- ঠিক বেঠিকের হিসাব তোমার কাছ থেকে জানতে চাই না মা। তোমাদের সময় হয় তো এমন মেলামেশা ঠিক ছিলো না। তুমি নিজেই তো বললে আমাদের সময়টা আলাদা।

- দেখো মিতু, সময় আলাদা হলেও সেন্টিমেন্ট, ইমোশন আর জীবনের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। এগুলো একই আছে। ফ্রেম বদলে গেছে, ছবি একই আছে।

মিতু কথা বাড়ায়নি। এসব নিয়ে মায়ের সাথে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা করতে ভালো লাগে না। শাহেদা বেগমের জীবনের সাথে এসব আলাপের কোনো মিল নেই। আমানের সাথে মেলামেশায় মিতুর একটা ভালোলাগা জড়িয়ে আছে। ওর কথা শুনতে ভালো লাগে, ওর সাথে বেড়াতে ভালো লাগে। একসাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানো নিয়েও ওদের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই। এক বছরের পরিচয়ে এর বেশী কোনোকিছু ওরা কেউই ভেবে দেখেনি। বিয়ে, সংসার বা কমিটমেন্ট নিয়ে কথা হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

আমান বিত্তবান পরিবারের ছেলে, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পারিবারিক ব্যবসা দেখছে। মিডল ক্লাস পরিবারের ছেলেদের মতো কবিতা লেখা, গান গাওয়া, বা ব্লগে লেখালেখি করার অভ্যাস ওর নেই। ওর জীবন ব্যবসা, হেল্থ ক্লাব, বেড়ানো, আড্ডা আর দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ার মধ্যেই থাকে। এক কথায় স্ট্রেস-ফ্রি হেলদি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জীবন। এমন একটা ছেলের সাথে মেলামেশায় হৃদয়ে আনন্দ ছাড়া অন্য কোনো অনুভূতি প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। সেন্টিমেন্ট, ইমোশন আর জীবনের ফ্রেম বা ছবি নিয়ে সেখানে যে কোনো আলাপই অর্থহীন। সেই সময় এখনও আসেনি। কখনও আসবে সেরকম ভাবনাও মিতুর নেই।

মিতু দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেও আমান করলো না। বেশ বড়সর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ফোন রাখছি মিতু। পরে কথা বলবো।

সন্ধ্যার আলো শেষের দিকে। প্রায় সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছে, এখনও হচ্ছে। মিতু চায়ে চুমুক দিলো। দুইমাস আগে আমানের পরিবারে ওর বিয়ে নিয়ে কথা উঠেছে। সবাই চায় ফ্যামিলি-ফ্রেন্ড একটা মেয়ের সাথে ওর বিয়ে হোক। মেয়েটার নাম সানজিদা। আমানের সাথে সানজিদার ছোটবেলা থেকে পারিবারিক পর্যায়ের পরিচয়। মিতুর সাথে সানজিদার কয়েকবার দেখাও হয়েছে, কখনও আমানের বন্ধুদের আড্ডায়, কখনও কনসার্টে, বা পার্টিতে।

দুইমাস আগে একদিন বেড়াতে গিয়ে আশুলিয়া লেকের পাশে গাড়ি থামিয়ে আমান এসব বলছিলো। মিতু সব শুনে বললো, তুমি কি করতে চাও ?

- সেটা ডিপেন্ড করছে তুমি কি করতে চাও, তার উপর।

মিতু অল্প হেসে বললো, বিয়ের কথা হচ্ছে তোমার আর সানজিদার। তোমার ফ্যামিলি চায় বিয়েটা হোক। এখানে আমার চাওয়া না চাওয়ার কথা আসলো কোথ্থেকে ?

- এর মানে কি ? তুমি বুঝতে পারছো না আমি কেন তোমার সাথে এই আলাপ করছি!

- না, বুঝতে পারছি না।

আমান উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো, আমি সানজিদাকে বিয়ে করতে চাই না।

- না চাইলে কোরো না। সবাইকে বলো তুমি বিয়ে করবে না। তোমার পরিবার নিশ্চই জোর করে তোমাকে বিয়ে দেবে না।

- মিতু, ওরা চায় আমি এখন বিয়ে করি। আমাকে বলেছে যদি আমার পছন্দের কেউ থাকে, তাহলে বলতে। যদি সেরকম কেউ না থাকে, তাহলে সানজিদার সাথেই ওরা আমার বিয়ে দেবে।

- ওহ ... তুমি কি সানজিদাকে পছন্দ করো না ?

