মায়ের ভালোবাসা

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল N/A
১২ ফেব্রুয়ারী,২০১২

মায়ের ভালোবাসা

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

আমার মা হল মেসবাড়ির বাবুর্চি । সে ঢাকা শহরের অনেক মেসে এবং স্কুলের শিক্ষকদের একটি হলে রান্নাবান্না করেন। তার রান্নার হাত অসাধারণ। কিন্তু তার চেহারা অনেকাংশে কুৎসিত কারন তার বামচোখ নেই । আর একচোখ না থাকায় তাকে দেখতে বেশ খারাপ লাগে । আমি যখন স্কুলে ভর্তি হই তখন স্কুলের বাচ্চারা আমাকে দেখলে বলে উঠত

-কানা বেডীর(মহিলার)ছেলে যায়। আমার বয়স তখন অনেক কম আর সেই কারনে আমি আমার মাকে ঘৃণা করতে লাগলাম। তিনি আমার ঘৃণাকে নিয়ে হাসতেন। আমি রাগ করলে ও কিছু বলতেন না । নিজের খাবার না খেয়ে তিনি আমাকে খেতে দিতেন । তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন কিন্তু আমি তা বুঝতে পারতাম না।

আমাদের স্কুলে  আমার মা আমাকে একদিন শুভেচ্ছা জনাতে এবং দেখতে এল । কিন্তু আমি তাকে দেখে বিভ্রান্ত হয়েছি । কারন সকলে আবার পুনরায় আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করতে রাগল । এরপর বাড়ি গিয়ে আমি মায়ের সাথে বেশ বকাবকি করলাম। তাতে ও আমার মা কিছু বলল না । তিনি তার একচোখ ওয়ালা মুখ দিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন । তার অন্য চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল।

আমি নিজেকে শেষ করে ফেলতে ছেয়েছিলাম।আমি আরো চেয়েছিলাম আমার মা যেন পৃথিবী থেকে চলে যায়। আমার মা যদি শুধু আমার জন্য হাসির উদ্রেক করে থাকে তাহলে অবশ্যই তার  মরা উচিত।

একদিন সকালে আমি বাড়ি ছেড়ে সকলের অগচরে পালিয়ে গেলাম । অনেকদুর যাবার পর আমার খিদে লাগছিল । আমি তখন রাস্তার পাশের একটি দোকানে বসে বসে কাঁদছিলাম। সেই সময় একজন ভদ্রলোক আমাকে তার বাড়ি নিয়ে যায়।

দিনের পর দিন চলে যায় আমি বেশ ভালো লেখাপড়া করে অনেক বড় একটা চাকুরী পাই । এরমধ্যে আমি আমার মায়ের কথা ভুলে যাই । একদিন অফিসে বসে কি যেন করছিলাম। তখন কেউ একজন বলল কানা মহিলাটা আজ সকালে মারা গেছে । বুকের মাঝে কেমন যেন করে উঠল । বাইরে এসে খোজ নিলাম। সকলে বলল অফিসের পেছনে এক মহিলা থাকত । আজ থেকে অনেক বছর পূর্বে তার ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল সারাদিন তাকে খোজত আর এই অফিসের বারান্দায় বসে কাঁদত।

অফিসের পিয়নকে সাথে নিয়ে আমি সেখানে গেলাম এবং লাশের মুখের ঢাকনা সরিয়ে দেখতে পেলাম এই আমার মা । আমি বলে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু আমার চিৎকার শুনার জন্য মা তখন আর বেঁচে নেই।

এমন সময় একজন বৃদ্ধ এসে বলল বাবা শিপন এতদিন পর এলি । এদিকে আয় বলে বৃদ্ধ আমাকে তার ঘরের সামনে নিয়ে গেল । বৃদ্ধ ঘর থেকে মলিন একটি চিঠির খাম নিয়ে এসে আমার হাতে দিল ,এবং বলল তোর মা এটা তোকে দিতে বলেছিল । যাক এবার তোর মায়ের আত্না মরে ও শান্তি পাবে। সারদিন মায়ের দাফন নিয়ে ব্যাস্ত থাকলাম । সন্ধ্যায় নিজের বিশাল বাড়ির বারান্দায় বসে চিঠিটি খুললাম।

বাবা শিপন

দোয়া করি তুমি ভাল এবং সুখে আছ। আজ তোমার সামনে আমার কুৎসিত মুখ নিয়ে আসিনি বাবা। আজ এই চিঠিতে আমি তোমাকে লিখছি । আমি জানি তুমি বিরক্ত হচ্ছ তারপর ও লিখছি । পুরো চিঠিটা পড়বে কিন্তু।

তোমার বয়স তখন পাঁচ বছর আমি তোমাকে নিয়ে একদিন রিকশা করে যাচ্ছিলাম। হথাত পেছন থেকে গাড়ির ধাক্কায় তুমি পড়ে যাও । রাস্তার মাঝে ইটের সাথে গুঁতা লেগে তোমার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায় । আমি মা হয়ে তা সহ্য করতে পারছিলাম না। ডাক্তার বলল নতুন চোখ লাগালে তুমি দেখতে পাবে , তাই মা হিসাবে তোমাকে এক চোখ কানা নিয়ে ঘুরতে দেখা আমার দ্বারা সম্ভব নয় । আর সেই কারনে আমি আমার নিজের চোখ তোমাকে দিয়ে দিয়েছি । কিন্তু তুমি কোনদিন ও জানতে চাওনি আমি কেন কানা হয়েছিলাম। সুখে থেক বাবা।

ইতি

তোমার একচোখ কানা কুৎসিত

মা।

আমার চোখ দিয়ে তখন পানি ঝরছিল আর আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম মা ফিরে এস মা। আমায় ক্ষমা কর মা , ক্ষমা কর ।

touhidullah82@gmail.com

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল

রিয়াদ, সৌদি আরব

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) প্রচন্ড কষ্টে মনটা ভোটে গেছে! কেন লিখলেন এমন একটা কষ্টের গল্প? মনের ভেতর খুব কষ্ট হচ্ছে আমার!
তৌহিদ উল্লাহ শাকিল N/A bastobota ze er cheye onek nisthur hoy vai tai likholam
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) জ্বী ঠিক বলেছেন
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) অনেক আবেগমাখা গল্প...প্রথম দিকটা কিছুটা বিদেশী গল্পের অনুবাদ টাইপ হয়ে গেছে যেন , শেষটা খুব ......

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পরগাছা”
কবিতার বিষয় "পরগাছা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুলাই,২০২৫

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মে ২০২৫ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i