- অবশ্যই না ... সানজিদাকে আমি পছন্দ করবো কেন ?

মিতু হালকা স্বরে বললো, কিন্তু তোমার বন্ধুদের অনেকে আমাকে বলেছে যে তুমি একসময় সানজিদাকে ডেট করেছো। তোমরা প্রায় দুই বছর একসাথে ছিলে, জাস্ট লাইক এ কাপল ...

- সেটা অনেক আগের কথা মিতু, আমরা তখন বাচ্চা ছিলাম। কিছু না বুঝেই ঐসব করেছি।

- তোমরা গতবছর পর্যন্তও একসাথে ছিলে ... তুমি বলতে চাও গতবছর পর্যন্ত তুমি বাচ্চা ছিলে ?

আমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে শীতল স্বরে বললো, আমি এসব আলাপ করার জন্য এখানে আসি নাই মিতু। আমি জানতে চাচ্ছি বিয়ে নিয়ে তোমার ভাবনা কি।

- আমার কোনো ভাবনা নাই। এই মুহূর্তে তো একেবারেই নাই।

আমান বজ্রাহতের মতো তাকিয়ে ছিলো। মিতু কিছুক্ষণ সেই দৃশ্য উপভোগ করে বললো, চলো ফিরি। আটটার আগে আমাকে বাসায় পৌঁছাতে হবে।

- বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো ভাবনা নাই কেন ?

- জানি না আমান। আমরা বেশ কিছুদিন ধরে মেলামেশা করছি ... এর মধ্যে আমাদের এসব নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয় নাই। বিয়ে জাতীয় ভাবনাচিন্তা হুট করে শুরু করা যায় না।

- কিন্তু আমার প্রবলেমটা হুট করে এসেছে। হুট করে প্রবলেম আসলে হুট করে সেটা নিয়ে চিন্তাও করতে হবে।

মিতু শান্ত স্বরে বললো, তুমি উদ্ভট কথা বলছো আমান। তোমার ফ্যামিলি তোমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে, সেটাও পরিচিত একজনের সাথে। নিশ্চই তাদের সেরকম ভাবার কোনো কারণ আছে। বাই দা ওয়ে, তুমি কি সানজিদার সাথে কথা বলেছো ? সে কি চায় জানতে চেয়েছো ?

- তার চাওয়া না চাওয়ায় কি আসে যায় মিতু! ... আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

- কেন ? তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কেন ?

আমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, তোমার সাথে থাকতে আমার ভালো লাগে।

- তুমি আমার সাথে থাকো না আমান। আমরা কিছু সময় একসাথে কাটাই, ঘুরে বেড়াই, কথাবার্তা বলি, আদর-টাদর করি। এই বয়সে আমাদের দুজনেরই কিছু চাহিদা আছে। আমরা একজন আরেকজনের মন আর শরীরের সেসব চাহিদা পূরণ করি। এসব তুমিও এনজয় করো, আমিও এনজয় করি। বিয়ে তো শুধু এসব না। আমাকে বিয়ে করার জন্য শুধু এসব ভালোলাগা তো এনাফ না।

- এসব তুমি কি বলছো! আমাদের মেলামেশার সবকিছু কি অর্থহীন!

- না, অর্থহীন হবে কেন .... সেটা তো বলি নাই। যাই হোক, চলো ফিরি। এসব নিয়ে পরে কথা হবে।

এরপর কিছুদিন আমানের সাথে এসব নিয়ে খুব বেশী কথা হয়নি। কথা হয়েছে ওর বন্ধু রাসেলের সাথে। রাসেল একদিন ফোনে বললো, তুমি ব্যাপারটা খুব জটিল করে ফেলছো মিতু। ব্যাপারটা খুব সহজ হওয়ার কথা।

- সহজ বা জটিল সেটা তো তোমার বুঝার কোনো কারণ নাই রাসেল।

- আমার বুঝার কারণ নাই! কি বলো এসব! তোমাদের কোন ব্যাপারটা আমি জানি না ? আমার বাসায় তোমরা দেখা করেছো। তোমরা কোথায় ঘুরতে যাও কি কথা বলো সবই তো আমান আমার সাথে শেয়ার করে।

- সেখানেই সমস্যা রাসেল। তুমি আমানের ভার্সনটাই জানো ... আমান বেচারা নিজেই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো, তাই ওর ভার্সনটা ভুল। আমি তো তোমার সাথে কিছু শেয়ার করি নাই।

রাসেল গম্ভীর স্বরে বললো, ওহ ... তো তোমার ভার্সনটা বলো, শুনি।

মিতুর তেমন কিছু বলার ইচ্ছে ছিলো না। তবে রাসেল জোঁক টাইপের ছেলে। বিত্তবানদের ঘনিষ্ট বন্ধু তারাই হতে পারে যারা তাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত হয়। রাসেল সেরকমই। মিতুর কথা না শোনা পর্যন্ত সে ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকবে।

- রাসেল শোনো, আমি বিয়ে নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা করি নাই, আর এখন করতেও চাই না।

- কিন্তু এখন ভাবনাচিন্তা করার সময় মিতু। তুমি আমানকে ভালোবাসো ...

- কে বললো ?

- এখানে কারও বলার কি আছে মিতু! এটা তো সিম্পল ... তুমি আমানকে ভালোবাসো না ?

- এই কথা আমি তোমাকে বলবো কেন ?

রাসেল কিছুক্ষণ চুপ থেকে শীতল স্বরে বললো, তুমি কি জানো তুমি কতো ভয়ঙ্কর কথা বলছো ? যদি ফ্রেন্ড-সার্কেলের সবাই জানতে পারে যে তুমি এরকম ...

মিতু সহজ স্বরে বললো, আমি কি রকম সেটা এখানে আলোচ্য বিষয় না, আর সেটা নিয়ে আমি তোমার সাথে কথাও বলতে চাই না। ফোন রাখছি, বাই।

এসব ঘটনার সাথে আমানের ব্যবহারে একটা পরিবর্তন এসে গেলো। গত দুইমাস কারণ ছাড়াই ওর মন খারাপ থাকে, ফোনে বেশীক্ষণ কথা বলতে চায় না। গতকাল ক্যাম্পাসে এসে মিতুকে বললো, তুমি ভুল করছো মিতু। আমার সাথে বিয়ের প্রস্তাবে তোমার না করার কোনো কারণ নাই।

গতকাল বৃষ্টি ছিলো না। প্রচন্ড গরম। বাইরে কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা একটা দুঃসহ অনুভূতি। মিতু ওড়না দিয়ে মুখ মুছে বললো, আমান, তুমি বারবার আমাকে এই কথা বলছো কেন ?

- কারণ ব্যাপারটা এখন জানাজানি হয়ে গেছে ... আমাদের সার্কেলের সবাই জানে যে তুমি আমার সাথে সব করেও এখন বিয়ে করতে চাচ্ছো না। এটা তোমার রেপুটেশনের জন্য ভালো না।

- সেটা তো আমার চিন্তা আমান। তুমি সেটা নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছো কেন ? তুমি সানজিদাকে বিয়ে করছো। লাস্ট উইক তোমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে। বিয়ের সব আয়োজন হচ্ছে। তুমি চুপচাপ বিয়ে করো। আমি কি করছি না করছি সেটা নিয়ে তুমি এতো দুশ্চিন্তা করছো কেন ?

আমান থমথমে কণ্ঠে বললো, আমি দুশ্চিন্তা করছি কারণ আমি তোমার ফ্রেন্ড।

- গুড। তাহলে তুমি আগের মতো ব্যবহার করো। স্বাভাবিক থাকো। চলো আমরা গাড়ির এসিতে বসে কোথাও বেড়াতে যাই। গরমে অসহ্য লাগছে। তুমি ভ্রু কুঁচকে এতো সিরিয়াস কথাবার্তা বললে তো গরমের সাথে আরো অনেক অস্বস্তি যোগ হবে।

- তুমি কি একবার সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিয়ে ভাববে ? দুইমাস পরে আমার বিয়ে হচ্ছে, সানজিদার সাথে ....

- সানজিদার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে না আমান, তুমি সানজিদাকে বিয়ে করছো।

- একই তো কথা ...

মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, এক কথা না আমান। তুমি সানজিদাকে বিয়ে করছো। তুমি সেটাই করছো যেটা তুমি করতে চাও।

ভরদুপুরে ক্যাম্পাসের পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে আমান আচমকা দুই হাত দিয়ে মিতুকে ধরে কাছে টানলো। আশেপাশে অগুনতি মানুষের ভিড়। এসব উপেক্ষা করে আমান এক হাত মিতুর গালে রেখে ওকে আরো কাছে নিয়ে গভীর চুমু খেলো। মিতু বাধা দিলো না। প্রগাঢ় সেই চুমুতে কতোক্ষণ কাটলো সেটাও মিতু খেয়াল করলো না। আশেপাশের কোনো দৃশ্য দেখার কোনো উপায় নেই, আমানের অধরস্পর্শে মিতু কখনোই চোখ খোলা রাখতে পারে না। চুমু শেষ হওয়ার পর চোখ খুলে দেখলো আমান বিস্মিত দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সেই বিস্ময়মাখা কণ্ঠে আমান বললো, তুমি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও না ?

মিতু ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। উত্তেজনায় ওর ভেতরটা কাঁপছে, কিন্তু মনের গভীরে কোনো এক অদ্ভূত প্রশান্তি ভর করেছে। আমানের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অস্হিরতা আর প্রশান্তির যৌগিক এই অনুভূতি আগেও হয়েছে, নতুন কিছু না। কিন্তু যতোবার হয়, ততোবারই ভালো লাগে। অসম্ভব ভালো লাগে।

এতো চমত্কার ভালোলাগার মাঝে জীবনের জটিল কোনো প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলতে ইচ্ছে হয় না। মিতু তবুও হালকা স্বরে বললো, প্লিজ চলো কোথাও ঘুরে আসি। প্লিজ।

বেড়াতে গিয়েও আমানের বিস্ময় কাটলো না। ঘুরেফিরে বারবার ও একই কথা বলছিলো। মনে হচ্ছিলো আমান নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে, আর নিজের মাঝেই সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যা আসার আগে মিতু বিরক্ত হয়ে গেলো। আমান তখনো সেই একই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছে, যুক্তি দিয়ে কচলে ব্যাপারটাকে তেতো বানাচ্ছে। মিতু ওর কথার মাঝেই হঠাত করে বললো, বাসায় যাবো আমান।

আমান এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়ে বললো, আমি কি বলছি তুমি কিছুই শুনছো না, তাই না!

- দুপুর থেকে তুমি একই কথা বলছো, আর আমার যা বলার আমি দুপুরেই বলেছি। দুইমাস ধরে এই একই আলাপ আমাদের মধ্যে হচ্ছে। এরপরে আর কি কথা থাকতে পারে ?

- তুমি ভুল করছো মিতু। তুমি বুঝতে পারছো না যে আমাকে বিয়ে করলে তোমার ভবিষ্যতটা সুন্দর হবে।

- সানজিদাকে বিয়ে করলে তোমার ভবিষ্যতও সুন্দর হবে আমান। আমারটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না ...

- আমি সানজিদাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না মিতু, তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি।

মিতু কিছুক্ষণ চুপ থেকে দৃঢ় স্বরে বললো, তুমি সানজিদাকেই বিয়ে করছো আমান। তোমাদের বিয়ের অনেক কিছু হয়ে গেছে, শুধু মালাবদল বাকি। তুমি যদি ওকে বিয়ে করতে না চাইতে, তাহলে ব্যাপারটা এতোদূর আসতো না ...

- তুমি বুঝছো না মিতু! ব্যাপারটা দুই ফ্যামিলির, আমরা অনেক আগের থেকে পরিচিত। প্লাস আমি তোমার ব্যাপারে কিছু বলতেও পারছি না ... এরকম অবস্হায় আমি কাকে কি বলে এই বিয়ে থামাবো বলো!

মিতু অল্প হাসলো। এরপর সহজ স্বরে বললো, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কেন জানো ? কারণ আমি মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে, আমাকে বিয়ে করলে তুমি যেভাবে খুশি জীবন কাটাতে পারবে। আমাকে বিয়ে করে তুমি যেনতেনভাবে রাখবে, প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দেবে যে তোমার স্ত্রী হওয়া আমার জন্য বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সানজিদাকে বিয়ে করলে সেটা সম্ভব না। ও তোমাকে কন্ট্রোলে রাখবে। কারণ সানজিদার ফ্যামিলিও প্রচন্ড বড়লোক। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই লোভও তুমি সামলাতে পারছো না।

- এসব কি আবোল তাবোল কথা বলছো!

- আমি ঠিকই বলছি আমান। আমি তোমাকে বিয়ে করবো না বলেছি, তাতেই তোমার পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেছে। গত দুইমাস তুমি এটা নিয়ে ডিসটার্বড অবস্হায় আছো। যতোক্ষণ আমি বিয়েতে রাজি না হবো, তুমি শান্তি পাবে না। আসল কথা হলো, আমি তোমাকে রিজেক্ট করেছি এটা তুমি নিতেই পারছো না ... কারণ এটা তোমার কোনো হিসাবে ছিলো না, তাই না ?

- প্লিজ চুপ করো মিতু! আমাকে এভাবে অপমান করার কোনো অধিকার তোমার নাই ...

মিতু থামলো না। খুব শান্ত কণ্ঠে বললো, আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি না হই, তুমি আমার সাথে একদিন বা দুদিন আজেবাজে ব্যবহার করবে, গালাগালি করবে। হয় তো কোনো এক দুর্বল পরিস্হিতিতে বন্ধুদের কাছে আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু কথা খুব খারাপভাবে বলবে .... কিন্তু সেটা বছরখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি, তুমি আমাকে সারাটা জীবন সামাজিকভাবে হিউমিলিয়েট করবে। তোমার কাছে তখন আমাকে হিউমিলিয়েট করার লাইসেন্স থাকবে ....

-শাট আপ মিতু। জাস্ট শাট দা ফাক আপ ....

মিতু চুপ করলো। অভিমানী দৃষ্টিতে তাকালো আমানের দিকে। আমান সেই দৃষ্টিতে অভিমান খুঁজে পেলো না। চোখমুখ শক্ত করে গাড়ি স্টার্ট করলো। ফেরার পথে কোনো কথা বললো না।

রাত দশটার পরে আমান সাধারণত একবার ফোন করে। গতকাল রাতে এগারোটার দিকে মিতু নিজেই ফোন করলো। সহজ স্বরে বললো, কি ব্যাপার, ফোন নাই, খবর নাই ... এতো রাগ! তুমি শুধু শুধু ব্যাপারটা জটিল করছো আমান।

- আমি না, তুমি ব্যাপারটা জটিল করছো। তুমি অদ্ভূত আচরণ করছো। তুমি আমার সাথে সব করতে পারো, কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে পারো না .... আমি কখনও ভাবি নাই যে তুমি এভাবে আমাকে ট্রিট করবে। তোমার মনে যা আসছে তুমি বলছো, একবারও ভাবছো না যে তুমি আমাকে অপমান করছো।

- হয় তো আমার ভুল হয়েছে, এভাবে সেসব বলা ঠিক হয় নাই। কিন্তু সেটা তুমি একবারও বললে না। তুমি তো বলতে পারতে যে মিতু তোমার এসব ধারণা ভুল ...

- আমি কেন বলবো! তুমি তোমার ক্লাসের মতো করে কথা বলছো, সেখানে আমার কি দরকার তোমার ভুল ধরিয়ে দেয়ার! আমার ব্যাপারে এতো জঘণ্য কথা আমি কোনোদিন শুনি নাই ... এনিওয়ে ... আম্মা আমার আর সানজিদার জন্য হানিমুনের বুকিং করছেন। আমি শেষবারের জন্য বলছি, তুমি ডিসিশন চেন্জ করতে চাইলে করতে পারো। আর বিকালের ব্যবহারের জন্য সরিও বলতে পারো।

মিতু একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, সরি তো আমি বলবো না আমান। কিন্তু বলো তো, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কেন ?

ফোনের অন্যপাশে কিছুক্ষণের অস্বস্তিকর নীরবতা ভেঙে আমান হঠাতই হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। চিত্কার করে ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে অশ্রাব্য কি কি সব বলা শুরু করলো। অকথ্য কিছু গালাগাল, চরম অপমানকর কিছু কথা। ফোন ধরে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো মিতু। আমানের এই হিংস্রতার সাথে আগে কখনও ওর পরিচয় হয়নি। ওর মুখে যে এতো খারাপ কথা আসতে পারে সেটা মিতু কল্পনাও করেনি।

আমান ফোন রেখে দেয়ার পরও মিতু কিছুক্ষণ ফোন ধরে বসে থাকলো। ওর ঘোর কাটলো যখন শাহেদা বেগম ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন, কি হয়েছে বলো তো ... তোমার মন খারাপ কেন ?

- কিছু হয় নাই।

- আমানের সাথে তুমি আর সম্পর্ক রাখবে না, তাই না ?

মিতু কিছু বললো না। শাহেদা বেগম বিষন্ন কণ্ঠে বললেন, আমি যা ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হচ্ছে। তুমি এই ছেলেটার ভালোবাসার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছো না। তোমার বোনদের মতো তুমিও আনসেটেলড। তুমি মানুষের ভালোবাসা বুঝো না। তুমি কোনোদিন সুখী হতে পারবে না।

- আমান আমাকে ভালোবাসে না মা। তুমি এখান থেকে যাও ... এসব নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

- আমার কারণে আমার মেয়েরা কেউই কোনো সম্পর্কে স্হায়ী হতে পারে না। তোমরা কমিটমেন্ট ভয় পাও। তোমরা কেউ সুখী হতে পারলে না, সবাই জোর করে আমাকে দোষী প্রমাণ করলে। তোমরা কেউ আমাকেও ভালোবাসো না।

মিতু চোখ মুছে কাঁপা কণ্ঠে বললো, সবাই না মা। তরু সংসার নিয়ে কানাডায় সেটেল করেছে। সে তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে।

- কিন্তু সে যেই ছেলেটাকে পছন্দ করতো, তাকে বিয়ে করে নাই। এখন স্বামীর সংসারেও সে ভালো নাই। তার ঘরে বা মনে কোথাও শান্তি নাই। কিন্তু সে এসব কাউকে বলে না। বীথির দুইটা সংসার টিকে নাই, এখন কার না কার সাথে থাকে, কি করে আমি কিছুই জানি না .... তোমরা কেউ ভালোবাসতে শিখো নাই। আমার কারণে তোমাদের মনের অবস্হা এরকম হয়েছে।

শাহেদা বেগম ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন। কথাবার্তার উত্তেজনার কারণেই হয় তো তাঁর বেডরুম থেকে হান্নান আহমেদ বের হয়ে আসলেন। তিনি শাহেদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে বললেন, প্লিজ শাহেদা, স্টপ ইট।

মিতু ওর নিজের ঘরে চলে আসলো। ওর দমবন্ধ লাগছে। তেরো বছর ধরে হান্নান আহমেদ মায়ের সাথে তাঁর স্বামী হয়ে আছেন। কিন্তু এখনো তাকে মায়ের কাছাকাছি দেখলে মিতুর নিশ্বাস আটকে আসে, প্রচন্ড অস্বস্তিবোধ হয়। তরু, বীথি আর মিতুর বাবার সাথে শাহেদা বেগমের সংসার টেকেনি। প্রচন্ড বিত্তশীল সেই মানুষ কোনো এক করুণার কোণে শাহেদা বেগম আর তাদের তিন সন্তানকে ফেলে রেখেছিলেন। পাঁচ বছরের দাম্পত্যে শারীরিক ব্যাপারটা ছাড়া তাদের মধ্যে অন্য কোনো সেতু তৈরী হয়নি। তিন সন্তানের জন্মের পর সেই সম্পর্কেও অনীহা এসে ভর করলো। আর দাম্পত্যে ভর করলো ঘৃণা, কটুক্তিমাখা হিংস্র আর নোংরা কথোপকথন, আর কে জানে আরো নিকৃষ্ট কোন আচরণ!

শাহেদা বেগম তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে সেই সম্পর্ক থেকে নিজেই বের হয়ে আসলেন। নতুন করে সম্পর্ক করলেন তাঁর অফিসের জুনিয়র কলিগ হান্নান আহমেদের সাথে। হয় তো তাঁর মনের গভীরে নতুন করে স্বাভাবিক একটা সংসার করার প্রবল ইচ্ছে ছিলো। কয়েক বছর মেলামেশার পর তিনি হান্নান আহমেদকে বিয়ে করলেন। তরু, বীথি আর মিতুকে ডেকে বললেন, উনাকে তোমরা বাবা বলে ডাকবে। এখন থেকে মনে রাখবে যে এটাই আমাদের পরিবার, আমাদের পৃথিবী।

তরু, বীথি আর মিতু এর কোনোটাই করেনি।

গতকাল শ্রাবণ মাসের শুকনো একটা দিন ছিলো। গভীর রাতেও বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বৃষ্টির আগমনী সমীরণ ভেসে এসেছিলো মিতুর ঘরের জানালা দিয়ে। মিতু সেই বাতাসে স্নান করার জন্য দরজা আটকে বাতি নিভিয়ে দিয়েছিলো। শরীর থেকে একটা একটা করে সব কাপড় খুলে ফেলেছিলো। বিবস্ত্রা অবস্হায় ক্ষণিকের সেই সমীরণ-স্নানে মিতু প্রায়ই সুখ আর কষ্টের একটা বিভ্রান্তিকর মিশাল উপভোগ করে। কিন্তু সেই মিশাল মিতুর মনকে কোনোদিন শান্ত করতে পারেনি, মন থেকে আজন্ম একটা কাঁটাকে কোথাও সরিয়ে নিতে পারেনি, সেই কাঁটার সাথে মেশানো অস্হিরতার ওপর ভালোবাসার কোনো প্রলেপ মাখতে পারেনি।

মিতুর জীবনে আমানও সেই অন্ধকার আর শ্রাবণ সমীরণের মিশালের মতো ক্ষণিকা। আমানও মিতুর মতো নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, আর নিজের কাছেই সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। কিন্তু আমান কখনোই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবে না।

নিজের কাছে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর মিতু খুঁজে পেয়েছে অনেক আগেই। তবু গাঢ় অন্ধকারে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে শ্রাবণ সমীরণে ক্ষণিকের বিভ্রান্তির স্নানে মিতু আরো কি যেন খোঁজে।

অস্হির সেই খোঁজটার সাথে ইদানিং মিতুর প্রায়ই দেখা হয়। খোঁজটা এখন ওর খুব প্রিয় হয়ে গেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান দারুন সাবলীল আপনার কলম । বেশ গুছিয়ে লিখেছেন । এই প্রজন্মকে তুলে এনেছেন নিপুন ভাবে , ভাল লাগলো । বিষয়বস্তু আর বিস্তারের উপর কেউ কেউ বলেছেন । শুভ কামনা রইল । ভাল থাকুন , সারাক্ষন ।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৬
আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগলো, লেখাটাও সার্থক হলো। আপনার জন্য শুভেচ্ছা সতত।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬
এশরার লতিফ সুন্দর লিখেছেন, অনেক শুভকামনা.
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬
ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব ভালো থাকবেন সবসময়, এই শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬
সেলিনা ইসলাম মিতুর দূরদৃষ্টি এবং মন চেনার যে কৌশল তা সত্যিই প্রশংসনীয়...! হয়ত শাহেদা বেগম মেয়ের এই গুনটি পেলে তার জীবন আরও সুন্দর হত। জীবনের ছোট্ট একটা ভুল মানুষের পুরো জীবনটাকে নরক বানিয়ে দেয় একথা যেমন সত্য। তেমনি বিয়ে করবে কী করবে না এই অনিশ্চয়তার মাঝে থেকে এতটা ঘনিষ্ট হওয়াও ঠিক নয়! যে কোন সম্পর্কের মাঝে কেবল ভালবাসা নয়,সেই সম্পর্ক ও ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকাটাও খুবই জরুরী! দুই প্রজন্মের অভিজ্ঞতায় চমৎকার গল্পের পটভূমি...! সুন্দর উপাস্থাপনায় দক্ষতায় লেখা গল্প খুব ভালো লাগল। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬
আপনার চমত্কার পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধিতে করা এই মন্তব্য আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করলো, আর লেখাকেও সার্থক করলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ও সশ্রদ্ধ ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য। শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬
রেজওয়ানা আলী তনিমা অসাধারণ ও অন্যরকম একটা গল্প . অনেক ভালোলাগা
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৬
আপনার সুন্দর মন্তব্য আমার প্রয়াসকে সার্থক করলো। আপনার জন্য শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬
তানজিলা ইয়াসমিন অসাধারণ এক লেখা পড়লাম ...।।পুরোটা পড়লাম ...অন্যরকম এক অনুভূতি পেলাম ...... ভোট রেখে গেলাম প্রিয় বন্ধু ...।।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৬
তানজিলা, তোমাকে গল্পে পেয়েই মন ভরে গেলো। আর এতো ভালোবাসার জন্য আমার লেখাটাও সার্থক হলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ও সশ্রদ্ধ ভালোবাসা জেনো বন্ধু আমার।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৬
Salma Siddika কেতন ভাইয়া, অনেকদিনপর গল্প কবিতায় আপনার গল্প দেখে ভালো লাগলো. গল্প সুন্দর হয়েছে. মিতুর অস্থিরতা আর দ্বিধা সুন্দর করে দেখিয়েছেন.
প্রিয় সালমা, তোমার মঙ্গলময় জীবনের জন্য শুভকামনা নিরন্তর। অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৬
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ জীবনের এই জটিল মেরুকরণের অস্থির ঘটনা নিয়ে যে ভাবে আপনি আপনার গল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন, তাতে আপনার মেধাকে শ্রদ্ধা না করে পারছি না । তবে এ রকম স্বাচ্ছন্দ লেখার প্রভাবে যদি নতুন প্রজন্মের মাঝে এক ধরনের ঝড়ো হাওয়ার মিষ্টি স্বাদ ওরা খুঁজে পায়, তবে সেটা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী কোন নিন্দিত প্রজ্ঞাপন ! তবু আপনার লেখনীশক্তির কদর স্বরূপ আপনাকে ভোট না দিয়ে পালাম না । শুভেচ্ছা রইল । আগামীতে আপনার কাছ থেকে পজিটিভ লেখার প্রত্যাশায় রইলাম ।
ভালো লাগেনি ৬ জানুয়ারী, ২০১৬
প্রিয় লেখক, আপনার এই চমত্কার মন্তব্য আমার প্রয়াসকে সার্থক করলো। বিনীতভাবে জানাই, গল্পটিকে একটু ভিন্নভাবে দেখলে এর কিছু শক্তিশালী পজিটিভ দিক খুঁজে পাওয়া যায়। ভালোবাসাহীন বিবাহ কখনোই সুখের না, এবং আমাদের সমাজে মেয়েদের না-কে খুব অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়। এই গল্পে খুব সুচিন্তিত ও গোছানো মানসিকতার একজন নারী চরিত্রকে দেখিয়েছি, যে অকপটে তার সিদ্ধান্ত বলতে পারে, এবং তার নেপথ্যের ভাবনাকেও গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারে। তার অস্হিরতার জন্য তার ভালোবাসার খোঁজ, যার আশ্বাস বা অনুভূতি তার প্রেমিক দিতে অক্ষম। সমস্ত গল্পে সে তা দিতে পারেনি। আমি তোমাকে ভালোবাসির মতো সহজ কথাটি তার প্রেমিক বলতে পারেনি (কারণ সে ভালোবাসেনি)। জীবনের সম্পর্কগুলোর নেপথ্যে থাকা সুদূরপ্রসারী ভাবনা ও অনুভূতিগুলোতে নারীরা সচরাচর পুরুষের থেকে এগিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে নারীর না-কে আমাদের সমাজে বেয়াদবী বা ধৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হয়, এবং তার সেই ভাবনাকে সন্মান করা হয় না। আর তাই অনেক নারী না বলতেও দ্বিধা করে। এর ফলস্বরুপ অসুস্হ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। একটি সম্পর্কে পুরুষ ও নারীর হ্যাঁ ও না বলার সমান অধিকার থাকা প্রয়োজন, এবং সমাজের তা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। গল্পের মূল নারী চরিত্র সেরকমই বলিষ্ঠ একটি চরিত্র যে অকপটে না বলতে পারে, দ্বিধাহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং সেই না-এর নেপথ্যে তার একটি ভালোবাসা সম্পর্কীয় কারণ আছে। তবে আমি আপনার দৃষ্টিকোণকে অনেক গুরুত্বের সাথে নিয়েছি, এবং সেজন্য আপনাকে সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ জানাই। আমার লেখনীকে আপনি ভালোবেসেছেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি কৃতজ্ঞ ও বিনম্র হয়েছি। অনেক ধরণের লেখাই লিখি ... দোয়া রাখবেন যেন পরবর্তীতে আরো পজিটিভ লিখতে পারি। আপনার মতো পাঠকের জন্য আমার প্রচেষ্টা সতত। অনেক ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৬
সুস্মিতা সরকার মৈত্র না চাইলেও আমরা নিজেকে বা অন্য মানুষকে সর্বদাই জাজ করতে থাকি। তাই মায়ের আনন্দ ছেলে মেয়েদের খুশি্র কারণ হয়ে ওঠে না। বরং সবকিছুকেই হয়ত অস্থির করে তোলে। আপনার এই গল্পে তেমনই এক অস্থির পরিবারের জটিলতা দেখতে পেলাম। এই অস্থিরতার সঙ্গে থাকতে থাকতে তারপর সেই অস্থিরতার খোঁজই যে কখন জীবন হয়ে ওঠে অনেক সময় সেটাও যেন টের পাওয়া যায় না। সিনেমার মতই লাগল গল্পের সমাপ্তি।
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৬
আপনার চমত্কার এই মন্তব্য আমার প্রয়াসকে সার্থক করলো। আপনার জন্য শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০১৬
ফয়েজ উল্লাহ রবি দারুণ! লেগেছে শুভেচ্ছা জানবেন,ভাল থাকবেন।ভোট রেখে গেলাম।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৬
অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো ভাই।
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৬
Fahmida Bari Bipu আপনার নামের সাথে পরিচিত ছিলাম, লেখনীর সাথে পরিচয় আজ ঘটলো। অস্থির সময়ের সাহসী গল্প। লেখনীর সাবলীলতা মুগ্ধ করলো। ছোট গল্পের পূর্ণতা পাওয়া গেল। অনেক শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৬
আপনি আমার লেখা পড়েছেন তাই খুবই ভালো লাগলো। আমার লেখা কারও ভালো লাগলে প্রয়াস সার্থক হয়। আমাকে এই আনন্দ দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা নিরন্তর।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৬

১৮ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